বাদামি সংসার পর্ব-৭

0
1615

পর্ব ৭

অম্লান বাচ্চাদের মত গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। ডান কাৎ হয়ে, একটা হাত রাখা গালের নিচে। পা দুটো ছড়ানো। ঠোঁট দুটো গোল হয়ে ইংরেজির ‘o’ বর্ণের আকার নিয়ে বসে আছে। ঠোঁটের মাঝখানে সামান্য ফাঁক। নীলাক্ষী পাশের বালিশে শুয়ে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা যে তার অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে গেছে। নীলাক্ষীর শরীরে অম্লানের স্পর্শ জবা ফুলের রেণুর মত মেখে আছে, গোসলেও সে রেণু ধুয়ে মুছে যায় নি। জবা ফুল যেমন তার রেণু নিয়ে পরিপূর্ণ, নীলাক্ষীরও এখন নিজেকে জবা ফুলের মতোই সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।

অম্লান নড়াচড়া করতে করতে চোখ মেলে তাকালো, বেশ কয়েকবার চোখ পিটপিট করেই ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো বিশ্বজয়ী হাসি। কোলবালিশ জাপটে ধরার মত নীলাক্ষীকে টেনে নিলো বুকের ভেতর। অম্লানের বহু বছরের পুরনো কোলবালিশের মতোই নীলাক্ষী শান্ত চুপচাপ ভঙ্গিতে অম্লানের বুকে জায়গা করে নিলো। অম্লানের ঘুম ঘুম উষ্ণ শরীরের ভেতর ঢুকে নীলাক্ষীর মনে হলো, অত্যুষ্ণ রাজ্যের কোমল বিছানায় শুয়ে আছে সে। দুজনের কেউই কথা বলে এই ঘুমাদুরে নিরবতাকে ভেঙে দিতে চাইলো না। কথা না বলেও একজন আরেকজনকে অনুভব করছে সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে।

বাদামী সংসার
লেখক- মিশু মনি

নীলিমা বেগম নাস্তার টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছেন। বেলা দশটা বাজে। নীলাক্ষীকে গলা ছেড়ে ডাকার অভ্যাসটা হুট করে ছেড়ে দিতে পারছেন না তিনি। মেয়েটা চোখের সামনে কেমন তরতর করে বড় হয়ে গেলো, উনি টেরই পান নি। এইতো সেদিনই স্কুলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে খুশিতে লাফালাফি করছিলো। হাইস্কুলে ওর রোল সবসময় এক, দুই, তিনের ভেতরে থাকতো। কেউ হিংসে করলে বাসায় এসে জুরে দিতো কান্না। বারবার মাকে এসে বিচার দিতো আর বলতো, ‘আর জীবনেও আমি স্কুলে ফার্স্ট হবো না। আমাকে আর কেউ হিংসেও করবে না।’ মায়ের হাসি আসতো ওর এই বাচ্চামি স্বভাব দেখে। মেয়েটা বড় ইমোশনাল। অল্পতেই কষ্ট পায়। কি জানি, ওই বাড়ির মানুষ গুলো কেমন। আবার মেয়েটাকে যখন তখন কাঁদতে হয় কিনা এই শঙ্কায় ওনার বুকটা চিনচিন করে ওঠে। নীলাক্ষীকে ভীষণ আদর দিয়ে মানুষ করেছেন। শাসন করার প্রয়োজন হয়নি। মেয়েটা যে বড় লক্ষী। কখনো অতিরিক্ত টাকা খরচ করতো না, বিলাসী পণ্য কেনাকাটায় ওর আগ্রহ ছিলো না। শুধু পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। ওর বয়সে মেয়েরা কতরকম প্রেম, রিলেশন টিলেশনে জড়ায়। অথচ নীলাক্ষীর ওসবেও কোনো আগ্রহ ছিলো না। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার বায়না ছিলো না, কোনো ছেলে বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা ছিলো না। স্নাতক শেষ করে একটা ভালো চাকরিও পেয়ে গেলো। কখনো বিয়ের কথা মুখে বলেও নি। কদিন আগে নীলাক্ষীর বাবা এসে বললেন মেয়ের একটা সম্বন্ধ এসেছে। পাত্রপক্ষ দেখতে এলে অম্লানকে ভীষণ ভালো লেগে গেলো মায়ের। ওরাও নীলাক্ষীকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেললো। আমজাদ সাহেব কপাল করে এরকম একটা মেয়ে পেয়েছিলেন। লক্ষী মেয়েটা যেন লক্ষী বউও হতে পারে, মায়ের মনের এই একটাই আশা।

