#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ৪
বিভার মিসক্যারেজের কথা নিয়ে টেনশনে আছে মিলি।
মেয়েটা তো শেষ হয়ে যাবে। একেকটা দিনের মানসিক যন্ত্রণায় তার উপর দিয়ে যেভাবে গিয়েছে। এখন এই আঘাতটা তো এর থেকেও বেশি এফেক্ট করবে।
বিভার বাবা মাথা নিচু করে বসে আছেন। একটু ও ভালো
লাগছে না তার। মেয়েটা ভুল করেছে চরম ভুল। তাই বলে তার মা তাকে এমন অভিশাপ ও তো দিতে পারেনা।
বিভার বাবা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালেন। সামনে গিয়ে হসপিটালের লোকের সামনে বিকট ধমক দিয়ে উঠলেন।
–” এখন কাদছোঁ কেন? ও যখন ফোন করেছে তোমার মা হিসেবে উচিৎ ছিল না আগে শুনে নেওয়া?
আরে মানুষ রাগ পুষে রাখে, রাগ আছে কথা শুনিয়েছো একবার জিজ্ঞেস তো করতে পারতে কেন ফোন করেছে?
বিবেক একদম লোপ পেয়েছে তোমার? চিরদিন তুমি মানসম্মানের কথা চিন্তা করেছো, এখন এই যে এত বড় ঘটনা ঘটিয়েছে মেয়েটা, তখন মানসম্মান কোথায় গেল?
মেয়েটার দিকে তুমি কখনোই ভালোভাবে দেখোনি!”
বিভার মা এককোণে বসে বসে কাদঁছেন। কোন উত্তর নেই তার, অতিরিক্ত আত্মসম্মান প্রিয় মানুষরা সমাজের ভয়ে তটস্থ হয়ে এতটাই বোকামি করে বসেন তা বিভার মাকে দেখেই বুঝা যায়। মুখে যা এসেছে তিনি তাই শুনিয়ে দিয়েছেন। কেউ না জানলেও তিনি তো জানেন মনের ভিতর যা ছিল তার বদলে মুখে যা এসেছে তাই শুনিয়েছেন। একবার ও বিভাকে প্রশ্ন করলেন না তুই ঠিক আছিস? এতদিন কোথায় ছিলি? তা না করে তিনি বকেছেন মেয়েটাকে। লজ্জায় আর আক্ষেপে তিনি ঐ কোণেই বসে আছেন। মেয়ের সামনে ও তিনি যাবেন না। মেয়েটার মুখের দিকে তাকাবেন কিভাবে?
_______________________________
দীর্ঘ সময়ের পর চোখ খুলল বিভা, আশপাশ খুলে চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে সে। হাতে স্যালাইন লাগিয়ে রেখেছে, হাতের দিকে তাকিয়ে অপর পাশের হাতটা পেটের দিকে আনলো,
অপর পাশের হাতটা পেটে রাখতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।ছয়মাস কত যুদ্ধ করে আর মানসিক অশান্তিতে কাটিয়েছে সে। এই গর্ভধারণের সময়ে কত লাঞ্চিত হয়েছে। কত কথা শুনতে হয়েছে তাকে, আর আজ কিনা সেই গর্ভে থাকা বাচ্চাটিই নেই। সব সুখের মূর্হুতগুলো একদম বিষাক্ত মনেহচ্ছে, এই সময়টা তার কাছে মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে বাচ্চাটা নেই। নাহলে কত কথা শুনতে হতো তাকে। পেটে হাত দিয়ে বহু কষ্টে বলল-
–” আমি নাহয় পাপ করলাম, তুই তো করিসনি রে বাবু।
আল্লাহ তোকে কেন নিল? তোকে একবারে না নিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেই তো সবাই বেচে যেতাম।”
চোখের থেকে পরা পানিগুলোকে মুছে স্যালাইন দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইল । একটা সংসার গড়ার স্বপ্নভঙ্গ নাহয় হয়েইছিল, তাই বলে বাচ্চাটাও চলেযাবে?
