🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০৯
” প্রেমা চেঞ্জ করে তার দুই’দাদুর রুমে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে তাঁরা ফিসফিসয়ে কি যেনো কথা বলছে। প্রেমাকে দেখতেই চমকে যায় এবং কথা থামিয়ে ফেলে। তাই প্রেমা তাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।”
“কী নিয়ে কথা হচ্ছিলো যে আমাকে দেখতেই চুপ করে গেলে তোমরা??” (প্রেমা)
” আরে না তোর দাদির বাপের বাড়ি থেকে বিয়ের দাওয়াত আসছে। তার ছোট ভাইয়ের ছেলের বিয়ে। তো আমার বাপের বাড়িও তো সেখানে। তো তোর দাদির ভাই আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে যাওয়ার জন্য। সেটাই বলছিলাম। “(প্রেমার দাদি আমতা আমতা করে বলল)
” ওওহ.. দাদির আপন ভাই নাকি??(প্রেমা)
” হ্যাঁ আমরা তিন বোনের ছোট ভাই…(অভ্রের দাদু)
” দাদি আমি কাল চলে যাবো প্রিয়া এসেছে ওর নানুর বাড়ি থেকে মিস করছি খুব…”(প্রেমা)
” এ্যামা একি কথা প্রেমু?? প্রিয়া এসেছে চলে যাওয়ার কী দরকার আমি ড্রাইবার পাঠিয়ে এখানে নিয়ে আসবো।তোর কোথাও যাওয়া হবে না আমি বলে দিলাম।যদি যাস তাহলে আমি বিষণ রাগ করবো তোর সাথে…”(অভ্রের দাদি)
প্রেমাও আর ওদের মুখের কথা বলতে পারেনি। এখানে মন টিকছিলো না তাই তো চলে যাওয়ার কথাটা বলে। প্রেমা কিছুক্ষন গল্প করে তাদের সাথে আবার রুম থেকে বের হয়ে যায়…
বের হয়ে ড্রাইংরুমে এসে আরিয়ানকে দেখে যায় চমকে যায় প্রেমা। সাথে সেদিনের ছবির কথা মনে পরতেই রাগ উঠে।তাদের বাড়িতে আছে তাই কিছু বলছে না অন্য কোথাও হলে বুঝিয়ে দিতো ওর সাথে অসভ্যতামী করার মজা…
কিছু না বলে পেছন ফিরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই আরিয়ান ডাক দেয়। প্রেমাও সুযোগ খুঁজছিলো কয়েকটা কথা শুনানোর জন্য। তাই পেঁছন ফিরে তাকাল। ততক্ষনে আরিয়ান প্রেমার সামনে এসে দাড়ায়…
” আমি খুব দুঃখীত প্রেমা! সেদিন ছবিগুলো..?
” ভালোই হয়েছে ছবিগুলো তুলিয়েছিলেন।নাহলে আপনার সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই হতো না যে আপনি আসলে কেমন মানুষ..??”(দাঁত কটমট করে কথাটা বলল প্রেমা)
” বিশ্বাস করো আমি তুলাইনি ছবিগুলো।এটা অন্য কেউ করেছে।আমার এসবে কোনো হাত ছিলো না। এটা আমাদের পরিচিত কেউ করেছে হয়তো।যা আমরা জানি না প্লিজ বিশ্বাস করো।”(আরিয়ান)
“আচ্ছা ঠিক আছে। করলাম বিশ্বাস।এবার বলেন আপনি প্রমাণ করতে পারবেন? যে ছবিগুলো আপনি না অন্য কেউ তুলেছিলো।” (প্রেমা)
” নিশ্চুপ…(আরিয়ান)
” পারবেন না আমি জানতাম..কারন আপনিই করেছেন এমন জগন্য কাজটা।একথায় আমাকে ভার্সিটি থেকে বের করিয়েছেন।আর কিছু বলার ইচ্ছে নেই আপনাকে।নেক্সট টাইম যেচে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।(প্রেমা)
কথাগুলো বলেই প্রেমা আর না দাড়িয়ে সুইমিংপুলের দিকে পা অগ্রসর করল। আর কিছুক্ষন আরিয়ানের সামনে থাকলে হয়তো থাপ্পর লাগিয়ে দিতো। কারন প্রেমার হাত বেশি চলে কথার চেয়ে।
“[কীভাবে করবো প্রমাণ? গত দুইদিনতো আমি তার খুঁজেই ছিলাম যে এই কাজটা করলো-মনেমনে]”
উপর থেকে অভ্র ওদের কথাগুলো শুনতে হাসতে লাগলো। এটাইতো চেয়েছিলোম সে। প্রেমা আরিয়ানকে সহ্য করতে না পারুক। নিজের রুমে চলে যায়।
অনেক্ষন ধরে সুইমিংপুলের পাশে বাগানের ঘাসের উপর বসে আছে প্রেমা। ভালো লাগছে না এখানে তার। মিম আর আসিফকে ফোন করে বলে কোথায় যেনো ঘুরতে বেরুবে।তাই প্রেমাও রাজি হয়ে যায়।মনটা একটু হালকা লাগে..
