🌺#বসন্তের_ফুল 🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১১
“ঘুম হালকা হলেই চোখ মিটিমিটি করে মেলে তাকায়। মাথাটা বেশ ভাড় লাগছিলো প্রেমার। ঘুম আরেকটু হালকা হতেই কারো কথা বলার শব্দ কানে আসে। ”
তাই উঠে বসে প্রেমা। তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই এখানে দাড়িয়ে কথা বলছে।প্রেমাকে উঠতে দেখে আদ্র দৌড়ে এসে প্রেমার পাশে বসে।
” আপু এখন কেমন আছো??(আদ্র)
আদ্রের কথা শুনে সবাই প্রেমার দিকে তাকায়। আরিয়ানের মা দৌড়ে এসে প্রেমার পাশে এসে বসে।সাথে অভ্রের মাও।
“এখন শরীর কেমন আছে মা??(আরিয়ানের মা)
” জ্বি? মানে??…(প্রেমা হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে)
উনারা কিছু বলার আগে প্রেমার দাদু এসে প্রেমার পাশে বসে।শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে..
“কাল কী রাতে গোসল করেছিলি নাকি ভয় পেয়েছিলি কোনটা??” (প্রেমার দাদুর কথা শেষ হতেই অভ্র প্রেমার রুমে প্রবেশ করে ওষুধ নিয়ে আর কথাগুলো শুনে)
প্রেমার তখনও মাথায় কিছু আসছে না।খালি ভোঁ ভোঁ করছিলো মাথাটা। তখনি অভ্রের দিকে তাকায়।মুখটা কেমন শুকনা শুকনা লাগছিলো অভ্রের।চোখ হালকা লাল হয়ে আছে।অভ্রের দিকে তাকানোর পর প্রেমা তার দাদুর কথা উত্তর দেয় নি। নজরটা অভ্রতে স্থির ছিলো।
” জ্বরের মধ্যে যে বেহুস হয়ে গিয়েছিলি সে খবর তোর আছে?? সত্যি বল প্রেমু তুই কী গোসল করেছিলি নাকি ভয় পেয়েছিলি কোনটা??(প্রেমার দাদু)
প্রেমা কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। কারন কালতো সে ভয়ও পেয়েছে সাথে গোসল ও করেছে।ছোটবেলা থেকে প্রেমা ভয় পেলে এবং রাতে গোসল করলে জ্বর আসতো।এবং তা অতিরিক্ত কোনো সময় সেন্সলেস হয়ে পরতো।
প্রেমা আমতা আমতা করে উত্তর দেয়-
“মনে নেই!!
প্রেমার দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এ মেয়েটা সুধরানোর না। রাতে গোসলটা করবেই যাতে জ্বর বাঁধায়। কেন যে বুঝে না??
” উঠ!! হাত মুখ ধোয়ে নে। নাস্তা করে তোকে ওষুধ খেতে হবে।
আরিয়ানের মা আর অভ্রের মা প্রেমাকে ধরে উঠাতে চায়লে প্রেমা না করে দেয় নিজেই যেতে পারবে বলে উনাদের আশ্বাস দেয় এবং ওদের চলে যেতে বলে। উনারাও প্রেমার কথায় হাফ ছাড়ে এবং নাস্তা আনতে চলে যায়।
উনারা যেতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।অভ্র তখনো প্রেমার দিকে তাকিয়ে ছিলো এক ধ্যানে। তাই প্রেমা আস্তে করে উঠে অভ্রের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
“কী হয়েছে??(প্রেমার প্রশ্ন)
” সরি..! (আস্তে করে)
” মানে সরি কেন?? (প্রেমা)
” আরে সরি এ মেডিসিনগুলো আপনাকে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই সরি। (থমথম গলায় উত্তর দেয়)
প্রেমার কাছে অভ্রের কথাগুলো অস্বাভাবিক লাগে।সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অভ্রের দিকে।
“আপনি কী কাল ভয় পেয়েছিলেন নাকি গোসল করেছিলেন?? ” (অভ্র)
প্রেমার এবার কালকের কথা মনে পড়ে। আশেপাশে তাকায় প্রেমা। মনেমনে ভাবছে ওর সমস্যাটা কী অভ্রকে বলবে। নাকি সে ঠাট্টা করবে ওর যুক্তিহীন কথা শুনে। কিন্তু কাউকে যে বলতেই হবে।তাই সে প্রেমা অভ্রকে বলবে তার মনে কথাগুলো। মনেমনে সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
“কী হলো বলছেন না যে..??(অভ্র)
“আচ্ছা! তুমি ফ্রি আছো??(প্রেমা)
” হ্যাঁ,আজ তো শুক্রবার! ফ্রি তো আছিই!(অভ্র)
