পর্ব ৫
রাত ক্রমশ বাড়ছে। দূর থেকে বারান্দায় এসে পড়া আলো হঠাৎ করে নিভে গেলো। নীলাক্ষীর মনে হলো বারান্দায় রাত নেমে এসেছে। দুজনের চেয়ারের মাঝে এক হাত দূরত্ব। অথচ এই দূরত্বটুকু অন্ধকারে ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে, এরকম মনে হচ্ছে ওর। যেন এখনই অম্লানের নিশ্বাসের শব্দ খুব কাছ থেকে শোনা যাবে। নীলাক্ষী কান খাড়া করে। মুহুর্তের মধ্যেই অন্ধকার কমে এলো, সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অম্লান দূরে, এক হাত দূরে। নীলাক্ষী কি বলবে ভাবছিল, কিছু খুঁজে পাওয়ার আগেই অম্লান জিজ্ঞেস করলো, ‘বিয়ের আগে আপনি আমার সাথে কথা বলেননি কেন?’
কিছু বলার সুযোগ পেয়ে নীলাক্ষী চঞ্চল হয়ে ওঠে। বললো, ‘সেদিন পরিচিত হলে কি আজকের রাতটা এত আকর্ষণীয় হতো?’
– ‘তাই বলে আমাকে এতটা প্রতীক্ষায় রাখা অন্যায় হয়েছে আপনার।’
– ‘এ অন্যায়ের জন্য সাজা পেতে প্রস্তুত আছি আমি।’
– ‘তবে তো সাজা দিতেই হয়।’
অম্লান কিছুটা ঝুঁকে আসে নীলাক্ষীর দিকে। আবছা আলোয় নীলাক্ষী বেশ বুঝতে পারে অম্লান ওর চোখে চোখ রেখেছে। নীলাক্ষীর প্রশ্বাস ঘন হতে শুরু করে। ও ঢোক গিলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অম্লানের দিকে।
অম্লান বললো, ‘আজকের রাতকে কি আরেকটু আকর্ষণীয় করা যায় না?’
নীলাক্ষী উত্তর দিতে গিয়ে বুঝতে পারে ওর গলা কাঁপছে, ‘কিভাবে!’
– ‘কিছুটা মুগ্ধতা আমি ঢেলে দেবো, কিছুটা আপনি যোগ করবেন।’
অম্লান উঠে দাঁড়ায়। নীলাক্ষী নড়েচড়ে বসে। ওর মনে পড়ে যায় বিয়ের পূর্বের রাতগুলোর কথা। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর থেকে নীলাক্ষী ভেতরে ভেতরে ছিলো ভীষণ উত্তেজিত। ওর উত্তেজনা বাইরে থেকে কারো বোঝার উপায় ছিলো না। মনে মনে কত কি ভেবে রেখেছিল আজ রাতে নতুন মানুষটাকে বলার জন্য। কত কথা জমিয়ে রেখেছিল। জমানো কথার ঝুড়ি মেলে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোনো এক জড়তা ওকে এমনভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে রেখেছে যে কিছুতেই কথাগুলোকে টেনে বাইরে আনা যাচ্ছে না। ভীষণ লজ্জা লজ্জা লাগছে। অম্লান যদি সেই জড়তাটুকু জলের উপরে জমে থাকা শ্যাওলার মত হাত দিয়ে তুলে নিয়ে ওকে নির্মল করে দিতে পারতো, তবে এই কঠিন কাজটার জন্য অম্লানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাখামাখি হয়ে যেতো নীলাক্ষী।
বাদামী সংসার
লেখক- মিশু মনি
অম্লান ঘরের ভেতরে চলে গেছে। নীলাক্ষীর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ও ধীরপায়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে মৃদু সুরে পুরনো দিনের গান বাজছে। মান্না দে’র ‘তুমি কি সেই আগের মতো আছো’ গানটি। ঘরময় একটা আলাদা মোহ ছড়িয়ে পড়লো। গানের উৎস খুঁজতে গিয়ে নীলাক্ষী দেখলো দরজার পাশে একটা গ্রামোফোন রাখা। সেখান থেকে সুর উৎসারিত হয়ে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। নীলাক্ষী এতক্ষণ এটা খেয়ালই করে নি। ও চমকিত স্বরে বলল , ‘এই আয়োজনটা আমার মনে ধরেছে।’
