#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ২৪
লেখিকা ঃ মারিয়া
এরপর দুজনকে একসাথে গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলো। আমি রোশনিকে স্কুলের সামনে না দেখে ওর নম্বরে কল করলাম। দুবার রিং হবার পর একজন লোক রিসিভ করে যা বলল তাতে আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি গাড়ি ঘুরিয়ে হসপিটালের দিকে যেতে লাগলাম।
লোকদুটো রোহিতকে এডমিট করলো। ডক্টর নার্স ওকে আইসিইউতে নিয়ে গেলো। আর রোশনির চোখে জলের ছিটা দিতেই ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে। ও পাগলের মত করছিলো একদম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও পৌঁছে গেলাম। রোশনি আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। আমারও বলার মত শক্তি নেই। রোশনি বারবার বলছে আমার রোহিতকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। অনেক রক্ত বের হয়েছে। আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ভগবান আমাকে নিয়ে নাও কিন্তু আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। ওর আর্তনাদ আমার বুকটা চৌচির করে দিচ্ছে। একটু পর একজন নার্স লোকদুটোর সাথে আসলো।
নার্স বলল আপনি কি ওই বাচ্চা ছেলেটার বাবা??
হ্যা।
ইমিডিয়েটলি এ নেগেটিভ রক্ত লাগবে। আপনাদের মধ্যে কে দিবে??
আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকালাম।
কি হলো আপনারা তো ওর বাবা মা। একজন না একজনের সাথে তো মিলবে।
পিছন থেকে কেউ বলল রক্ত আমি দেবো।
ঘুরে দেখলাম মা। আসলে মাকে আমিই ফোন করে বলেছিলাম সবটা। তারপর মা আর এক মুহুর্ত দেরী না করে ছুটে এসেছে। এরপর নার্স মাকে নিয়ে গেলেন।
দু ঘন্টা পর ডক্টর বেরিয়ে বলল অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। আর কোনো ভয়ের কারণ নেই। আমি ওনার হাত জড়িয়ে ধরে বললাম thanks doctor. many many thanks.
it’s ok. this is our duty. তারপর বললেন আসলে এত রক্ত ক্ষরন হয়েছিল ঠিক সময়ে না রক্ত দিলে,,, বলে একটা শ্বাস ফেললেন। anyways একটু পর পেশেন্টকে বেডে দেওয়া হবে। আপনারা দেখা করে নিবেন বলে চলে গেলেন।
এরপর মা আর রোশনি কে দুটো সাইড চেয়ারে বসিয়ে আমি নার্সের সাথে ওদিকে গেলাম। ফরম ফিল আপ আর টাকা জমা দিয়ে সেই লোক দুটোর কাছে গেলাম। ওনাদের কিছু টাকা দিয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলাম।
পরের দিন সকালে রোহিতকে রিলিজ করে দিলো। মাথায় ব্যান্ডেজ। ডক্টর পুরো বেডরেস্টে থাকতে বলেছে। রোশনি আর মা মিলে ওর খেয়াল রাখে। আমিও অফিসের পর যতটুকু সময় পাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি। এত খারাপের মধ্যে ও একটা খুশির সংবাদ এলো। ইশু কনসিভ করেছে। ওর প্রেগন্যান্সির একমাস চলছে। আর রোহিত ও এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেলো। তারপর মা আর রোহিত একসাথে ইশুর শ্বশুর বাড়িতে গেলো বেড়াতে। রোশনিও যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা একবারে ওর সাতমাসে যখন ওকে আর বেবিকে আর্শীবাদ করতে যাবো তখন যাবো।
মা আর রোহিত এক সপ্তাহ থেকে আবার চলে আসলো। কারণ রোহিতের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। সবকিছু আবার আগের মত হয়ে গেলো। একটা হাসিখুশি ফ্যামিলি ঠিক আগের মত। রোশনি রোহিতকে খুব বকাঝকা করেছে ও যেন আর কখনো একা একা স্কুল থেকে না বের হয়। আর রোহিতও ওকে প্রমিস করেছে এরকম আর কখনো করবে না। আজ বিকালে আমি ওদের নিয়ে চাইল্ড হোমে গেলাম। রোহিত সুস্থ হয়েছে শুনে মাদার অবশ্যই যেতে বলল। ওখানে গিয়ে রোহিত সবার সাথে খেলাধুলা করছে। আর বাকিরাও খুশি।
সময় চলে গেলো তার নিয়মে,,,
রোশনি সকালে উঠে সবকিছু রেডি করে আমাকে খাইয়ে অফিসে পাঠালো। তারপর রোহিতকে রেডি করে স্কুলে নিয়ে গেলো। ওখান থেকে এসে ওর খুব অসুস্থ লাগছে। কেমন গরম গরম। এসি অন করে শুয়ে থাকলো। কিন্তু হঠাৎ ই দৌড়ে ওয়াশরুমে বেসিনে গিয়ে বমি করে দিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় নিজেই অবাক হয়ে গেলো। তারপর নাকমুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এসে ভাবল হয়তো অতিরিক্ত গরমের কারনে।