ফোন কাটতেই প্রেমার ভাইয়ের ফোন আসে।কলটা দেখতেই দ্রুত রিসিভ করে সালাম দেয় প্রেমা।
” কেমন আছিস প্রেমা?? (পিয়াস)
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভাইয়া! তুমি কেমন আছো?? কোথায় এখন?(প্রেমা)
” আমিও ভালো আছি। আজ বিকালে এসেছি বাড়িতে আছি এখন। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে?? ভার্সিটি তো কাছে মনে হয় সেখান থেকে তাই না?
ভাবনাই পরে যায় প্রেমা। কী বলবে? পরে ভাবলো সত্যিটা বলে দেয়।
” পড়াশুনা ভালো।(কিছুক্ষন চুপ থেকে) ইয়ে মানে ভাইয়া আমি ভার্সিটি চেঞ্জ করে অন্য একটাতে ভর্তি হয়েছি। সেটা একটু কাছে তাই।(অনেক ভয় নিয়ে কথাটা বলে)
” আচ্ছা সমস্যা নেই তোর সুবিধামতো তুই কর। পড়াশুনা তো তুই করবি তাই না। ভালো মন্দও তুই বুঝবি।আচ্ছা আমি রাখলাম এখন ভালো থাকিস।
” জ্বি! (অবাকের কারনে কথা বলতে পারছে না। তাই আস্তে করে বলো) কল রাখতেই প্রেমা ভাবতে লাগলো কেসটা কী?? ওকে তো বকা দেওয়ার কথা…কিন্তু??
হঠাৎ আদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙে.. আদ্র প্রেমার পাশে এসে বসে এবং সাইরাও..
” কী করছিলে আপু এখানে একা বসে??”(আদ্র)
“এমনি বসে আছি..ভালো লাগছিলো না,তাই!!(প্রেমা)
” আপু আমি আজ তোমার সাথে থাকবো। আমার চুলে বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিও প্লিজ।ওই খাট্টুশের সাথে থাকবো না।(বিনয়ীসূরে)
আদ্রের কথা শুনে হাসতে লাগলো। ছেলেটার বিহেভ এখনো বাচ্চার মতো অথচ সাথে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে চলাফেরা করছে।
“আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু খাট্টুশের সাথে থাকবে না কেন??(প্রেমা)
” কেন থাকবো?? বিছানা একটু কোঁচকে গেলেও আমার দোষ।বিছানায় একটু ময়লাও থাকতে পারবে না।তাহলে আমাকে দিয়ে আবারো ঝাড়ু দেওয়াবে।নাহলে আমাকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাবে।আর নিজে সোফায় দুই’পা দুই দেশে ছড়িয়ে বসে থাকবে।আর আমি হাঁটু তুলে বসলেও দোষ।(ভীষণ রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে)
প্রেমা তো হা করে আদ্রের কথাগুলো শুনে। অভ্র এমন?? না জানি বিয়ে-টিয়ে করলে বউরে দিয়ে কেমন কাটানি কাটায়।মনেমনে প্রেমা ভাবতে লাগলো কথাগুলো। হঠাৎ কারো গলার স্বরে ধ্যান ভাঙে প্রেমার।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আদ্র আর সাইরা নেই।পেছন ফিরে দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্রকে দেখে তারা পালিয়ে গিয়েছে। প্রেমা মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকাল।
অভ্র বুঝতে পেরেছে প্রেমা রাগ করেছে৷ তাই প্রেমার পাশে গিয়ে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে পরে। প্রেমা একটু করে পাশে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়।
প্রেমার কান্ড দেখে অভ্র হালকা হাসলো।
“তখনকার ব্যাপারের জন্য সরি বলতে এসেছি। এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ধারণা ভুল..”
