💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 11
______________________________
11,,,,,,,,
ফেসবুক আইডি ওপেন করতেই পরির মাথা তে ভুত চেপে বসে।
এক গাদা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে তার কাছে আর ওওও সেগুলো সব একসেপ্ট ও করে নেয়।
যেহেতু পরি প্রথম ফেসবুক ওপেন করেছে তাই যেই ম্যাসেজ দিয়েছে তার ম্যাসেজ এর ই রিপলে দিতো।
আর পরির ম্যাসেজ করতে ও বেশ ভালোই লাগতো।
এভাবে ই কাটছিল পরির দিন।
ফেসবুক প্রথম ওপেন করলে সব কিছু র প্রতি ই আগ্রহ থাকে অনেক বেশি ।
নতুন জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একটু বেশি ই।
পরি ও তার ব্যতিক্রম নয়।
একদিন হঠাৎ করেই মনে পড়লো নীলের কথা।
চটজলদি সার্চ করে ফেলল
রাফসান আহমেদ নীল।
ফোনের স্ক্রিনে বড় করে এসে পড়লো নীলের আইডি।
পরি নীলের প্রোফাইল এ গিয়ে পুরো প্রোফাইল এর সমস্ত ছবি দেখে নিলো।
একটা ছবি ,,,, ও বাদ যায় নি দেখা।
ছেলেটা বজ্জাত হলে ও দেখতে ভালো।
তারপর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ফোন স্ক্রল করে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল বেলা মিসেস রাহেলার কর্কশ গলার স্বরে ঘুম ভাঙলো পরির।
পরি বিরক্তি ঠেলে উঠে দাঁড়ালো তারপর বলল
– আম্মু এখন কয়টা বাজে ?
এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন ?
মিসেস রাহেলা কোমরে হাত গুঁজে বললেন
– আপনি তো আজ কাল আগের থেকে ও ঢিলা হয়ে গেছেন। আলসেমি ছেড়ে তাড়াতাড়ি উঠ।
পরি কিছুক্ষণ তার আম্মুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– উঠছি তো আম্মু।
পরির মা বললেন
– নাহহ আজ আর শুনছি না। রোজ নিজে লেইট করে আমাকে দোষ দিস।
আজ কে তোকে উঠিয়ে ই ছাড়বো।
পরি বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর ধীর কন্ঠে বলল
– আম্মু এখন তো উঠে পড়েছি।
এবার তুমি যাও ,,,,,, আর হ্যা আমি তোমার ডিম ভাজি দিয়ে রুটি খেতে পারবো না।
আমার জন্য প্লিজ আজ আলু পরোটা করে দেও,,,, প্লিজ আম্মু প্লিজ ।
পরির মা প্রথমে বিরক্ত হলে ত পরির এমন বাচ্চা দের মতো আবদার ফেলতে পারলেন না।
হেসে চলে গেলেন,,,,,,,,
পরির মা চলে যেতেই পরি হাফ ছেড়ে বাঁচল।
বালিশের সাইট থেকে ফোন টা বের করে সোজা ফেসবুকে চলে গেল।
প্রথমেই নীলের আইডি চেইক করলো।
কিন্তু না নীল তার রিকোয়েস্ট এখনো একসেপ্ট করে নি।
এতে পরির বেশ রাগ হলো ,,,,, হাজার টা মেয়ের রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে পারে আর আজকে ওর টাই পারলো না।
পরির বেশ বিরক্তি লাগছে,, ইচ্ছে তো করছে ফোন টাই ভেঙে ফেলতে।
কিন্তু সেটা করা যাবে না ,, কারন এই ফোন ভাঙলো তার আব্বু আর দ্বিতীয় বার ফোন
কিনে দিবেন না।