এরপর স্নান সেরে কাপড় চেন্জ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রোহিতকে আনতে গেলো। রাতে এ ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলেনি। বরং ইশুর সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম। ওর এখন চারমাস চলছে। পাশে রাজ ও ছিল। ওদের দুজনের এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো দুজনই খুব এক্সাইটেড। কল কাটার পর রোশনিকে দেখে মনে হলো একটু মনমরা। জিজ্ঞেস করাতে এড়িয়ে গেলো রাতেও কিছু খেলো না।
আমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারলাম। আমিও না খেয়েই লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।
#####
এভাবে চলে গেলো আরও কয়েকটা মাস। এর মধ্যে কয়েকবার রোশনির বমি মাথা ঘুরানো হয়েছে। কিন্তু সবকিছুই নরমাল ভেবে এড়িয়ে গেছে।
আজ সকাল থেকেই সবাই রেডি হচ্ছে। কারণ আজ ইশুর সাধের অনুষ্ঠান করা হবে। আমরা এ বাড়িতেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রথম সন্তান বলে ওখানে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার আমরা রাতে ফিরে আসবো তাই শুধু রেডি হয়েই রওয়ানা দিলাম। যাবার পথে ফল মিষ্টি আগে থেকে কেনা জামাকাপড় গহনা সবকিছু নিয়ে যাচ্ছি। ওদের বাড়ি ১১ টার মধ্যে পৌছে গেলাম। আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ করে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেলো। ইশুকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে। ও রোশনি কে দেখে প্রথমে জড়িয়ে ধরলো তারপর মাকে। আমাকে প্রনাম দিলো। একে একে সব গেস্ট চলে আসলো। তারপর রোশনিকে সবাই আর্শীবাদ করছে। এক পর্যায়ে আমিও গেলাম আশীর্বাদ করতে। আমার হয়ে গেলে রাজ বলল এখানে থেকে আমরা আর কি করবো। চলুন বাইরে থেকে ঘুরে আসি এই বলে টেনে নিয়ে গেলো। আমি রোশনিকেও কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।
এরপর রোশনিকে দিতে বললে ও উঠতে গেলো। পাশ থেকে এক মহিলা বলল
এই মেয়েটা বৌমার বৌদি না। তারপর নাকে কাপড় ধরে বলল এসব অপয়া মেয়ে মানুষকে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে কে এনেছে ছি ছি। না জানি এর জন্য আবার আমাদের বাচ্চার কিছু না হয়।
রোশনিকে এত লোকের সামনে এসব বলায় ওর খুব অপমানিত লাগছে। টপটপ করে চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ও নামতে যাবে তখনই ইশু ওর হাত ধরে বলল বৌদি তুই কোথাও যাবি না। আর তুই আর্শীবাদ করলে আমার বা আমার বাচ্চার কোনো অমঙ্গল হবে না। বরং কল্যান ই হবে। পুরো কথাটাই ওই মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল।
থাক না। সবাই তো দিয়েছে।
কিন্তু তুই না দিলে যে আমি শান্তি পাবো না।
মহিলাটি বলল ঢং দেখলে মরে যাই বলে হনহন করে চলে গেলো। তারপর রোশনি চোখের জল মুছে হাসিমুখে ওর মাথায় হাত রেখে আর্শিবাদ করে মিষ্টি খাইয়ে দিলো। রোহিত এসে পাশে বসে বলল আমিও পিপিকে মিষ্টি খাইয়ে দেবো।
ওর কথা শুনে রোশনি সহ বাকিরা হেসে দিলো।
তারপর আমরা ডিনার করে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় রোশনি খুব চুপচাপ ছিল। আর একভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। মাকে জিজ্ঞেস করলাম বলল জানে না। রোহিতকে জিজ্ঞেস করতেই ও আমার কাছে সবটা নালিশ করলো। এসব শুনে ওই মহিলার উপর খুব রাগ হচ্ছে। বিশেষ করে নিজের উপর কেন তখন রোশনির পাশে পাশে থাকলাম না। কতটা অপদস্ত হতে হয়েছে মেয়েটাকে।
বাড়ি পৌছানোর পর আমি আগে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরোনোর পর রোশনি ওয়াশরুমে গেলো। আমি ড্রেস চেন্জ করে মায়ের রুমে গিয়ে একটু কথা বলে আবার রুমে আসলাম। কিন্তু রোশনিকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আর ওয়াশরুমের দরজাও অফ। তার মানে ভিতরেই আছে। কিন্তু এতক্ষন ধরে কি করছে। ওটা দেখতেই দরজা হালকা ঠেলে দেখলাম রোশনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।
চলবে,,,,
( আর মাত্র এক পার্ট আছে)