বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-২৮

0
2809

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 28 & 29
____________________________________
28,,,,
পরি নীলের রুমের কাছে দাড়িয়ে আছে।
রুম লক করা হাতে খাবার থাকায় নক ও করতে পারছে না।
উপায় অন্তর না পেয়ে নীল কে ডাকলো পরি।
কিন্তু নীল দরজা খুলছে না।
পরি আবার ডাকলো কিন্তু নীল সাড়া দিলো না।
পরি বিরক্ত হয়ে বলল
– নীল ভাইয়া শুনছেন না নাকি ,,,,,,?
ভাইয়া বলার পর পরি নিজের জিহ্বা তে কামর দিলো।
ইসসস ছোট বেলা থেকে ভাইয়া বলে ঢং করেছে।
তাই খানিকটা অভ্যাস এখনো আছে।
নীল দরজা খুলে দিলো,,,,
নীল কে দেখে পরি মেকি হাসি দিলো।
নীল ভ্রু কুঁচকে বলল
– আমি তোমার কোন কালের ভাই ?

পরি আমতা আমতা করে বলল
– আসলে আপনি দরজা খুলছিলেন না।
তাই আপনার নাম নিতে মুখ ফসকে ভাইয়া চলে এসেছে।
নীল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– তার জন্য ভাইয়া ডেকে হার্ট ব্রেক করে দিলে।
একবার তো অন্য কিছু ও ডাকতে পারো।

পরি মুখ কুঁচকে বলল
– আর কি ডাকবো।

নীল মুখ গোমড়া করে বলল
– এটা কেমন কথা পরি।
মানুষ বি এফ কে কতো কিছু বলে আর তুমি হাসবেন্ড কে কি ডাকবে সেটা জানো না।
ওকে তোমায় আমি প্রেম শিখিয়ে দিবো।
এখন তাড়াতাড়ি আসো ক্ষিদে পেয়েছে।
পরি রুমে ঢুকে সেন্টি টেবিলে খাবার টা রেখে দাড়িয়ে রইলো।
নীল বেডে আধসোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল
– পরি দরজা টা লক করে দাও।

পরি চোখ বড় করে বলল
– কেন ?

নীল বিরক্তি মাখা স্বর নিয়ে বলল
– তোমার কি মনে হয় এই সকাল বেলা আমি কিছু করবো ?
এমন বাচ্চাদের মতো কথা বলো কেন ?
এই মূহুর্তে হাজার টা ইচ্ছে থাকলে ও আমি কিছু করছি না ম্যাডাম।
আপনি নিশ্চিন্তে আপনার হাসবেন্ডের পাশে বসতে পারেন।
ওনি কোনো ভুল কাজ করবেন না।
পরি নীলের কথা তে বোকা হয়ে গেল।
আর নীল সামান্য একটা কথা কে কি থেকে কি বানিয়ে দিলো। কি আজব ছেলেটা
পরি মাথা নিচু করে দরজা লক করে দিলো ।
নীল পরি কে আড়চোখে দেখছে আর মুখ চেপে হাসছে।

নীল ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করে ফোনটা বেডের পাশে রাখলো।
তারপর বেডে উপর হয়ে শুয়ে পড়লো।
পরি নীলের মতি গতি কিছু বুঝতে পারছে না।
নীল হাত নাড়িয়ে বলল
– পরি হাতটা প্রচন্ড ব্যাথা তুমি কি আমার হাত টা টিপে দিতে পারো।

পরি মুখ কুঁচকে বলল
– হাতে ব্যাথা কেন ?
কি করে হলো এমন ?
খুব বেশি ব্যাথা করছে ?
আহহহ কখন থেকে ব্যাথা ?

পরি কে এমন ব্যস্ত হতে দেখে নীল নিঃশব্দে হাসলো।
মেয়েটার ব্যাকুলতা ই বুঝিয়ে দিচ্ছে নীল কে কতো টা ভালোবাসে।

নীল কে কিছু বলতে না দিয়েই পরি নীলের পাশে এসে বসে পড়লো ।
নীলের হাত নাড়িয়ে দেখতে লাগলো হাত কি কোনো ভাবে মচকে গেছে নাকি।