অম্লান একটা কাঠের মাঝারি আকারের বাক্স নিয়ে এসে রাখলো বিছানার ওপর। নীলাক্ষীকে কাছে ডাকলো। দুচোখে কৌতুহলের পসরা সাজিয়ে নীলাক্ষী বিছানার ওপর গিয়ে বসলো। দুজনে মুখোমুখি বসেছে। সামনে রাখা বাক্সের দিকে নীলাক্ষীর নজর। কি আছে এই বাক্সে যা আজকের রাতেই খুলতে হবে? জানার জন্য উত্তেজনায় ছটফট করে নীলাক্ষী।
অম্লান বললো, ‘এটা আমার মায়ার বাক্স। এখানে ছোটবেলা থেকে অনেক কিছু জমিয়ে রেখেছি আমি। তোমার জন্য দু তিনটা জিনিস আছে। বাকিগুলো আমার। মানুষের কত রকমের আবেগ থাকে না? আমার ছিল এই বাক্সটা। যখন যা ভালো লাগতো, এখানে জমিয়ে রাখতাম।’
অস্থিরতার প্রহর ডিঙিয়ে অবশেষে অম্লান বাক্সটি খুললো। নীলাক্ষী অবাক হয়ে দেখলো সেখানে একটা ছোট্ট শিশি, একটা ছোট কৌটো, কিছু খাম, একটা ছোট বাক্স আরও কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। নীলাক্ষীর চোখ বড়বড় হয়ে যায় জিনিসগুলো দেখার জন্য।
অম্লান সবার প্রথমে একটা ছোট কৌটো বের করে দেয় নীলাক্ষীকে। নীলাক্ষী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি আছে এতে?’
– ‘খোলো। খুলে দেখো।’
নীলাক্ষী ভীষণ ব্যস্ত হয়ে কৌটাটির মুখ খুলে। কিন্তু ভেতরটা সম্পূর্ণ কালো। এ ছাড়া আর কিছুই নেই এতে। ও অনেকটা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি?’
অম্লান বললো, ‘বুঝতে পারো নি কি?’
– ‘উহু না। বুঝতে পারি নি। বলুন না এটা কি?’
অম্লান মুচকি হেসে কৌটো টা হাতে নিয়ে একটা আঙুল কৌটোর ভিতরে ঢোকালো, তারপর বের করে নীলাক্ষীর কপালের এক কোনায় ছুঁইয়ে দিয়ে বললো, ‘নজর না লাগুক আমার চান্দেরও গায়।’
বলেই হেসে ফেললো। নীলাক্ষীর আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কাজল ব্যতীত আর কিছুই নয়। ও অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘কাজল?’
অম্লান বললো, ‘হ্যাঁ কাজল। আমার দাদীর নিজের তৈরি করা কাজল। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি দাদী চোখে মোটা করে কাজল দেয়। কি মায়াবী লাগে! আমার দেখা সবচেয়ে আদরের মায়াবী কাজলকালো চোখ আমার দাদীর। তোমাকে দেখে আসার পর আমার একটা কথাই মনে হয়েছে, ওই চোখে কাজল ছাড়া যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই কয়েকদিন আগে দাদীর কাছ থেকে কাজল বানিয়ে নিয়েছি।’
নীলাক্ষী ভীষণ খুশি হয়। কেউ হাতে তৈরি কাজল বানিয়ে তার জন্য তুলে রেখেছে, এরচেয়ে সুন্দর ব্যাপার আর কি হতে পারে। আনন্দের তীক্ষ্ম এক তরঙ্গ বয়ে গেলো ওর শরীরে। শিরা উপশিরায় সুখের ঝিলিক বইতে লাগলো। ও বিস্ময় লুকাতে না পেরে বললো, ‘আমি সারপ্রাইজড!’
