#বসন্তের_ফুল
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১৪
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই অভ্রের চোখে মুখে বিরক্তির চাপ ফুটে উঠে। এসব কান্না-টান্না ওর একদম অসহ্য লাগে। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আরিয়ানের মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
” বড় মা কাঁদছো কেন??”(অভ্রের প্রশ্ন)
” তোর ভাইয়া নাকি আসার সময় সিঁড়ি থেকে
নামতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে পরে হাতে-পায়ে ব্যাথা
পেয়েছে।” (বলেই আরো কাঁদতে লাগলো)
বড় মা কথা শুনে অভ্রের কোনো হেলদোল নেই।স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।না খারাপ লাগছে না দুঃখ লাগছে তার। কিন্তু এ সময় একটু অভিনয় তো করার দরকার মনে হচ্ছে অভ্রের।
মুখে দুঃখের চাপ ফুটিয়ে তুলে শান্তনা বাক্য ছুড়ে মারে আরিয়ানের মায়ের দিকে।
” বড় মা! এভাবে কান্নাকাটি করলে কী ভাইয়ার ব্যাথা সেরে যাবে?? তুমি দেখো ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।চিন্তা করো না। “(সোফায় বসতে বসতে বলে)
তখনি ফোন বেজে উঠে আরিয়ানের মায়ের। ফোনটা আরিয়ান করেছে।মাকে বুঝায় যে তেমন অতিরিক্ত চোট পায় নি আংশিক। ব্যাথার মেডিসিন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সাথে এটাও জানিয়ে দেই যে ব্যাথা কমে গেলেই চলে আসবে।
শান্তির শ্বাস ছাড়ে আরিয়ানের মা।
” কী বলেছে ভাইয়া বড় মা??” (গম্ভীর কন্ঠে)
” ব্যাথা কমলেই আসার চেষ্টা করবে।”
সাথে সাথে অভ্র হাত মুঠো করে মাথা নিচু করে ফেলে। রাগ লাগছে প্রচুড়। চোখে মুখে রাগের চাপ নিয়ে মাথা তুলে। হালকা ঘাড় বাঁকা করে আরিয়ানের মায়ের পাশে তাকায় অভ্র। দেখে প্রেমার ওর দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখা-চোখি অবস্থায় অভ্র একটা মুচকি হাসি দেয়। বিনিময়ে প্রমাও মুচকি হাসি দেয়।কিন্তু চোখ দেখে অন্যরখম লাগছিলো অভ্রের।
_______
ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে অভ্র। রাত হয়েছে অনেক কিন্তু সেটা গ্রামের লোকজনদের জন্য। শহরাঞ্চলে রাত এগারোটা তেমন কোনো রাত নয়। মেহেদীর অনুষ্টান রাত দশটায় শেষ হয়ে গিয়েছে। সবাই বেঘোড়ে ঘুমাচ্ছে। চোখে ঘুম নেই শুধু তার।
কানে ভেসে আসে তার ভাই আর ফুলরানীর কন্ঠ।ধ্যান ভেঙে যায় অভ্রের। পাশেই প্রেমা আর আদ্র চেয়ারে বসে বকবক করছে। অভ্র ভেবেছিলো এমন শান্তিময় একটা রাতের পরিবেশে ঠান্ডা বাতাসে প্রেমার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে। বন্ধু হিসেবে তো অনেক কথায় বলা যায়।
” প্রেমাপু আমি তোমার সাথে থাকবো!(আদ্র)
” আদু আজ তো প্রিয়া আর সাইরা থাকবে আমার সাথে তুমি তোমার ভাইয়ার সাথে থাকিও।(প্রেমা)
” না! সাইরাকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। আমি আপনার সাথেই থাকবো। প্লিজ!(আদ্র)
” না মানে না! (গলার স্বর হালকা শক্ত করে)
” (কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে) বুঝেছি আমার নিজের বড় আপু নেই বলে আজ আপনি এমন করছেন? আচ্ছা থাকবো না। (গাল ফুলিয়ে চলে যেতে নিলেই প্রেমা আটকায়)
” ঠিক আছে ঠিক আছে। (প্রেমা)
আদ্র সব দাঁত দেখিয়ে একটা হাসি দেয়। তখনি অভ্র এসে আদ্রের পাশে দাড়ায়।
” এখন যাহ মায়ের পাশে গিয়ে বসে থাক। এখান থেকে যা…(অভ্র)
” তুমি যাও মায়ের পাশে গিয়ে বসো! (হালকা গলা উঁচু করে বলে)
আদ্রের কথায় অভ্র কিছু একটা ভাবলো।তারপর আস্তে করে নিজের হাতটা পকেটে রাখে।সেটা দেখার সাথে সাথেই আদ্র দাড়িয়ে যায়। ধপাধপ পা চালিয়ে চলে যায়।
আদ্রের এমন কান্ডে প্রেমাও অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছিলো। পরক্ষনে হেসে দেয় প্রেমা। হাসি থামিয়ে অভ্রের দিকে নজর দেয় প্রেমা। আবারও সেই দৃষ্টি। প্রেমার ভেতরটা খচখচ করে উঠে।কেন যেনো এখানে একা থাকাটা ওর মনে সায় দিচ্ছে না। আস্তে করে দাড়িয়ে যায়।
” আমার ঘুম পাচ্ছে গুড-নাইট!!
