বসন্তের_ফুল🌺পার্ট ৩৯

0
1723

#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩৯

মাঝ পথে হাঁটু মোড়ে বসে যায় প্রেমা। বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করে। বসার পরোই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি।ঝুমঝুম বৃষ্টির পানি শরীরের সংস্পর্সে আসতেই উম্মাদ হয়ে উঠে অভ্র আর প্রেমা।
প্রেমার সামনে অভ্রও হাঁটু মোড়ে বসে। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-“থামলে কেন? চলো।(অভ্র)
-” পারছি না,অনেক্ষণ ধরে দৌড়েছি।আর পারবো না।
-“আসো কোলে নিই।(অভ্র)
চট করে প্রেমা দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ বিভ্রান্তিতে পড়ে।
নিজের মধ্যে লজ্জা অনুভব হচ্ছে। নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।অভ্রের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছেনা।
প্রেমার নুইয়ে যাওয়া অবস্থা দেখে অভ্র ভ্রু কুঁচিত করে,
-” কুঁজো হয়ে যাচ্ছো কেন? (অভ্র)
-নিরুত্তর রয় প্রেমা।
অভ্র প্রেমা বিভ্রান্তিরুপ দেখে দু’হাত তুলে প্রেমাকে স্পর্শ করার জন্য।প্রেমা ছিটকে দু’কদম পিঁছিয়ে যায়। বিষণ কাঁপছে প্রেমা।ঠান্ডায় এবং লজ্জায়।দুটোই প্রেমাকে আঁকড়ে ধরেছে গভীরভাবে।
প্রেমাকে মাথা থেকে পা অবধি দেখে নেয় অভ্র। নিজের গায়ের শার্টটা খোলে প্রেমার শাড়ির উপরে পড়িয়ে দেয়। প্রেমা চেয়েও মুখ থেকে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে পারে নি।
ব্যর্থ হয়।
অভ্র আগের ন্যায়ে প্রেমার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।
প্রেমা আঁড়চোখে অভ্রের দিকে তাঁকায়। কালো গেঞ্জিতে চমৎকার লাগছে। প্রেমার ইচ্ছে করছে মুখফুটে অভ্রের প্রশংসা করতে।দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে বলতে পারছেনা।মনেমনে ব্যর্থতার শ্বাস ছাড়ে।

এক-পা দু-পা করে হেঁটে নদীর কিনারায় চলে আসে দুজনে। দেখা মিলে নৌকার। উৎফুল্লতা গত বারের তুলনায় আরো দ্বীগুন উপচে পড়ে প্রেমা সর্বাঙ্গজুরে।

আমোদিত চোখে অভ্রের তাঁকয়। সেসময় অভ্রও তাঁকায়।ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কেমন হয়েছে।

প্রেমা নদীতে থাকা নৌকাটির দিকে তাঁকিয়ে খুশীতো স্বরে বলে উঠে,
“প্রকাশ করতে পারবো না।
অভ্র হেসে বলে, ” থাক এসব প্রকাশের দরকার নেই,আমাকে কেমন লাগে সেটা বললেই হবে।
প্রেমা লজ্জামিশ্রিত হাসি হেসে,চুল কানের গুঁজে।

