#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম:
পর্ব ২১
#যারিন_তাসনিম
গান শেষ হতেই রাহা মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে গেল।
নিয়াজ হাঁটু গেড়ে লাল টকটকে গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে রাহার সামনে বসে আছে।
রাহা স্বপ্ন দেখছে কিনা তা বুঝতে আশেপাশে তাকালো। সিদ্ধী খুশিতে হাসছে। তাশরিকেরও খুশিতে মুখ ঝলমল করছে। এই সুন্দর রাতে শুধু একজনের মুখ মলিন দেখাচ্ছে। সে হচ্ছে অহনা। অহনার চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে। এই শক্ত মনের মেয়েটাও আজ কাঁদছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য মেয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে। রাহা আবার নিয়াজের দিকে তাকালো। নিয়াজ হাতের ফুলগুলো এগিয়ে কম্পিত গলায় বলল,
“জনম জনম একসাথে চলবে?”
রাহা চুপ করে আছে। তার শরীরের ভিতর দিয়ে কোনো এক চেনা, পরিচিত অনুভূতির শিহরণ বয়ে গেল। কয়েক বছর আগে আবেগের সাথে কোনো এক ছেলে তার সামনে রমনায় হাঁটু গেড়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল। সেদিন মুখে হাসি নিয়ে কোনো দ্বিধা ছাড়াই সেই ভালোবাসাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল রাহা। আজ কয়েক বছর পর একই ছেলে মাঝরাতে বিশাল কালো আসমানের নিচে চাঁদ, তারাকে সাক্ষী রেখে সারাজীবন একসাথে চলার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে আজ কেন এত দ্বিধা? সিদ্ধী নিজের মোড়া থেকে উঠে রাহার কাছে এসে নিচু হয়ে বসে বলল,
“রাহা বাবু, এই মুহূর্তে কিচ্ছু ভাববি না। নিয়াজ ভাইয়া তোকে কেন ছেড়ে গিয়েছিল, তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, একসেপ্ট করা ঠিক হবে কি না, অহনা ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কিনা এসব তুই কিছু ভাববি না। এগুলোর উত্তর পরেও পাওয়া যাবে। এখন শুধু ফুলগুলো হাতে নিয়ে ভাইয়ার উত্তর দিবি। আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর খারাপটা চাইবো না। এই পরিস্থিতিতে তোর ভাবার মতো সময় নেই। সময় আছে শুধু নিজের সুখকে আঁকড়ে ধরার।”
সুখ! সিদ্ধী কোন সুখের কথা বলছে? নিয়াজকে গ্রহণ করে নিলেই ও সুখ ফিরে পাবে, এমন কিছু বুঝাচ্ছে সিদ্ধী?
নিয়াজের চোখে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। চাঁদের মৃদু আলোয় অহনার চোখের পানি স্পষ্ট হচ্ছে।
নির্জন পরিবেশে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে। রাহা নিস্তব্ধ হয়ে আছে দেখে নিয়াজের চোখে আশার আলো নিভে আসছে। নিয়াজের কম্পিত হাত থেমে গিয়েছে। এখন আর কাঁপছে না।
নিয়াজ আগে থেকেই জানতো, রাহা তাকে গ্রহণ করবে না। যেই মেয়েটা এত বছর তার জন্য কষ্ট পেয়েছে, সেই মেয়েটাকে কিনা আজকে হঠাৎ ফুল হাতে নিয়ে প্রপোজ করলে তাকে গ্রহণ করবে। তবুও একটু আশার আলো ফুটে উঠেছিল তার চোখে, যখন রাহা কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। হয়তো সময় নিচ্ছে। এত সময় নেওয়ার পর উত্তরটা নিশ্চয়ই না-বোধক হবে না। কিন্তু যতটুকু সময় নেওয়ার প্রয়োজন, সেই সময়টুকুও অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।
সব আশা ভরসা ছেড়ে নিয়াজ মাথা নিচু করে হাত নামিয়ে ফেলতে নিলেই নিজের হাতে কারো হাতের স্পর্শ পেল। হাতের দিকে তাকাতেই দেখল, রাহার হাত ফুলগুলোসহ নিয়াজের হাত শক্ত করে ধরেছে। নিয়াজের মুখে খুশির আভা ফুটে উঠলো। রাহার দিকে তাকাতেই রাহা মৃদু কণ্ঠে বলল,
“চলতে পারি একটা শর্তে।”
তাশরিক, সিদ্ধী থ বনে গেল। নিয়াজ স্বাভাবিকভাবে বলল,
“কি শর্ত?”
“যদি আবার না ছেড়ে যাও।”
বলেই একটু হাসল রাহা৷ নিয়াজ নিচ থেকে হাত সরিয়ে রাহার হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“কথা দিচ্ছি, আর কখনো ভুলে হোক বা কোনো ভুল ছাড়া হোক, আমি তোমায় ছেড়ে যাবো না। এতদিন আমাদের মধ্যে বন্ধন না থাকলেও প্রেম, ভালোবাসা ছিল। কিন্তু সেই বাঁধন ছেঁড়া প্রেমে তুমি, আমি কেউই সুখে ছিলাম না। তাই কথা দিচ্ছি, এই বন্ধন আর ছিঁড়তে দিবো না আমি।”
সিদ্ধী জোরে বলল,
“ইয়ে…….”
তাশরিক সিদ্ধীর কাছে এসে হাত উঁচু করলো। সিদ্ধী হাত মিলিয়ে হাই ফাইভ করলো। তার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা সফল হয়েছে। শুধু সফল হয় নি, সফলের চূড়ায় পৌঁছেছে।
নিয়াজ, রাহা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রাহার মনে পড়তেই নিয়াজের হাত থেকে হাত ছুটিয়ে গোলাপফুলগুলো নাকের কাছে এনে সুভাস নিল।
নিয়াজ আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলো। প্রশান্তির নিশ্বাস। অনেক বেশি প্রশান্তির। আজ বোধহয় বহুবছর পর কষ্ট জড়ানো নিশ্বাসের পরিবর্তে প্রশান্তির নিশ্বাস ছেড়েছে সে। এই নিশ্বাস যেনো আর কখনো আবার কষ্টে না জড়িয়ে পড়ে, এই প্রার্থনা করলো সে।
সিদ্ধী আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“অহনা কোথায়?”
তাশরিকও আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, অহনা নেই। রাহা ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নিয়াজ দাঁড়িয়ে বলল,
“এখানেই তো ছিল।”
তাশরিক দৌঁড়ে নিচে নেমে গেল। পিছে নিয়াজও গেল।
সিদ্ধী ও রাহার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো।
চলবে,