বাইজি কন্যা পর্ব-২৭

0
923

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_২৭ ( প্রথমাংশ )
-‘ আজ এই জোৎস্নামাখা রাতটি স্মরণীয় হবে তোমার আমার মাখামাখি তে! ‘
শাহিনুরের কর্ণকুহরে পলাশ চৌধুরী’র বলা কুরুচিপূর্ণ বাক্য’টি বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত করলো। সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষার্থে অজান্তেই ভীষণ সাহসিকতার একটি কাজ করে ফেললো সে৷ সকল ভয়, ক্ষণকাল পূর্বে পাওয়া অশুভ স্পর্শের তীব্র যন্ত্রণা নিমিষেই দূর হয়ে গেলো৷ পিছন দিক না ফিরেই পলাশ চৌধুরী’র থেকে বাঁচার তাগিদে দু’হাতে মাটি খামচে ধরলো। ঝরঝরে দু’মুষ্টি মৃত্তিকা অনায়াসেই মুঠোবন্দি করে নিলো৷ তারপর ঝড়ের গতিতে পিছু ঘুরে উৎপেতে থাকা কু’দৃষ্টিজোড়ায় ছুঁড়ে মারলো শুকনো মাটির গুঁড়ো গুলো৷ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে সহসা শাহিনুর এমন আঘাত হানবে দিবাস্বপ্নেও কল্পনা করেনি পলাশ। মৃদ্যু সুরে আর্তনাদ করে কিঞ্চিৎ পিছিয়ে গেলো পলাশ৷ দু’হাতে নিজের দু’চোখ চেপে ধরে বিশ্রিভাষায় গালি দিলো শাহিনুর’কে। বদ্ধ চোখেই আন্দাজে শাহিনুর’কে খাবলে ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার পূর্বেই শাহিনুর ওঠে দাঁড়িয়ে ছুটে পালাতে উদ্যত হয়৷ কয়েক কদম এগুতেই আঁচলে টান পড়ে৷ ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে পিছু তাকাতেই দেখতে পায় চোখজোড়া বন্ধ রেখেই একহাতে শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে পলাশ। কয়েকবার সে আঁচল ছাড়ানোর চেষ্টা করার পর যখন দেখলো ওঠে দাঁড়াচ্ছে পলাশ তৎক্ষনাৎ কেঁদে ওঠে সম্পূর্ণ শাড়ি খুলেই পালানোর চেষ্টা করলো শাহিনুর। নিজের অর্ধনগ্ন দেহটি ঢাকার জন্য বেঁধে রাখা কেশগুচ্ছ ত্বরিতগতিতে খুলে ফেললো। ঢেউ খেলানো লম্বা লম্বা চুলগুলো ছুটতে থাকা অবস্থায়ই দু’কাঁধের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো৷ তার মস্তিষ্কে কেবল একটা কথাই বিচরণ করলো,
-‘ আমার আম্মা নেই, কিন্তু আম্মার কথাগুলো, উপদেশ গুলো ঠিক রয়েছে। আম্মার উপদেশগুলোই আমার শক্তি। ‘
কে বলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বড়ো হতে হয়? পনেরো বছর বয়সী কিশোরী’টি একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে,নিজের জন্মদাত্রী’কে হারিয়ে ঠিক তো বড়ো হয়ে গেলো। কই তার তো বয়সের প্রয়োজন পড়লো না। এই তো ঠেকে গিয়ে ঠিক শিখে গেলো, ঠিক নিজেকে রক্ষা করার সাহস পেয়ে গেলো! প্রতিপক্ষ তোমায় দশবার আঘাত করার পর তুমি যদি একবার হলেও তাকে আঘাত করতে পারো এই ভীষণ গর্বের।
[ ৩৮ ]
