#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩২
সন্ধ্যা ছয়টা। আজ তেমন গরম নেই।চারিদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। বৃষ্টি আসবে হয়তো। কাঁথা মুড়িয়ে বিছানায় আলুথালু অবস্থায় শুয়ে আছে প্রেমা।
এলোমেলো চুল। চেহারায় স্পষ্ট চিন্তার চাপ,এবং মলিনতার ছোঁয়া। উরনা বালিশের পাশে রাখা।
বারান্দার দরজা খুলা যার ফলে হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস রুমে প্রবেশ করছে।
আগে প্রেমা দিনকে দিন ফোনের মধ্যে সময় কাটাতো।এখন এই ফোনটাকেও বিরক্ত লাগছে প্রেমার।হঠাৎ উঠে প্রেমা ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ে আবারও। ফোন আনলক করে সোজা মেসেঞ্জারে ঢুকে।
মুহুর্তে প্রেমার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়।বসন্ত পথিক নামের আইডির এখন সক্রিয় দেখাচ্ছে। অনেক ভেবে প্রেমা নক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।পরমুহূর্তে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফোন হাত থেকে রেখে দেয়।
কিছুসময় চোখ বন্ধ করে রাখে প্রেমা। এরপর বিছানা ছেড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ভালো করে নিজেকে দেখে নেয়। একবার চুলে,একবার গালে,আরেকবার ঘাড়ে নিজের হাত দ্বারা স্পর্শ করে।
সাথে সাথে চোখ ভিজে আসে,এবং অস্পষ্ট গলায় বলে উঠে,
“আমি তো সাধারন। খুবই সাধারন। কারো মনের জায়গা পাওয়ার অধিকারও হয়তো আমার নেই। কারো মনে? আচ্ছা কি চাই আমি? (প্রেমা)
প্রেমা নিজেও হকচকিয়ে যায়।নিজের অদ্ভুদ প্রশ্নে।প্রেমার মন এখনো স্থির করতে পারেনি। চারিদিকে
হৈ-হুল্লোড় ওর কাছে বিষ সমতূল্য। পরিবারের কথায় যদিও আরিয়ানকে বিয়ে করে। তাহলে প্রেমা আদৌ সুখী হতে পারবে কি না তার জানা নেই। কিন্তু ওর মনে অন্য কেউ নেই।না ছিলো, না আছে। তারপরেও সে আরিয়ানকে মানতে পারছেনা।
তবে আশেপাশে অভ্রের অনুপস্থিতি ওর বুকের যে কষ্ট হচ্ছে তার ব্যাখ্যাও নিজের কাছে নেই প্রেমার। তারপরেও কথাবলার জন্য হলেও প্রেমার অভ্রকে চাই।
হাজারো শব্দ দ্বারা গঠিত বাক্যের প্রতিটা প্রশ্ন এবং ভাবনায় প্রেমা সচকতি হয়। পায়ের প্লাজুটা তুলে নুপুরজোড়ার দিকে দৃষ্টি দেয়। গাঢ় চাহনিতে নুপুরজোড়া পরখ করতে করতে প্রেমার মনে আরো একটা ভাবনা চেপে বসে।
অভ্র সব বলেছিলো কিন্তু একবারো বলেনি যে প্রেমাকে ভালোবাসে। ব্যস এটুকু ভাবনায় যতেষ্ট ছিলো প্রেমার জন্য। অভ্র যা করেছে সব মোহে পড়ে করেছে।মোহ কেটে গিয়েছে।তাই এখন অভ্র সব ভুলে গিয়েছে। কথাগুলো ভেবে প্রেমা চট করে নুপুরজোড়া খুলে ফেলে।এবং পাশের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়।
______________
বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইকে চেপে অনেকটা দূর চলে আসে অভ্র। সাথে সাইকানও। সবুজ কড়ের উপর বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে অভ্র।যা সাইকানের রাগকে বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। এমনিতে টেনশানে তার মরিমরি অবস্থা।
“অভ্র কি করছসি ফোনে? আর এতো হাসি কেন তোর মুখে? (সাইকান)
কঠিন স্বরে অভ্র বলে উঠে,
” আমার হাসি আমি যেমন ইচ্ছে হাসবো।তোর এতো জ্বলে কেন? (অভ্র)
“আমার জ্বলে কেন মানে? আরে তোর তো টেনশানে কাঁদার কথা।তা না করে তুই হাসছিস! পাগল তুই?(সাইকান)
সাইকানের কথায় অভ্র কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকায়।তার ঠোঁটে হাসি বিদ্যমান অবস্থায় বলে উঠে,
” আমি কাঁদবো কোন দুঃখে? আর টেনশানই বা কিসের? (অভ্র)
অভ্রের খাপছাড়া কথাবার্তায় সাইকানে রাগে ফেটে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“আরিয়ান ভাইয়ার সাথে প্রেমাপুর বিয়ে।বুঝতে পারছিস না তুই? যে তুই ওর বিয়ে ভাঙানোর জন্য পাগলামি করেছিলি। সে তুই এখানে শান্তিতে কিভাবে বসে আছিস? মানে তোর কষ্ট হচ্ছেনা? (সাইকান)