বিভার চোখের পানিগুলো গড়িয়ে পরছে।
সবুজের মুখটা মনে করতে না চাইলেও মনে পরে যায়।
সবুজ বলেছিল, বিয়ে করে নিলে যখন আমাদের দুজনের ঘরে বাচ্চা আসবে না তখন দেখো সবাই আমাদের মেনে নিবে। একটু দৈর্য্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে। বিভা ও সব মেনে নিল, কারন তার ও জানামতে বংশধরদের আগমনে সবাই খুব খুশি হয়। তখন ছেলে মেয়ের উপর অভিমান নাকি কেটে যায়। সবই তো ঠিক ছিল, বাচ্চাটা হলেও হয়তো মা সব কিছু ভুলে ঠিকই আমায় আগলে রাখতো।
কিন্তু তুমি কি করলে সবুজ? তুমি তো বাবা হয়েই সন্তানকে শেষ করার জন্য চেষ্টা করলে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে একবার ও বিশ্বাস করলে না। কখনও ক্ষমা করব না কাউকে না!
________________________________________
ডাক্তার আর নার্সরা এসে বিভার সবকিছু দেখে বাহিরে বলে এসেছেন বিভার পরিস্থিতি। বিভাকে একজন নার্স প্রশ্ন করল –
–” আপনার বাড়ির লোকেরা বাহিরে এসেছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান আপনি?”
–” লাগবে না,”
–” আপনার বোন এসেছিল, সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে অনেক কান্নাকাটিও করছে।” বোনের কথা শুনে কিছুটা নরম হলো বিভা, মিলি এসেছে। মিলি আপাই তো আসবে আর কে আসবে। বিভা কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল ডাকুন।
মিলি কেবিনে এসে দেখল বিভা চোখ খুলে শুয়ে আছে।
মিলি তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইল কিছু বলার তার সাহস হচ্ছে না। বিভা তারদিকে ফিরে দূর্বল গলায় বলল –
–” আপা তুমি,”
মিলি বিভার দিকে তাকাতে পারল না বিভার দিক থেকে ফিরে অন্যদিকে ফিরে ঢুকরে কেদেঁ উঠলো। এই বিভা কত আদরের ছিল, কত যত্নে রাখত তাকে সবাই।
সেই বিভার জীবনটা এতটা অগোছালো হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি সে। বিভা তর দিকে তাকিয়ে বলল –
–” কাদছোঁ কেন মিলি আপু? আমার যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমার বাচ্চাটা না উপরেই ঠিক আছে, এই দুনিয়া তার জন্য খুব কষ্টের ছিল। যেখানে তার নিজের বাবাই হিংস্র,জানোয়ার সেখানে ও কি করে বাচঁবে? কেদোঁ না আপু! একটু দোয়া করো আমার বাবুটার জন্য! আচ্ছা তোমরা কি জানো সে ছেলে না মেয়ে? আমার কি ভাগ্য দেখেছো? সন্তান ধারনের ক্ষমতা থেকেও সন্তান ভুমিষ্ঠ হতে পারল না আগেই সেই সন্তান শেষ করে দিলাম।”
–“চুপ কর, চুপ কর বিভা! কোন মা তার সন্তানকে সেচ্ছায় শেষ করেনা, ওর ভাগ্যে লেখা ছিল সব ওকে নিয়ে এসব বলিস না বোন। মিলি বিভাকে শান্ত করতে লাগল। বুঝাতে লাগল বিভা বিছানায় শুয়ে শুয়েই কেদেঁ যাচ্ছে। মিলি কোনভাবে বিভাকে শান্ত করিয়ে বাইরে এসে দেখে ইতিমধ্যে তার মা ও এসেছে বিভাকে দেখতে। মিলি তার মাকে দেখা মাত্র বলতে শুরু করল –
–” বিভার আজ যা হয়েছে তার জন্য আমরা ও দোষী মা।
