#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ৬
আমি তোমাদেরকে এত বড় আঘাত করে ফেললাম নিজের অজান্তে এত বড় আঘাত তোমাদের করে ফেললাম। যার সাজা আমি সারা জীবন বয়ে বেড়াবো!
মশিউর সাহেব কোন প্রতিউত্তর করলেন না। মেয়ের মাথা বুকে চেপে ধরে বলতে লাগলেন
-” শান্ত হও মা! শান্ত হও! তুই ভুল করেছিস নিজের অজান্তেই করেছিস, জেনেবুঝে কেউ ভুল করে না।
আমার খুব কষ্ট হয়েছিল যেদিন তুই হঠাৎ আমাকে ফোন করে বললি তুই বিয়ে করে নিয়েছিস। আমাকে না জানিয়ে হঠাৎ করে এমন কিছু করবি আমি ভাবতে পারিনি। শত হলেও তুই আমার একমাত্র সন্তান। তোর কিছু হলে বা কিছু শুনলে আমার খুব কষ্ট হয়। তুই যদি আমাদের জানিয়ে দিতি তোর ভালোবাসার মানুষ আছে আমি কারোর কথা শুনতাম না তোকে হয়তো তার কাছেই বিয়ে দিয়ে দিতাম। কিন্তু তুই ভুলটা করলি আমাকে না জানিয়ে কথাটা গোপন করে ওকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে।”
বিভা বাবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কত বড় ভুল সে করল সে নিজেই জানে না। আজ তার একটা ভুলের জন্য তার জীবনটা ধ্বংস হয়েগেল।
বিভার বাবা হাসপাতালের যাবতীয় কগজপত্র সব ঠিক করে মেয়েকে নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে।
পথে বাবার গাড়িতে বাবার বুকের উপর মাথা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। রমনা পার্কে আজ বুঝি কোন অনুষ্ঠান?
হঠাৎ মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল আজ ভ্যালেনটাইন ডে। রমনীরা নিজেদের সঙ্গীদের হাত ধরে বসে আছে ঘাসে। হাতে ফুল নিয়ে যে যার মত হাটছে। বিভা ভাবতে লাগল এমন করে সে ও তো একবার কলেজ ফাকি দিয়ে সবুজের সঙ্গে এই পার্কে এসেছিল।
কত কথা সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছিল।
কথার ঝুড়ি যেন সেদিন দুজনার শেষই হচ্ছিল না। আর আজ দুজন দুই প্রান্তে। বিভা বাবার চোখের আড়ালে চোখের পানিটা মুছে মনেমনে বলল-
–” ভুল করেছিলাম ভুলের মাশুল দিলাম।
আর কখনও তোমার স্মৃতি মনের মাঝে আনবো না।
এটাই শেষ, ভালো থেকো তুমি। তোমার আমার সম্পর্কের শেষ আমি আজ থেকে শুরু করব!”
____________________________________
তিনবছর বাদে নিজ বাড়িতে পা দিয়েছে বিভা। ডুপ্লেক্স করা বাড়ী, মশিউর সাহেব কত শখ করে করেছিলেন বাড়িটি। বিভা মাত্র একমাস থেকে ছিল বাড়িটিতে নতুন বাড়ী এটি। পুরোনো বাড়িটা সাততলা ওটা পুরোটাই ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বিভার আর তার মায়ের শখ পূরণের জন্যই এই বাড়িতে অবস্থান। বিভার বাবা বিভাকে নিয়ে এসেছে বাড়িটিতে। বিভা কিছুক্ষণ পুরো বাড়িটিতে চোখ বুলিয়ে দেখল। তারপর রুমে ঢুকেই সব ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগল রুমটা। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বাবা রুমে এসে বলল –
–” তোর যা যা আছে সব এই রুমেই আছে, কিছুই বদলায়নি শুধু তুই মানুষটাই ছিলি না।”
–” রুমটা কে পরিষ্কার করেছে বাবা? তিনবছরে তো এত পরিষ্কার থাকার কথা না একটা রুম। এত নিট আর ক্লিন!”
–” এগুলো তোর মা কাজের লোক দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছে। ”
–” মা আমার সাথে কথা বলবে না বাবা?”
