বসন্তের_ফুল🌺পার্ট ৪০

0
1774

#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৪০

প্রেমা অভ্রকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর মন খারাপ করে ফেলে। একবার অভ্রকে দেখে একবার নিজের হাতের দিকে চোখ দেয়।
মন খারাপ করে বলে উঠে,
-তুমিতো আমার থেকে বেশি ফর্সা,আর আমি তোমার থেকে বেশি কাইল্লা। (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ভ্রু কুঁচিত করে প্রেমার দিকে তাঁকায়।দেখে প্রেমার গাল ফুলিয়ে একবার নিজের হাত দেখছে আরেকবার অভ্রের হাত দেখছে।
অভ্রের হাসি চলে আসে। প্রেমার চুল একপাশে এনে বলে, “কে বলেছে তুমি কালো,তুমি সুন্দরী,আমর চেয়ে দ্বিগুন সুন্দরী তুমি।কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তোমার চুলের খোঁপা দেখে,যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিলো।
তো,কাইল্লা, ফর্সা এসব ভাবনা বন্ধ রাখো।(অভ্র)
-তুমি কার মতো হয়েছো?(প্রেমার)
প্রেমার প্রশ্নে অভ্রের চোখমুখের রঙ বদলে যায়। যেনো প্রেমার প্রশ্নটা তার সহ্য হয়নি। হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে গিয়েও থেমে যায়। নিজের হঠাৎ প্রতিক্রিয়াটা প্রেমার চোখে আবদ্ধ হওয়ার আগে নিজেকে সামলায়।জোরপূর্বক একটা ম্লান হাসি হাসে। যা দেখে প্রেমা অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাঁকায়। প্রেমা অভ্রের চেহারায় মলিনতার চাপ লক্ষ্য করে। ঠোঁট মেলে কিছু বলতে যাবে তার আগে ঝড়ের গতিতে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে। যা দেখে প্রেমাও হতবাক হয়ে যায়। অভ্রকে কেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তার।তাহলে কী অভ্র কিছু লুকাচ্ছে?
হাত আলগা করে অভ্রের ভেজা পিঠে রাখে। চোখ বন্ধ করে প্রেমা। অভ্র ও চোখ বুজে ফেলে।চোখের কর্ণিশ ভেদ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে অভ্রের।
কাঁধে গরম তরলের স্পর্শ পেতেই প্রেমা ধরে ফেলে অভ্র কান্না করছে। দ্রুত অভ্রের থেকে সরতে চাইলে অভ্র আরো শক্তভাবে নিজের সাথে
আবদ্ধ করে রাখে প্রেমাকে।
মিনিট দুয়েক পর প্রেমার থেকে সরে যায়।এবং দাঁড়িয়ে যায়।প্রেমাকে দাঁড়ানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অভ্রের হাতে প্রেমা হাত রাখলেই অভ্র টান দিয়ে দাড় করাই প্রেমাকে। প্রেমার মুখে কোনো হাসি নেই। তবে প্রেমা কিছু বলতে যাবে,অভ্র বলে উঠে,
-নামো আমরা এ পাড়ে চলে এসেছি। (অভ্র)
প্রেমা অভ্রের পেঁছনে তাঁকায়, দেখে চলে এসেছে।তাই বিনাবাক্যে নেমে যায় নৌকা থেকে।
অভ্রও নেমে প্রেমার হাত ধরে হাঁটতে চাইলে প্রেমা দাঁড়িয়ে যায়।পেঁছন ফিরতেই দেখে প্রেমা একরাশ কৌতূহল নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
অভ্র কিছু একটা ভেবে প্রেমার দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে প্রেমা চোখ ছোট করে তাঁকায়।
কানে পাশে এসে মৃদু কন্ঠে অভ্র বলে উঠে,
-তুমি এতো সফ্ট কেন? (অভ্র)
অভ্রের এমন কথায় প্রেমা চমকে যায়,সরতে চাইলে অভ্র হাত ধরে ফেলে। এবং বলে, ” উত্তর দাও”(অভ্র)
প্রেমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলে, “মেয়েরা সফ্ট হয়।
অভ্র ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে বলে,
” ওহ আমি জানতাম না তো,মাত্র জানলাম। (অভ্র)
এবার প্রেমা রেগে যায়,
“তুমি যাবে? নাকি আমি চলে যাবো।
-আমি যাবোনা বলেছি? তুমিই তো….(অভ্র)
অভ্রকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে,প্রেমা হাঁটতে শুরু করে। যা দেখে অভ্র শব্দ করে হাসে।
-বড় বাঁচা বাঁচলাম।(অভ্র)
মূলত প্রেমার মনোযোগ সরানোর জন্য অভ্র কথাগুলো বলে। নাহলে প্রেমার প্রশ্নের প্যাঁচালে পড়তে হতো।
লম্বা পায়ে হেঁটে অভ্র প্রেমার পাশে চলে আসে অভ্র।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি প্রেমা।(অভ্র)
হঠাত অভ্রের কথায় প্রেমা থেমে যায়।রাগের মাথায় হাঁটছিলো। তাই কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারেনি।এসেছে তো অভ্রের সাথে।
” জানিনা,কোথায় যাচ্ছি,তুমি বলো আমরা কোথায় যাচ্ছি। (প্রেমা)
“চলো, আমার সাথে হাঁটতে থাকো তারপর দেখবা কই যাচ্ছি। (অভ্র)
অভ্র হাঁটতে নিলেই প্রেমা হাত ধরে ফেলে অভ্রের সাথে হাঁটতে শুরু করে।
দু’পাশে বিশাল বড় উঁচু গাছপালা। মাঝখানে ইটের রাস্তা। জনমানবহীন পরিবেশ।মাঝে মাঝে কয়েকটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসছে।আবার হিমশীতল বাতাসও শরীর স্পর্শ করে। আর কিছুদূর এগোতেই একটা কাঠের বাড়ি দেখতে পায় প্রেমা।
হঠাৎ বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাঁকায় বাড়িটির দিকে।