আমি তখন তোমার সঙ্গে ফোনে লাউড স্পিকারে ঐভাবে কথা বলেছিলাম, আমার তো মনে হচ্ছে বিভা কোনভাবে ঐ সব কথা শুনে লজ্জায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল।
কেন ঐ সময় আমি এই ভুলটা করলাম? কেন আমি ফোনের স্পিকার কমালাম না, এখন তো আমি নিজে নিজেই ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাবো। কেন এত বড় ভুল করলাম? এত টুকু একটা মেয়ে, মেয়েটা আর কি যন্ত্রণা ভোগ করবে? আর কত সহ্য করবে? আজ সে যে ধাক্কা পেল তাই তো তাকে শেষ করে দিবে। ”
মিলির চিন্তা দেখে রেজওয়ান তাকে শান্ত করতে লাগল।
বিভার বাবা বসে ফোন দিচ্ছেন তার যত উচ্চ পদস্থ বন্ধু আছে তাদের ফোন দিয়ে বলতে লাগলেন কিভাবে সবুজকে তিনি ধরবেন। এতদিন রাগের কারনে বিভার দিকে ফিরে ও তাকিয়ে দেখেননি। কিন্তু বিভার এই করুন জীবনের কাহিনী শুনে তিনি চুপ করে থাকতে পারবেন না।
এর বিহীত তার জানা আছে।
_____________________________________
বিভার সঙ্গে মিলি রেজওয়ান , নীড়া এসে দেখা করে গিয়েছে দেখা করেনি বিভার মা, বিভার বাবা ও আসেননি তার সাথে দেখা করতে। বাইরে বসেছিলেন তারা। লজ্জা করছে মেয়ের কাছে যেতে, যেখানে মেয়েকে একসময় অপমান করেছিলেন সেখানে নিজেরাই যেন লজ্জায় পরেগেলেন।
সবুজ বাড়ি ফিরে রায়হানকে ডেকে আনলো। রায়হানের কলার চেপে বলল-
–” ওকে নিয়ে কোথায় রেখেছিস? ও তুই তো যাসনি, আচ্ছা সেই কথা বাদ দিলাম। এটা বল তোর সাথে কখন থেকে সম্পর্ক শুরু হয়েছে?
রায়হান কিছুটা অবাক হয়ে বলল-
–” সম্পর্ক? কার সঙ্গে?”
–” ওমা তোর ভাবি? ভাবির সঙ্গে তোর গভীর সম্পর্ক। ভাবির এটা সেটা লাগলে দিয়ে যাস। মিনার জিনিসের থেকেও ভাবির জিনিস আগে এনে দেওয়ার তোর তাগাদা বেশি। ভাবিকে তুই এতই ভালোবাসিস!”
–” কলার ছাড়েন!”
–” কি বললি?”
–” কলার ছাড়তে বলছি,”
–” কি করবি তুই?”
রায়হান সজোরে সবুজকে একটা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বলল-
–” মুখ সামলে কথা বলবি, সম্মান দিয়ে কথা বলছি বলে গায়ের উপর হাত তুলতে আসবি না। মুখ কিন্তু আমারও আছে, কাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলা শুরু করছোস?
আজ পর্যন্ত যার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলিনি। যে আজ পর্যন্ত দুটো জিনিস এনে দেওয়ার পর দুটো কথা বলার পর কখনো আমার সঙ্গে সেচ্ছায় কথা বলতো না। সেই ভাবিকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলছিস? আমার কথা বাদই দিলাম আমি পর আমার চরিত্রের দোষ ধরেই নিলাম। এত দিন একটা মানুষের সঙ্গে থেকেও বুঝতে পারেননি ভাই? ছি! ”
–” চুপ, জগতের সবাই খারাপ তোরাই সাধু!”
চলবে।
[ আমার বেশির ভাগ সময় রিচেক দেওয়া হয়না,তাই ভুল খুব বেশি হয়। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি গল্পটা বেশি বেশি শেয়ার করুন। ]