প্রেমা পেঁছন ফিরে চলে যাচ্ছে। অভ্রের ইচ্ছে করছে প্রেমার হাত ধরে আটকাতে। কিন্তু পারছে না। হয়তো দ্বিতীয় বারের মতো স্পর্শ করলে আর নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না।কোনো ভুল যদি করে ফেলে। কিন্তু অভ্রের প্রবল ইচ্ছে এ মুহুর্তে ওর প্রেমা ওর সাথে থাকবে।কিছুটা সময় কাটাবে। কিন্তু কীভাবে আটকাবে।
“প্রেমা!!”
অভ্রের ডাক শুনে থেমে যায় প্রেমা। ঘাড় ঘুরিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্র প্রেমার দিকে তাকানো অবস্থায় ছিলো।
“কিছু বলবে??”
” আপনাকে কিছু দেখাতে চায়?”
” কী??
লম্বা পায়ে দুই-তিন কদম পা বাড়িয়ে প্রেমার
সামনে গিয়ে দাড়ায়। প্রেমা আবারও পিছিয়ে যেতে নিয়েও থেমে যায়। অভ্রের বুক বরাবর প্রেমা। কথা বলতে হলে মাথা উপরের দিকে তুলে কথা বলতে হয় প্রেমার। কিন্তু অদ্ভুদ ভাবে প্রেমার শ্বাসের গতি পরিবর্তন হতে লাগলো হঠাৎ করেই। প্রেমার শ্বাস-প্রশ্বাসের ভাষাও যেনো অভ্র বুঝতে পারে।
হালকা হাসে। প্রেমাকে একটু স্বাভাবিক করার জন্য অভ্র বলে উঠে-
” একটা সত্যি কথা বলবেন??(আভ্র)
” কী?? (মৃদু স্বরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে)
” আপনি কী আমাকে ভয় পাচ্ছেন??
” থমথম খেয়ে যায় প্রেমা।কী বলবে? একটু আগেই তো ভয় করছিলো।এখনো হালকা হালকা ভয় করছে।কিন্তু তা অভ্রকে বুঝতে না দেওয়ার প্রবল চেষ্টাও করেছে এতক্ষণ। কিন্তু সফল হয়নি। অভ্র বুঝতে পেরে গিয়েছে।
প্রেমার নিরবতা দেখে অভ্র একটু শব্দ করে হেসে দেয়।
“আরে আমি মজা করছিলাম! আর আপনি
তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছেন!(অভ্র)
অভ্রের এই বাক্যটা যেনো প্রেমার ভয়টাকে টুপ করে কমিয়ে দেয়। এতক্ষণ কী না কী ভাবছিলো শুধু শুধু…
” আরে না! তোমাকে কেন ভয় পাবো?? তুমি তো ভালো ছেলে!! (মুচকি হাসি দিয়ে)
“(এতোটাও ভালো না ফুলরানী! আমাকে ভালো ভাবাটা আপনার বোকামি হবে। কারন আজ ছাড় ফেলেও সঠিক সময়ে আপনি আমার থেকে ছাড় পাবেন না। আমিত্ব কে প্রকাশের সময় আসলেই সব আপনি আপনি বুঝে যাবেন ” আমি আসলেই কী”?___মনেমনে)
” হ্যাঁ সেটা আপনার মুখের ভঙ্গিমা দেখেই বুঝতে পেরেছি! আর বলতে হবে না। চলেন!(অভ্র)
” কোথায়??(প্রেমা)..
“ওইদিকটায়! (প্রেমার পেছনের দিকে ইশারা করে দেখায়)
প্রেমা পেঁছন ফিরে দেখে সেখানে অন্ধকার। সাথে সাথে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্রের ঠোঁটেট কোণায় মিষ্টি হাসি ঝুলানো। এটা দেখে প্রেমা চোখ ছোট ছোট করে অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে-
” আমি যাবো না! (প্রেমা)
“তারমানে ভয় পাচ্ছেন??
