🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০৮
“প্রেমা আদ্র আর সাইরার দিকে তাকিয়ে আছে..কী বলবে বুঝতে পারছে না!নিজেকে সামলে নিয়ে আদ্র আর সাইরার দু’জনের গাল ধরে টেনে দিলো।”
“উনি কে আদ্র….???? (সাইরা)
” আমার প্রেমাপু….!! সাইরা তুই তোর মায়ের সাথে গিয়ে বসে থাক! আমি এখন আমার প্রেমাপুকে টাইম দিবো..তুই যা….!!”(আদ্র)
“আরে আমাকে টাইম দেওয়ার কী আছে..যেহেতু তোমরা…?? তো তোমরা তোমাদের মতো থাকো আমি বরং যায়…!!”
“কিন্তু….??(আদ্র)
” কী হচ্ছে এখানে…???(অভ্র)
অভ্রকে দেখে আদ্র বলে উঠে “আসছে খাট্টুশ…চল সাইরা….(বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে…!!
আদ্রের কান্ড দেখে প্রেমা তো এবার হেসে দেয়।তারপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে…
” তোমাকে তো খাট্টুশ বলে ডাকে…”
“হুম…(পাশে ফুলের টব থেকে কিছু ফুল
ছিড়তে ছিড়তে)”….!!!
” কেন ডাকে…?? (প্রেমার প্রশ্ন)
“ছোট মানুষ কী বা আর ডাকবে..ওর কাজে ওকে বাঁধা দেয় তাই আমি খাট্টুশ! নাহলে তো বেস্ট ভাইয়া হতাম!
” হ্যাঁ,সেটাও ঠিক..ফুলগুলো কার জন্য…?? (প্রেমার প্রশ্ন)
“অভ্র কিছুনা বলে ফুলগুলো প্রেমার দিকে এগিয়ে দেয়।
” ভালোভাবে ধোয়ে বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দিয়েন খুব সুন্দর স্মেল এই ফুলগুলোর ভালো লাগবে। প্রেমা হাত এগিয়ে দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে! অভ্র প্রেমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে….
~
~
~
~
প্রেমা ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে। একজন মহিলা এবং তার একপাশে সাইরা বসা এবং অপরপাশে একটি মেয়ে বসা চেহেরাটা সাইরার সাথে মিল আছে।বোন হবে হইতো। এবং মেয়েটির পাশেই বসে আছে একটি ছেলে। অভ্রের বয়সের হবে,,কিন্তু অভ্রের চেয়েও খাটো।
প্রেমাকে দেখতেই আরিয়ানে মা বলে উঠেন….
“এইতো ওই হচ্ছে প্রেমা! তোমাকে একটু আগে যার কথা বললাম…(আরিয়ানের মা)
মহিলাটি প্রেমার দিকে তাকায় তারপর উঠে প্রেমার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর তখনি প্রেমা সালাম দেয়। প্রেমার থুতনি ধরে বলে ” বাহ বেশ মিষ্টিতো” পছন্দ আছে…
কথাটা শুনেই প্রেমা ভ্রু কোঁচকে তাকায়…হটাৎই এমন একটা কথা বলার কারন খুঁজছে প্রেমা…!!! পরক্ষনে আরিয়ানের মা বলে উঠেন…
“হ্যাঁ… তবে প্রেমা মা তুমি যাও ফ্রেস হয়ে খেতে এসো। সবাই এতক্ষন তোমাদের অপেক্ষায় করছিলাম যাও মা…!
” প্রেমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায়। ”
~
~
~
“তোরা তো খুব সুন্দর মেয়ে পছন্দ করেছিস
ছেলের জন্য!”(আরিয়ানের ফুফি–তখনকার মহিলাটি আরিয়ান ও অভ্রের ফুফি ছিলো)
” ছেলের পছন্দ খারাপ কিভাবে হবে শুনি..??(আরিয়ানের মা)
মাঝখান থেকে সাইকানের মাথায় হাত এখানে এসে কিসব শুনছে সে। তখনি দেখে অভ্রকে চুপচাপ ফোন চালাতে চালাতে উপরের যাচ্ছে। কারো দিকে তাকাচ্ছে না। সাইকান ভাবছে এতক্ষন তার মা আর মামিদের কথা শুনে ফেলেছে হয়তো…তাই..!!