সাদা বিভিন্ন ফুল ভর্তি নৌকা। প্রেমা উঠার পরেই অভ্র উঠে। দুজনে মুখোমুখি হয়ে বসে। ছোট একটা ছেলে নৌকা চালাতে শুরু করে।নদীর স্রোত এবং বৃষ্টিত স্রোত উভয়ের গতিবেগ অত্যন্ত গভীর। সবে তিনটা বাজে।কিন্তু গগনস্পর্শী কালো মেঘ।যেনো সন্ধ্যা নামার পূর্বমুহুর্ত। বৃষ্টি সমেত সমান তালে বাতাস বইছে।সাথে বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। মাতাল করার মতো মুহুর্ত।
অভ্র মাথা তুলে উপরের দিকে তাঁকায়।একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে।সে দৃশ্য আঁটকে যায় অভ্রের দৃষ্টিতে। আর প্রেমার দৃষ্টি আঁটকায় অভ্রতে। ভেজা চিপচিপে শরীরে সঞ্চিত বিন্দুজল।দারুন লাগছে অভ্রকে। প্রৃকৃতির বাতাস-বৃষ্টিতে মানুষের সংস্পর্শে আসলেই অন্যরুপে ধারিত হয় মানুষ। উপরের দিক থেকে হেসে চোখ সরায় অভ্র।প্রেমার দিকে তাকিয়ে রসিকতার স্বরে বলে উঠে,
-” বারবার এভাবে তাঁকালে,
পাগল হয়ে যাবে আমার জন্য।পরে নিজেকে সামলাতে পারবেনা। (অভ্র)
এবার প্রেমার কান্না করে দেয়। অর্থহীন কান্না। নাহ একদমি না।সুখের কান্না কাঁদছে।সত্যিই বলেছে অভ্র।
নিজমনে বলে প্রেমা।বৃষ্টির পানির সাথে প্রেমার চোখের পানিও মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।তবে তা আলাদা করতে সক্ষম অভ্র।
পেঁছন ফিরে তাঁকায় অভ্র,ছেলেটা নৌকা চালাচ্ছে উল্টো দিক ফিরে। প্রেমার আরো নিকটে এসে বসে অভ্র। প্রেমার দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নেয়।তখনি প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি না প্রেমা।(অভ্র)
আচমকা এই বাক্যটা প্রেমার কর্ণে মেঘের গর্জন তুলে।
হাত-পা শীতল হয়ে আসে। জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে। অভ্রের কথাটা শুনার জন্য প্রেমার প্রস্তুত ছিলোনা। টলোমলো চোখে চেয়ে থাকে অভ্রের দিকে।
ঝাঁটকা মেরে হাত সরাতে নিলে অভ্র শক্ত করে চেপে ধরে। এবং কড়া কন্ঠে বলে,
“-আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।কান্না থামাও।
-মাথা নিচু করে ফেলে।লাগামহীন চোখ জল ছেড়েই চলেছে। অভ্র ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে,
-আমি তোমাকে ভালোবাসি না ঠিক,কিন্তু আমার স্পন্দনে তোমারি নাম। আমার অনুভুতির রাজ্যে অনুভুতিরা রোজ কোলাহলে মত্ত থাকে তোমার নাম জপে। তোমাকে দেখলে আমি যেমন পাগল হয়ে যায়,তেমনি আমিও চাই তুমিও আমার জন্য পাগল হও। একে-অপরকে ছাড়া দিন-দুনিয়া বিষাক্ত হোক।
আমার জন্য এখন তুমি যেভাবে ছটপট করো,তেমন আমিও করি,করতাম এবং করবো।তবে এসব অনুভূতির নাম আমি ‘ভালোবাসা’ দিতে চাই না। এ শব্দটার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।ভালোবসা একদিন পুরিয়ে যায়।কিন্তু অনুভূতি এবং চাওয়া সময়ের তালে বাড়ে।এটা আমার বিশ্বাস।
অনুভূতিরা হোক সীমাহীন। উভয়ের!(অভ্র)
অভ্রের সব কথায় মৌনতার সহে প্রেমা শুনে যায়।এবার প্রেমা বুঝত সক্ষম। কেন অভ্র ভালোবাসার কথা বলেনি।তার মনেও এ শব্দটি আসেনি।যার দ্বারা অভ্রকে কাছে টানবে।সে সোজা বলে দিয়েছিলো।” আমার তোমাকে চাই।তারমানে ভালোবাসার চেয়ে অনুভূতির চাহিদা খর্ব নয় বরং বেশিই।
এবার প্রেমা হাসিমুখ নিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। তখনি
অভ্র বলে উঠে,
-আই ওয়েন্ট টু সি দ্যিস চার্মিং লুক ওফ ইউর’স।
প্রেমা হাসি সমেত রেখে বলে উঠে,
-হয়েছে,এবার আমাকে নাকের
ইমুজির রহস্যটা কী বলো। (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র শব্দ করে হাসে। এবং হুট করে প্রেমার কাছে গিয়ে প্রেমার নাকের সাথে নিজের নাকটা আলতো স্পর্শ করে।এবং দ্রুত সরে আসে। আচমকা ঘটনায় প্রেমা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে থাকে।অভ্র ওর নাক স্পর্শ করেছে।প্রেমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। প্রেমা নাকে হাত দিতে চাইলে অভ্র হাত ধরে ফেলে।
টেনে দাড় করায় প্রেমাকে। দুজনে পাশাপাশি দাড়ায়।তবে অভ্র হালকা দূরত্ব রাখে।যার ফলে প্রেমা রেগে অভ্রের হাত ধরে। মৃদু হেসে প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে অভ্র বলে।
“আজ দুজনে সাংঘাতিক জ্বর বাঁধাবো।(অভ্র)
“-তাতে কী? ‘আনন্দ নৌকা ভ্রমনটা’ তো সম্পূর্ণ হবে।
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে অভ্র প্রেমাকে নিয়ে বসে যায়। তারপর বলে উঠে,
-ফুল,নদী,বৃষ্টি আর তুমি এ চারটা আমার বিষণ পছন্দের। আর সেই সাথে আমার দুর্বলতাও।
-কিন্তু আমার পছন্দ একটাই এবং সেটা ‘তুমি।(গাল ফুলিয়ে বলে প্রেমা)
নিঃশব্দে হাসে অভ্র। প্রেমার গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছে করে অভ্রের। নিজের ইচ্ছে নিজের মধ্যেই পুষে রাখে।সব ইচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ করতে নেই।সময় দিতে হয়।
-আচ্ছা কাল তো বলেছিলে আরিয়ান স্যারকে নাকি কী ভাবে আটকাবে। কিন্তু বিয়ের কথাতো বলোনি।
প্রেমার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে অভ্র বলে,
-মেয়েদের নাড়িভুড়ি ছোট,সব বললে বিপদে পড়তে হতো তাই বলিনি। (অভ্র)
প্রেমা হালকা রাগে, তবে অভ্রকে সেটা বুঝতে না দিয়ে বল,” প্লিজ বলো না জান। (প্রেমা)
চওড়া কন্ঠে বলে উঠে অভ্র,
-এসব ওয়ার্ড আমার অপছন্দ। আমার নাম ধরেই ডাকবা। আর আমি যেটা বলতে চাইবো না সেটা জানতে না চাইলেই বেশি খুশী হবো।(অভ্র)
অভ্রর কথায় প্রেমা একটা ভেংচি দেয়।এবং বাঁ হাতটা এগিয়ে দেয় অভ্রের সামনে।অভ্র হাতের তালুর দিকে তাঁকিয়ে হেসে দেয়।
“থ্যাংক’স আমার কথাটা রাখার জন্য।(অভ্র)
প্রেমা বিদ্রুপ কন্ঠে বলে, ‘হুহ”
অভ্র প্রেমার চুল এলোমেলো করে দেয়।

