🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১০
||
“দশমিনিট যাবৎ প্রেমা একজনের প্রপাইল ঘাটাঘাটি করছে। তখন ফেসবুকে তার আইডিতে লগ ইন করার পরেই দেখে!!
“বসন্ত প্রেমিক” নামের একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট এসেছে। নামটা দেখতেই প্রেমা পুরো শরীর শিউরে উঠে..বুঝতে পারছিলো না কেন এমনটা হয়েছে?? বারবার প্রেমার মস্তিষ্কে জানান দিচ্ছে এটা সেই অজানা ব্যাক্তিটির নিকট হইতে আসা রিকুয়েস্ট!!”
বিশ্বাস হচ্ছিলো না বিধায় আইডিটির প্রপাইলে যায়। একটা ছেলের ব্যাকসাইড পিক ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। কিছুক্ষন ভাবনা-চিন্তা করে প্রেমা রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে। কেন করলো বুঝতে পারছিলো না।শুধু নিজের ইচ্ছেটা পূরন করলো একসেপ্ট করে!
একসেপ্ট করার সাথে সাথেই মেসেঞ্জারের কিউট মেসেজ টুনটি ভেজে উঠে। মেসেজ ওপেন করতেই দেখে সেই আইডি থেকে আসা…মেসেজ দেখেই প্রেমা চমকে যায়…
“কী সমস্যা…(মেসেজটি)
এমন একটা মেসেজ দেখে প্রেমা কী রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছিলো না। নিজেকে সামলে প্রেমা পাল্টা প্রশ্ন করে!!
” আপনার কী সমস্যা?? (প্রেমা)
-ওপাশ থেকে উত্তর আসে…
“রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছেন কেন?? (মেসেজ)
“এবার প্রেমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বলে কী? রিকু দিলে একসেপ্ট করতে হয়। সেটা কী জানে না??”
” আপনি রিকুয়েস্ট দিয়েছেন কেন?? (প্রেমা)
“আমি রিকুয়েস্ট দিলেই কী আপনাকে একসেপ্ট করতে হবে??(এবার কয়েকটা এংগ্রি ইমুজি ছিলো)
এবার প্রেমা চুপ হয়ে যায়। ওপাশ থেকে আর কোনো মেসেজ আসেনি। নিশ্চুপ দু’পাশেই….
হঠাৎ মেসেজ টুন আসলেই আবার প্রেমা ওপেন করে মেসেজটি। এবার কোনো মেসেজ ছিলো না। একটা ছবি ছিলো। ছবিটির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হঠাৎ ভয়ে প্রেমার পশম দাঁড়িয়ে যায়। একি দেখছে সে…
বেশ উত্তেজিত হয়ে পরে প্রেমা। ছবিটি প্রেমার ব্যাকসাইড ছিলো। শাড়ির পরা অবস্থায় সাথে চুলে খোঁপা করা। এ শাড়িটা তো প্রেমা কলেজের ” বসন্ত বরন ” উৎসবে পরেছিলো। তাই চিনতে বেশ সময় লাগে নি। প্রেমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মুহুর্তেই।
আবারে ওই আইডিতে যায়। গিয়ে দেখে ছবিটা ডিলেট করে দিয়েছে। এবং সাথে প্রেমাকেও ব্লক করে দেয়।
এবারতো রাগ, ক্ষোভ হাজার গুন বেড়ে গেলো। কে হতে পারে? কার কাছে ওর ছবিটা রয়েছে?? ভাবতে ভাবতে ঘাম বেঁয়ে পরছে কপাল থেকে।
নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো। তবুও চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছিলো না। উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে যায়। পানির নিচে কিছুসময় অতিক্রম করার পর মাথাটা বেশ হালকা লাগছিলো। তাই বের হয়ে আসে…
“যা হবার হবে…এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।(মনেমনে কথাটা বলে বিছানায় শুয়ে পরে।এবং তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে)
~
~
~
নিজের রুমের সাথে এটাচড্ বেলকনিতে রাখা একটা মিনি সোফায় বসে আছে অভ্র। হাতে তার ফোন। দৃষ্টি ফোনের দিকে। অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফোনের ছবিটির দিকে। ছবিটি প্রেমার।
কিছুক্ষন পর মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে ঠোঁটের কোণায়। একটু আগে প্রেমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো সেটা মনে পরতেই ঠোঁটের কোণার হাসিটা আরো বড় হতে লাগলো।