” কিরে অভ্র কখন এলি। আমাদের দেখিস নি?? ”
ফুফির কথা শুনে তারপর উত্তর দেয়….!!
“না খেয়াল করিনি ..(ফোন থেকে চোখ না সরিয়ে কথাটা বলে তারপর একটা সালাম দেয়)
” সালাম নিয়ে অভ্রের ফুফি বলতে লাগলো…
“ওহ,,আচ্ছা তো বাবু কেমন আছিস,,,!(অভ্রের ফুফি)
এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে অভ্র সোজা সাইকানের দিকে চোখ ফাকিয়ে তাকায়…সাইকান অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে…মনে মনে বলছে কবে যে ওর মা অভ্রকে বাবু ডাকা ছাড়বে..এই ডাকটা শুনলেই অভ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
” ভালো…!! আমি ফ্রেস হয়ে আসছি..(বলেই অভ্র উপরে দিকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়..)
“সাইকা মনি! যাহ দেখ তোর অভ্র ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হয় কিনা??(সাইকানের মা…সাইকা আর সাইরা সাইকানের বোন)
সাইকা ও যেনো এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। ওর মা বলতেই টুস করে দাড়িয়ে যায়…এবং অভ্রের রুমে দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়..তার কিছুক্ষন পরেই চোখ মুখ আঁধার করে নেমে আসে….
” কিরে চলে এলি যে..??(সাইকানের মা শারমিনের প্রশ্ন)
“ভাইয়া দরজা বন্ধ করে দিয়েছে…!!(সাইকা)
পাশ থেকে সবার চোখের আড়ালে সাইকান হেসে দেয়।
‘” (কয়’শো বার বুঝামো তােমাদের…যারে মেয়ের জামাই বানাইতে চাচ্ছো,,,সে অনেক আগেই অন্য কারো হবু জামাইয়ের লিস্টে আছে…)(সাইকান)
ব্যাচারা সাইকান কার পক্ষে বলবে।একদিকে মা আর বোন অন্যদিকে কাজিন ভাই বন্ধু সব অভ্র…সবশেষে অভ্রের পক্ষ নেই সাইকান।
“আচ্ছা ঠিক আছে হয়তো কাপড় চেঞ্জ করবে তাই..আয় বস এখানে আগে….!!!(শারমিন)
প্রেমা চেঞ্জ করে আশেপাশে তাকাচ্ছে দেখছে আরিয়ান আছে কিনা।কিন্তু দেখতে পায়নি,,,হয়তো বাড়িতে নেই তাই স্বস্তির একটা শ্বাস ছাড়ে..
দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় সবাই ছিলো আরিয়ান বাদে।তাই প্রেমাও খাওয়ার সময় কম্পর্টেবল ফিল করে। সবার দিকে খেয়াল করে করে খাচ্ছে,,,প্রেমার দুইপাশে আদ্র আর সাইরা। সাইকার দিকে চোখ দিলেই দেখে সাইকা বার বার অভ্রের দিকে তাকাচ্ছে। অনেক সময় আবার না খেয়েও তাকিয়ে আছে। কিন্তু অভ্রের সেদিকে কোনো হেলদেল নেই। নিজমনে খেয়ে যাচ্ছে..খাওয়া শেষ করে প্রেমার দিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে যায়। তখন অভ্র একটা মুচকি হাসি দেয়।
অভ্রের মুচকি হাসিটা বেশ সুন্দর তাই প্রেমার ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকতে,,কিন্তু এটা করলে অভ্র কী ভাববে?তাই আবার খাওয়াই মনেযোগ দিল।
বিকালের দিকে সাইকা আর ওর মা চলে যায়।সাইকান আর অভ্রও বাইরে বের হয়ে যায়।সাইরা থেকে যায়…
সন্ধ্যার দিকে আদ্র আর সাইকা পড়ছিলো,,,অভ্র তখন বাসায় আসেনি। প্রেমার দাদুও তার বান্ধবীর সাথে গল্পে ব্যাস্ত..আরিয়ান অভ্রের মাও নিজেদর রুমে।
প্রেমা একা বসে বসে টিবি দেখছিলো। টিবি দেখতে দেখতে সেখানে সোফায় কখন যে ঘুমিয়ে পরে তার খেয়াল ছিলো না।বেগোড়ে ঘুমোচ্ছে প্রেমা…..