অম্লান গোসল করতে ঢুকে গেলে নীলাক্ষী চা আনতে গেলো। ফিরে এসে যা দেখলো তাতে ওর শরীরে শিহরণ বইয়ে দিতে ইতস্তত করেনি। বিছানাটা কোঁকড়ানো, কিছু ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অর্ধেক চাদর বিছানার মাঝখানে জড়ো হয়ে ছোট ছোট ঢেউ তুলেছে। বাসর রাতের পর বিছানার দৃশ্য দেখে মনের ভেতর কেমন আগডুম বাগডুম করে। কি যেন অচেনা সুখের ব্যথায় গা ম্যাজমেজে লাগে। অম্লান বেরিয়ে এসে তোয়ালে ছুঁড়ে ফেললো চেয়ারের ওপর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একহাতে চুল ঝাড়তে লাগলো। সিক্ত খালি গা, পরনে তোয়ালে। চুল থেকে টপটপ করে জল ঝরছে। ক্ষণিকের জন্য নীলাক্ষীর মনে হলো, ‘আমার নিজস্ব পুরুষ!’ নীলাক্ষী বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। ওর লজ্জা লজ্জা করছিলো।

অম্লান জিজ্ঞেস করলো, ‘নাস্তা করেছো?’
– ‘নাস্তা নিয়ে এসেছি। আপনি ফ্রি হলে একসাথে খাবো।’

অম্লান নীলাক্ষীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি তো ফ্রিইই আছি। শোনো একটা কথা বলি ম্যাডাম। আমাকে এত আধিখ্যেতা করে, রেস্পেক্ট করে কথা বলতে হবে না। আমাকে জোরগলায় বলবে, এই অম্লান আসো নাস্তা করবো।’

নীলাক্ষী লাজুক ভঙ্গিতে হাসে। বউ হয়েছে ভেবেও ওর লজ্জা লাগছে। গতকালকের আগেও ছিলো স্রেফ একটা মেয়ে। এখন বউ, রমণী, কারো পুত্রবধূ, কত কি! সংসার সামলাতে হবে, সবার সেবা যত্ন করতে হবে, স্বামীর মন জুগিয়ে চলতে হবে। চাকরি জীবনটা থেকে এই জীবনটা পুরোপুরি ভিন্ন। একটা নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। সেই নতুনত্ব আবার নতুন জামাকাপড়ের মত নয়। এই নতুন অনুভূতিটা ঝলমলে, নদীর শীতল পরিষ্কার টলটলে জলের মতো। রোদ লেগে যেন চিকচিক করছে। নীলাক্ষীর ভাবতে ভীষণ আনন্দ হয়। মেয়েরা স্ত্রী হতে না পারলে তাদের জীবনে আর স্বার্থকতা কোথায়!

অম্লান বডি স্প্রে মেখে, জামাকাপড় বদলে পুরো সাহেব বনে গেলো। নীলাক্ষীর দিকে ফিরতেই দেখে সে চিন্তায় বুঁদ হয়ে আছে। আনমনা হয়ে কোনো ভাবনায় আসক্ত। অম্লান কাছে এসে বললো, ‘এই যে নীলপরি, নাস্তা খাবে না? নাস্তা হজম না হলে দুপুরে ভাত খাবা কি করে?’

নীলাক্ষী হেসে নাস্তার প্লেট নিয়ে এসে বসলো। অম্লান ব্রেডের সাথে একগাদা জেলি মাখিয়ে খাচ্ছে। নীলাক্ষী আবার এত খেতে পারে না। ও সবকিছুই অল্প অল্প খায়। অম্লান যখন নিজের ব্রেডের স্লাইস নীলাক্ষীর মুখে তুলে দিলো, কিছু না বলতে পেরে গপ করে গিলতে হলো নীলাক্ষীকে। কাশিও উঠে গেলো। অম্লান এগিয়ে দেয় পানির গ্লাস। পানি খেয়ে নীলাক্ষী বললো, ‘আমি সামান্য করে জেলি খাই। একসাথে এত খেতে পারি না।’
– ‘আগে বলবে না? এত কিসের সংকোচ তোমার? আমাকে কি পাড়ার চাচাতো ভাই মনে হচ্ছে?’
– ‘কি?’

