🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১৩
” ফোন স্ক্যান করতে করতে কখন যে প্রেমা ঘুমিয়ে পরেছে তার খেয়াল নেই।সাথে প্রিয়া আর আদ্র ও প্রেমার খুলে ঘুম আর প্রেমা সিটে মাথা হালকা বাঁকা করে ঘুমাচ্ছে। অভ্র এতোক্ষণ প্রেমার দিকে তাকায়নি একটুর জন্যেও এবার কেন যেনো নিজেকে সামলাতে পারছে না।তাই নিজের দৃষ্টি প্রেমার মায়াবী মুখখানার দিকে নিক্ষেপ করে।”
কিছুটা দূরত্বছিলো তাদের মাঝে এতক্ষণ। অভ্র আরেকটু চেপে বসে আদ্রর কাছে। মৃদু স্বরে প্রেমাকে ডাক দেয় কয়েকবার।কিন্তু কোনো সারা পায়নি। তাই অভ্র আলতো করে প্রেমার বাম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেই। প্রেমার নরম তুলার মতো হাতের মাঝে নিজের হাত গুজে দেয়। কিছু সময় অতিক্রম করার পর অভ্র নিজের ফোনটা বের করে। এবং প্রেমার হাতে নিজের হাত গুজানো অবস্থায় কয়েকটা ছবি তুলে নেই হাতের।
অভ্র অনুভব করতে পারছে নিজের স্পন্দনের গতি। বুকের ভেতরের ধুকপুকানিটা আরো বেগ পাচ্ছে। এই মুহূর্তটাকে যদি থামানো যেতো?? তাহলে অভ্র ঠিক থামিয়ে রাখতো এবং প্রেমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় আবদ্ধ রাখতো। এসব ভাবতে ভাবতে অভ্র প্রেমার হাতটা নিয়ে আলতো করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। কিছুটা শান্তি হলেও যদি পায় সে এই পরিকল্পনায় সে হাতটা নিজের বুকে রেখেছে।
গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে তারা।আরো ৩০মিনিট সময় লাগবে পৌঁছাতে। তবুও অভ্র প্রেমার হাতটা ছেড়ে দেয়। ২০ মিনিট মতো ছিলো প্রেমার হাতের ভাজে অভ্রের হাতটি।আর প্রেমার তো একটু নড়চড়ও ছিলো না।
এরপরেই আদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। মাথা তুলে দেখে প্রিয়া আর প্রেমা দুজনেই ঘুম।এরপর পাশ ফিরে নিজের খাট্টুশ ভাইটির দিকে তাকায়।দেখে অভ্র ফোন নিয়ে ব্যাস্ত।কিছুক্ষণ অভ্রের দিকে তাকানোর পর আদ্র একটা প্রশ্ন ছুড়ে মারে অভ্রের দিকে-
“ভাইয়া সবার সাজুনীর-কুজুনীর জিনিসগুলো ফেলে দিতে বলেছিলে কেন?? (আদ্র)”(ফিসফিসিয়ে বলে)
আদ্রের কথাশুনের ডোন্ট খেয়ার একটা ভাব নিয়ে অভ্রও একটা প্রশ্ন আদ্রের দিকে ছুড়ে মারে-
” তুই জেনে কী করবি??(অভ্র)(ফিসফিসিয়ে বলে)
“কারন আমি জিনিসগুলো ফেলে দেয় নি লুকিয়ে রেখেছি শুধু..!!(আদ্র)
” জানতাম তুই এমনটা করবি! তোকে বিশ্বাস করি না তাইতো..এটা দেখ(ফোন থেকে একটা ভিডিও বের করে আদ্রকে দেখায়)
সাথে সাথে আদ্র নাক ছিটকিয়ে চোখ বড় বড় করে অভ্রের দিকে তাকায়। আর অভ্রের মুখে শয়তানি হাসি..!