তেঁতুল বিচি রঙে বাড়িটির সৌন্দর্য আরো দুইগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখতে পায় ফুলের বাগান। রঙবেরঙের ফুল।
প্রেমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে অভ্র প্রেমার ধ্যান ভাঙায়।
-“আজ থাকছো এখানে,তাই আশেপাশে দেখতে পাবে কাল।এখন চলো,তোমার ভেজা কাপড় চেঞ্জ করতে হবে।ঠান্ডা লেগে যাবে।” (অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“-তোমার সাথে থাকবো? (প্রেমা)
অভ্র কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
-সবসময় আমার সাথে থাকার চিন্তা করো নাকি?
তাহলে সব ভুলে যাও। সোজা বাড়ি পাঠিয়ে দিবো এমন চিন্তাভাবনা করলে।এখন চলো (অভ্র)
অভ্রের ধমকানিতে প্রেমা চুপ হয়ে অভ্রের
পেঁছনে হাঁটা দেয়।
বাড়িটির দরজার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দেয়।
সাইকান দরজা খুলেই অভ্রের দিকে তেড়ে আসে। তাখনি অভ্র হাত বাড়িয়ে সাইকানকে থামিয়ে পেঁছনের দিকে ইশারা করে।প্রেমাকে দেখে সাইকান চুপ হয়ে যায়।সেও রেগে আছে অভ্রের উপর। এতো কিছু ঘটালো অথচ ঘটনার ‘ঘ’ ও জানেনা সে।অভ্র ওকে কিছু জানায়নি তারজন্য সে প্রচুড় ক্ষেপে আছে। সাইকানের পেঁছন পেঁছন জেরিনও বেড়িয়ে আসে।
-বাড়ির খবর কী সাইকান?(অভ্র)
বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞেস করে,
“-অরিপু এর পরিচয় পেতেই স্বানন্দে গ্রহণ করে নিয়েছে বুঝ এবার কতোটা…(সাইকান)
অভ্র আবারও চোখ রাঙানি দেয়,তাতে সাইকান চুপ মেরে যায়। অভ্র জেরিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
– প্রেমাকে রুমে নিয়ে যা,আর ওর ড্রেস
গুলো বের করে দিস।আর বডি লোশনটা বের করে দিস।(অভ্র)
-আচ্ছা, (জেরিন)
অভ্র প্রেমার কানের কাছে গিয়ে বলে,
-বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভিজেছিলে জ্বর আসতে পারে।শাওয়ার এর পর লোশন মেখে তারপর ড্রেস পড়বা।
হঠাৎ অভ্রের কথায় প্রেমা লজ্জায় পড়ে যায়।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। অভ্রের দিকে না তাকিয়ে প্রেমা জেরিনকে ইশারা করে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রেমা-জেরিন যেতেই অভ্র সাইকানের গালে থাপ্পর লাগিয়ে দেয়।
-ইডিয়েট কেন বলিনি বলছিস? তোর নাড়িভুড়ি ও মেয়েদের মতো শর্ট।কোথায় কী মুখ ফসকে বলে ফেলবি তার কোনো ইয়াত্তাও নেই। (অভ্র)
সাইকান ভয়ে চুপ মেরে যায়। বুঝতে পেরেছে অভ্র রেগে আছে।তাই চুপ থেকে যায়।মনমনে ভয়ানক একটা গালি দেয়।
অভ্র রেগে কাঠের সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে আসতেই ফোনের শব্দে আরো দ্বিগুন রাগ বাড়ে তাঁর। ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রেমার বাবার নাম্বার।ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে ফোনটা রিসিভ করে,
-আসসালামু আলাইকুম আংকেল। (অভ্র)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,বাবা দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। প্রেমার কোনো খোঁজ কী পাওনি।আমি অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম তোমার ফোনে।
-দুঃখীত আংকেল,ফোন সাইলেন ছিলো তাই খেয়াল করিনি।আর প্রেমার খোঁজ পেয়েছি।(অভ্র)
-কো..কোথায় বাবা আমার মেয়েটা কোথায় এখন?
-জ্বি আংকেল উনার এক ফ্রেন্ডের বাড়িডে আছেন প্রেমা।আমাকে এড্রেস বলেনি। উনি বলেছেন গ্রামে ফিরবেন না।ওখানে নাকি লোকজনদের কথা শুনতে হবে। তাই আর ফিরে যাবেন না।আপনাদের চিন্তা করতে বারন করেছিলো।আংকেল আপনি চিন্তা করবেন আমি কাল আবারও উনার সাথে কথা বলবো।
রাখছি আংকেল।
প্রেমার বাবা ফোনা কান থেকে নামিয়ে টেবিলে রেখে দেন।তখনি পিয়াস এসে বলে,
‘-ওই অচেনা ছেলেটার বলা কথা তুমি বিশ্বাস করে নিলে বাবা? আমি..
পিয়াসের কথার মধ্যে প্রেমার বাবার উঠে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়।পরপর আরো দু’টো চড় মারে।
-তোর জন্য,তোর জন্য হয়েছে আজ সব।আমার মেয়েটা আজ বাড়ি ফিরছেনা।কী দরকার ছিলো এতো জামেলা করার। মেয়েটার জীবণ শেষ করার জন্য উঠে-পড়ে ছিলি।আমি বলে দিচ্ছি আমার মেয়ের জন্য আলাদা একটা ফ্ল্যাট কিনে আমরা সেখানে থাকবো।আমার সেই সামর্থ্য আছে এখনো।তুই থাক তোর মতো।
বলেই পিয়াসের বাবা রেগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান।প্রেমার দাদিও নিশ্চুপ আজ।এসবে উনি নিজেকেও দ্বায় করছেন।
ফোনের অপরপাশে কথাগুলো শুনে ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটে উঠে অভ্রের। শান্তিপূর্ণ একটা শ্বাস ত্যাগ করে ওয়াসরুমে চলে যায় শাওয়ারের জন্য।