অম্লান বললো, ‘আই এম ইয়োর হাবি, হাজব্যান্ড। বাংলায় বলি, আমি তোমার স্বামী। যতই মেলিবে ডানা, ততই হইবে জানা। আমার কাছে লজ্জাবতী লতিকার মত নুয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। তোমার লজ্জা আমি জেলির মত রুটিতে মাখিয়ে মাখিয়ে খেয়ে ফেলবো।’

অম্লান বিদঘুটে ভঙ্গিতে ‘হা, হা’ করে হাসছে। নীলাক্ষী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। লোকটা সাংঘাতিক ফাজিল। রাতে ফিসফিস করে কানের কাছে এসে এমন সব কথা বলেছে যে, ভাবলেই লজ্জায় নীলাক্ষী নীল হয়ে যায়।

নাস্তার পর্ব শেষ করে অম্লান বের হয়ে গেলো। বন্ধুদেরকে সময় দিতে হবে। ওদের হাসাহাসির শব্দ এই ঘর পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলছে। নীলাক্ষীকে বলেছে হালকা সাজগোজ করে বাইরে যেতে। নয়তো ভাবি আর বোনদের যন্ত্রণায় টিকে থাকা দায় হয়ে যাবে।

নীলাক্ষী সাজতে পারে না। মানে এ ব্যাপারে সে একেবারেই অজ্ঞ। ফেস পাউডার লাগালে মুখে সাদা সাদা হাঁসের বাচ্চার মত ভেসে বেড়ায়। লিপস্টিপ লাগালে ওর নিজের ঠোঁট দেখলে বমি আসে। ইচ্ছে করে ওয়াক করে বমি করে দেই। মানুষ যে কিভাবে লিপস্টিপ লাগায়! এ জন্মে এই একটা জিনিসই ওর জানা হলো না। একা একা সাজলে বিদঘুটে লাগে ওর নিজেকে। অবশ্য গতকাল বিউটি এক্সপার্ট ফারজানা শাকিল ওকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলো। তখন মনে হয়েছিলো লিপস্টিপ বিদ্যে’টা শিখে ফেললে মন্দ হতো না। নায়িকা নায়িকা একটা ভাব চলে এসেছিলো চেহারায়। আয়না আর লিপস্টিপ নিয়ে সেই নায়িকা ভাবটা আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নীলাক্ষী ভেজা তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে লিপস্টিক মুছে ফেললো। মনেমনে বললো, ‘কেউ সাজিয়ে না দিলে আর জীবনেও লিপস্টিপ লাগাবো না।’

আরেকবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে, এমন সময় আচমকা অম্লান কোথ থেকে উড়ে এসে ওকে খপ করে ধরে পিছনদিকে ঘুরিয়ে নিলো। নীলাক্ষীর ঠোঁটে গভীর একটা চুম্বন করে আবার পাখির মত উড়ে চলে গেলো। মুখ দুইহাতে ঢেকে লজ্জায় গাঢ় নীল হয়ে অনেক্ষণ থ মেরে বসে রইলো নীলাক্ষী। কি হলো বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো ওর! জবা ফুলের রেণু কেউ যেন খুব করে গায়ে মেখে ফুলটাকে আগের জায়গায় রেখে চলে গেলো। সেইসাথে দুলিয়ে দিয়ে গেলো জবা ফুলের গাছটাকে। পূর্ণযৌবনা জবা ফুলের বৃক্ষ সতেজতার মাত্রায় চারিদিক আলোকিত করে বসে রইলো।

অম্লানের বন্ধুরা অট্টহাসির ষোলকলা পূর্ণ করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। কৌশিক বিবাহিত। বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবনের মধ্যকার তফাত নিয়ে সে বারংবার ধামাকা লেকচার দিয়ে যাচ্ছিলো। তার লেকচার শুনে দর্শক সাড়ির সাহিত্য ও ফাইরুজ এমন একটা করে বাক্য ছুঁড়ে দেয় যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। সবচেয়ে হাস্যকর লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে গত রাতে কৌশিক ঘুমের ঘোরে ফাইরুজকে বারবার জড়িয়ে ধরছিলো। বউয়ের সাথে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেলে যা হয় আরকি। তা নিয়ে এখন তুমুল হাসাহাসি হচ্ছে। হাসতে হাসতে বদহজম হয়ে না যায় আবার।

নীলাক্ষী চা’য়ের ট্রে হাতে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে ওরা ভেতরে আসতে বলে। অম্লান এক পলক নীলাক্ষীর চোখের দিকে তাকায়। নীলাক্ষীর চোখে মোটা করে কাজল দেয়া, এই কাজলটুকু ছাড়া সাজগোজের কিচ্ছুটি নেই। নীল চোখ দুটো বাহারি স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে বসেছে। মাথায় ছোট করে ঘোমটা টানা। হঠাৎ ঘোমটার ফাঁকে নীলাক্ষীর কানে গতরাতে দেয়া সেই কানের দুলজোড়া দেখে চমকে উঠলো অম্লান। কি চমৎকার লাগছে দেখতে! কানের দুলজোড়া বোধহয় দুল কোম্পানি নীলাক্ষীর জন্যই বানিয়েছে। অথচ সবাই বলেছিলো ‘ফেলে দে।’ অম্লান ভেতরে ভেতরে একটা গর্ববোধ করলো। যে মানুষটা এই ‘সবার ফেলে দেয়া’ দুলটাকেও যত্ন করে কানে পরতে পেরেছে, সে নিশ্চয়ই অম্লানের আবদার গুলো কখনো ফেলতে পারবে না। একটা সুন্দর সুখী জীবনের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো অম্লান।