অম্লান দাদীর কথা বলতে বলতে কাজলের কৌটোটা নাড়াচাড়া করছিল। দাদী অনেক সৌখিন মানুষ। এই গ্রামোফোন টাও তার ঘরের। প্রায়ই দাদী মান্না দে, নচিকেতা আর রবীন্দ্রনাথ সংগীত শোনে। কিন্তু নীলাক্ষীর সেদিকে মন নেই। ও মুগ্ধতার মহাসমুদ্রে ডুবে গিয়েছে। নবীন প্রেমের জোয়ারে ভিজছে ওর দেহ মন সমস্তটা। একটু একটু করে সেই সমুদ্রের অতলে যেতে যেতে শুধুই ভাবছে, ‘কতটা মায়া নিয়ে কেউ প্রিয়তমার জন্য কাজল তৈরি করে বসে থাকে! কতটা আদর মিশে থাকতে পারে সেখানে!’ আকাশের নক্ষত্র পেড়ে নিয়ে এলেও তাতে এতটা খুশি হওয়া সম্ভব নয়, যতটা খুশি নীলাক্ষী হয়েছে ছোট্ট একটা কাজলের কৌটো পেয়ে।
অম্লান এরপর আরেকটা কাগজের বাক্স বের করে। ছোট্ট বাক্স। নীলাক্ষী সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সেটার দিকে তাকায়। অম্লান বাক্সটা এগিয়ে দেয় নীলাক্ষীর দিকে। সিমেন্টের প্যাকেটের রঙের কাগজে মোড়ানো একটা বাক্স। বেশ ভারী। নীলাক্ষী কৌতুহলী হয়ে বাক্সটা খুলতেই বিস্ময়ে ওর চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এক ডজন লাল রঙের কাঁচের চুড়ি। এখনকার দিনের চুড়ির মত এত আধুনিক চুড়ি নয়। পুরনো দিনের চুড়ি, যে চুড়িগুলো নীলাক্ষী ছোটবেলায় মেলায় গেলে বাবার কাছে আবদার করে নিয়ে আনতো। মেলায় গেলে এইরকম চুড়ি কিনে দুইহাত ভর্তি না করলে ওর চলতোই না। এত বছর পর সেই চুড়িগুলো দেখতে পেয়ে ও খানিকটা নস্টালজিক হয়ে পড়লো। মুগ্ধ হয়ে অস্ফুটে জিজ্ঞেস করলো, ‘এই চুড়ি আপনি কোথায় পেলেন?’
– ‘কিনি নি। সংগ্রহ করে রেখেছি।’
– ‘কিভাবে সংগ্রহ করলেন শুনি? কোন রানীর চুড়ি?’
– ‘রানী নয়, রাজকন্যা। আমার বড় আপু। অথই আপুর চুড়ি।’
– ‘অথই আপু!’