এবং সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে ভাবে সেদিন রাতের কথা। আরিয়ানের পানির বোতলে হালকা ড্রাগস মিশিয়ে ছিলো অভ্র। পরে শুরু হয় অারিয়ানের উল্টা পাল্টা প্রলাপ। নেশার ঘোরে অভ্রের কথাটাই শুনেছিলো সে।অভ্র যা বলেছিলো তাই করেছিলো। বিয়ে করতে বলেছিলো। সেটাও নেশার ঘোরে হাসিমুখে করে নেয়। প্রথমবার হুট করে ড্রাগস শরীরে প্রবেশ করায় আর নিজের প্রতি নিজের কাবু ছিলোনা।অভ্র যাই বলেছে তাই মেনে নিয়েছে।অভ্র নিজের স্বার্থের জন্য এটা করেছিলো।প্রেমাকে পাওয়াও অভ্রের স্বার্থের মধ্যে পড়ে। অরির সাথে আগে থেকেই পরিচিত অভ্র। নিজের বড়বোনের দৃষ্টিতে দেখে।
অভ্রের কথায় না করতে পারেনি।অরির একটা শারীরিকগত সমস্যার কারণেই মূলত এই বিয়েতে রাজি হয়।

-আমি বাড়ি যাবোনা অভ্র।(প্রেমা)
স্তম্ভিত ফিরে অভ্রের। অবাক হয়ে তাঁকায় প্রেমার দিকে,
-তাহলে কোথায় থাকবে?(অভ্র)
-তোমার সাথেই। (প্রেমা)
অভ্র চোখ গরম করে প্রেমার দিকে তাঁকায়।সাথে সাথে প্রেমা চুপসে যায়।ভিতু কন্ঠে বলে ” মজা করছিলাম”
অভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে হাসে। এরপর চুপ মেরে যায়।
আধঘণ্টা পর বৃষ্টি থেমে যায়।তবে নৌকা করে তাদের ভ্রমণ থামেনি। বরং চলেছে বিকেল পর্যন্ত।

(চলছে)

কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি গুলো তুলে ধরবেন।নীরব পাঠকদের কিছু বলার নেই।তবে যারা গল্প পড়েন তাদের অসংখ্য ভালোবাসা আমার তরফ থেকে।
Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here