বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-৩৯

0
3365

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 39
________________________________
39,,,,

চারদিকে সুনশান নীরবতা,,,, হঠাৎ ই ভোরের পাখিরা কিচিরমিচির করে উঠলো।
কালো আঁধার কে ছাড়িয়ে উদয় হলো এক নতুন ভোরের।
স্নিগ্ধ এক ভোর, প্রাণোচ্ছল পরিবেশ।
নীল চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো পরি তার পাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আধসোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
নীল মুচকি হেসে পরিকে মুগ্ধ নয়নে অপল দৃষ্টিতে দেখে নিলো।
কি স্নিগ্ধ এই মুখ,,, কোনো প্রসাধনী ছাড়া ঝরঝরে তেলতেলে চেহারাতে ও কাউ কে এতো টা মায়াবি লাগতে পারে তা নীলের জানা ছিলো না।
কয়েকটা অবাধ্য চুল পরির কপালে লেপ্টে আছে,,, চোখের পাপড়ি গুলো স্থির।
ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মোহনীয় হাসি।
একদম পিচ্ছিদের মতো লাগছে পরি কে,,,, বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে আছে।
অবশ্য পরির বিয়ে হলে ও পিচ্ছি ই বটে আঠারো শেষ করলো সবে,,,,।
নীল আনমনে হেসে উঠলো ,, নিজের থেকে সারে সাত বছরে পিচ্ছি একটা মেয়ে নাকি ওর বউ।
ক্লাস সেভেন পড়ুয়া এক পিচ্ছি মেয়ের প্রেমে পরিছিলো নীল।
ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠে,,।
নীল ঘুমু ঘুমু চোখ ছাপিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
আরমোরা ভেঙে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতেই কি মনে করে যেন ফিরে আসে।
পরির মায়াবী স্নিগ্ধ মুখ টার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ,,, আলতো হেসে টুপ করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
মেয়েটা বিশ্ব সুন্দরী নয় ,,, লাখে একটা সুন্দরী এমন ও নয়।
তবে পরির মুখে যে মায়া আছে তাহহ বিশ্ব সুন্দরীদের হাড়াতে ও সক্ষম। নীল ভয়ঙ্কর প্রেমে পড়েছে।
এই ভয়ানক অনুভূতির কোনো সীমা নেই ,, নেই কোনো বাধ্যবাধকতা।
এক সুন্দর অনুভূতি আর হালাল সম্পর্কে আবদ্ধ তারা ।
তবু ও এক পূর্ণ পবিত্রতার অপেক্ষা করছে দুটি ছটফটে হৃদয়।
নীল মৃদু হেসে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায়।
_______________________

লাল নীল রঙা আলোতে ঝলমলে পরিবেশ।
সবাই বেশ কৌতুহল নিয়ে একটা বিশাল হল রুমে দাড়িয়ে আছে।
চারদিকে মানুষে টুইটুম্বর,,, এক সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে।
সবাই যে যার মতো মাতোয়ারা হয়ে আছে।
সবার চোখে মুখে অন্যরকম অনুভূতি জেকে বসেছে।
কেউ জানে না এখানে কেন এসেছে ,,,,,,হাজারো কৌতুহল মনের মাঝে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
নীলের অপেক্ষা করতে করতে সবাই চরম বিরক্ত।
হঠাৎ ই সমস্ত আলো নিভে গেল,,,, সবাই খানিক টা চমকে গেলে ও পরক্ষণেই এক চিলতে হাসি এসে সবাই কে রাঙিয়ে দিলো।

রঙিন আলোর ঝলকানিতে নীল কে এক রাজপুত্র ই লাগছে।

লাল রঙা ব্লেজার এর সাথে সাদা শার্ট ,,, এ কি রকম ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে নীল কে।
মনে হচ্ছে এই লাল রঙ টা শুধু মাত্র নীলের জন্য ই তৈরি হয়েছে।
পরি এক ধ্যানে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
যেন চোখ জোড়া নীলে মাঝে ই নিবদ্ধ হয়ে গেছে।
মনে বয়ে চলেছে প্রেমের জোয়ার।
পরি ভাষাহীন হয়ে তাকিয়ে আছে,,,, চোখে দারুন খুশির ঝলকানি।
পরির ভাবনার সুতো কাঁটে বাজি ফোঁটার আওয়াজে।
রঙিন বাজির আওয়াজের সাথে বড় বড় অক্ষরে ভেসে আসে

Welcome to home Ahmed family.