নীল আড়চোখে পরির চোখ দেখতে লাগলো।
পরির চোখ বলে দিচ্ছে নীলের জন্য কতোটা ব্যথিত হচ্ছে তার হৃদয়।
নীল মুচকি হেসে বলল
– শার্ট এর উপর দিয়ে হাত কিভাবে টিপে দিবে।
আমি শার্ট টা খুলে নেই,,,,
নীলের কথাতে পরি খানিকটা থতমত খেয়ে গেল।
কিন্তু কিছু বলল না,,,, নীল শার্ট টা খুলে নিলো।
শার্ট এর নিচে পাতলা সিভিল এর গেঞ্জি পড়া ছিলো কিন্তু তবু ও পরি চোখ বন্ধ করে নিলো।
পরির এমন বিহেফ এ নীল ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।তার জানা নেই হাসবেন্ড এর শরীরের দিকে যেন না তাকাতে হয় তার জন্য কেউ চোখ বন্ধ করে রাখে ।
আল্লাহ এই মেয়েটা তো গেলো ,,,, পরবর্তীতে এর যে কি হবে।
পরি চোখ বন্ধ করেই নীলের হাত অতি যত্নে টিপে দিতে লাগলো।
আর নীল পরির চোখ বন্ধ করা মুখের দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
মেয়েটা যতটা না সুন্দরী তার থেকে ও হাজার গুন বেশি মায়াবী।
এই মায়াবিনীর মায়া যে অতি ভয়ঙ্কর।
নীল এই মায়াবিনীর জালে আটকে গেছে।
কি স্নিগ্ধ মেয়েটা ,,,, সাত সাত টা বছর ধরে মেয়েটা নীলের উপর জেকে বসেছে।
কোনো মূহুর্তে ও নীল পরি কে ভুলতে পারে নি।
কখনো মাথায় আসে নি ,,,, এই মেয়েটা কে ভুলে যাওয়ার কথা।
এই পিচ্ছি মেয়েটা যে কি করে সেই নীল কেই ভালোবেসে বিলীন হয়ে গেল নীল ভেবে পায় না।
হয়তো মহান আল্লাহ নীল আর পরির জুটি এইভাবেই বেঁধে রেখেছেন।
সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া তার জীবনে পরির মতো কাউকে পাঠানোর জন্য।
নীল পরির কাঁপা কাঁপা চোখের পাপড়ি গুলো খুঁটিয়ে দেখছে ।
ইচ্ছে করছে পরির চোখের পাপড়ি গুলো কে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিতে।
নীল নীলের এই অবাধ্য ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।
হঠাৎ করেই নীলের উষ্ণ ঠোঁট পরির চোখের পাপড়ি কে ছুইয়ে দিলো।

নীলের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে পরি চোখ মেলে তাকালো।
পরি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীল হ্যাঁচকা টান মেরে পরি কে বুকে ফেলে দিলো।
পরি শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়াতে নিলেই নীল পরি কে এক হাতে জড়িয়ে নেয়।
নীলের হাত কোমর জড়িয়ে খানিকটা পেটের কাছে লাগতেই পরি কেঁপে উঠে।
পরি ধীর কন্ঠে বলল
– ছাড়ুন প্লিজ।
নীল পরির কথাতে ভ্রু কুঁচকে বলল
– কেন ছাড়বো ?
আর আমি কি তোমাকে ধরেছি নাকি।

পরি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
– তাহলে ?

নীল – আমি আমার বউ কে ধরেছি।
তোমার কি তাতে ?

পরি নীলের হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে লাগলো।
পরির ছুটোছুটি তে নীল পরি কে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে পরির দু হাত চেপে ধরে পরির উপর ঝুকে নিলো।
পরির শরীর কেঁপে উঠছে ,,,,,, নীল খানিকটা আরো কাছে গিয়ে পরির মুখে ফু দিয়ে দিলো।
পরি চোখ বন্ধ করে নিলে নীল পরির গলাতে চুমু দিয়ে দিলো।

পরির শরীর অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলো।
পরি চোখ মেলে বলল
– প্লিজ।

নীল মৃদু হেসে বলল
– আমি তো পারছি না পরি তোমাকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।
অবাধ্য সব ইচ্ছে জাগছে ,,,,,,
তুমি জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি।
সব ছেলেরাই চায় তার প্রিয় মানুষটি কে একটু ছুইয়ে দিতে কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল করেছি।
আমি কখনো অন্য কিছু ভাবি নি শুধু তোমাতে বিলীন হয়েছি।
তুমি যেন ডেসপারেট না হয়ে পড়ো তার জন্য দূরে থেকেছি।

পরি আমি কি তোমায় খুব বেশি কষ্ট দিয়েছি ?
আচ্ছা আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে কি সেই কষ্ট টা লাঘব করতে পারবো না?
তোমায় সুখে রাখতে পারবো না ?
আমি এতো তুচ্ছ কেন পরি,,, এক নিমিষে কেন পারছি না তোমার কষ্ট দূর করে দিতে।
আমি কি ব্যর্থ প্রেমিক ?
আমি হতে চাই না ব্যর্থ প্রেমিক,,,, আমি আমার ছোট্ট পৃথিবীতে তোমায় নিয়ে থাকতে চাই পরি।
যেই পৃথিবীতে সমস্ত সুখ আমি উজার করে দিবো।
আমি কি পারবো না পরি ?

