বসন্তের_ফুল🌺পার্ট ১৬

0
1992

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#Written_by_Tarin_Jannat
#পার্ট১৬

প্রেমা শূন্য দৃষ্টিতে অভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মনেমনে কয়েকটা প্রশ্ন ও করে ফেলে নিজে নিজে। হঠাৎ অভ্রের এমন আচরণ প্রেমার মাথার উপর দিয়ে যায়। তখনি ফোনে কল আসতেই প্রেমার ধ্যান ভাঙে।

ফোনের দিকে তাকাতেই দেখে আসিফের কল। হালকা অভিমান নিয়ে কলটা রিসিভ করে।

“এতোদিন পর মনে পড়লো আমার কথা? (প্রেমা)
” থাপ্পর খাবি! ফাজি মেয়ে আমাকে আর মিমকে ব্লক করছিলি কেন?(আসিফ)
“আরে আমি কখন ব্লক দিলাম তোরাই তো ফোন দিলি না আমাকে। কেমন আছি খোঁজ নিছিলি একবারো??(প্রেমা)
” এ্যাহ! ব্লক মেরে এখন ন্যাকামী করছিস! তোর জন্য না চাইতেও আগের সিম টা অন করতে হলো।(আসিফ)
“সত্যি বলছি বিশ্বাস কর! আমি ব্লক দেই নি তোদের(প্রেমা)

এভাবে দুজনে আরো টুকটাক কথা বলে।

________

অভ্র ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে যায়। রাগ করতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু পারছেন। বার বার নিজেকে রাগ করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে কিন্তু ব্যার্থ হচ্ছে।

ওয়াসরুমে গিয়ে ঝাপটা দিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে ফেলে। তাতেও শান্ত হতে পারছেনা। পকেটে হাত দিয়ে বেসলেটটি জোরে চেপে ধরে। আচমকা মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে অভ্রের। পকেটে থেকে হাত বের করতে আৎকে উঠে, নিজের জন্য না প্রেমার জন্য।

” সিট…(অভ্র)

দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে যায়। গিয়ে দেখে প্রেমা বসে আছে চেয়ারে। অভ্র প্রেমার কাছে গিয়ে হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে দাড় করাল। অভ্রের অপ্রত্যাশিত আগমনে প্রেমা ভয় পেয়ে যায়। অভ্র আবার আসবে ভাবেনি।
বারবার প্রেমার হাত দু’টো এ পৃষ্ঠ ও পৃষ্ট উল্টিয়ে দেখতে লাগল অভ্র। ডান হাতে হালকা ছিঁড়ে গেছে এবং তাতে সামান্য রক্ত দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে চোখ লাল করে এবং নাক ফুঁলিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে প্রেমার দিকে তাকাল অভ্র। প্রেমা নিজেও কথা বলতে পারছে না। হয়তো অভ্রের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। নিজের এহেন আচরণে প্রেমা নিজেও হতবাক।

“ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছিলে?? ( কর্কশ কন্ঠে)
” নাহ, মানে…(প্রেমা)
“কেয়ারলেস।
কথাটা বলেই অভ্র প্রেমার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দেয় এবং নিচে নেমে যায়। যাওয়ার আগে প্রেমাকে শাসিয়ে যায় যাতে সেখান থেকে এক পা ও না নড়ে। প্রেমার মাথা নেড়ে সায় দেই এবং চেয়ারে বসে পরে।

” কী রাগ রে মাইরি! (প্রেমা)

কিছু সময় পর অভ্র দৌড়ে আসে। এবং প্রেমার সামনে চেয়ারে বসে প্রেমার হাত টেনে নিজের হাতের উপর রাখে।তারপর আলতো করে ওয়েন্টমেন্ট লাগানো শুরু করে। ছোট ছোট ফুঁ দিচ্ছিলো।

” এতোটাও ব্যাথা পায়নি যে মলম লাগাতে হচ্ছে।(প্রেমা) ” অভ্র মাথা তুলে প্রেমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই প্রেমা একটা হাসি দেয়। যাতে অভ্রের রাগটা একটু কমে। কিন্তু অভ্র আবারও হাতের দিকে তাকিয়ে ফুঁ দিতে শুরু করে।