অলিওর চৌধুরী এবং শারমিন বাইজির মৃত্যু দিন থেকে পলাশ’কে চোখে চোখে রাখছিলো প্রণয়। হসপিটাল থেকে লম্বা একটা সময়ের জন্য ছুটি নিলেও ইমারজেন্সি কিছু প্রয়োজনে কয়েক ঘন্টার জন্য হসপিটাল গিয়েছিল সে। সেই ফাঁকেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়েছে পলাশ৷ বাড়ি ফিরতেই যখন পলাশ’কে পেলো না। আশপাশের কোথাও তাকে নজরে পড়লো না পাগল পাগল হয়ে গেলো সে। বাড়ির প্রতিটি সদস্য থেকে শুরু করে কয়েকজন ভৃত্য’কে জিজ্ঞাসা করলো। কিন্তু আশানুরূপ ফল পেলো না। শেষে তীব্র শঙ্কা নিয়ে বাইজে গৃহের মেইন গেটে এসে সবুর উদ্দিন’কে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করলো। সবুর উদ্দিন ভয়জড়িত কন্ঠে সত্যি বলে দেয় যে পলাশ গৃহের ভিতরেই অবস্থান করছে। এটুকু শুনতেই কান গরম হয়ে দু’চোখ রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেলো তার৷ চোয়াল শক্ত হয়ে শরীরের প্রতিটি রগ যেনো ফুলে ফেঁপে ওঠলো৷ এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে গৃহের ভিতর প্রবেশ করে দেখলো প্রতিটি বাইজির মুখে আতঙ্কের ছাপ। ভিতরের কক্ষ থেকে দ্বারে কড়াঘাতের স্বল্প শব্দ শোনা যাচ্ছে। সে শব্দ’কে অনুসরণ করে প্রণয় সঠিক কক্ষের সামনে এসে দ্রুত বদ্ধ দ্বার খুলে দিলো৷ নিমিষেই বেরিয়ে এলো মান্নাত৷ ভয়াবহ আর্তনাদ করে বললো,
-‘ নুর, নুর কোথায়? ‘
বক্ষঃস্থল কেঁপে ওঠলো প্রণয়ের। মান্নাত প্রণয়’কে দেখে ঈষৎ ভরসা পেলো৷ চিৎকার করে বললো,
-‘ আপনি তো নুরের মা’কে বলেছিলেন আপনি ওকে বিয়ে করবেন। আপনার উদ্দেশ্য যদি হালাল হয় দয়া করে নুর’কে রক্ষা করুন৷ ‘
প্রণয় থমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে শঙ্কিত কন্ঠে বললো,
-‘ নুর কোথায়? ‘
মান্নাত ক্রন্দনরত কন্ঠে বললো,
-‘ আপনি আমার সাথে আসুন৷ ‘
মান্নাত ত্বরিতগতিতে পা বাড়ালো বাইজি গৃহের পশ্চাতে তাকে অনুসরণ করলো প্রণয়ও৷ বাইজি
গৃহের বাম পার্শ্বে পুকুর, পুকুরের থেকে গৃহের দেয়াল অবদি যে কাঁচা রাস্তা রয়েছে সে রাস্তা দিয়েই মান্নাত আর প্রণয় যাচ্ছিলো৷ মান্নাত ছুটতে গিয়ে কিছুটা হাঁপিয়ে ওঠায় ধীরগতিতে হাঁটছে। ততোক্ষণে প্রণয় সবটা বুঝে পায়ের চলন বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক সেই ক্ষণেই প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহের মতো করে প্রণয়ের বুকে এসে ধাক্কা খেলো শাহিনুর। সুঠাম দেহের শক্ত মজবুত, বুকেরপাটায় আকস্মাৎ ধাক্কা খেতেই তার কোমল নাসিকার ডগা থেতলে গেলো যেনো৷ বিশাল দেহের সাথে সংঘর্ষে নিজের ক্ষুদ্র দেহখানি আর ধরে রাখতে পারলো না শাহিনুর। বদ্ধ দৃষ্টিতে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় একদম চিৎ হয়ে ভূমিতলে শরীর ছেড়ে দিলো সে! পিছন থেকে ভয়ে ‘ নুর ‘ ডেকে আর্তচিৎকার করে ওঠলো মান্নাত।

চলবে….
(কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ। রাতে বাকি অংশ দেবো ইনশাআল্লাহ)
সকলেই রেসপন্স করবেন আশা রাখি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here