💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 14
_______________________________
14
হলুদে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে পরি।
কিন্তু হলুদের শাড়ি পড়া টা পরির কাছে খুব ই বিদঘুটে ব্যাপার।
ও কখনো শাড়ি পড়ে নি ,,,, খুব ই অস্বস্তি হচ্ছে ওর।
কোনো রকমে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে পরি।
মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে গেল।
পরি কোনো মতে শাড়ি ধরে ধীরে ধীরে বাসে উঠে বসলো।
মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে মেয়ের বাড়ি।
কিছুক্ষণের মাঝেই পৌছে গেল ওরা।
পরি শাড়ি ধরে হালকা পায়ে বাস থেকে নামলো।
এমন ভাবে হাটছে যেন মাটি ও ব্যাথা না পায়।
পরি কে এভাবে দেখে পরির কাজিন সিমা মুখ চেপে হাসছে।
পরি রাগি চোখে তাকাতেই সিমা দমে গেল।
একটু দূরেই বিশাল বড় গেইট ধরে দাড়িয়ে আছে মেয়ের পক্ষের বিশাল বাহিনী ।
মেয়ের পক্ষের কোন মহামান্য ব্যক্তি আসলে নাকি ঢুকতে দিবেন।
যত্তসব
পরি বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে রইলো,,,,, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইক নিয়ে এন্ট্রি নিলো নীল।
পরির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,, এই ব্যাটার জন্য সবাই কে এতো ক্ষন দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
নীল কে ঘিরে দাঁড়ালো সবাই।
পরির মনে হচ্ছে কোনো মিনিস্টার কে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে।
নীল এসেই সবার সাথে কতোক্ষন কি যেন আলোচনা করে নিলো।
পরি আড়চোখে কোনে পক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওর ইচ্ছে করছে সব গুলো কে আস্ত কাঁচা ই খেয়ে ফেলতে।
বেশ কিছুক্ষণ পর মহামান্য ব্যক্তিদের আলোচনা শেষ হলে বর পক্ষ কে ঢুকতে দিলো।
পরির এই সব আহ্লাদ সহ্য হচ্ছে না তাই ওও ব্যস্ত পায়ে হাঁটা শুরু করলো।
গেইট দিয়ে ঢুকতেই পরির ক্লাসের ছেলে গুলো পরি কে স্প্রে মেরে স্নো গার্ল করে দিলো।
পরি ছোট ছোট চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
হাফসা পরি কে এই অবস্থা তে দেখে আচ্ছা করে ওদের ঝেড়ে দিলো।কিন্তু ওরা হাফসা কে পাত্তা না দিয়ে বলল
– দেখ এখন থেকে পরি আমাদের বেয়াইন সো ফাজলামি করার পুরো হক আছে।
পরি মুখ বাঁকিয়ে বলল
– আমাদের ঐ খানে একবার যা তারপর দেখিস তোদের কি করি।
পরি কে নিয়ে হাফসা ওর ফুফুর রুমে চলে গেলো।
পরি কে পরিষ্কার করে দিয়ে শাড়ি টা ঠিক করে দিলো। তারপর অনুষ্ঠান মঞ্চে চলে আসলো।
হাফসা সহ কিছু মেয়ে মাথার উপর ওড়না ধরে ডান্স করতে করতে কনে কে নিয়ে আসলো।
কনে কে অনুষ্ঠান মঞ্চে বাসাতেই সবাই হলুদ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কোথা থেকে নীল আর কয়েকটা ছেলে অথার্ৎ রিয়ার ( কনে ) সব ভাইরা হলুদ নিয়ে লাফালাফি করা শুরু করে দিলো।
পরির বেশ বিরক্ত লাগলো ,, এই ছেলেটা কে সহ্য ই করতে পারে না পরি।
কেন যে এমন হয় কে জানে?
কিছুক্ষণের মাঝেই একজন লোকাল গায়ক গান শুরু করে দিলেন।
সবাই গানের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ,,,,,, সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে বর পক্ষ বাসাতে ফিরে আসলো ।
কারন একটু পর তো কনে পক্ষ হলুদ লাগাতে আসবে।
কিছুক্ষণের মাঝেই মেয়ে পক্ষ হলুদ নিয়ে চলে আসলো ,,,,, পরি শাড়ি পড়ে থাকায় বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলো।
তাই হলুদ লাগিয়ে বের হয়ে আসলো ,,,,,,,
পরি বাসায় যাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা তে আসতেই দেখতে পেল নীল ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
এক মূহুর্তের জন্য পরির চোখ দুটো নীলে আটকে গেল।
রাস্তাতে লাগানো ছোট ছোট রঙিন আলোতে নীল কে অপূর্ব লাগছে।
নীল স্কাই ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে হাতা টা কনুই পর্যন্ত মুরানো আর সানগ্লাসে নীল কে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। নীল কে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা কোনো ফুলের সুভাস।
এই মুহূর্তে নীলের জন্য পরির ইচ্ছে করছে দু লাইন কবিতা লিখে ফেলতে।
ছেলেরা ও বুঝি এতো মায়াবি হয় ?
নীলের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা স্নিগ্ধ হাসি টা দেখে পরির বুকের ভেতর ধুম করে উঠলো।
নীল কে এতো নিষ্পাপ লাগছে কেন ?
সবাই তো বলে নীল নাকি মেয়েদের সাথে ফ্লাট করে,,,, তাহলে?
পরির বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে।
পরি এক মুহূর্ত দেরি না করে বাসায় চলে আসলো।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফোন হাতে বসে পড়লো ,,,,, নীল কে হঠাৎ ই এতো ভালো লাগছে কেন ?