কথা গুলো বলার সময় নীলের গলা ধরে আসছিলো।
যদি পরির পরিবার কে মানাতে অক্ষম হয় নীল তাহলে পরি তার কাছে থাকতে পারবে না।
নীল কি করবে তখন?
কাল রাতের সমস্ত ঘটনা নীল সচক্ষে দেখেছে।
নীল পরির রুমে আগে থেকেই ছোট একটা ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলো।
পরি অস্বাভাবিক অবস্থাতে আছে যদি পরি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলে তাই এই ব্যবস্থা।
কাল রাতে যখন ফুটেজ অন করে তখন পরির কান্না আর্তনাদ সমস্তটা দেখে নেয় নীল।
নীলের বুকে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
ইচ্ছে করছিলো পরির কাছে ছুটে যেতে।
কিন্তু মানুষ কে কান্না করার ও সুযোগ দেওয়া উচিত তাই আর যায় নি।
নীল খুব মনোযোগ দিয়ে পরি কে দেখে নিয়েছিল।
পরির প্রতি টা কথা বুকে বার বার বাজছিলো।
পরি কখনোই পরিবার কে ছাড়া থাকতে পারবে না।
ছোট থেকেই পরি পরিবার কে খুব ভালোবাসে কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার ওও।
নীল ও পরির সাথে সারা রাত ঘুমোয় নি।

পরির হিচকির শব্দে নীলের ধ্যান কাটলো।
পরি কাঁদছে,,,,,
নীল পরি গালে বেয়ে পড়া পানি টুকু ঠোঁট দিয়ে ছুষে নিলো।
নীল মুচকি হেসে বলল
– এই মেয়ে কাঁদছো কেন ?

পরি হিচকি রত অবস্থাতেই বলল
– আম সরি নীল।
আম সরি ,,,, আমি হয়তো

পরি কে আর কিছু বলতে দিলো না নীল।
তার আগেই পরির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
নীল পরির কপালে চুমু খেয়ে বলল
– একদম আজে বাজে চিন্তা করবে না।
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আর পরি তুমি ভুলে যাচ্ছো কি করে ,,আমি যে তোমার স্বামী।
আমরা আবদ্ধ আছি,,, আমাদের এই জোড় ভাঙবে না।

নীল মলিন হেসে পরির উপর থেকে উঠে বসল।
তারপর পরি কে টেনে উঠিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
পরির মাথায় চুমু দিয়ে বলল
– আমাকে খাইয়ে দিবে পরি ?

পরি মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো।
পরি নীলের মুখের সামনে খাবার তুলতেই নীল বলল
– ঊহুম আগে তুমি।
তুমি আর আমি এক সাথে খাবো।

পরি মুচকি হাসলো আর নীল পরি কে খাইয়ে দিলো।
পরির চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
নীল দু হাতে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
– আমার ও তো ক্ষিদে পেয়েছে পরি।
এভাবে কাঁদলে আমি খাবো কখন।
উমমম আমি রাগ করেছি তোমার সাথে।

নীলের বাচ্চা দের মতো কথা বলাতে পরি ফিক করে হেসে উঠলো।
তারপর খাবার নিয়ে নীল কে খাইয়ে দিলো।
নীল মুচকি হেসে পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– বউ ,,,আমার বউ।

পরির বুকে ঢোল বাজতে লাগলো।
পরির হার্ট বিট গুলো থেমে থেমে যাচ্ছে।
নীল পরির অবস্থা দেখে মুচকি হাসছে।
_______________________