অম্লানের বড় বোন অথই। বয়সে অম্লানের চেয়ে বয়সে বেশ কয়েক বছরের বড়। ওনার এখন একটা চিনির মত মিষ্টি মেয়ে আছে। মেয়েটা নীলাক্ষীর সাথে ভাবও করেছে। কিন্তু আপুর সাথে এখনো খুব একটা কথা হয় নি নীলাক্ষীর। এ চুড়ির বয়সও তাহলে নেহাত কম নয়।
অম্লান বললো, ‘আপুর একটা চুড়ির আলনা ছিলো। ছোট্ট, কাঠের তৈরি। আপু ওখানে চুড়ি সাজিয়ে রাখতো। ওর প্রিয় একটা কাজ ছিলো আলনায় চুড়ি জমানো। কখনো চুড়ি পরতো না, কিনে কিনে জমাতো। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। খুব ভালো লাগতো দেখতে। একদিন আপুর বিয়ে হয়ে গেলো। চুড়ির আলনার কথা কি আর মনে থাকে? বাসার জিনিসপত্র টানাটানি করতে গিয়ে একদিন দেখি আলনা ভেঙে গেছে। চুড়িও ভেঙে গেছে অনেক। আম্মু ওটাও ফেলে দিতে চেয়েছিলো। আমি শুধু কয়েকটা লাল চুড়ি নিয়ে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। জানিনা সেদিন কেন রেখেছিলাম। তখন তো ক্লাস এইটে পড়ি। ভার্সিটিতে ওঠার পর একদিন আমার ড্রয়ারে এই চুড়িগুলো দেখে ভাবি, এত বছর যত্নে রেখেছি যখন, এগুলো আমার বউকে দেবো। আসলে কোনোকিছু জমিয়ে রাখলে সেটার প্রতি আমার মায়া জন্মে যায়।’
নীলাক্ষী গভীর বিস্ময়ে চুড়ি হাতে নিয়ে বসে থাকে। আলতো করে হাত বুলায়। কত ভালোবাসা নিয়ে বড় আপা চুড়ি জমিয়েছিলো! ও কল্পনায় দেখতে পায় আপার সেই চুড়ির আলনা। সেখান থেকে কয়েকটা চুড়ি একজন এত বছর ধরে আগলে রেখেছে। আজকে তা আমার হাতে! কি সৌভাগ্য আমার। ওর কেমন যেন অন্যরকম লাগে। অতীতের কোনো সুর, কোনো কোমল অনুভূতি ওকে স্পর্শ করে দিয়ে যায়। যে সুরটা শুধুই অতীতের স্মৃতি বয়ে বেড়ায়।
অম্লান বাক্স থেকে একটা পুতি ও ঝিনুকের তৈরি মালা বের করে। পুরনো হলেও বোঝা যাচ্ছে বেশ দামী। ও বলল, ‘এটা কক্সবাজার থেকে কিনে এনেছিলাম। আব্বু আপুকে মালা কিনে দিয়েছিল দেখে আমিও কান্নাকাটি করে কিনে নিয়েছিলাম। বাসায় আসার পর আপু এটা চেয়েছিল, দেইনি। জমিয়ে রেখেছি। জানিনা কিসের জন্য! হয়তো আজকের রাতটার জন্য।’
নীলাক্ষী খেই হারিয়ে বসে থাকে। অম্লান মালাটা তুলে দেয় ওর হাতে। অজান্তেই ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। হাসির ঝলকে মালাটা ঝলমল করে। সেইসাথে ঝলমল করে নীলাক্ষীর মুখ।
অম্লান কয়েকটা খাম আলাদা করে রাখে। একটা জ্যামিতি বক্স বের করে হাসতে হাসতে বলে, ‘এর ভেতরে আমার লেখা অসংখ্য চিঠি আছে। মন খারাপ থাকলে চিঠি লিখতাম আর জ্যামিতি বক্সে জমিয়ে রাখতাম। এগুলো তোমার জন্য না। আমার থাক। ইচ্ছে হলে পড়িও, আপত্তি নাই। ছোটকালের কত অভিমানের কথা লিখেছি আল্লাহ ই জানে।’
অম্লান প্যাকেটে মোড়ানো এক জোড়া কানের দুল বের করে বললো, ‘এগুলো একবার মেলায় লটারি কেটে পেয়েছিলাম। আমি জানিনা দেখতে ভালো নাকি খারাপ। আমি তো এসব বুঝি না। তবে আপুকে দিয়েছিলাম, ও বলেছিলো ফেলে দে। এগুলো দুল হলো নাকি? আম্মুকে দেখিয়েছিলাম, আম্মুও বলেছে ধুর এগুলো ফেলে দে। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। ফেলে দেইনি। জ্যামিতি বাক্সে চিঠির সাথে রেখেছিলাম। কেন রেখেছিলাম জানিনা। আজকে তোমাকে দিচ্ছি। হয়তো তুমিও বলবে ফেলে দাও। আমি ফেলতে পারবো না। তাই তুমি ফেলে দিও।’
কানের দুক জোড়া নীলাক্ষীর সামনে রাখে অম্লান। তারপর বাক্স থেকে বাকি জিনিসপত্র বের করে আলমারির একটা ড্রয়ারে রেখে দেয়। বাক্সটা খাটের নিচে রেখে বললো, ‘আমার মায়ার বাক্সের সংগ্রহশালা এখন শূন্য। আজ থেকে তুমি আমাকে যা যা দেবে, সব আমি এই বাক্সে জমিয়ে রাখবো। আইডিয়া টা ভালো না?’