” তাহলে এখন যাও ছাদে গিয়ে ওয়েট করো আমি নাস্তা করে আসছি! (বলেই প্রেমার ওয়াসরুমে ডুকে পরে)
অভ্র প্রেমার যাওয়ার দিকে থাকে।তারপর মেডিসিন গুলো টেবিলে রেখে দেয়।তারপর ছাদের উপর চলে যায়।
” আমি সত্যি সরি প্রেমা! আপনার ভয় ফেলে জ্বর আসে জানলে কখনোই কাল এমনটা করতাম না। কিন্তু কাল সেটা করার কারন ছিলো। তাই করেছিলাম। আমি জানি আপনি আমাকে কী বলবেন?? ” আমি ও তাই চেয়েছি! আপনার মনের মধ্যে কী চলছে সেটা জানার জন্যই তো…!(মনেমনে)
প্রেমার ডাকে অভ্র পেঁছন ফিরে তাকায়। কালো থ্রী-পিচের সাথে চুলে হালকা পেঁছানো খোঁপা! অভ্রের কাছে বেশ আকর্ষনীয় লাগছিলো। প্রেমার এই খোঁপাওয়ালা চুলের রুপেই তো অভ্র পাগল। হাতের মুঠো শক্ত করে তাকিয়ে আছে প্রেমার দিকে ।চোখ সরানোর ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই তবুও চোখ সরাতে হয় অভ্রকে।
প্রেমা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অভ্রের দিকে একটা চিপস্ এগিয়ে দেয়। চিপস্ দেখতেই অভ্রের হাসি চলে আসে। চিপস কখন খেয়েছিলো তার মনেই নেই।
“হাসছো কেন??(ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)
” আমি বাচ্চা নাকি? যে চিপস্ খাবো??(হেসে)
“না খেলে খাবে না বলে !! এতো কথা কেন?? তুমি না খেলে আমি তো আছি আমি খাবো! (হালকা রেগে কথাগুলো বলে প্রেমা)
” প্রেমার রাগ দেখে অভ্র খপ করে প্রেমার হাত থেকে চিপস্ টা নিয়ে নেই। খেতে খেতে প্রেমাকে জিজ্ঞেস করে কী বলবে–?
” আপনার না কিছু কথা বলার ছিলো??(অভ্র)
এবার প্রেমা চুপ করে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্রের দিকে তাকালে প্রেমা চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। মনেমনে আবারো সেই ভাবনাটা চলে আসে…কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে–
“আসলে আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে বলবো?? তুমি কীভাবে নিবে??(প্রেমা)
” বলেন আগে..
ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে তারপর-
“কলেজের বসন্তবরণ উৎসব থেকে শুরু করে কাল ফেসবুকের ঘটনা পর্যন্ত সব অভ্রকে বলে। অভ্রতো গভীরভাবে মন দিয়ে প্রেমা হাত,চোখ, ভ্রু, এবং ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলার ধরন দেখতে মত্ত ছিলো।কথাগুলো তার কানে পৌছেছে কিনা সন্দেহ আছে…”
” বসন্তের_ফুল!’
কথাটা শুনার সাথে সাথে প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়। হঠাৎ প্রেমার তাকানো দেখে অভ্র ঘাবড়ে যায়।
“আমি তোমাকে বসন্ত_ফুলের কথা তো বলিনি! তাহলে তুমি জানলে কীভাবে??(সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে)
অভ্রও শুকনা একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে–
” আপনি বসন্ত বরণ উৎসবে গিয়েছিলেন।কেউ আপনাকে ফুল দিয়েছিলো।ফলো করছিলো।এসব বলেছিলো তাইতো?? ফুলেট টব দিয়েছিলো?? তাই আমি বসন্ত কালের বসন্ত, ফুলের টব থেকে ফুল একসাথে ম্যাচিং করে বসন্তের_ফুল বললাম সিম্পল! (বলেই একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে)
“আশ্চর্য আমি এগুলা কখন বললাম! আমি তো এসব বলিনি?? আর তুমি??
এবার অভ্র বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।প্রেমাকে দেখতে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে কথাগুলো কানে পৌঁছায় নি। এখন যদি প্রেমা জানতে পারে তাহলে সব শেষ….
