#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম:
পর্ব :২৪
#যারিন_তাসনিম
“হসপিটাল থেকে আমি মাত্র এলাম, সিদ্ধী। আর তুই আমাকে কেন এই বস্তাটা পরতে বললি?”
বিরক্তি নিয়ে বলল রাহা। সিদ্ধী রাহার কপালে হালকা গোলাপি রঙের টিপটা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“কথা কম বল। আর এটা বস্তা না। এটা গাউন। কি সুন্দর গাউনটা!”
রাহা ভ্রুকুটি করে বলল,
“আমার জন্য কিনেছিস যেহেতু, নিজের জন্যও একটা কিনতি।”
সিদ্ধী রাহাকে খাটে বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে আইলাইনার লাগাতে শুরু করলো। রাহা কিছু বলতে নিল, সিদ্ধী তাকে আটকিয়ে বলল,
“চুপ কর। কথা বললে আইলাইনারটা নষ্ট হয়ে যাবে।”
সুন্দর করে ঠোঁটে লিপস্টিকও লাগিয়ে দিল সিদ্ধী। রাব্বি এসে বলল,
“আর কত আটা ময়দা মাখবা আপু। ভাইয়া সেই কখন থেকে ফোন করছে যাওয়ার জন্য।”
রাহা সিদ্ধীকে থামিয়ে বলল,
“কোন ভাইয়া?”
সিদ্ধী রাব্বিকে রুম থেকে বের করে দিল। বলল,
” রাব্বি তাশরিকের কথা বলছে। আচ্ছা তোর সাথে কি নিয়াজ ভাইয়ার এই দু’দিনে একবারও কথা হয় নি?”
রাহা মন খারাপ করে বলল,
“না রে। আসলে অনেক কাজের চাপ ছিল, তাই ফোন করা হয় নি। আর দেখ, তোর ভাইয়া আগের মতোই ত্যাড়া রয়ে গেল। সে-ও একবারো ফোন করে নি।”
সিদ্ধী হেসে বলল,
“হয়তো ভাইয়ারও কাজের চাপ ছিল।”
রাহা সিদ্ধীর থুতনিতে হাত রেখে মুখ উঠিয়ে বলল,
“তোর কী হয়েছে বল তো? আগে ওকে অপমান করতি, এখন সাপোর্ট করছিস।”
সিদ্ধী রাহার হাত সরিয়ে রাহার চুলগুলো আছড়াতে আছড়াতে বলল,
“এখনো অপমান করবো নাকি। কদিন বাদে তোদের বিয়ে হয়ে যাবে, আর আমি এখন আগের মতো ব্রেকআপ করতে বলবো নাকি?”
কথাগুলো বলেই সিদ্ধী রাহাকে আয়নার সামনে নিয়ে গেল।
রাহা নিজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। গোলাপি রঙের গাউনটায় তাকে কি সুন্দর লাগছে! একটা ছবি তুলে নিয়াজকে দেওয়া গেলে ভালো হত। যখন ওদের সম্পর্ক ছিল, তখন রাহা কোনো নতুন জামা পরলেই সেলফি তুলে নিয়াজকে সেটা দিত। আজ আবার দিতে ইচ্ছে করছে। রাহা সিদ্ধীর দিকে ফিরে বলল,
“আমার একটা ছবি তুলে দে না।”
সিদ্ধী রাহাকে আবার আয়নার দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,
“দরকার নেই। চল জলদি। দেরি হয়ে যাবে।”
রাহা আর সিদ্ধী পিছনের সিটে বসলো। রাব্বি সামনে ড্রাইভারের সাথে বসলো। রাহা রাব্বিকে প্রশ্ন করল,
“আমাকে বলবি প্লিজ, আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর তুই পাঞ্জাবিটা কবে কিনলি? পাঞ্জাবি কেন পড়েছিস?”