অম্লানের একমাত্র ভাই অনিক। বয়সে অম্লানের চেয়ে বছর চারেক বড়। অথই আপু আর অনিক ভাইয়া পিঠাপিঠি বড় হয়েছে। সেই সুবাদে অনিকের সাথে আপুর সম্পর্কটা যতটা ঘনিষ্ঠ, অম্লানের সাথে ততটা হয় নি। অনিকের স্ত্রী দোয়েল। চমৎকার মেয়ে। ভাবি হিসেবে দশে আট পাওয়ার যোগ্য। যথেষ্ট স্মার্ট, বুদ্ধিমতী, শিক্ষিত, সংসারীও বটে। দেবরের প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে সবসময় যেভাবে বোনের মত এগিয়ে আসতো সেরকম করে সচরাচর অন্যসব ভাবিরা এগিয়ে আসে কি না সন্দেহ রয়ে যায়। ভাবির ইচ্ছে ছিলো একমাত্র দেবরের বিয়েতে সে বরের গাড়িতে করে যাবে। নিজে বরের পাশের সিটে বসে থাকবে, নতুন বউকে স্বান্তনা দিয়ে পুরোটা যাত্রায় ওদের সুখ দুঃখের সাথী হবে। কিন্তু অম্লান সবার মুখের উপর বলে দিয়েছিলো, আমি একা আমার গাড়িতে থাকবো। আর কাউকে নেবো না। দোয়েল ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল বটে, তবে দেবরকে স্নেহের চোখে দেখে বলে কষ্টটা পুষে রাখতে চায় নি। অম্লানের সকালের আচরণ টাও ওর মনে কালো আঁচড় বসিয়েছে। বিয়ে হতে না হতেই ছেলেটা ভাবিকে ভুলে গেলো!

ঘরে বসে এসব ভাবনাতেই দোয়েলের বিষণ্ণতা ভর করেছিলো। নীলাক্ষী কখন যে এসে পাশে বসেছে ও খেয়ালই করে নি। যখন দোয়েলকে স্পর্শ করলো, ও চমকে উঠে নীলাক্ষীকে দেখে বললো, ‘নতুন বউ তুমি!’

নীলাক্ষী দোয়েলের দিকে খানিক্ষণ মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। দোয়েল হাসি মুখে বললো, ‘নাস্তা করেছো?’

নীলাক্ষী দোয়েলের হাত ধরে বললো, ‘ভাবি। আমার কোনো বোন নাই। তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, এতদিন ভুল জানতাম। আল্লাহ তা’য়ালা আমার বোনটাকে এই ঘরে পাঠিয়েছেন। যেখানে আমি বাকি জীবনটা বোনের সাথে থাকবো।’

নীলাক্ষীর মুখে এরূপ কথা শুনে দোয়েলের পলক পড়ে না। মনের ভেতর পুষিয়ে রাখা অভিমানের পাথরটা মুহুর্তেই বরফের মত গলে গেলো। নীলাক্ষীর হাত ধরে বললো, ‘তাই নাকি রে? তুই আমাকে যে কি শান্তিটাই দিলি বলে বুঝাইতে পারবো না। আমার খুশিতে চোখে পানি আসতেছে।’
– ‘কেন ভাবি?’
– ‘আমি মনেমনে চাইতাম, আল্লাহ আমাকে একটা বোনের মত জা দিও৷ যে আমাকে হিংসা করবে না, দুইবোনের মত থাকবো৷ আমাকে কান্দাই দিলি রে তুই।’

নীলাক্ষী অবাক চোখে দেখে সত্যি সত্যিই দোয়েলের চোখ ছলছল করছে। মুহুর্তের মাঝেই নীলাক্ষী ভাবির শীতল ছায়ায় নিজের জায়গা দখল করে নেয়। হাতের মুঠোয় হাত শক্ত করে ধরে রাখে। বিয়ে মানে শুধু একটা নতুন জীবন নয়, কিছু সত্যিকার সম্পর্ক ও। যে সম্পর্ক গুলোকে বেশিরভাগ মানুষই গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু একজন মানুষের জীবনে পরিবার টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর বাইরে বাকি সবকিছু। নীলাক্ষীর শরীরে উত্তেজনা বাড়ে, বুকটা কাঁপছে। কত আনন্দ চারিদিকে, কত রঙিন আনন্দ।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here