” হাত ছাড়ো আমি নিচে যাবো।(প্রেমা)
“কখনোই না!
” কী না??
” হাত ছাড়বো না! (দাঁত কটমট করে বলে)
“দেখো আমি…
” তুমি চুপ থাকবা?(অভ্র)
অভ্রের মুখ থেকে তুমি শুনে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল প্রেমার। কারন অভ্র কথাটা বলার সময় এতো সুন্দর করে বলেছে যে প্রেমার কানে বারি খাচ্ছে।অভ্রের কেন যেনো প্রেমার মুখ দেখলেই বুঝে যায় প্রেমা কী ভাবছে।সেদিকে খেয়াল না দিয়ে অভ্র প্রেমার হাত ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

” রুমে যাও আর বের হওয়ার দরকার নেই। (অভ্র)
“আমি এখানেই থাকবো রুমে বো…
“যেতে বললাম যাও।
” তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নয়।(প্রেমার হঠাৎ রেগে যায় তাই কথাটা বলে)
” অবশ্যই বাধ্য। বলেছিলাম তো আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করলে আমার দেওয়া রুল’স ও মানতে হবে। এখন যাও..(অভ্র)

প্রেমার আচমকা এতো রাগ হয় যে পাশের চেয়ারটা হাতে নিয়ে জোরে আছাড় মারে এবং নিচে নেমে যায়। একটু পেঁছন ফিরে তাকালেই দেখতে পারতো ওর রাগ দেখে অভ্র হাসছিলো।

প্রেমা নামতেই অভ্র চোখ মুখ আবারও কুঁচকে ফেলে। এবং ছাদের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়। দরজাটা প্রচন্ড জোরে ধাক্ক দেয়। সাথে সাথে কারো চিৎকার অভ্রের কানে ভেসে আছে। ঠোঁটের কোণার হাসিটা নিজেনিজে বড় হয়ে যায়। অন্যদিকে সাইকা ব্যাথায় ছটপট করতে লাগে।

“লুকিয়ে কথা শুনার অভ্যাস গুলোতে আমি খুবই বিরক্ত! এখনো সময় আছে শুধরে যা।(অভ্র)

“আম আমি তোমাকে ভালোবাসি! বিশ্বাস করো ভাইয়া!(সাইকা)

” সময় আছে শুধরে যা বললাম তো! আর যদি তোর মুখ থেকে এসব কথা শুনি তাহলে আমি ভুলে যাবো তুই আমার ফু্ফির মেয়ে।(অভ্র)

” তারমানে এটাই ধরবো যে তুমি ওই প্রেমাকে ভালোবাসো?? (সাইকা)

“তোর ধরা তুই যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ধর! আই ডোন্ট কের…(বলেই অভ্র নেমে যায়)

_________

সন্ধ্যায় সবাই গায়ে হলুদের অনুষ্টানের জন্য সাজে-সজ্জায় ব্যাস্ত হয়ে পরে। আর অন্যদিকে আরিয়ানের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে।সবাই রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে।অভ্র বাদে। বেশ আয়েশ করে সোফায় বসে ফোন গুতাচ্ছে অভ্র। শান্তি লাগছে তার এখন অনেক।

” এতো কষ্ট করে পছন্দ করে শাড়ি কিনলাম। দেখো তোমরা কী অবস্থা করেছে শাড়িটার।(আরিয়ানের মা)

” বুঝতে পারলাম না শাড়ির উপরে এতো রাগ হলো কার? যে এভাবে শাড়িটাকে কুচিকুচি করে কেটেছে?(অভ্রের দাদু)

“এখানে তো বাইরের কেউ আসেনি! করলো কে এমনটা?(অভ্রের মা).

অভ্র আস্তে করে সবার মাঝখান থেকে উঠে ছাদে চলে যায়। আকাশের দিকে তাকায়। গভীরভাবে একটা শ্বাস নেয় এবং ছাড়ে।

” শাড়ি এবং সাজে প্রেমাকে শুধু আমিই দেখবো।আর কেউ না! আর কেউ না!!”(মনে মনে)

(চলবে)

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here