#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম পর্ব :১৪ #যারিন_তাসনিম সিদ্ধীর ঘুম ভাঙতেই দেখলো, রাহা আলমারিতে নিজের আর সিদ্ধীর জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখছে৷ সিদ্ধী আধশোয়া হয়ে বলল, “মা, এত গোছানো লাগবে না।” রাহা সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলল, “অগোছালো আমার একটুও পছন্দ না।” বলে আবার গোছানোতে মনোযোগ দিল। সিদ্ধী খাট থেকে নেমে হাত উঁচু করে আড়মোড়া ভাঙলো। রাহার পাশে এসে রাহার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। “কীরে তুই ঘুমাস নি?” সহজভাবে রাহা উত্তর দিল। “না।” সিদ্ধী রাহাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর আরো চমকে বলল, “হায় খোদা! চোখ তো পুরো ফুলিয়ে রেখেছিস। এখন নিয়াজ ভাইয়াকে পটাবো কীভাবে?” রাহা রাগে আলমারির দরজা ধাক্কা মেরে আটকে দিল। সিদ্ধী রাহার ব্যবহারে হতবাক হলো। রাহা ওয়াশরুমে চলে গেল। ভালোভাবে চোখ ডলে ডলে মুখ ধুলো। আয়নায় তাকালো। ফোলা ভাবটা এখনো যায় নি। কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। কোথাও একটা দেখেছিলো, বরফের পানিতে মুখ ধুলে চোখের ফোলা ভাবটা থাকে না। কিন্তু এই অচেনা বাড়িতে কার কাছে বরফ খুৃঁজবে। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে দেখলো, সিদ্ধী ফোন চালাচ্ছে। রাহা সিদ্ধীর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলল, “মুখ ধুঁয়ে আয়!” সিদ্ধী রাহার গাল টিপে বলল, “ওকে বেব! চিন্তা করিস না। আমি তোর জীবনের সব সুখ আবার এনে দিবো।” রাহার মাথায় কিছুই ঢুকলো না। সে শুধু একটা কথাই জানে। তার জীবনের সুখ মানেই ‘নিয়াজ’। সিদ্ধী ফ্রেশ হতে চলে গেল। অহনা রুমে এসে রাহাকে বলল, “আপু, ভাবি কোথায়?” মুখের কষ্টের ছাপ দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করে রাহা বলল, “ফ্রেশ হতে গেল।” অহনা খাটে বসলো। মুখ দেখে মনে হচ্ছে, মন খুব একটা ভালো নেই। রাহা অহনার পাশে বসে বলল, “কিছু হয়েছে?” প্লাস্টিকের হাসি মুখে ঝুলিয়ে অহনা বলল, “না তো,আপু।” রাহা জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কীসে পড়ো?” “ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার!” কথাটা শোনার সাথে সাথেই রাহার মনে আসলো, পিচ্চি মেয়ের সাথে নিয়াজ প্রেম করে। “তুমি কীসে পড়ো, আপু?” অহনা জিজ্ঞেস করলো৷ রাহা জবাবে বলল, “আমি একজন ডক্টর।” “ওয়াও! জানো, আমারও ডক্টর হওয়ার ইচ্ছা। কারণ, আমার ক্রাশ ডক্টর মেয়ে পছন্দ করে।” বয়ফ্রেন্ড থাকার পর আবার ক্রাশও আছে। অবশ্য বর্তমানে এগুলো কোনো ব্যাপার না। রাহা মনে মনে ভাবলো। ততক্ষণে সিদ্ধী বের হলো। অহনা রাহার হাত ধরে রাহাকে খাট থেকে উঠালো। এরপর সিদ্ধীর হাত ধরে টানতে থাকলো। সিদ্ধী জিজ্ঞেস করলো, “আরে, অহনা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?” “ব্রেকফাস্ট করতে।” সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে, রানী বেগম প্লেটগুলো টেবিলে গোছাচ্ছে। রাহা দৌঁড়ে গিয়ে রানী বেগমকে সাহায্য করে। আর সিদ্ধীকে ইশারা করে, রানী বেগমকে সাহায্য করার জন্য৷ সিদ্ধীও এগিয়ে যায়। সিদ্ধী রান্নাঘরে গিয়ে একটা ছোট মেয়েকে রুটি বেলতে দেখে। জিজ্ঞেস করে, “তোমার নাম কী?” “রসুয়া।” ঠোঁট উল্টে সিদ্ধী বলে, “এ আবার কেমন নাম। কে রাখলো?” কপাল কুঁচকে রসুয়া বলে, “তুমি জেনে কী করবে গো? এখনো বউ হয়ে আসোই নি। তাতেই এত প্রশ্ন শুরু। শ্বশুরবাড়িতে চুপ থাকতে হয়। সবজি ভাজিটা টেবিলে গিয়ে রাখো। দিদিমা খুশি হবে। কিছুই তো জানো না। বান্ধুবী সব ইশারা দিয়ে বুঝায় দেয়।” সিদ্ধী রসুয়ার কথায় অবাক হলো। এতটুকু মেয়ে, বয়স কতই বা হবে? ৯/১০ বছর। অথচ কি পাকনা। সে যে বোকা, তা অবশ্য সে জানে। কিন্তু এই মেয়েটা একটু বেশিই পাকনা। সবজি ভাজি নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলো। দেখলো, নিয়াজ, তাশরিক দুজনই চলে এসেছে। নিয়াজ, তাশরিক পাশাপাশি বসলো৷ নিয়াজের পাশে অহনা গিয়ে বসলো। নিয়াজ চেয়ার টেনে আরেকটু দূরে আসলো। অহনা অপমানবোধ করলো। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই তাশরিক, সিদ্ধীকে নিয়ে বাহিরে গেলো। রাহাকে যেতে বললেও রাহা গেলো না। ঘরে গিয়ে ল্যাপটপ বের করে পুরনো দিনগুলোতে ডুব দিলো। অতীত, “চলো না, আজ দেখা করি৷” ল্যাপটপের কিছু একটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে নিয়াজ। রাহা খুব বুঝতে পারছে, তাকে দেখছে না। অন্য কিছু দেখছে। রাহা ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করলো, “কি করছো?” “বুঝবে না।” গম্ভীর গলায় বললো নিয়াজ। রাহা আবার বলল, “কিচ্ছুক্ষণ আগে একটা কথা বলেছি। সেটার উত্তর দাও না।” এবার ভিডিও কলে এসে নিয়াজ বলল, “কী বলেছিলে?” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহা বলল, “কিছু না।” তাড়াহুড়ো করতে করতে নিয়াজ বলল, “এবার যাই। আব্বু ডাকছে।” রাহা মুখ মলিন করে বলল, “ঠিক আছে।” ফোন কাটতে গিয়ে রাহা দেখলো, নিয়াজ ক্যামেরার কাছে ধীর গতিতে আসছে। রাহা চোখ বন্ধ করে ফেললো। একটু উঁকি মেরে দেখলো, স্ক্রিনের উপর চুমু খেয়েছে নিয়াজ। এরপর মৃদু হাসলো। কি সুন্দর হাসি! সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করে ছবি তুললো রাহা। ফোন কেটে গেলো। সেই মৃদু হাসির ছবিটাই এখন রাহা দেখছে। চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে ল্যাপটপের উপর পড়লো। রাহা নিজের ওড়না দিয়ে মুছে নিল। “ম্যাডাম, ছাদে যাবেন?” চোখ হাত দিয়ে ভালোভাবে মুছে পিছে তাকালো। নিয়াজকে দেখেই ল্যাপটপ ধপ করে বন্ধ করলো। উঠে দাঁড়ালো। নিয়াজ অবাক হয়ে বলল, “এত নার্ভাস ফিল করছো কেন?” কাঁপা গলায় রাহা বলল, “না তেমন কিছু না।” মুখে হাসি বজায় রেখে নিয়াজ বলল, “তবে ছাদে যাই?” কিছু মুহূর্ত রাহা নিয়াজের দিকে চেয়ে রইলো। নিয়াজের মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, দুজনের নতুন পরিচয়। রাহার মনে হচ্ছে, ভালোবাসা এতই সস্তা যে কয়েক বছরের ব্যবধানে মানুষ নিজের সবথেকে প্রিয় মানুষকে ভুলে আরেকজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। নিয়াজ রাহার কাছে এসে তুড়ি মেরে বলল, “হ্যালো, যাবা?” রাহা কেঁপে উঠে চোখ সরিয়ে বলল, “আপনার কোনো কথাই কী আমি কোনোকালে অমান্য করেছিলাম?” কথাটা বলে রাহা নিয়াজের দিকে তাকালো। নিয়াজ অস্বস্তিতে ভুগছে। কতক্ষণ সব ভুলে থাকার অভিনয় করা যায়। রাহা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “চলুন।” রাহা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। দু’মিনিট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিয়াজ। দু’মিনিটের মধ্যেই হাজারো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কোনো একসময় রাহা নিয়াজের শার্টের কলার ঠিক করে দিচ্ছিলো, প্রায় সময়ই ঠোঁট উল্টে ভিডিও কলে নিয়াজের সামনে বসে থাকতো, কোনো সময় মায়ের বকুনি খেয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে কাঁদতো। এত এত স্মৃতি! কোনো ক্ষুদ্র ঘটনাও নিয়াজ তার মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে পারবে না। সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা নিয়ে অনেকগুলো স্মৃতি তার জীবনের একটা অংশ নিয়ে নিয়েছিলো। এই একটা অংশকে ভুলে থাকা সম্ভব নয়। চলবে,