তাই পরি ফোন টাই সুইচ অফ করে দিলো।
ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমের দিকে পা বাড়াচ্ছিলো। কিন্তু সূর্যের কোমল স্পর্শে থেমে গেল পরি।
কি সুন্দর বাইরে টা,,,,? থেকে থেকে কোকিলের ডাক ও শোনে যাচ্ছে ।
তার মানে কি শীত পেরিয়ে বসন্ত পৃথিবী তে আগমন করেছে।
হ্যা গরম ও লাগছে বেশ,,,,,,,,, আজকাল বসন্ত কালে ও এতো গরম পরে যা ভাবার বাইরে।
পরির সমস্ত ভাবনাকে ফোরন কাটলো পরির মায়ের কন্ঠস্বর ।
পরি এই পরি তাড়াতাড়ি আয় আলু পরোটা তো কখন হয়ে গেছে।
ঠান্ডা হয়ে যাবে তো,,,,,,,
পরি তার ভাবনাকে ছেড়ে জবাব দিলো
– আসছি আম্মু
পরি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ গেল।
চেয়ার ঠেলে বসতে বসতে বলল
– আম্মু তাড়াতাড়ি দাও ,,,, ঠান্ডা হলে ভালো লাগবে না।
মিসেস রাহেলা খাবার দিতে দিতে বললেন
– এতোক্ষন ধরে বসে আছি ,,,, আর এখন এসে মহারানির তাড়া লেগে গেছে ।
পরি এক টুকরো পরোটা মুখে দিয়ে বলল
– আম্মু তুমি বুঝবে না।
আলু পরোটা মানে এক অদ্ভুত ভালোবাসা।
আর পরোটা টা খুব মজা হয়েছে।
পরির মা মেয়ের কথা তে মৃদু হাসলেন।
তারপর আবার কাজে মনোযোগ দিলেন।
পরি খাওয়া শেষ করে মিসেস রাহেলা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলল
– ঠ্যাংস আম্মু।
মিসেস রাহেলা এক হাতে মেয়ে কে জড়িয়ে বললেন
– হয়েছে হয়েছে এবার চলুন আপনার রেডি হতে হবে।
পরি মাকে ছেড়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো।
রেডি হতে লাগল কিন্তু কিছুতেই ক্রস ওড়না ঠিক ঠাক লাগাতে পারছে না।
পরি ওর মা কে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো
– আম্মু ও আম্মু একটু আসো না ।
দেখো না লাগাতে পারছি না তো।
পরির মা হন্তদন্ত হয়ে আসলেন।
ক্রস ওড়না ঠিক করতে করতে বললেন
– এতো বড় হয়ে গেলি এখনো ক্রস ওড়না লাগাতে পারিস না।
তোকে নিয়ে আর পারি না,,,,, এই সময় আমার কতো কাজ আর তোকে রোজ এটা ওটা ঠিক করে দিতে হয়।
পরি একটু ভাব নিয়ে বলল
– আমি এখনো বাচ্চা বুঝেছো।
পারলে আমাকে একটু ফিটার খাওয়াও।
মিসেস রাহেলা মেয়ের কথাতে হাসতে হাসতে বললেন
– ফাজিল মেয়ে ,,,,,,, যখন তখন ফাজলামি করতে ব্যস্ত।
এখন তাড়াতাড়ি যা দেড়ি হলে ও আমার সাথে ই রাগারাগি করবি।
পরি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে গেল।
স্কুলে গিয়ে ক্লাস রুমের দরজার কাছে সবাই দাড়িয়ে আছে।
ক্লাস রুম খুলে দিলেই কে কার আগে রুমে ঢুকবে।
প্রতিদিন ফাস্ট বেঞ্চে বসা পরির অভ্যাস।
ব্যাঘাত ঘটলে ই যখন তখন যার তার উপর রেগে ফেটে পড়ে।
ক্লাস রুমে ঢুকতেই হাফসা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
পরি ভ্রু কুঁচকে বলল
– এই তুই কখন এলি?
