💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 2
___________________________
আজ সেই প্রান্তের সাথে ই নাকি তার বিয়ে।
এই কথা টা পরি কিছুতেই মাথা তে ঢোকাতে পারছে না। আর তাছাড়া এমন কি বোঝা হয়ে গেল সে যার কারনে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের পিরিতে বসতে হবে তাকে।
পরি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ।
যেই আম্মু তার জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত কে সাজিয়ে দিতো আজ সেই আম্মু তার জীবনের ভয়ঙ্কর রূপের সাজসজ্জা নিয়ে এসেছে।
পরি তার মায়ের কাছে নত হয়ে বসলো।
পরির মা মেয়ে কে এভাবে বসতে দেখে খানিকটা চমকে গেল।
পরি কে উঠিয়ে বললেন
– পরি তোর কি কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে ?
সম্পর্ক শব্দ টা পরির শরীর কে নাড়িয়ে দিলো।
সম্পর্ক, কাউ কে এক পাক্ষিক ভালোবাসা কে কি কোনো সম্পর্ক বলা যায় ?
নাকি নিজের ভালোবাসা টা ,না বলতে পারা কে সম্পর্ক বলা যায় ?
পরি কিছু বলতে পারে না।
এই প্রশ্নের জবাব আদৌ কি আছে তার কাছে ?
পরির চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝরছে।
মিসেস রাহেলা মেয়ের মাথা তে হাত দিয়ে বললেন
– তাহলে কি সমস্যা মা।
প্রান্ত কে বিয়ে কেন করতে চাচ্ছিস না।
পরি কিছু বলতে পারবে না।
কারন পরির কথা এই মুহূর্তে কেউ বিশ্বাস করবে না।
পরির অঝর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বলল
– প্লিজ আম্মু আমি বিয়ে করবো না।
প্লিজ আম্মু প্লিজ
পরির মা কিছু বললেন না।
শুধু ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
তার তো এক চিন্তা বৃদ্ধ মানুষের ইচ্ছে ফেললে তার সংসারে অকল্যাণ না হয়ে যায়।
আর তাছাড়া মেয়ে কে আপন জনের কাছে বিয়ে দেওয়া মানে চাঁদ হাতে পাওয়া।
কখনো কোনো সমস্যা হবে না।
তাহলে কেন পরি বিয়ে করতে চাচ্ছে না।
না করার কোনো কারন ও তো দেখাতে পারলো না।
মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলেন মিসেস রাহেলা।
পরি মায়ের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
তারপর ই হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগল।
এ কেমন লীলা খেলা হচ্ছে তার সাথে।বার বার কেন জীবন তাকে হারিয়ে দেয়।
প্রকৃতির কাছে কি অন্যায় করেছে সে যার দরুন বারংবার মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে তাকে।
সহ্য হচ্ছে না তার , ঘরের সমস্ত জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।
মনে হচ্ছে কোন এক মরন খেলায় মেতে উঠেছে সে।
হাতের বেশ কয়েক জায়গায় খানিকটা কেটে গেল তার।
কিন্তু এই ব্যাথা টা কে ব্যাথা মনে হচ্ছে না তার , মনের আঘাত টা যে বড্ড বেশি।
আজ পরি নিজে ও অবাক হয়ে হাতের লাল রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে।
ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে থাকলে ও পরি কোনো কালেই নিজের রক্ত সহ্য করতে পারতো না।
একটু ব্যাথা পেলেই , পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিতো।
আর আজ এতো রক্ত ও তাকে বিন্দু মাত্র হেলাতে পারছে না।
______________________
মিসেস রাহেলা একটু আগে এসে জোড় করে সাওয়ার এ পাঠিয়েছেন পরি কে।
কোন মতে গোসল সেড়ে পরি বেডে হেলান দিয়ে হাঁটু তে মাথা গুঁজে দিয়েছে।
তার পৃথিবী কোথাও গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে ।
কোনো একজন কে খুব করে মনে পরছে তার।
কিন্তু হাজারো ইচ্ছে রা সব চাঁপা পড়ে গেছে কোন এক কিন্তুর মাঝে।
কেন এতো টা দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল সে।
ভালোবাসার কথা টা ও তাকে বলা হয় নি।
একজন পরিচিত মানুষ হয়ে ও কি কথা বলতে পারতো না সে ?