সবাই অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকায়।
সবার চোখে মুখে উপচে পড়া কৌতুহল ।

নীল মুদু হেসে সবাই কে জানায়।
এই টা নীলের বাড়ি ,,,, সবাই বেশ অবাক হয়।
কিন্তু পরির মাথা ঘুরে উঠে যখন শুনে এইটাই সেই গুলশানের কম্পার্টমেন্ট।
যা দেখে পরি মুগ্ধ হয়ে ছিল,,,, নীল তখন বলে নি কেন?
নীল হেসে পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– সারপ্রাইজ মিসেস নীল।

পরির চোখ দুটো রসগোল্লার আকার ধারন করেছে ।

পরি মৃদু স্বরে বলল
– আমরা পেছন দিক দিয়ে এসেছি বলে বুঝতেই পারি নি।
আপনি আজকাল চমকের উপর চমক দিয়ে যাচ্ছেন।
কি ভয়ঙ্কর আপনি,,,
নীল মুচকি হেসে বলল
– আর এই ভয়ঙ্কর মানুষটার গভীর প্রেমে পড়েছো তুমি।
আর আমি মাতোয়ারা হয়ে বারং বার হাড়িয়ে যেতে চাই তোমার প্রেমে।

নীলের কথাতে পরি সামান্য লজ্জা পায়।
নীল মৃদু হেসে বলল
– সতেরো আর আঠারো তলায় আমাদের জন্য ঘর করেছি।
তোমার স্বপ্নের মতো করে,,,, যেমন টা তুমি পোস্ট দিতে।

নীলের কথাতে পরির চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
এই মানুষ টা পরির প্রতি টা ইচ্ছে কে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছে।
এই মানুষটির চোখে লেগে থাকে স্নিগ্ধ মায়া।
পরির ইচ্ছে হচ্ছে নীল কে জড়িয়ে বলতে আমার এই সব,,, কিচ্ছু চাই না নীল।
আমি শুধু আপনাকে চাই ,,,,,,
পরি নীলের চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
নীলের চোখ যেন হাসছে ,,,, কি অপরূপ সে দৃশ্য।

পরির ভাবনার মাঝে নীল বলল
– কি ভাবো এতো ?

পরি মুচকি হেসে বলল
– এতো বড় বাড়ি দিয়ে কি হবে।

নীল একটু ভাব নিয়ে বলল
– আহহহ কি যে বলো নাহহ।
আমার বাঁচ্চা, নাতি নাতনি সবাই মিলে থাকতে গেলে তো লাগবেই।

নীলের কথা তে পরি সামান্য লজ্জা পেল।
পরি মাথা নিচু করে বলল
– আপনি চুপ করুন তো।

নীল মুচকি হাসতেই পেছন থেকে অনিক আর হাফসা কেশে বলল
– বাহহ বেশ প্রেম হচ্ছে তো।
আমাদের ই কপাল বিয়ে কবে হবে তা নিয়ে ওঅজানায় ভুগছি।
ইসসসস

নীল চোখ রাঙিয়ে বলল
– শালা বজ্জাত তুই।
লুকিয়ে লুকিয়ে কথা ও শুনছিস,,,,।
তোর মাথায় দুটো বারি দিলে ও কম হয়ে যাবে।
নির্লজ্জ,,,,

অনিক অবাক হয়ে বলল
– কেমনে কি মাম্মা ,,,
আমি তোর শালা কেমনে ?
পরি তো আমার ছোট ,,,

নীদ অনিকের পিঠ চাপরে দিয়ে বলল
– বেশি বুঝিস।
তোর এই সব বোঝা বুঝি হাফসা ঝেড়ে ফেলে দিবে দেখে নিস ।
আহহহ
ভালোই হলো তোর গলাতে পেত্নি টাকে ঝুলিয়ে দিবো।

নীলের কথা শুনে হাফসা রেগে বম।
কিছু বলবে তার আগেই একজন সার্ভেন্ট এসে বলল
– স্যার ডিনার রেডি গেস্ট দের নিয়ে যাবো?

নীল সম্মতি জানাতেই সার্ভেন্ট চলে যায়।
নীল সবাই কে নিয়ে ডিনার করার জন্য চলে আসে।
এক গাদা খাবার খেয়ে সবার অবস্থা নাজেহাল।
বাজি ধরে ছিলো কে কত বেশি খেতে পারে,,,,।
অনিক তো চেয়ার থেকেই উঠতে পারছে না ।
যা দেখে হাফসা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
অনিক বেচারা মুখ গোমড়া করে থম মেরে বসে রইলো।

নীল সবার সাথে আলোচনা করে নিলো।
যেহেতু অনিকের ফ্যামিলি ও আছে তাই অনিক আর হাফসার এন্সগেসমেন্ট এর কথা এনাউন্স করে দেওয়া য
হবে আর নীল আর পরির বিয়ের কথা ও।
সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো যে নীল আর পরির মেহেন্দির দিন ওদের এন্সগেসমেন্ট করা হবে।