” এটা কীভাবে করলে?? (গাল ফুলিয়ে)
” দারওয়ান আংকেল দিয়েছে। আহ এখন ভাবতো এটা তোর প্রেমাপু দেখে তাহলে….?(অভ্র)
“দরকার নেই দেখানোর। যা বলবে শুনবো ভাইয়া!(বলেই অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।আর মনে মনে দারওয়ানের ব্যান্ড বাজনোর প্ল্যানিং করছে আদ্র)
আদ্রের কান্ডে অভ্র না হেসে পারলো না। তখন আদ্র প্রিয়ার হাত ধরায় যখন প্রিয়া কান্না শুরু করে দেয় তখনি বাড়ির দারওয়ান সেটা দেখে ভিডিও করে ফেলে।এবং অভ্রের কাছে পাঠায়। দারওয়ানের সাথে আদ্রের একটা পার্সনাল শত্রুতা আছে তাই দারওয়ানও সুযোগটা কাজে লাগায়।
আদ্রের বয়স ১১ বছর।কিন্তু শরীরের গ্রুথ এবং হাইট ভালোই হওয়াই বয়সের তুলনায় অনেকটা বড়বড় দেখায় আদ্রকে অভ্রের মতো।
” অবশেষে তারা বিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। জায়গাটা একটু গ্রাম সাইডে।প্রায় দুইঘন্টা লেগেছে এখানে আসতে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলেও অভ্ররা এখনো নামেনি গাড়ি থেকে। ড্রাইবারকে দিয়ে প্রিয়াকে আর আদ্রকে পাঠিয়ে দেয় অভ্র। ওরা যেতেই অভ্র নিজেই প্রেমাকে ডাকতে লাগলো। কয়েকবার ডাকার পরই প্রেমা চোখ মেলে থাকায়। তারপর হঠাৎ নিজের বেহুশের ন্যায় ঘুমানোর কথা মাথায় আসতেই লজ্জায় পরে যায়।
অভ্র মনে মনে হাসছে ভাবছে কতোটা ঘুম ভাড় হলে এতোক্ষণ ধরে গাড়িতে ঘুমানো যায়।
“চলেন সবাই ভেতরে চলে গিয়েছে।(অভ্র)
” আমি এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিলাম ডাকো নাই কেন? একটু ডাক দিতে। (বলেই গাড়ি থেকে বের হয়ে অভ্রের সামনে এসে দাড়ায়)
” ভেবেছিলাম হঠাৎ ঘুম ভাঙালে আবার যদি আপনার মাথায় ব্যাথা শুরু হয়ে যায়??(অভ্র)
” থ্যাংক’স! আসলেই আমার মাথা ব্যাথা শুরু হতো ভালো করেছো না ডেকে ‘চলো..(প্রেমা)
এরপর দুজনে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। মেহেদীর অনুষ্ঠানে ও অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে।জমজমাট একটা পরিবেশ।সবাই খুব যত্নে খাতিরদারি করছে তাদের।নানা রখম আমেজে ব্যাস্ত প্রেমার ইচ্ছে করছে কোথাও নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসতে।
আশেপাশে উঁকি দিয়ে অভ্রকে খুঁজতে লাগে প্রেমা।হঠাৎ চোখ যায় একটু দূরে অভ্র দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি ওর দিকেই স্থির ।অদ্ভুদ তার চোখের চাহনিটা। এভাবে তাকানো দেখে প্রেমা একটু নড়েচড়ে উঠে।দেখে তাতে অভ্রের দৃষ্টি সরছে না। তাই উঠে গিয়ে অভ্রের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
” হাবলার মতো তাকিয়ে আছে কেন??(প্রেমা)
“হাবলীকে দেখছি..(আনমনে)
” কী??
” আরে চোখের ব্যায়াম করছি। এভাবে এক ধ্যানে কোনো স্থানের দিকে নিজের দৃষ্টিকে স্থির রাখলে চোখের একপ্রকার ব্যায়াম হয়। আর আমার চোখে ঘুমের দরকার। এখানে ঘুমাতে পারবো না ঠিক মতো তাই এই স্টেপটা নেওয়া।(বলেই একটা হাসি দেয়)
প্রেমা হা করে অভ্রের কথাগুলো শুনে যায়।ভাবছে এমন কোনো ব্যায়াম আদৌ আছে কি না?? থাকলেও থাকতে পারে।কিন্তু অন্যদিকেও তো তাকানো যেতো।
প্রেমা কিছু বলতে নিলে তার আগেই অভ্র বলে উঠে-
” আসলে বিয়ে বাড়িতে হুটহাট কারো দিকে এভাবে তাকালে মাইন্ড করতে পারে।তাই আপনার দিকেই তাকিয়েছিলাম। কারন আপনি মাইন্ড করবেন না।
“নাকি আপনি মাইন্ড করেছেন??
” এ্যাহ,,আরে না না আমি মাইন্ড কেন করবো।এমনি বলছিলাম।(থমথম গলায় বলে উঠে)
” আচ্ছা! যান আম্মুর পাশে গিয়ে বসে থাকেন!(অভ্র)
“আমার ভালো লাগছেনা।এখানে নিরব নিস্তব্ধ কোনো জায়গা আছে যেখানে একটু বসে থাকতে পারবো??
অভ্র প্রেমার কথা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। অভ্রের নিজেরও ভালো লাগছে না।কিন্তু এখন এখান থেকে নড়তে পারবে না। তাই বলে উঠে-
” আমারও ভালো লাগছে না।আচ্ছা আপনি বসেন আমি দেখে আসছি। (বলেই অভ্র বাইরের দিকে চলে যায়)
প্রেমা গিয়ে অভ্রের মায়ের সাথে বসে থাকে।আর অভ্র বের হতেই অভ্রের ফোনে একটা কল আসে।কলটা রিসিভ করে।
” ভাইয়া! আপনি যেভাবে বলেছেন সেভাবে করেছি!(লোকটি)
“ঠিক আছে। (অভ্র)
কল কেটেই মনে মনে শয়তানি হাসি দেয়।
” আমার থেকে আমার প্রেমাকে কেড়ে নিতে চাইলেই আমি তার এমন অবস্থা করবো। আর রইলো বাকি কথা নিজের ভাইয়ের। আমার আর প্রেমার মাঝে যেই আসবে তাকেই আমি….(মনেমনে)
অভ্র বাড়িতে ডুকতেই আরিয়ানের মায়ের কান্না শুনতে পায়।অভ্রের মা উনাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু উনি কেঁদেয় যাচ্ছে।
” (এতো সিরিয়াস কিছু হয়নি তোমার ছেলের সাথে।যে কান্নার সমুদ্র বানায় ফেলছো..মনেমনে–অভ্র)
(চলবে)
Tarin Jannat