সুলতানা বেগম একটা পঁচিশ বছর বয়সী ছেলেকে জোড়ে থাপ্পর লাগিয়ে দিলেন।
পঞ্চাশ হাজার টাকা কি স্বাধে দিয়েছেন তবু ও নীলের কোনো খোজ খবর এনে দিতে পারে নি।
সোশাল মিডিয়াতে নীল নাম দিয়ে খোঁজা খুঁজি করে ও কিছু পায় নি।
কারন নীলের পুরো নাম তো রাফসান আহমেদ নীল যা এরা কেউ জানে না।
সোফা তে বসে বেশ আয়েশে আপেল কামড়াচ্ছে প্রান্ত।
বিরক্ত সে পরির জন্য,,, মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার।
এই মেয়েকে হাতের মুঠোয় আনার জন্য গত দুদিন ধরে কোনো রকম মেয়ে বা মদ ছুঁতে পারে নি শান্ত।
আজ সে কিছুতেই বাসায় বসে থাকবে না।
সুলতানা বেগমের কোনো কথাই কানে নিবে না।
সুলতানা বেগম পলাশ এর দিকে বর্জ্য কন্ঠ ছুড়ে বললেন
– তোকে কিসের জন্য টাকা দেই আমি।
কোনো কাজ ই তো করিস না।
এই মূহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাহ।

পলাশ মাথা নিচু করে সমস্ত টা শুনে নিলো।
তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্থান ত্যাগ করলো।

সুলতানা বেগম টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস টা ছুড়ে ফেলে দিলেন।
গ্লাস টা মেঝে তে পরে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ।
তারপর বললেন
– উফফফ এই নীল নামক অভিশাপ আমার সমস্ত পরিকল্পনাতে পানি ঢেলে দিয়েছে।

প্রান্ত বিরক্তি ঠেলে সোফা থেকে উঠে গিয়ে বলল
– হোয়াট রাবিস আম্মু।
আমি পরির জন্য দিন কে দিন বসে থাকতে পারবো না।
আমি আজ রাতেই যাবো।
আর তাছাড়া আমার বিজনেস এর বিঘ্ন ঘটছে।
গত দু বছরে যা কামিয়েছে তা তো খরচ ই করে ফেলেছি।
আমার আর ও টাকা লাগবে ,,,, দ্রুত পরি কে খোঁজার ব্যবস্থা করো।
আর পরি কে ও আমার লাগবে এ সুন এস পসিবল।
এক বার পাই আমি তারপর ওর কি অবস্থা করি দেখে নিয়ো।
আই নিড পরি ,,,,,,,,,,

ছেলের কথাতে সুলতানা বেগমের ইচ্ছে করছে দুটো কষে চর বসিয়ে দিতে।
ওনি কি বসে অছেন নাকি।

প্রান্ত আধ খাওয়া আপেল টা টেবিলে রেখে দিয়ে বাইরে চলে আসলো।
গত কয়েক দিনের ঝামেলায় বিজনেস এ বিঘ্ন ঘটেছে।
আজকে রাতে ক্লাব এ পার্টি আছে আর কালকে ডিল ও আছে।
এখন এই ঝামেলার মধ্যে থাকলে চলবে না।
তাছাড়া চার দিন যাবত প্রান্ত কোনো মেয়ের সাথে সময় কাটায় নি শুধু হালকা মদ খেয়েছিলো।
যার কারনে প্রান্তের মস্তিষ্ক বিরক্ত হয়ে আছে।
প্রান্ত কাউ কে ফোন লাগিয়ে বলল একটা মেয়ে কে আজ রাতের জন্য রেডি করতে।
তারপর ই পৈশাচিক হাসি দিলো,,,,,,,
প্রান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো নিষিদ্ধ গলিতে কয়েক হাজার টাকা ফেললেই মেয়ের অভাব হয় না।
আর পরির জন্য তার কতো সময় নষ্ট হচ্ছে।

অবশ্য পরি কে বিয়ে করলে আখের লাভ টা তো তার ই।
তাই বলে প্রান্ত নম্র ভদ্র নিষ্ঠাবান হতে পারবে না।
প্রান্ত নিজের মতো থাকবে আর পরির উপর ছুড়ি ঘোরাবে।
প্রান্ত বত্রিশ টা দাত বের করে নরকীয় হাসি হাসতে লাগলো।