হাফসা বেঞ্চে ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল
– তোর পেছন পেছন ,,,,,,
পরি আর হাফসা দুজন স্কুল গ্রাউন এ চক্কর কাটতে লাগলো।
এগুলো ওদের রোজকার অভ্যাস।
কিছুক্ষণ ঘুরে দুজনে জুতো খুলে শহীদ মিনারে উঠে বসলো।
পরি হাফসার কাঁধে মাথা রেখে বলল
– বুঝেছিস ফেসবুক আইডি ওপেন করেছি।
তোর ভাই কে রিকোয়েস্ট দিয়েছি,,,,,, একবার একসেপ্ট করুক না।
তারপর সব ডিটেলস এ বের করবো।
দেখে নিস তোর ভাই সারা দেশের এক পিস ,,,,,,, নাম্বার ওয়ান বিজাত।
হাফসা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– আমার ভাই ওতো ও খারাপ না।
আচ্ছা সব কিছু কিন্তু আমাকে জানাবি।
পরি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
_______________________
বিকেলে আফজাল হোসেন হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন।
মাত্র ই ঢাকার বাসা থেকে ফিরলেন ওনি।
বাসার কাজ চলছে যে,, তাই এই সময় টাতে ব্যস্ততার মাঝে যাচ্ছে।
আফজাল হোসেন ঘরে ঢুকেই ফ্যানের নিচে বসে পড়লেন।
আজকাল যা গরম পরেছে,,,,,, তার উপর ঢাকার শহরের লং জ্যাম।
মিসেস রাহেলা এক গ্লাস পানি হাতে করে রুমে ঢুকলেন।
আফজাল হোসেন ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলেন।
বড্ড গরম,,,,,, ওনার মনে হচ্ছে প্রান যায় আর আসে।
মিসেস রাহেলা স্বামীর পাশে বসতে বসতে বললেন
– গোসল করে এসো ,,,,, ভালো লাগবে।
আফজাল হোসেন বললেন
– হ্যাঁ একটু পর আগে ঠান্ডা হয়ে নিই।
ঘামে শরীর চুপ চুপ,,,,,
মিসেস রাহেলার সাথে টুকটাক কিছু কথা বললেন।
এর মাঝেই পরি আসলো,,,,,,, ঘামে একেবারে শেষ অবস্থা।
সেই কখন স্কুলে গিয়েছে,,, সারাদিন পর এখন বাসাতে ফিরলো।
তার উপর আজকাল স্কুলে বেশ লোডশেডিং হয়।
এতো গুলো ছেলে মেয়ে একটা ক্লাসে থাকে ,,,,,, নিশ্বাস ও ভারী হয়ে যায়।
পরি কাঁধ থেকে ব্যাগ নামি য়ে বাবার পাশে বসলো।
শরীর টা একটু ঠান্ডা হলে বলল
– আব্বু কখন এসেছো?
আফজাল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– একটু আগেই এসেছি মা।
সারাদিন বেশ ধকল গেছে তাই না রে ?
সেই কোন কাক ভোরে উঠে স্কুলে যাস।
একটু রেস্ট নিয়ে গোসল করতে যা।
পরি সম্মতি জানালো ,,,,,,, তারপর বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
পরি রুমে যেতেই আফজাল হোসেন বললেন
– বুঝলে মেয়েটা তো বড় হচ্ছে।
বছর কয়েক পর বিয়ে ও দিতে হবে ,,,,,,, তাই ভাবছি গ্রামে আমাদের বাড়িটা ঠিক করি।
হাজার হোক নিজের গ্রাম থেকেই তো মেয়ের বিয়ে দিবো তাই না।
মিসেস রাহেলা ও সম্মতি জানালেন।
আফজাল হোসেন কিছুক্ষণ বসে থেকে বললেন
– ওও ভালো কথা ,,,,,, বড় আপা বলেছিলেন প্রান্তের সাথে যদি পরির বিয়ে হয়।
মিসেস রাহেলা ভ্রু কুঁচকে বললেন
– তুমি কি বলেছো?