সাইকানের উঁচু স্বরে বলা কথা শুনে অভ্র বুঝতে পারে,সাইকান এখন সিরিয়াস মোডে আছে।তাই আগুনে ঘি ঢালতে শুরু করে আবারও,
” সে তখন আমি অবুঝবালক ছিলাম তাই।কিছুই বুঝতাম না।আই মিন ভালো-মন্দ। অহেতুক পাগলামি করেছি।এখন তো আমি বুঝদার। শুধু শুধু অবুঝের মতো কাজ করবো কেন? তাই আগে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। (অভ্র কথাটা বলে বড় একটা হাসি দেয়)
সাইকান দাঁত কটমট করে বলে,
“তার মানে প্রেমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হলে তোর কিছু যায় আসে না?(সাইকান)
অভ্র শান্ত গলায় জবাব দেয়,
” না, একদম যায় আসে না। ইনফ্যাক্ট আমার
জ্বলবেও না।আমি আমার মতোই ভালো আছি।
“শালা তাহলে এতোদিন আমাকে দিয়ে গাধার মতো খাটিয়ে ছিলি কেন? (সাইকান)
সাইকানের কথায় অভ্র দাঁড়িয়ে যায় এবং দু’হাত পেন্টের পকেটে গুঁজে দিয়ে সাইকানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
” কারন তুই গাধা তাই। (অভ্র)
অভ্রের কথা শুনের সাইকান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
অভ্রের সেদিকে কোন ভাবান্তর নেই।সে নিজ মনে হাঁটতে শুরু করে৷ আর ঠোঁটের কোণায় সেই পাগল করা মৃদু হাসি ঝুলছে। বাতাস এসে চুল এলোমেলো করে দেয় অভ্রের।চারপাশের গাছপালাও যেন অভ্রের ঠোঁটের মৃদুর হাসির অর্থ বুঝতে পারছে।যা অন্যরা বুঝতে অক্ষম।
_______________
আজ বুধবার। মাঝখানে বৃহস্পতিবার একদিন বাকি।শুক্রবারে বিয়ে।তাই দু’পরিবার মিলে আজ বিয়ের শপিং করতে যাবে।প্রেমার যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছেও ছিলোনা।অভ্রের সামনে যাওয়ার সাহস এ মুহুর্তে প্রেমার নেয়। নিজের বেহায়া মনের অনুভুতি গুলো অভ্রেস সামনে প্রকাশ করতে চাই না প্রেমা।তাই সকাল থেকে বাহানা দিয়ে এসেছে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলের কাছে হার মানে।যেতে রাজি হয় শপিংএ।
বিকালের দিকে সবাই একসাথে শপিং মলে গিয়ে দেখা করবে। এদিক থেকে সবাই বের হয়ে গিয়েছে।শুধু প্রেমা বের হওয়ার পালা।ঠিক সেই মুহুর্তে প্রেমা কিছু একটা মনে করে আবারও রুমে গিয়ে আয়নার সামনের দাঁড়ায়। চোখে গাঢ় কাজল দেয়,এবং ঠোঁটজোড়া গোলাপি রঙে রাঙায়। চুল ছেড়ে দেয়।
প্রেমা ইচ্ছে করেই আজ অতিরিক্ত সেজেছে।প্রেমার জন্য যদিওবা এ সাজ খুবই কম।তবুও আজ সে সেজেছে।
গাড়ি থেকে নামার পরপরেই অভ্রের দৃষ্টি যায় প্রেমার উপর। সঙ্গে সঙ্গে চোখমুখ লাল বর্ণ ধারন করে অভ্রের। আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে আবারও প্রেমার দিকে তাকায়। ভেতরে ক্রোধের গতি অতিরিক্ত মাত্রার হলেও বাইরে থেকে একদম স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
আরিয়ানের মা এসে প্রেমার হাতে ধরে উনার এক বান্ধবীর সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যান।প্রেমা যাওয়ার পথে আঁড়চোখে একটু করে অভ্রকে দেখে নেয়।বাকিরা সবাই কুশল বিনিময় শেষ করে শপিংমলে প্রবেশ করে।
সবাই সবার মন মতো কেনাকাটায় ব্যাস্ত। অন্যদিকে প্রেমা, আদ্র,আর প্রিয়া কর্ণারে একসাথে বসে চিপস খাওয়াই ব্যাস্ত।প্রেমা আর আদ্র মাঝে মাঝে ফিসফিস করে কথা বলছে। এরপর আদ্র আবারও মুখ ভাড় করে ফেলে।আরিয়ানের সাথে প্রেমার বিয়েটা মানতে আদ্রও নারাজ। কথার ফাঁকে প্রেমা অনেকবার অভ্রের দিকে তাঁকায়।কিন্তু অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।প্রেমার দিকে একবারের জন্যও তাকায়নি।যা প্রেমার মনটা আরো দ্বিগুন খারাপ করে তুলেছে।
একসময় আদ্র এবং প্রিয়ার মাঝখান থেকে উঠে শপিংমল থেকে বের হয়ে যায়।সবার দৃষ্টি অগোচরে।
(চলবে) Tarin Jannat