~
~
দুইদিন পর বাসায় ফিরে আরিয়ান। এ দুইদিন বাসায় আসেনি। বেশ ক্লান্ত লাগছিলো তখন। বাড়িতে প্রবেশ করে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে সোফার দিকে চোখ যায়। প্রেমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতেই দাড়িয়ে যায় মুহূর্তে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় …….
না চাইতেও পা দু’টো প্রেমার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। চুলগুলো মুখে এসে পরেছে..তার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো আলতো করে চুল সরিয়ে দেওয়ার…নিজের এই লোভটা সামলাতে না পেরে হাত বাড়ায় প্রেমার চুল মুখ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
ঠিক সেই মুহূর্তে ঝড়ের গতীতে কেউ একজন এসে আরিয়ানের হাত ধরে টান দেয়। আকস্মিক ভাবে আরিয়ান হাতে টান অনভূব করতেই চমকে পেছন ফিরে তাকাল।
দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে।বেশ কঠিন একটা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এবার আরিয়ানের ও ভয়ে পশম দাড়িয়ে যায়। অভ্র কেমন ধাচের ছেলে সেটা আরিয়ান জানে,,,এখন যদি অভ্র ওকে এ ব্যাপারে ভুল বুঝে সম্মানতো দূর ভাইও ডাকবে না ওকে। কিন্তু দেখে তো ফেলেছে…??
” কী করছিলে ভাইয়া এখানে…(বেশ গম্ভীরগলায় বলে উঠে)
আরিয়ান থমথম খেয়ে যায়। এবার কী উত্তর দিবে অভ্রকে?? নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে…
“ওআব..আসলে দেখনা.. প্রেমা টিবি ওন করে ঘুমিয়ে পরেছে..তাই রিমোর্টটা নিচ্ছিলাম টিবি ওফ করে দেওয়ার জন্য….(কথাটা বলে আস্তে করে রিমোর্টটা নিয়ে টিবিটা ওফ করে অভ্রের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আরিয়ান টুপ করে নিজের রুমে চলে যায়)
অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো। ঠিক টাইমে না আসলে হয়তো আরিয়ান প্রেমাকে স্পর্শ করেই ফেলতো।এটা ভাবতেই মাথা আরো গরম হয়ে যাচ্ছিলো।
তারপর আশেপাশে তাকিয়ে টেবিলে গ্লাস ভর্তি পানি দেখতে পায়।পানির গ্লাস এনে প্রচন্ড জোরে প্রেমার দিকে ছুঁড়ে মারে…
আচমকা মুখে পানির ছুঁড়ে মারার আঘাতে ধড়পড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় প্রেমা। তখনি অভ্রের গলার আওয়াজ শুনতে পায়….অভ্রের দিকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই অভ্র বলে উঠে….
” এতো খেয়ারলেস কেন আপনি?? ঘুমানোর জন্য রুমে জায়গা ছিলো না। এখানে কেন ঘুমিয়েছেন..?? (প্রশ্ন করে উত্তরের আশায় না থেকে ধপাধপ পা চালিয়ে নিজের রুমে চলে যায় অভ্র..)
প্রেমা তখনো আবুলের মতো তাকিয়ে ছিলো অভ্রের যাওয়ার দিকে। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারে নি….!!
“আজব এভাবে রাগ করলো কেন?? (প্রেমা)
নিজের দিকে তাকাতেই দেখে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা।
” উফফ কতোখানি পানি মারলো কে জানে পুরো ভিজে গেলাম! (কথাটা বলে প্রেমা নিজেরও এবার অভ্রের উপর রাগ উঠে যায়)
তারপর চেঞ্জ করার জন্য নিজের রুমের দিকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
(চলবে)
কেমন লেগেছে জানাবেন নাহলে আমি ভাববো হয়তো ভালো লাগছে না,,ভালো না লাগলেও বলে দিয়েন তাহলে ১০ পর্বে শেষ করে দিবো।
Tarin Jannat