এবার প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল,
“আমি সরি বলবো না।(অভ্র,)
” আমি কিছু বলেছি তোমাকে? যেচে কথা বলতে এসেছো কেন?? (রাগ নিয়ে কথাটা বলে)
” আপনার সাথে কথা বলতে আমার পার্মিশন নিতে হবে??” (অভ্র)
অভ্রের এসব কথা শুনে প্রেমার রাগ আরো বাড়তে লাগলো এ মুহূর্তে! মুখ থেকে একটা শব্দ বের করে “ধ্যাত” বলে উঠে চলে যেতে চাইলে অভ্র প্রেমার হাতটা ধরে ফেলে।তারপর টেনে বসিয়ে দিল।
হাত ধরা অবস্থায় ছিলো অভ্র প্রেমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো…
” কাল কোথায় যাবেন?(অভ্র)
” আমার ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাবো।( অভ্র খুব আলতো করে প্রেমার হাতটা ধরেছে। যার ফলে প্রেমার মধ্যে অদ্ভুদ রখমের অনুভুতি হচ্ছিলো। তাই কথা না বাড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবে উত্তরটা দেয়)
প্রেমা কথাটা বলার পরেই অভ্র হাতটা ছেড়ে দিল। হাত ছাড়া পেতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল।
” কোথাও যেতে হবে না কাল…! বাসায় থাকবেন আপনি!!(অভ্র)
“আরে কাল শুক্রবার! বাসায় থেকে কী করবো একটু ঘুরতে যাবো। তোমার এতো সমস্যা কেন??
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে…
” আপাকে বলেছিলাম আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করার সময় কিছু শর্ত পালন করতে হবে আপনাকে?? আমার কথা শুনাটা সেই শর্তের মধ্যে একটা।তাই আপনাকে শুনতে হবে..।
” শুনবো না আমি কাল যাবোই যাবো..(দাঁত চেপে বলে)
” আচ্ছা 0181******* এটা আপনার ভাইয়ার নাম্বার না???(অভ্র)
নাম্বারের কথাটা শুনতেই চমকে অভ্রের দিকে তাকাল ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে। এতো তার দূর্বলতার উৎসের খুঁজটাও নিয়ে নিয়েছে, শেষ।
” ওকে ফাইন যাবো না।ভাইয়াকে বলার দরকার নেই!
” ওকে এক্ষুনি আপনার ওই ফ্রেন্ডেদের বলে দিন যে যাবেন না। (অভ্র)
প্রেমা বাধ্য মেয়ের মতো ফোনটা বের করে মিম আর আসিফকে না করে দেয় ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
কথা শেষ হতেই টুপ করে প্রেমার মোবাইলটা নিয়ে মিম আর আসিফের নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলে দিল অভ্র। প্রেমার চোখের আঁড়ালে কারন অভ্র ফোন নেওয়ার পর প্রেমা তাকিয়ে দেখেনি।
মোবাইলটা হাতে দিয়ে অভ্র উঠে চুপচাপ চলে যায়। যেতে যেতে মনে মনে একটা অদ্ভুদ হাসি ফুঁটে তুলে ঠোঁটে।
~
~
~
~
” আরে কী বলছো তখন না বলেছিলে ও যাবে তাহলে এখন আবার না করেছে বলছো কেন??(আরিয়ান)
” স্যার সত্যি আমাকে আর আসিফকে বলেছিলো যাবে।এখন আবার ফোন দিয়ে বলছে যাবে না।তারপর ফোন কেটে দেয়। (মিম)
” আবার ট্রাই করো..(আরিয়ান)
” দিয়েছিলাম কল ঢোকছে না আর..(মিম)
আরিয়ান রেগে কলটা কেটে দেয়। প্রেমাকে কাল প্রপোজ করবে ভেবেছিলো। কিন্তু……
–
–
রাতের খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে পরে তিনজনে। প্রেমা মাঝখানে আদ্র আর সাইরা তার দু’পাশে।
দুজনেই বেঘোরে ঘুম। প্রেমার ঘুম আসছিলো না তাই ফোনটা নিয়ে একটু ফেসবুকে লগ ইন করে….
লগ ইন করতেই হঠাৎ দেখে..
(চলবে)
ভালো লাগছিলো না তাই আমি রিভিশন দেই নি। কোথাও ভুল হলে একটু জানিয়ে দিবেন আমি ঠিক করে নিবো পরে। কেমন হয়েছে একটু জানাবেন…
Tarin Jannat