” মানে..এসব বলেন নি তাহলে??
তখনি প্রেমা খুটখুট করে হেসে উঠে। প্রেমার হাসিটাও যেনো এখন অভ্রের কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছিলো। কিছু না বলে তাকিয়ে আছে অভ্র।
” পাগল! আমি তো সবই বললাম তোমাকে??তুমি অন্যমনষ্ক ছিলে মনে হয়েছিলো তাই এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম! ”
“আচ্ছা তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি?? আমাকে হেল্প করো প্লিজ ওই অচেনা মানুষটাকে ধরতে।প্লিজ..”
অভ্র মনেমনে একটা হাসি দেয়। নিজেকে খুঁজার জন্য এখন আরেকজনকে হেল্প করবে। হাস্যকর!
“হ্যাঁ,অবশ্যই করবো তার আগে আমাদের বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রিপারেশন নিতে হবে।আর আমরা আজ সন্ধ্যায় রওনা দিবো..
” আজকেই! বিয়ে কবে?? (প্রেমা)
“দুইদিন পর..(কথাটা বলে অভ্র নিজের হাতের ঘড়িটির দিকে তাকায়)
তখনি প্রেমার চোখ যায় অভ্রের দিকে হাতের কাটা দাগের দিকে। সাথে সাথে অভ্রের হাতটা ধরে প্রেমা বলে উঠে–
” এখানে কী হয়েছিলো??
“ব্যাথা পেয়েছিলাম!
” কীভাবে?? মানে কখন??
” সাইকেল থেকে পরে গিয়েছিলাম! একবছর আগে।
“ওহ,,দেখো দাগ হয়ে গেছে।
” হুম..আচ্ছা আপনি বসেন।আমার একটা কাজ আছে আমি আসছি।
বলেই আর না দাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
আর মনে মনে বলতে লাগলো–
” দাগ তো হবেই।আপনার দেওয়া প্রথম স্পর্শ ছিলো যে। (মনেমনে)
“মনে পরে যায় একবছর আগের কথা।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও বাইক নিয়ে প্রেমার পিছু পিছু আসছিলো অভ্র। পুরো ব্ল্যাক জ্যাকেট,পেন্ট,শু,আর হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলো।
কেন যেনো সেদিন প্রেমা প্রচুড় রেগে ছিলো।অভ্রের চলন্ত বাইকের সামনে প্রেমা দাড়িয়ে যায়। আকস্মিকতায় অভ্র বাইক অনেকটা জোরে এসে প্রেমার সামনে থামায়। কারন প্রেমাকে রেখে যাওয়ার সাহসও ছিলোনা সেদিন। আর প্রেমা রেগে অভ্রের মাথা থেকে হেলমেট নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয় মুখটা দেখার জন্য। অভ্রের শক্তির সাথে প্রেমা পেরে উঠেনি ব্যার্থ হয় হেলমেট সরাতে।তাই প্রচন্ড রাগ ক্ষোভ নিয়ে অভ্রের হাত ধরে জোরে একটা ধাক্কা দেয়।তাতেই তাল সামলাতে না পেরে পাশের বড় একটা পুকুরে পরে যায় অভ্র। আর প্রেমার স্পর্শ করা হাতটির সেই জায়াগায় কিছুর সাথে লেগে প্রচুর ব্যাথা পায় অভ্র।
হাতের ব্যাথার কষ্টটা অভ্রের কাছে কিছুই ছিলো না।ও যে প্রেমার প্রথম স্পর্শ পেয়েছিলো তাতেই খুশী হয়ে যায়।
সেদিনের পর থেকে আর বাইক নিয়ে পিছু নেই নি প্রেমার! কিছুদিন আড়াল থেকে ফলো করতো প্রেমাকে।ছয় মাস পরেই অভ্র তার নানাকে অর্থাৎ অভ্রের মায়ের চাচাকে সাথে নিয়ে প্রেমাকে ফলো করতে শুরু করে। যিনি প্রেমার কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। অভ্রের নানা-নানি নাকি অভ্রের মা ছোট থাকতেই মারা যায়।সেই থেকে চাচা-চাচির কাছে বড় হয়।তারা কখনো বুঝতে দেয় নি অভ্রের নানা-নানির অভাব!
এর কিছুদিন পরেই অভ্র কোনো রকম একটু একটু গাড়ি চালানো শিখে ফেলে। এবং প্রেমাদের গ্রামে গিয়ে ফলো করতো।
(চলবে)
Tarin Jannat