আজ কে নীল সেই সকাল থেকে একবারের জন্য ও রুম থেকে বের হয় নি।
সারাক্ষণই কাজে মজে ছিলো।
পরি সেই সকাল আটটার সময় নীল কে নাস্তা খাইয়ে গেছে।
আর এখন অব্দি নীল কিছু খায় ও নি দুপুর তিনটা বাজতে চললো।
যতোবার ই সবাই খাবারের জন্য ডাকতে এসেছে নীল ততোবার ই ব্যস্ততা দেখিয়ে দিয়েছে।
পরি কিছুক্ষণ পর পর লুকিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে চলে যাচ্ছে।
নীল দু বার ধরে ও ফেলেছে তখন পরি বলেছে
– আসলে আপনি খাবেন কি না তাই জিঙেস করতে এসেছি।
প্রতিউত্তরে নীল শুধু হেসেছে।
নীল খায় নি বলে পরি ও খায় নি।
পরি প্লেটে খাবার বেরে নিয়ে নীলের রুমে চলে আসলো।
দরজা ঠেলে রুমে আসতেই পরি দেখল নীল রুমে নেই।
পরি ভ্রু কুঁচকে ভাবছে এই অসময়ে গেল কোথায় ?
ব্যালকনির দরজা খোলা দেখে পরি মৃদু হাসলো।
খাবার টেবিলে রেখে ব্যালকনিতে পা বাড়ালো।
নীল রেলিং এ দু হাত দিয়ে পেছন ফিরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
পরি হালকা কাশতেই নীল ঘুরে তাকালো।
পরি কে দেখে নীল স্নিগ্ধ হাসি দিলো।
নীলের দিকে পরি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
পরি বরাবর ই নীলের মাঝে আটকে যায়।
পরি কে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে নীল মৃদু হাসলো।
পরক্ষণেই দুষ্টুমি করার স্বাধ হলো তাই নীল পরি কে চোখ মেরে দিলো।
নীল চোখ মারতেই পরি মাথা নিচু করে নিলো।
নীল বুঝি দেখে ফেলল পরি যে তার দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো।
ইসস কি লজ্জা

পরি মাথা নিচু করেই বলল
– আপনার খাবার নিয়ে এসেছি খেতে আসুন।

এই কথা বলেই পরি এক মুহূর্ত দেরি করলো না।
ব্যালকনি থেকে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

পরির দিকে চেয়ে নীল হাসতে লাগলো।
পরক্ষণেই হাসি টা কোথাও বিলীন হয়ে গেল।
মনের মাঝে এক রাশ অশান্তি এসে গ্রাশ করে নিলো।
হঠাৎ নীলের ফোন বেজে উঠলো।
নীল পকেট থেকে ফোন বের করে কথা বলে নিলো।
নীলের মুখ টা বের গম্ভীর দেখালো।
নীল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
কয়েক দিনের মাঝেই সব কিছু বদলে যাবে।
মনের ভেতর অজানা সব ভয় কাজ করছে।
নীলের মন ব্যাকুল হয়ে পড়ছে।
কি হবে,,,,,
আচ্ছা সব কিছু কি ঠিক হয়ে যাবে ?
পরির হাতে হাত রেখে কি সংসার টা করা হবে ?
নীল আর ভাবতে পারে না।
পরির ডাকে নীল ব্যস্ত পায়ে রুমে ঢুকে পড়লো।