ফোনটা পাশের রেখে নিজের দু’হাত বুকে গুজে নেয়। এবার দৃষ্টি বাইরের দিকে। রাত গভীর হচ্ছে অথচ চোখে ঘুমের চিটেপুটাও নেই। আবারো ফোনটা হাতে নিয়ে প্রেমার সে শাড়ি আর চুলে খোপাওয়ালা ছবিটি দেখতে লাগে। ফোনটা বুকের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নেই এবং ছাড়ে। চোখ বন্ধ অবস্থাই চোখের সামনে ভেসে আসে সেদিনে মুহুর্তের কথা। যেদিন প্রেমাকে প্রথম দেখেছিলো।
ফ্ল্যাশব্যাক……
দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো অভ্র। আর আরিয়ান ছিলো কলেজ এবং ভার্সিটির টিচার। ” বসন্ত বরণ” উৎসবের দিনে আরিয়ান একা যায়নি। সাথে নিজের দু’ভাই অর্থাৎ অভ্র আর সাইকানকেও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো।
টিচার হওয়ার সুবাধে কাজের চাপ ছিলো প্রচুর। সব আয়োজন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তারও খেয়াল রাখতে হয়েছিলো। মাঠের মাঝখানেই বিভিন্ন ফুলের সাজে সজ্জিত ছিলো স্টেজ।
অভ্র আর সাইকান গেইটের একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। সে মুহুর্তে অভ্রের চোখ যায় লাল শাড়ি পরিহিত এক মেয়ের দিকে। অবশ্যই শাড়ি না অভ্রের দৃষ্টি ছিলো চুলের খোঁপার দিকে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো চুলের খোঁপাটায় সেই মেয়েটিকে। চুল সুন্দর হলে খোঁপাটাও সুন্দর হবেই এটা অভ্রের ধারনা ছিলো।
কথা বলার ছলে যখন মেয়েটি ফিরে সাথে সাথে অভ্রের বুকটা ধুক করে উঠে। বুঝতে পারে হার্ড-বিট করছে তার। বুকে হাত রেখে চোখ সরানোর তুমুল প্রচেষ্টায় লেগে পরে। কিন্তু ব্যার্থতা সেদিন ওর সঙ্গী হয়েছিলো যেনো। যাতবার ভাবতো মেয়েটির দিকে তাকাবেনা ততবারই বেহায়া চোখ সেদিকে চলে যায়।
নিজেকে ধমাতে পারেনি মেয়েটির আরেকটু নিকটে গিয়ে দাঁড়ালে শুনতে পায় কেউ মেয়েটিকে ডাক দেয় ‘প্রেমা’ বলে।
“ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে নিচু স্বরে বলে উঠে ” প্রেমা”
তারপর থেকেই প্রেমার দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখেছিলো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। সবঠিক ছিলো শুধু একটা জিনিস মিসিং ছিলো সেটা হচ্ছে প্রেমার খোঁপায় বসন্তের ফুলের মালা। যদিও তখন সে ফুল কোথায় পাবে তার ধারনা ছিলো না অভ্রের। জোর করে সাইকানকে “ফুলবাড়িয়া” পাঠিয়েছিলো ফুল আনার জন্য। সেখানেও পেয়েও যায় বসন্তকালের তাজা লাল টকটকে ফুল। মালা করিয়ে এনেছিলো একেবারে। পাঠিয়ে দেয় সেই ফুলের মালা এবং চিরকুট সহ প্রেমার নিকটে।
চিরকুট পড়ার পর যখন প্রেমার মালাটা নিজের চুলের খোঁপায় গুজাল। সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো অভ্র। হয়ে যায় “প্রেমার বসন্ত ফুলের প্রেমিক!”অনুসরন করতে শুরু করে দেয় তার সেই বসন্ত ফুলের রানীকে….
এরপর যখন সে তাদের মাঝখানের বয়সের কমতিটা উপলব্ধি করতে পারে। মরিয়া হয়ে গিয়েছিলো প্রেমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য। সেদিন আবারও ব্যার্থতা তার সঙ্গী হয়।
এরপর থেকেই আড়াল থেকে অভ্র অনেক কিছু করেছে যা প্রেমা জানলে…….
” চোখের কোণা বেঁয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরার আগেই অভ্র মুছে ফেলে। শক্ত করে নেয় নিজেকে। তাতেও শান্ত হচ্ছনা মনটা। মনের মধ্যে ভয়টা বেড়েই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভয় একটাই যদি সে তার
“বসন্তের ফুল” 🌺 প্রেমাকে হারিয়ে ফেলে।
“আত্মবিশ্বাসী হতে হবে নিজেকে। নাহয় হারতে হবে আমাকে। হারাতে দিবো না আপনাকে।রেখে দিবো নিজের মাঝে।স্থান হবে আমার বুকে!!
আগলে রাখবো প্রতিটা মুহুর্তে……!!!
(চলবে)
রিভিশন দেয় নি আগে জানিয়ে দিলাম,,ভুল হলে জানাবেন।
Tarin Jannat