#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ২২
লেখিকা ঃ মারিয়া
আচ্ছা।
যাও দাদুভাই।
রোহিত দ্রুত পায়ে বেরিয়ে রোশনির কাছে গিয়ে বলল
ডাকছো মা??
পিছনে ফিরে রোহিতকে দেখে বলল কোথায় গিয়েছিলে তুমি??
এইতো একটু নিচে।
সেটা তো বলে যাবে। এখন যাও হাতমুখ ধুয়ে নিচে আসো। নুডলস রান্না করবো।
নুডলস ইয়াম। আমি এখনি আসছি।
রোহিত ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেল। রোশনি রান্না করতে এটা ওটা চাইছে। আর ও সেগুলো এগিয়ে দিচ্ছে। রান্না শেষে ওকে বিকালের নাস্তার জন্য খেতে দিলো।
রাতে আমি বাসায় ফেরার পর রোহিত আমার পা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল বাবা।
আমিও ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম আমার চ্যাম্প ছেলে। তারপর গালে একটা কিস করলাম। ও ও আমার গালে কিস দিলো। এর মধ্যে রোশনি এসে ওকে কোল থেকে নামিয়ে আমার ব্লেজার শার্ট খুলতে খুলতে বলল কাল একটু টাইম বের কোরো তো।
কেন??
রোহিত কে স্কুলে এডমিট করতে হবে। আর সেখানে তোমাকেও যেতে হবে।
আচ্ছা। এই বলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। একবারে স্নান সেরে বেরিয়ে দেখি রোহিত বেডের উপর বসে একা একা খেলছে।
রোহিত তোমার মা কোথায়।
মা তো নিচে।
নিচ থেকে রোশনি বলল খেতে এসো সবাই।
আমি ওকে কোলে করে নিচে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলাম। রোশনি সবকিছু একে একে রাখছে। তিনজনে মিলে খাওয়া শুরু করলাম। খেতে খেতে হঠাৎ সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি
মা আস্তে আস্তে নিচে নামছে। এটা দেখে আমিও আস্তে করে দাঁড়িয়ে গেলাম। রোশনি আমাকে দেখে পিছনে তাকিয়ে দেখল মা টেবিলের দিকেই আসছে। তারপর রোহিতের পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসলো। আমিও বসে পড়লাম। কত মাস পর মা নিচে এসেছে। একসাথে খাচ্ছে। আমার মুখ থেকে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। রোশনির ও হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না বলে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
মা আমাদের দুজনকে দেখে বলল এভাবে ভুত দেখার মত তাকিয়ে থাকার কি হলো??
মা আজ তুমি আমাদের সাথে খাবে।
তোমাদের সাথে নয়। উপরে খুব গরম লাগছিল তাই এখানে এসেছি বলে নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো।
আমরাও খাবারে মনোযোগ দিলাম। রোহিত খাবার নিয়ে দুষ্টুমি করছে। রোশনির কোনো কথাই শুনছে না। আর রোশনি আরও বেশি জোরাজোরি করছে।
এটা দেখে হঠাৎ রোশনির উদ্দেশ্য বলল রান্না টা খুব ঝাল হয়েছে। বাচ্চা মানুষ হয়তো তাই খেতে চাইছে না। মাংসটা জল দিয়ে ধুয়ে দিলেই হয়।
আমি আর রোশনি আবার একে অপরের দিকে তাকালাম। রোশনি মায়ের কথামতো তাই করলো। এবার রোহিত নিরিবিলি খাচ্ছে।
মা সবার আগে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আমিও রোহিতকে নিয়ে উপরে গেলাম। বাকি কাজ শেষ করে রোশনি রুমে এলো। তারপর রোহিতের পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। আমি এদিক ফিরতেই দেখি রোশনি বেডে নেই। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম একা একা বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। আমিও আস্তে করে উঠে ওর পাশে দাড়িয়ে বললাম
কি হলো ঘুমাবে না??
ঘুম আসছে না।
কেন??
আচ্ছা মা কি সবকিছু মেনে নিয়েছে।
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না। কিন্তু কিছু তো একটা হয়েছে। আশা করি এই ব্যাপারটাই আমাদের সবাইকে এক করবে।
এবার রোশনি আমার হাত ধরে বলল তাই যেন হয়। কতদিন মায়ের সাথে কথা হয় না বলে ঢুকরে কেঁদে আমার বুকে মাথা রাখলো। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর দুজনে চোখ বুজে ওভাবেই অনেকক্ষণ ছিলাম।
সকালে উঠে রেডি হয়ে খেয়ে অফিসে গেলাম। রোশনি রোহিতকে খাওয়ানোর জন্য ওর পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। আর রোহিত খিলখিলিয়ে হেসে এদিক ওদিক ছুটছে। উপর থেকে মা জানালার পর্দা সরিয়ে এসব দেখছে আর মুখ চেপে হাসছে। আজ মায়ের মনে পড়ছে ছোটবেলায় এভাবে আমিও কত দুষ্টুমি করেছি। এই সবকিছুই যেন রোহিতের মধ্যে আছে।
রোশনি প্লেট রেখে রোহিতকে ধরে ফেললো। তারপর ভালো করে খাইয়ে দিলো। মা ও আস্তে সরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। রোহিতকে ওয়াশরুমে নিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছে। ও সাবানের ফেনা একবার রোশনির নাকে লাগাচ্ছে আবার কখনো মুখে লাগাচ্ছে। অনেক কষ্টে ওকে স্নান করিয়ে বলল বেডে রাখা ড্রেস পড়ে নিতে। আমি স্নান করে আসছি। তারপর রোশনি শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে দেখলো রোহিত আলমারির সব শাড়ি কাপড় এলোমেলো করে রেখেছে। আর রোশনির একটা ড্রেসের নতুন ওড়না সুপারম্যানের মত গলায় বেঁধে বেড থেকে লাফ দিচ্ছে আবার উঠছে।
রোশনি ওর কান্ড দেখে হাসবে না কাঁদবে নিজেই বুঝতে পারছে না। তারপর জোরে একটা ধমক দিলো। আর রোহিত মাথা নিচু করে সোফায় গিয়ে বসলো। রোশনি নিচ থেকে সব কিছু বেডের উপর রেখে ওর চুল মুছিয়ে রেডি করালো। তারপর পার্স আর ফোন নিয়ে নিচে নামলো। আর যাবার সময় শ্যামলিকে রুমটা গুছিয়ে রাখতে বলল।
রোশনি সোজা স্কুলে গেলো। কিন্তু গিয়ে দেখল আমি এখনো আসিনি। তাই আমাকে ফোন করে বলল
কোথায় তুমি??