অভ্রের কথামতো প্রেমা হাত,পায়ে,মুখে লোশন মেখে নেয়। প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে প্রেমার। মিষ্টি কালারের উরনা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়।প্রচন্ড শীত করছে তার। বাইরে আবারও বৃষ্টি পড়ছে। নিচে নামতে গেলে একটা সুগন্ধ প্রেমার নাকের সংস্পর্শে আসে।প্রেমা উপলব্ধি করতে পারে ঘ্রাণটা সবসময় অভ্রের শরীর থেকে পেতো সে। মাতাল করা ঘ্রাণ। প্রেমা নিচে না নেমে পাশের রুমটাতে নক দেয়।সারাশব্দ না পেয়ে প্রেমা দরজা মেলে ঢোকে যায় রুমে।
দেখে কাঠের বারান্দায় গালি গায়ে দাড়ানো অভ্র। ফোনে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। ফর্সা উন্মুক্ত শরীর দেখে প্রেমা আর সামনে এগোয়নি।জেরিনকে খোঁজতে শুরু করে। সিঁড়ির মাঝ বরাবর আসতেই দেখে সাইকান আর জেরিন পাশাপাশি বসে আছে।আরো কিছু দৃশ্যমান হওয়ার আগেই লজ্জায় পেঁছন ফিরে উপরের দিকে দৌড় দেয়।
-আজকালকার ছেলে-মেয়েরা একটু বেশিই ন্যাকামি করে ফেলে।আল্লাহ্(প্রেমা)

(চলবে) Tarin Jannat

কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here