হাফসার চোখে মুখে নিদারুন লজ্জার ছাপ্।
অনিক থেকে থেকে হাসছে,,,,

আর নীল আর পরি নিজেদের মাঝে দূরত্ব রেখে চোখের ভাষা বিলাশ করছে।
তবে মনের দূরত্ব এক ইঞ্চি ও নেই ।
আর মাত্র কয়েক দিন,,,,,,,
প্রতীক্ষার অবসান হলো বলে।
_______________________

সবাই গ্রামে এসেছে আজ পাঁচ দিন হলো।
কয়েক দিন পর ই বিয়ে ,,, বিশাল আয়োজন।
কত রকমের ঝামেলা ও রয়েছে।
নীল আর পরির দেখা হচ্ছে না চার দিন ধরে।
দু পরিবারের করা নির্দেশ শুভ কাজ সম্পূর্ণ হতে কয়েক দিন বাকি এখন কেউ দেখা সাক্ষাৎ করবে না।
গ্রাম্য পরিবেশ বরাবর ই বড্ড সুন্দর।
দীর্ঘ পনের বছর পরি তো গ্রামেই ছিলো।
অবশ্য পরির বিয়ের অনুষ্ঠান পরির দাদু বাড়িতেই হবে আর মেহেন্দির অনুষ্ঠান নানু বাড়ি তে।
বাসার সবাই ব্যস্ত,,, এই টা সেই টা ঠিক করতে করতেই সবার অবস্থা নাজেহাল।
বিকেলে নাস্তা বানিয়ে ট্রে হাতে আসছিলো পরি।
নানার হাতে বিয়ের কার্ড দেখেই ট্রে টা টেবিলে রেখে ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।
সবাই বিয়ের কার্ড দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।
বেচারি পরি কোনো চান্স ই পাচ্ছে না।
আর আগ্রহ নিয়ে বলতে ও পারছে না ,,, বিষয়টা অত্যন্ত হতাশাজনক।
পরি মুখ গোমড়া করে এক সাইডে দাড়িয়ে রইলো।
সবার দেখা শেষ হলে পরি নানা ভাইয়ের পাশের সোফা টা তে বসলো ।
পরির নানা ভাই মুচকি হেসে পরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
তারপর কার্ড গুলো পরির হাতে দিয়ে চলে গেলেন।
চার পাঁচ টা স্যাম্পল হিসেবে এনেছেন ওনি।
কিছুক্ষণ পর এক গাঁদা কার্ড চলে আসবে।
পরি আশে পাশে তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ আছে না।
বাড়ি ভর্তি মেহমানের সমাগম,,, পরি মন খুলে নিজের বিয়ের কার্ড উ দেখতে পারবে না।
পরি একটা কার্ড নিয়ে বাইরে চলে আসলো।
পরির নানা বাড়ির পেছনে ছোট্ট একটা বাগান আর তার পর ই নদী।
পরি ওড়না দিয়ে কার্ড টা আড়াল করে নদীর পাড়ে চলে আসলো।
নদীর পাড়ে ও মানুষ এর সমাগম,,, পরি আহত মনে চলে আসলো।
অবশেষে উপায়ান্তর না পেয়ে পরি বাগানের এক কোনে চলে আসলো নদীর ঠান্ডা হাওয়া পরি কে মাতাল করে যাচ্ছে,,,
পরির মুখের কোনে লেগে আছে স্নিগ্ধ হাসি।
লজ্জা মাখা এক অনুভূতি কাজ করছে।
পরির গাল দুটো রাঙা হচ্ছে বারং বার,,,,
কাঁপা হাতে লাল রঙা কার্ড টা খাম থেকে খুলল পরি।
মুহুর্তেই পরির গাল দুটো রক্ত রঙা আকার ধারন করলো।

কার্ডের উপরে বড় বড় করে লিখা

Nil Wed’s Pori

এই ছোট্ট লেখাটা কারো মনে এতো টা উতাল পাথাল ঝড় বয়ে দিতে পারে তা পরি কে না দেখলে বোঝাই যেতো না।
পরি অতি যত্নে পুরো কার্ড টা তে চোখ বুলিয়ে নিলো।
পুরো কার্ড টা পরির কাছে স্বপ্নের মতো।
এই সেই স্বপ্ন যা সে ছয় বছর ধরে দেখছে,,
একটা সময় তো ভেবেই নিয়েছিল এই স্বপ্ন গুলো কখনো বাস্তবে রূপান্তর হবে না।
এই সব ভাবতে ভাবতে পরির চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

⛔ আজ গল্প দেওয়ার মানসিকতা ছিল না। গল্প ছোট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
কাল গল্প পাবেন না। কাল অস্যাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য স্কুল যেতে হবে।
সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে পরশু দিন ই এই গল্পের ইতি টানাবো ইনশআল্লাহ ।
সবার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।শেষ অব্দি পাশে থাকবেন,, সবার সুস্থতা কামনা করছি।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here