রাব্বি বিরক্তিতে “চ” বোধক শব্দ করলো। সিদ্ধী বলল,
“এই মেয়েটা ইদানিং বেশি কথা বলে।”
রাহা সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঠিয়ে বলল,
“তোর থেকে অন্তত কম বলি।”
চন্দ্রিমাকে তার বাসা থেকে গাড়িতে উঠিয়ে নিল। চন্দ্রিমা সিদ্ধীকে বলল,
“আমার বোন অবশেষে বিয়ে করছে।”
রাহা অবাক হয়ে বলল,
“মানে? কে বিয়ে করছে?”
সিদ্ধী চন্দ্রিমার হাতে চিমটি মেরে বলল,
“ও আমার বিয়ের কথা বলছে।”
রাহা সন্দেহ করতে শুরু করলো। একটা সেন্টারের সামনে এসে গাড়ি থামলো। রাহাকে সিদ্ধী সেন্টারের ভিতরে নিয়ে গেল। ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সিদ্ধী রাহার হাত ছেড়ে দিল। রাহা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
“সিদ্ধী, তুই কোথায় গেলি? আমার ভয় লাগছে। আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।”
রাব্বির কণ্ঠ শোনা গেল,
“আরে আপু, কিছু হবে না। তুমি সামনে যাও।”
রাহা সামনে যেতে থাকলো। আলো জ্বলে উঠলো। হঠাৎ আলো আসায় রাহা চোখে হাত দিয়ে দিল। চোখ খুলতেই হতবাক হলো।
বিশাল ফাঁকা একটা হল। সামনে একটা টেবিল। টেবিলের উপর গোলাপি রঙের কাপড় বিছানো। উপরে চারটা কাচের বাটি। বাটিতে রঙিন কাগজ দেখা যাচ্ছে। রাহা আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। সামনে গিয়ে একটা বাটি থেকে কাগজ উঠালো। কাগজের ভাঁজ খুলতেই বুঝতে পারলো একটা চিঠি।
চিঠিটি পড়লো রাহা। মুখে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।
চিঠিটাতে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করে লিখা ছিল, নিয়াজ কেন তাকে ছেড়ে গিয়েছিল। রাহা কাগজটা আগের মতো ভাঁজ করে রেখে দিল। পাশের কাচের বাটি থেকে আরেকটা কাগজ ছিল। সেটা পড়ে রাহার আফসোস হতে লাগলো। সে এতদিন নিয়াজকে কতটা ভুল বুঝেছে।
দ্বিতীয় চিঠিতে অহনার সাথে নিয়াজের সকল ঘটনা উল্লেখ করা ছিল।
তৃতীয় বাটিতে থাকা কাগজটার ভাঁজ খুলল। সেই কাগজে লিখা ছিল,
“সরি। তোমার সাথে এই দু’দিন যোগাযোগ করিনি, তাই। আসলে সিদ্ধী আর রাব্বিকে বলে আমিই তোমাকে আনিয়েছি। সম্পূর্ণটা আমার আর রাব্বির পরিকল্পনা। গাউনটা আমিই কিনে রাব্বির হাতে পাঠিয়েছিলাম।”
এতটুকু পড়ে রাহা আশেপাশে তাকিয়ে রাব্বিকে খুঁজলো। পেল না। আবার পড়লো চিঠিটা। বাকি লিখাগুলোয় রাব্বির সাথে নিয়াজের আবার কীভাবে দেখা হয়েছে, সেটা লিখা ছিল। আর শেষ লাইনে লিখা ছিল,
“একটা বড় সারপ্রাইজ আছে। সারপ্রাইজটা তোমার জীবনের সবথেকে বড় সারপ্রাইজ হবে। সারপ্রাইজটা কী, তা জানতে চাইলে শেষের বাটিটার কাগজ খুলে পড়ো।”
রাহা হন্তদন্ত হয়ে এই চিঠিটা ভাঁজ না করে বাটিতে রেখেই চতুর্থ বাটিটার কাগজের ভাঁজ খুলল। এই কাগজটার ভাঁজ অবশ্য বড় ছিল না। তাই খুলতেও সময় লাগে নি। চিঠিটাতে লিখা,
“আজ আমরা বিয়ে করছি, রাহা।”
চলবে,