কেন কেন কেন এমন হলো তার সাথে।
পরি দরজা দিয়ে কারো রুমে ঢোকার শব্দ পেয়ে, চোখ মুছে নিল।
সে আর কাঁদবে না , কিছুক্ষণ পর তার পুরো পৃথিবী ই তো কান্না তে মুরে যাবে।
এখন না হয় নাই কাদঁলো সে।
হাঁটু থেকে মাথা উঠিয়ে দেখলো মিসেস রাহেলা এসেছেন, আর হাতে রয়েছে মেডিকেল বক্স।
মিসেস রাহেলা বেডে বসতেই পরি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
– এই সব এর কোনো দরকার ছিল না আম্মু।
মিসেস রাহেলা মেয়ের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বললেন
– তা বললে কি করে হয়।
কতো টা কেঁটে গেছে , তার উপর ঐ সব ভারি জামা কাপড় ও তো পড়তে হবে।
মায়ের কথা তে তাৎছিল্যর হাসি হাসল পরি।
যার কথার কোনো মূল্য পাচ্ছে না , তার সামান্য ব্যাথার মূল্য দেখানো টা আই ওয়াস ছাড়া কিছুই নয়।
ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে মিসেস রাহেলা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে উঠে গেলেন।
_______________________
ঢাকা থেকে 30 কিলোমিটার দূরে পরি দের গ্রামের বাসা।
কিছুক্ষণ হলো তারা এসেছে, পরি কে একটা রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো।
বড্ড চেনা রুম টা ও আজ অচেনা মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ই বিউটিশিয়ান এসে পড়লো।
পরির বড় ফুপি এসে পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– মা আজ থেকে তুই আমার বাড়ির বউ হবি রে।
পরি নিছক ই হাসলো , যেই হাসির মানে
– এই অদ্ভুত বিদঘুটে ভালোবাসা দেখানোর নাটক টা না করলে ও পারতে ফুপি।
বলি দেওয়ার জন্য আমাকে এখানে আনা হয়েছে, তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
বিউটিশিয়ান লাল বেনারসি টা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতেই পরি আঁতকে উঠলো।
চোখ থেকে অঝর ধারায় বর্ষন নেমে গেল।
এই লাল বেনারসি পরেই তো , একজনের বউ হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল সে।
কত শত রঙিন সে স্বপ্ন, নেই কোনো ঝঞ্ঝাট আছে শুধু শান্তি।
কিন্তু আজ এই লাল বেনারসি পরেই সে অন্যের জন্য বউ সাজবে?
নাহহ নাহহ এটা ওর দ্বারা সম্ভব না ।
কিছুতেই পারবে না এটা , কোনো ভাবেই না।
পরি কে আঁতকে উঠতে দেখে মিসেস রাহেলা বললেন
– কি হয়েছে ?
এমন করছিস কেন ?
পরি ডান হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল
– আমি বেনারসি পরতে পারবো না।
পরির মা চোখ ছোট করে বললেন
– মানে টা কি ?
পরি চিৎকার করে বলল
– আমি পারবো নাহহ এই শাড়ি পরতে, কিছুতেই পারব না।
পরির বড় ফুপি মিসেস সুলতানা ব্যাপার সুবিধার না বুঝে বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন
– আহা পড়তে চাই ছে না তো পড়বে না।
ওকে বরং থ্রি পিস দিচ্ছি সেটাই পরে নিক আর বিউটিশিয়ান রা সাজিয়ে দিক।
মিসেস রাহেলা ভাবলেন এখন ভনিতা করলে হিতে বিপরীত, তার থেকে ভালো বিয়ে টা হয়ে যাক।
কখন না অভিশাপ লেগে যায়।
মিসেস রাহেলা সায় দেওয়াতে পরির বড় ফুপি টক টকে জাম রঙের একটা গরজিয়াজ থ্রি পিস দিলেন।
বোধহয় আগেই আনিয়েছিলেন।
বিউটিশিয়ান রা পরি কে থ্রি পিসের সাথে মেচিং করে সাজিয়ে দিলো।
পরি এমন ভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে এ কোনো পুতুল কে সাজানো হচ্ছে।
দেহে বোধহয় প্রান নেই, এ কেমন মানব শরীর।
পরি কে সাজিয়ে বিউটিশিয়ান রাই চমকে গেল।
হালকা সাজেই এতটা মারাক্তক লাগছে পরি কে , মনে হচ্ছে সত্যি ই কোনো অপ্সরী নেমে এসেছে। কিন্তু এত সুন্দরের মাঝে ও
পরি নামটা সার্থকতা পেল না শুধু মাত্র মুখের কোনে একটু হাসির অভাবে।
পরির সৌন্দর্য কে মনে হচ্ছে প্রান হীন।
বিউটিশিয়ান রা সাজিয়ে চলে যেতেই পরি এক টুকরো খাম বের করলো যার মাঝে ইংরেজি অক্ষরে ছোট ছোট করে লিখা ছিল।
Sorry
( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প সম্পর্কে কেউ না বুঝে বাজে মন্তব্য করবেন না প্লিজ।
সব কিছু ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হবে। আপনাদের কেমন লাগছে তার মতামত চাচ্ছি।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