আমি একটা ফাইল দেখতে দেখতে বললাম কেন অফিসে।
এখনো অফিসে। কখন আসবে তুমি।
কোথায় আসবো।
এবার রোশনি রেগে গিয়ে বলল ভুলে গেছো। আজ না রোহিতকে এডমিট করাবো।
ওপস্ সরি। আমি একদম ভুলে গেছিলাম। আমি এখনি আসছি জানেমান। তারপর খুব তাড়াহুড়ায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গিয়ে দেখলাম রোশনি রোহিতের হাত ধরে অন্য দিক তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখে রোহিত বলল ওই তো বাবা তারপর দৌড়ে আমার কাছে আসলো। ওকে কোলে নিয়ে রোশনির সাথে প্রিন্সিপাল রুমে গেলাম।
প্রিন্সিপাল ম্যম রোহিতকে কিছু কোয়েচ্শন করলো। তারপর বলল আপনাদের ছেলে খুব ট্যালেন্টেড। আপনারা এই ফরমটা ফিল আপ করে দিন। আমি ফরম পূরণ করে ওনার হাতে দিলাম। উনি দেখে বলল নাম রোহিত দেবরায়।
হুমম।
বাবা আদিত্য দেবরায় আর মা রোশনি দেবরায় তাইতো।
হ্যা।
আচ্ছা ওর এডমিশন হয়ে গেছে। বাকি এমাউন্ট পাশের রুমের স্যারের কাছে দিলেই হবে।
ওকে ম্যাম থ্যাংক ইউ। তারপর আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
বিকালে রোশনি আবার ঘুমালে রোহিত আস্তে করে উঠে মায়ের রুমে গেলো। মা ও ওকে দেখে হেসে দিলো। মনে হয় ওর আসারই অপেক্ষা করছিলো। দাদুভাই চলে এসেছো।
হ্যা। কি করছো ঠাম্মি।
এই তো বই পড়ছিলাম। তোমাকে তো আজ স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে আসলো। এখন থেকে তুমি ও এমন সব বই পড়বে। তারপর বইটা রেখে উঠে বলল দাঁড়াও তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।
কি??
মা ডেস্ক থেকে অনেকগুলো আচারের বয়াম নিয়ে বেলকনিতে গেলো। তারপর রোহিতকে ডাকলো। আর বলল এই নাও খাও সাথে নাড়ু মোয়া দিলো। রোহিত এক একটা খুলে খাওয়া শুরু করেছে।
মা বলল তোমার মা ও আচার খেতে খুব ভালোবাসতো। আমার শাশুড়ী ওকে যেদিন আচার দিলো ঠিক তোমার মতই সারা মুখে মাখিয়ে ফেলেছিলো বলে ফিক করে হাসলেন।
এই কথা শুনে রোহিত ও হেসে দিলো।
মা বলল কখনো তোমার মায়ের অবাধ্য হবে না। মেয়েটা অনেক ভালো। সব সময় ওর কথা শুনে চলবে।
তাহলে তুমি কেন মায়ের সাথে কথা বলো না??
এবার মায়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কিছুক্ষন পর বলল ও কিছু না খাও তুমি??
রোহিতও আর কিছু না বলে খাওয়াতে মন দিলো।
খাওয়া শেষে মা আবার বয়াম গুলো তুলে রেখে রোহিতকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন। তারপর ভালো করে ওর নাকমুখ ধুইয়ে দিয়ে বলল যাও এবার আস্তে করে ঘরে চলে যাও।
আচ্ছা আমি গেলাম তাহলে।
তার পরের দিন রোহিতকে নিয়ে স্কুলে গেলো। ওখান থেকে আবার নিয়ে আসা এসব রোশনিই করে। ও আমার আর রোহিতের খুব খেয়াল রাখে।
আজ রোশনি যেতে পারেনি বলে আমি নিয়ে গেলাম। আর বাড়িতে নিয়ে ও আসতে বলেছে রোশনি। এই নিয়ে তিনবার কল করে মনে করিয়ে দিয়েছে। ১২ টার পর রোহিতের স্কুল থেকে এক ম্যম ফোন করে বলল আজ কিন্তু রোহিত হোমওয়ার্ক করেনি। বরং কিসব আঁকিবুঁকি করেছে।
রোশনি মনে মনে ভাবলো রোহিত তো কখনো নিজের স্টাডি নিয়ে এমন কিছু করে না। কিন্তু আজ কি করলো যে ম্যম স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে।
তারপর আবার আমাকে ফোন করে বলল রোহিতকে নিয়ে তাড়াতাড়ি যেন বাসায় ফিরি।
চলবে,,,,,,