—” মাকে কেন লাগবে? আমি আছি কিসের জন্য? তোর মায়ের কোন কথা বলতে হবে না। থাকুক পরে নিজের মানসম্মান নিয়ে।”
–” এভাবে বলো না বাবা, মা যা করেছে তা সব মা-বাবারাই করে। আমি ভুল করেছি তাই মা আমার উপর রেগে আছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মশিউর সাহেব চুপ করে রইলেন এর মাঝেই বিভা বলে উঠলো –
–” বাবা একটা কথা বলার ছিল।”
–“বল,”
–” আমি সবুজকে ডিভোর্স দিতে চাই। যত তাড়াতাড়ি পারি সম্পর্কটা মিটমাট করে ফেলতে। এভাবে ঝুলে থাকতে আর পারব না। ”
–” তুই যা ভালো ভাবিস তাই কর! আমি তোকে কোন বাধা দিব না। ”
–” তাহলে কালকে ব্যবস্থা কর সব কিছুর। আমি জীবনটাকে নিজের মত ঘুছিয়ে নেব। ”
–” অবশ্যই পারবি। আমি তাহলে কালকেই কথা বলছি, আর সব কাগজপত্র ঠিক করছি।”
________________________________
বিভা এসেছে প্রায় দুদিন হলো। এর মধ্যে ডিভোর্সের কাগজ পত্র সব কিছু পাঠিয়ে দিয়েছে সাইন করে।
জীবনে বিশ্বাসটা খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। সম্পর্কে যখন একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে যায় তখন সব শেষ হয়ে যায়।
ভালোবাসা ও তখন আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে সরে যায়। বিভা নিজের মনে কল্পনা করতে লাগল আর ভাবতে লাগল। সবুজের কথাগুলো হ্যা এগুলো সবুজই বলেছিল তাকে। সবুজই তাকে সাহস দিয়ে বলেছিল একবার হাতটা ধরে এগিয়ে আসো। বিশ্বাস করো কখনও তুমি ঠকবে না।
আমি তোমাকে কখনও ঠকাবো না। কত সুন্দর করে সবুজ তাকে বুঝিয়ে বলতো কথা গুলো। বিভার অবুঝ মন যখন ভাবতো পরিবার নিয়ে তখন সবুজই বলতো সব। সেই মানুষ কি করে এক মুখ দিয়েই এমন করে আবার অন্য কথা বলে? বিভা ভাবতে ভাবতে হেসে দিল আশর্চয্য পাগল হলো নাকি সে? পরে ভাবলো হাস্যকর ও তো বটে অদ্ভূত না? বিভা চিন্তা করতে লাগল এসব ভেবে তার কাজ নেই। বিভার ফোনে কল আসতেই দেখল সবুজের ফোন। বিভা ফোনটা সুইচড অফ করে ফেলল। সবুজ কাল রাতে ডিভোর্স লেটার পাওয়ার পরই তাকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছে। কিন্তু বিভা কিছুই বলেনি উত্তরে শুধু বলেছে –
–” চরিত্রের দোষ দিয়ে বের করেছো বাড়ির থেকে।
এবার একজন সৎ, মা বোনের কথা শুনে, মাসে মাসে শশুর বাড়ী থেকে টাকা দেয় এমন কাউকে ঘরে তুলে নিয়ে এসো। কিন্তু দয়া করে ঐ মেয়েটাকে গর্ভাবস্থায় বাড়ি থেকে পালাতে না হয়। মানি খুন করার পরিকল্পনা করাটা অন্তত করো না। আর তোমার নিজের সন্তানের তো একদমই না।”
–” আমি খুন করতে চেয়েছি? কি বলতে চাও এসব?”
–” প্রশ্নটা আমাকে করো না, বিবেককে করো! উত্তর পেয়ে যাবে! রাখলাম।”
সবুজ বিভার কথাগুলো শুনে কিছুটা অবাক হলো। পরে আবার রেগেগেল সে মেয়েটা তাকে খুনি বলল। বিভার এমন হুটকরে ডিভোর্স দেওয়াটা তার হজম হচ্ছে না। এতটা পরিমান সাহস একটা মেয়ের। পরে আবার ফোন করলেও ফোনটা বন্ধ। মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর বিভার প্রতি রেগে উঠল সে, মায়ের কিছু কথা শুনে সে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিল। রাখবে না সে বিভাকে।
____________________________
এনজিওতে যোগ দিয়েছে বিভা উদ্দেশ্য নিজেকে একটু ব্যাস্ত রাখার। বাসায় বসে থাকলে সারাদিন তার অবচেতন মন সব সময়ই বাচ্চাটার কথা ভাবে। বাচ্চটার একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল, ওকে নিয়েই তো সারাটা জীবন অনায়াসে কাটিয়ে দিত পারতো। কিন্তু সেই সন্তান ও আজ নেই। বিভা সেসব থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যই এনজিওতে জয়েন দিয়েছে। ছোটখাটো একটা এনজিওতে জয়েন দিয়েছে বলেই আজ বিভার বাইরে আসতে হয়েছে। এনজিওয়ের কাজ কিছুটা টাফ বাইরে বেড়িয়ে কত অসহায় শিশুদের কাছে তাকে ঘুরতে হয়।
শরীরে দূর্বলতার ছাপ নিয়েই ঘুরছে সে।
পুরো শরীরই দূর্বল তবুও সে ঘরে থাকবে না। রাতটুকু ও তার জন্য কেমন বিষাক্ত রুপ ধারন করে। এই কটা দিন সে কতখানি বালিশ ভিজিয়েছে চোখের জল দিয়ে তা হয়তো কেউ দেখেনি। কিন্তু সে তো জানে ভিতরে ভিতরে কতটা সে গুমড়ে মরে।
___________________________________
জানালার গ্রীল ধরে ফোনে কথা বলছে বিভা।
একটু আগেই সে বাড়িতে ফিরেছে। ফোনের অপর প্রান্তে রায়হানের মা কথা বলছেন। সবুজ বাড়ী ফিরে রায়হানকে অকারনে মেরেছে, সঙ্গে রায়হানের সঙ্গে বিভার সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্য করেছে সবই তিনি বলতে লিগলেন । বিভা এগুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। দীর্ঘশ্বাসই তো তার এখন সঙ্গী। একটা মানুষ কতটা বদলেগেলে আর কতটা খারাপ হলে এইভাবে না জেনেই মন্তব্য করতে পারে।
সবুজ রায়হানকে জড়িয়ে এই ধরনের কথা বলবে সে ভাবতে পারেনি। কথা বলতে বলতে তিনি হঠাৎ প্রশ্ন করলেন আর কি ফিরবে না সবুজের সংসারে? তুমি তো সবুজকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছ। বিভার উত্তর ছিল –
–” ভেঙ্গে যাওয়া জিনিস হয়তো জোড়া দেওয়া যায়।
বিশ্বাস আর কখনও জোড়া দেওয়া যায় না চাচি!”
চলবে।
দুঃখিত গল্প না দিতে পারায়। কাল আমার পুরো গল্প ডিলেট হয়ে গিয়েছিল কপি করতে গিয়ে কাটে ক্লিক পরে গিয়েছিল। কেমন লাগে বলুনতো, আবার অফিস থেকে এসে সময় ও পাই না কত ভেবে লিখতে হয়।