পরি কোনো কিছু না ভেবেই নীল কে ম্যাসেজ দিলো,,,, টুকটাক কথা হলো ওদের।
কিন্তু নীল কে এখনো জানানো হয় নি ওও রূপা নয় কারন পরি আসল সত্যি টা জানতে চায়।
কেন জানতে চায় তা পরি ও জানে না,,,, কিন্তু সব কিছুই ওকে জানতে হবে।
_______________________
বিয়ের দিন নীলের সাথে দেখা হলো না পরির।
পরি দের তাড়া থাকায় বিয়ে হওয়ার পর পর ই বাসায় ফিরে আসে ওরা।
নীল কে দেখতে ইচ্ছে করছিলো ,,,,, কিন্তু কেন এই বাসনা ?
পরি ভেবে পায় না ,,,,, হঠাৎ করেই যেন পরি নীলের উপর দুর্বল হয়ে গেল।
পরি মন খারাপ করে বাসাতে বসে রইলো,,,,,
মনে পড়লো ম্যাসেজ দেওয়ার কথা ,,,,,, তাই পরি হন্তদন্ত হয়ে ম্যাসেজ দিলো কিছুক্ষণের মাঝেই নীল রিপলে দিলো।
পরি বলল
– কেমন গেল আজকের দিন ?
নীল – হুমমম অনেক ভালো।
– জিএফ খুজে পেয়েছো?
নীল – হ্যাঁ পেয়েছি কয়েক জন।
আরো ও কয়েকজন দরকার,,,,,,,তোমার চেনা জানা কেউ থাকলে খুঁজে দেও।
পরির রাগ হলো না কিন্তু খুব অভিমান হলো।
পরি কিছু বলল না,,,,,,,,,, বেশ কিছুক্ষণ পর রিপলে দিলো
– হুমম খুজে দিবো নে।
নীল – হুমমম।
তারপর টুকটাক কিছু কথা বলে পরি ডিনার করতে চলে গেল ।
একটু খাবার মুখে দিয়েই পরি আর খেলো না।
ভালো লাগছে না ওররর,,,, প্লেটে পানি ঢেলে উঠে গেল।
আজ বউভাত,,,,,,, পরি সহ কিছু কাজিন মিলে ঠিক করেছে স্প্রের বদলা নিবে।
তাই রাস্তার মাঝে এক গাদা স্প্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একের পর এক কনে পক্ষের লোক আসতে লাগলো।
গেইট দিয়ে যেই ঢুকছে তাকেই স্প্রে দিয়ে ভুত বানিয়ে দিচ্ছে।
এই নিয়ে হাসাহাসি ও হচ্ছে বেশ।
পরি সহ সবাই বাড়ির ভেতর যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে একটা বাইক আসতে লাগলো।
নেহা বলল
– পরি এই বেটা কে ও ভুত বানাবো।
বাইকটি সামনে আসতেই পরি সহ সবাই স্প্রে দিয়ে বর্ষন তুলে দিলো।
কিন্তু বাইকে থাকা ছেলেটা বাইক চলতি অবস্থা তেই ওহহহহোও শব্দ করে দু দিকে দু হাত মেলে দিলো।
পরি লক্ষ্য করলো এটা নীল ,,,,,,,,,,,,,,
পরি এক দৃষ্টিতে নীলের বাইকের দিকে চেয়ে রইলো।
এই রকম ফ্লিমি এন্ট্রি দেখে পরির বাকি কাজিন রা তো ক্রাশ খেলো।
পরির খুব রাগ হলো ,,,,, এতো ভাব নেওয়ার কি ছিলো।
পরি কোনো কথা না বলেই বাড়িতে চলে আসলো।
সন্ধ্যার দিকে বউ বিদায় দেওয়া হবে বলে আবার আসলো।
পরির মন টা একদম ভালো নেই।
কেন বার বার পরি নীলের উপর আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
কিছুই ভালো লাগছে না ওররর
ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে।
বউ বিদায়ের সময় নীল কে আর দেখলো না পরি।
বউ কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর পরি সোফাতে বসে আনমনে ভাবছে।
একটু পরে একটা বাচ্চা এসে একটা চকলেট এর বক্স ধরিয়ে দিয়ে গেল। কে দিয়েছে বলতেই বাচ্চা টা বলল
– আমি জানি না।
বাচ্চা টা নিতান্তই ছোট পরি তাই আর প্রশ্ন করলো না।
বাচ্চা টা দৌড়ে চলে গেল,,,,,, ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসায় চলে আসলো।
কিছুই ভালো লাগছে না ,,,,,,,,,
সারাক্ষণ মাথায় নীল ঘুরছে ,,,,,
পরি বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে নীলের প্রতি এতো আকর্ষণ কি করে হলো।
বাসায় এসে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো ,,,,,,,,,,
ফেসবুকে এসেই একটা স্ট্যাটাস দিলো
*******
হঠাৎ মায়ায় জড়ানো টা খুবই যন্ত্রণাদায়ক আর কারো প্রতি ঘৃনা থেকে আসক্ত হওয়া টা তো মারাক্তক ক্ষতিকারক ।
********
নীলের ম্যাসেজ চমকে উঠলো পরি।
নীল তো কখনো তাকে আগে থেকে ম্যাসেজ দেয় না ,,,,, আজ কেন দিলো।
পরি তড়িঘড়ি করে ম্যাসেজ চেইক করলো।
ম্যাসেজ টা দেখেই পরি হা হয়ে গেল।
পরি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলল ,,,,,,,, ফোন টা হাত থেকে কখন যে বেডে পড়ে গেছে সেই দিকে কোনো ধ্যান ই নেই পরির।
( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প ছোট হচ্ছে কিছু সমস্যার জন্য।
আমি এর জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
গল্প টি কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