Part – 29,,,
আজ দুদিন হলো নীল আর অনিক বাসায় নেই।
নীল হঠাৎ ই সেদিন সন্ধ্যা তে অনিক কে নিয়ে বেরিয়েছে।
বলেছে ফিরতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
নীলের কি এমন কাজ পড়েছে যার জন্য এতো আর্জেন্ট যেতে হলো।
মধ্য রাত থেকেই পরির মন টা কেমন কু গাইছে।
কিছুতেই শান্তি মিলছে না ,,,,
কেমন বাজে অনুভূতি হচ্ছে।
হঠাৎ ই পরির বেশ কান্না পাচ্ছে।
নীল ঠিক আছে তো ?
পরি আশে পাশে নিজের ফোন খুজতে লাগলো।
সেদিন যাওয়ার আগে নীল পরি কে ফোন কিনে দিয়েছিলো।
কিন্তু পরি ফোন টা খুজে পাচ্ছে না।
পরির নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে।
কোথায় রেখেছে ফোন টা,,, পরি দৌড়ে ব্যালকনিতে গেল।
ব্যালকনির সেন্টি টেবিলে ফোন টা দেখতে পেয়েই পরি ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোন টা নিলো।
পরির মনে হচ্ছে একটি সেকেন্ড ও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পরির চোখ দিয়ে অঝোরে বর্ষন নামতে লাগলো।
হাত পা বেশ জোড়ে কাঁপছে,,, কাঁপা হাতে নীল কে কল করতে গিয়ে দুবার ফোন হাত থেকে পড়ে ও গেল।
নীলের কিছু হয় নি এই কথা টা না শোনা অব্দি পরি নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না।
পরি কাঁপা হাতে ফোন টা উঠিয়ে আবার কল লাগালো।
বার কয়েকবার রিং হয়ে ফোন কেটে গেল।
কিন্তু নীল ধরলো না ,,, নীল ঘুমোচ্ছে ভেবে পরি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
কিন্তু নাছোড়বান্দা মন কিছুতেই মানছে না।
নীলের কন্ঠ না শোনা অব্দি পরি নিজেকে স্থির রাখতে পারবে না।
পরি আবার কল লাগালো দুবার রিং হয়ে ফোনটা কেটে গেল।
পরি আবার কল লাগালো কিন্তু এবার ফোন সুইচঅফ বলছে।
পরির শরীর যেন এবার দ্বিগুণ উত্তেজনা নিয়ে কাঁপতে লাগলো।
পরি একাধারে কল দিতেই লাগলো কিন্তু বার বার ফোন সুইচ অফ বলছে।
পরির মনের সূক্ষ্ম আশংকা গুলো স্থুল রূপ ধারন করলো।
পরির ভেতর টা দুমরে মুচরে যাচ্ছে।
ওর নীল ঠিক নেই ,,, না হলে ফোন ধরছে না কেন।
পরির মাথা ঝিম ঝিম করছে।
সারা মাথা জুরে শুধু নীল , নীল আর নীল করছে।
মস্তিষ্ক শুধু নীল কে নিয়েই ভাবছে।
মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে শুধু নীল নাম টাই সেট করা আছে।
পরির কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।
পরি নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে মেঝে তে লুটিয়ে পড়লো।
পরির চোখ থেকে তুমুল বর্ষন নেমে যাচ্ছে।
পরির মন অশান্ত হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে পরির।

পরি কোনো মতে কান্না চেপে ওয়াসরুমে চলে গেল।
অযু করে এসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে লাগলো।
আল্লাহর কাছে নীলের সুস্থতা কামনা করছে পরি।
চোখ দিয়ে বিরতহীন অশ্রু ঝরছে।
পরির অশান্ত মন নামাজে বসে খানিকটা স্বস্তি পেলে ও পুরোপুরি শান্ত হতে পারলো না।
পরি নামাজের রাকাত শেষ করছে আর নীল কে অনড়গল ফোন করে যাচ্ছে।
কিন্তু নীলের ফোন সুইচ অফ,,,,,

নামাজ পড়তে পড়তে ফজরের আযান পড়ে গেল।
পরি ফজরের নামায শেষ করে উঠে বসলো।
চোখের নোনা পানি মুখে শুকিয়ে গিয়ে খানিকটা আঠালো রুপ ধারন করেছে।
পরির এতে কোনো ধ্যান নেই ,, সে তো শুধু নীলের সুস্থতা কামনা করে যাচ্ছে।
পরি মাথার ঘোমটা ফেলে করিডোর দিয়ে বাসার সামনের দিকের খোলা বিশাল ব্যালকনিতে গেল।
হালকা শীত পড়েছে কিন্তু পরির গায়ে কোনো শীত বস্ত্র নেই।
ভোরের মৃদু আলো ফুটতেই খানিকটা বাতাস অনুভব করছে পরি।
পরির খোলা হাফ স্লিকি ভাঙা চুল গুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
পরির চোখ জোড়া বাসার মেইন গেইট এ নিবদ্ধ।
পরির মনের কোনে যেন কোনো ইচ্ছে ই নেই।
শুধু নীলের সুস্থতা ছাড়া ,,,,

হঠাৎ পরির চোখ অশান্ত হয়ে গেল মেইন গেইট দিয়ে নীলের গাড়ি ঢুকতে দেখায়।
পরি ছুটে চলে গেল বাসার মেইন ডোরে,,,
কিন্তু পরির কাছে এইটুকু পথ যেন মনে হচ্ছে হাজার মাইল।
পরির পা অষাঢ় হয়ে যাচ্ছে,,,,,
পরি কোনো মতে নিচে আসলে ও মেইন ডোরে এসে পরির পা আটকে গেল।
শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে,,,,,
পরির মুখ থেকে র ও কাটছে না।
পরির সব কিছু কে স্বপ্ন মনে হচ্ছে,,, পরির বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।
পরির ঠোট জোড়া কাঁপছে,, চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে ,,,, পরি কাঁপা ঠোট দিয়ে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলো নীল।
তারপর ই পরি জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

হ্যাপি রিডিং

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here