আফজাল হোসেন বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে বললেন
– আমি মানা করে দিয়েছি ,,,,, বলেছি এখন এই সব কিছু ভাবতে চাই না।
পরি কে আমরা অনেক পড়াশুনা করাবো।
আর তাছাড়া প্রান্তের সাথে পরির বয়সে প্রায় 9 বছরের ফারাক।
মিসেস রাহেলা কাপড় ভাঁজ করতে করতে বললেন
– সেটাই তো।
আর এখন আমরা এই সব নিয়ে ভাবতে বা বলতে কোনো টাই চাই না।
আমাদের মেয়ে ডাক্তার হবে ,,,,,,,,,এটা তো ওর স্বপ্ন ।
______________________
পরি ফ্রেস হয়ে এসে একটু ছাঁদে ঘুরতে গেল।
কিছুক্ষণ ছাঁদের চার পাশটাতে ঘোরাঘুরি করতেই পেছন থেকে নিশা ভোওও করে উঠলো।
পরি চমকে গিয়ে পেছনে তাকালো।
পরি নিশা কে দেখে বলল
– ঠাপ্পর দিবো ফাজিল মেয়ে,,,,, আর একটু হলেই তো জান টা বের হয়ে যেত।
নিশা কোমরে হাত গুঁজে বলল
– ভয় দেখানোর জন্য ই তো করেছি।
আর তুমি ঠাপ্পর দিয়ে দেখো ,,,,, তোমার সব চুল ছিঁড়ে ফেলব।
পরি মুখ কুঁচকে বলল
– ফাজিল মাইয়া ,,,,, চকলেট এনেছি।
ভাবলাম রাতে দিবো,,,, কিন্তু না আমি আর কাউকে চকলেট দিবো না।
নিশা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– এহহহ আপু দাও না।
এমন করো কেন আর কখনো তোমার পেছনে লাগবো না।
পরি ভেঙ্চি কেটে বলল
– নাহহ দিবো না।
নিশা কাঁদো কাঁদো হয়ে পরি কে জড়িয়ে বলল
– দাও না আপু।
তুমি না আমার ভালো আপু।
নিশার এমন কান্ডে পরি মুখ চেপে হাসছে।
কিছুক্ষণ পর বলল
– আচ্ছা দিবো ছাড়।
নিশা খুশি হয়ে পরি কে চুমু দিয়ে দিলো।
পরি হাসতে লাগলো,,,,, তারপর বলল
– তোর সাথের টা কোথায় ?
নিশা বলল
– আমান তো চকে ঘুরতে গেছে।
পরি নিচে নামতে নামতে বলল
– যাহহহ ওরে ডেকে নিয়ে আয়।
নিশা দৌড়ে চকের দিকে গেল।
পরি মৃদু হাসতে লাগলো।
দুটিতে জমজ কি নাহ,,,,,,,, পরির থেকে পাঁচ বছরের ছোট নিশা আর আমান।
আমান নিশার কয়েক মিনিটের বড়।
কিন্তু আমান আর নিশা কে দেখলে মনে হয় ওরা দুজন দুই বছরের ছোট বড়।
বড্ড ফাজিল দুটিতে ,,,, তবে দিন শেষে ওকে খুব ভালোবাসে।
যদি ও আমানের সাথে পরির সাপে নেওয়েলের সম্পর্ক ই বটে।
তবে ঐ যে ভাই বোন দের অভ্যাস হাজার ঝগড়ার পর ও একটু পর ই পিরিত লাগাতে আসে।
পরি এই সব ভাবতে ভাবতে আনমনে হাসতে লাগলো।
( আসসালামুআলাই রির্ডাস। আজকের পর্ব তুলনামূলক ভাবে বড় দিয়েছি। কাল রাতে খানিকটা লিখেছিলাম সকালে আবাল খানিকটা লিখলাম।
কালকে প্রচুর ঘুম পেয়েছিল তাই কি লিখেছি নিজে ও জানি না।
শেষ অব্দি পাশে থাকুন,,,,, আমি আমার বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করবো ইনশআল্লাহ ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