নীলাক্ষীর চোখের পলক পড়ে না। এই অদ্ভুত রকমের মানুষটার আচরণ, কথাবার্তা ওকে প্রতি মুহুর্তে মুগ্ধ করে দিচ্ছে। হাসনাহেনার ঘ্রাণের চেয়েও যে কথাগুলো শুনতে মধুর লাগে। দখিনা হাওয়ার চেয়েও যে হাসিটা দেখতে ভালো লাগে। তবে কি অচেনা মানুষটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে ও! কি জানি, মনের ভেতর এক ধরণের ব্যথা অনুভূত হয়, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যাকে বলে সুখের মত ব্যথা।
অম্লান বিছানার চাদরের ধুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘অনেক রাত হয়েছে। শোবে না?’
নীলাক্ষী চমকে ওঠে। এত কথা, এত স্মৃতির ভীড়ে প্রবেশ করে ও যেন ভুলেই গিয়েছিল আজ রাতে ওকে এই মানুষটার সাথে ঘুমাতে হবে। ওর শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। উঠে জিনিসপত্র গুলো রাখতেও ভুলে যায়।
অম্লান নিজেই জিনিসপত্র গুলো একটা ড্রয়ারে রেখে দিয়ে ওকে বলেও দিলো কোন ড্রয়ারে রেখেছে। তারপর বিছানার পাশের ল্যাম্পশেড জ্বালিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিলো। নীলাক্ষীকে বললো শুয়ে পড়তে।
বালিশে মাথা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে নীলাক্ষীর ছটফট লাগে। থরথর করে হাঁটু কাঁপতে থাকে ওর। অজানা একটা কিছুর আগমনের শঙ্কায় ও যেন দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে অম্লান জিজ্ঞেস করে, ‘সাহিত্য যে বাক্সটা দিয়েছিলো ওটা খুলে দেখবে না?’
নীলাক্ষী চমকে ওঠে। ধীরেধীরে গভীর এক কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করছিল ও। আচমকা প্রশ্নে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। বাক্সটা ও খুলেছে, গোসল থেকে বেরিয়ে এসেই খুলেছে। অম্লান তখন বারান্দায় ছিলো। কিন্তু কিছুতেই সে কথা মুখে উচ্চারণ করতে পারবে না নীলাক্ষী। কারণ বাক্সের জিনিসগুলোর কথা মুখে বলা ওর পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে কি না কে জানে। ও ভেবেছিলো নিশ্চয় কোনো আকর্ষণীয় কিছু। আকর্ষণীয় বটে, তবে সবই দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় জিনিস। সেসব কথা কি আর মুখে বলা যায়! লজ্জায় ভেসে যাবে ও।
অম্লান জানে না ওই বাক্সে কি আছে। তাই কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে নীলাক্ষীর দিকে। কোনো উত্তর না পেয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে অম্লান। নীলাক্ষী চোখ এদিক সেদিক ঘুরায়। অম্লান ওর বালিশের পাশে মুখ নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাকে স্পর্শ করতে পারি?’
নীলাক্ষী কেঁপে ওঠে। গ্রামোফোনে তখন মান্না দে’র গান বাজছে-
ক’ফোটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালবাসবে..
পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝরালে
কি করে এখানে তুমি আসবে..
চলবে..