” কাকে??
” হয়তো আমাকে…নয়তো ওই অন্ধকারকে!!
কথাটা বলেই অভ্র অন্ধকারের দিকে হাঁটা দেয়।প্রেমা অভ্রের কথায় আর কিছু বলতে পারেনি।যেনো কথা তার মধ্যে থেকে পুরিয়ে গেছে। আর কোনো ভাবনা মনে না এনে সাহস নিয়ে গুটিগুটি পায়ে অভ্রের পেঁছনে হাঁটা দেয়।
অন্ধকারের মধ্যে যেতেই মুহুর্তে প্রেমার চোখ-মুখে আনন্দ এবং খুশীর চাপ ফুটে উঠে। অভ্রকে নিয়ে এতক্ষণ হাবিজাবি চিন্তা করছিলো।আর অভ্র এই অন্ধকারে এসে ওর মুখের হাসিটা এনে দিয়েছে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠে-
“জোনাকিপোকা!!!(প্রেমা)
” আপনারতো জোনাকিপোকা পছন্দ!!
” তুমি কিভাবে জানলে??(ভ্রু কুঁচকে)
স্তম্ভিত ফিরে আসে অভ্রের। ” ইস কী বলে ফেললাম”!
” কী বিরবির করছো?? বলো কিভাবে জানলে??
” জানার কী আছে? জোনাকিপোকা সবার প্রিয়। দেখছেন না কিভাবে নিজে আলো জ্বালিয়ে অন্ধকারকে কেটে আলোকিত করছে। বিশেষভাবে আমার খুবই প্রিয়।তাই ভাবলাম হয়তো আপনারও প্রিয়।”
“ওওহ! (ছোট করে)
এরপর আর কেউ কথা বলেনি অনেক্ষন যাবৎ। পাশাপাশি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেও এরপর অভ্র কিছুটা পিছিয়ে আসে প্রেমার থেকে। অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও অপর সাইডের মৃদু আলো এসে প্রেমার হাত খোপাটায় পরছে। চুলের খোপাটাকে বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে অভ্র! ইচ্ছে করছিলো প্রেমার চুলের খোপায় নিজের হাত গুজে দিতে।
” ( একদিন তো সব আমারই হবে। তখন না হয় নিজের ইচ্ছেগুলো আপনাকে দিয়ে পুষিয়ে নিবো!)
“অনেক্ষন চুপ থাকার পর নিরবতা ভেঙে অভ্র বলে উঠে-
” কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন??
“কেন??
” হাঁটতে যাবো! সকাল সকাল গ্রামের দৃশ্য খুব সুন্দর হয় দেখতে। তাই আমি মিস দিতে চায় না! আপনি যাবেন??
” কিছুক্ষন চুপ থেকে প্রেমা বলে উঠে -” ঠিক আছে”
“প্রেমার কণ্ঠস্বর শুনে অভ্র বুঝতে পারে প্রেমার এখন ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা! পরে দেখা যাবে এখানেই শুয়ে পরবে।অতঃপর দুনিয়া-দারির খবর থাকবে না আর প্রেমা”
” আপনি যান ঘুমিয়ে পড়ুন!
“তুমি?? (নিচু শব্দে)
” আমি আরো দেড়ি আছে আপনি যান!
প্রেমার দ্বারা আর অপেক্ষা অসম্ভব তাই চুপচাপ হাঁটা দেয় ঘুমানোর জন্য!!
______
আরেকটু রাত হতেই অভ্রের ফোনের টিউনটা বেজে উঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে সাইকান বলে উঠে-
” সত্যি করে বলতো কী করেছিস আজ আবার??
“কী করেছি??
” সেটা তুইই ভালো জানিস??
” কিজানি!!”
“ভাইয়া পরে গেলো কিভাবে?? হুট করে?? এমনি এমনি তো পরে যাবে না! আর ভাইয়া তো বাচ্চা না..
” হঠাৎ এতো দরদ কেন??
” কী করেছিস বল??
” দুইটা কাজ করেছি কিন্তু আমি যেকোন একটায় বলবো?? তুই কোনটা জানতে চাস??
“ভাইয়া পরলো কিভাবে??কতো ব্যাথা পেয়েছে জানিস??
” বেশি কিছু না জাস্ট তেল ঢালা হয়েছে।তাতেই ওই আকাম্মা পরে গেলো! তাতে আমার কী!!
” তোর কী মানে..তোর…
আর কিছু বলতে পারেনি সাইকান! অভ্র ফোনের লাইনটা কেটে দেয়।
(চলবে)
Tarin Jannat