বিলম্বিত_বাসর #পর্ব_৩

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz
.

.
.

দরজা ঠেলে আবেশকে প্রবেশ করতে দেখে আদুরের হৃদস্পন্দন যেনো বাড়তে শুরু করলো। সকালের পর থেকে সে আকুল হয়ে আছে আবেশের একটু ছোঁয়ার জন্য। সেই ভালো লাগাই আরেকটাবার ডুবে যাবার জন্য। এবার সে গভীর ডুব দিতে চায়। ভেসে যেতে চায় আবেশের ভালোবাসার সাগরে।
-ঘুমাওনি?
.
আবেশের করা প্রশ্নে আদুরে জবাব দিলো-
দেখতেই পাচ্ছো।
-আসেনা?
-উহু।
-চলো ছাদে যাই?
.
আবেশের কথা শুনে খানিকটা অবাক হলো আদুরে। সে কি ভেবেছিলো আর আবেশ কি বলছে!
বিরক্তিভরা কণ্ঠে আদুরে বললো-
যাবো না।
.
আচমকা আদুরেকে কোলে তুলে নিলো আবেশ।
আদুরে চেঁচিয়ে বললো-
কি করছো?
-কোলে চড়িয়ে ছাদে নিচ্ছি আমার আদুকে।
জোর জবস্তি নাকি?
-হুম তাই।
-নামাও আমাকে।
-আরে চুপ করো। উঠে যাবে কিন্তু সবাই।
.
.
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদুরে। চারপাশটা দেখতে তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এটা কোনো বাংলো বাড়ি। বাড়ির পাশে পুকুর, বাড়ির সামনে খোলা মাঠ, তাতে বিভিন্ন রকমের ফল ও ফুলের গাছ। ছাদ থেকে নিচে তাকিয়ে এসব দেখতে ভালোই লাগছে আদুরের।
.
-ভালো লাগছে?
.
আবেশের দিকে না তাকিয়েই আদুরে জবাব দিলো-
হু।
-চাঁদটা দেখো কতো সুন্দর?
-তোমার শুধু প্রকৃতি নিয়েই সৌন্দর্য্যের বর্ণনা করতে ভালো লাগে। আমাকে নিয়ে না?
-তোমার বর্ণনা আমি দিবো কি করে! সেটা তুমি নিজেই জানো।
-হু জানিতো। আমি দেখতে খুব খারাপ তাই তুমি সবসময় আমার দূরে দূরে থাকো।
তাইতো?
.
আদুরেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আবেশ বললো-
একদম তা নয়। আকাশের ওই চাঁদ দেখছো? তার চেয়েও বেশি সুন্দর তুমি। এর চেয়েও বেশি সুন্দর তোমার মনটা।
-আর?
-আরো শুনতে চাও?
-হু।
.
হেসে দিলো আবেশ। আদুরেকে জড়িয়ে ধরে বললো-
আমার কাছে তুমি সবার থেকে সেরা। আমার ভালোবাসা। তাইতো আমরা আজ একসাথে।
.
এই প্রথম আদুরের সাথে এমনভাবে কথা বললো আবেশ।
আবেশের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতেও এতো ভালো লাগা কাজ করবে ভাবেনি সে।
-আদু?
-হু?
-দূরে দোলনাটা দেখছো?
-হুম।
-চলো ওখানে।
.
.

দোলনায় বসে আবেশের কাধে মাথা রেখে দোল খাচ্ছে আদুরে। দুজনের দৃষ্টি আকাশের ওই চাঁদের দিকে। দুজনের মাঝেই এক ধরনের প্রশান্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
ধীরেধীরে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো আদুরের। আবেশের কাধে মাথা রেখে এভাবেই ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার।
-আদু? ঘুম পাচ্ছে?
-হু।
-ঘুমাও।

.
.
.

” পাগলের মতো কাউকে ভালবাসতে নেই।
নিজের প্রাপ্য সম্মান টুকু যে আমাকে দিবে না সে আর যাই হোক আমাকে কখনো ভালবাসতে পারে না। বৃথাই সময় নষ্ট হবে আমার।
যে আমাকে কানা পয়সার মূল্য দেয়না তার কাছেই আমি কেনো বার বার ফিরে যাবো? কিসের ঠেকা পড়েছে আমার! আমি আর তোমার কাছে ফিরবো না লামিয়া। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছো তো? রাখো। খুলে আর পাবেনা আমাকে। ”
.
একবুক কষ্ট নিয়ে এই মেসেজটি লামিয়ার নাম্বারে সেন্ড করে নিজের ফোন বন্ধ করে দিলো আয়ান। লামিয়ার সাথে তার দুই বছরের সম্পর্ক। একই গ্রামের মেয়ে সে। প্রচন্ড ভালোবাসে সে লামিয়াকে। কিন্তু লামিয়া? এতটুকু ছাড় দিতে রাজি নয়। সবসময় যেনো কোমর কাপড় দিয়ে পেচিয়ে রাখে ঝগড়া করার জন্য। সামান্য দুষ্টুমিও এই মেয়ে বুঝেনা। কিছু হলেই নিজের ফোন এক রাতের জন্য বন্ধ করে রাখে। আবার সারাদিন কষ্ট করে তার রাগ আয়ানকেই ভাঙ্গাতে হবে। কিন্তু রাত হতেই আবার রাগ! এভাবে কি চলা সম্ভব!
মোটেও না।
রাগে গিজগিজ করতে থাকলো আয়ান। মনে মনে শপথ নিলো, যাই হয়ে যাক ফোন সে বন্ধই রাখবে। তার কদরও লামিয়ার বুঝা উচিত।
.
.
.
এই বয়সে ভালোবাসা যায় নাকি ভালোবাসা বোঝা যায়?
মা যে বলতো যায়, তাহলে আমি কি সত্যিই ভালোবেসেছি আবেশ ভাইয়াকে? কিন্তু আমিতো তাকে ভাইয়া বলে ডাকি, ভাইয়ের চোখে দেখতাম। দেখতাম বললেও ভুল হবে, দেখি। আচ্ছা যদি তাই দেখি তাহলে তাকে ভালোবাসার কথা ভাবছিও কেনো আমি!
.
-না ঘুমিয়ে এখানে কি করছিস?
.
নাসরিন আক্তারের প্রশ্নে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো পরী। বসা থেকে চট করে বিছানার উপরে শুয়ে পড়লো সে।
নাসরিন আক্তার আবারো বললেন-
ঘুম আসছেনা তোর?
.
মায়ের কথায় ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পরী বললো-
নাহ।
-আবেশের কথা ভাবছিস?
.
ধুক করে উঠলো পরীর বুক। ইদানিং আবেশের নামটা শুনলেই তার বুকটা ধুক করে উঠে। এমনটা না যে সে আবেশকে ভালোবাসে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে নানারকম প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খেতে থাকে।
গলার স্বর নরম করে মায়ের উদ্দেশ্যে পরী বললো-
আমি কি কাল আবেশ ভাইয়ার বউকে দেখতে যাবো?
-কোনো দরকার নেই। তার ফ্যাক্টরিতে কাজ করে দুমুঠো ভাত খাইতে পারি বলেই তার মুখোমুখি আমাকে হতে হবে। কি করবো! তুইও বাপ মরা। নাহলে আমিও ওই আবেশের মুখোমুখি হতাম না।
-আবেশ ভাইয়ার প্রতি এতো ক্ষোভ কেনো তোমার মা?
-তুই এখনো বুঝছিস না কি ক্ষোভ? তোর আর বোঝার দরকারও নেই। ঘুমা তুই।
.
মা নিষেধ করেছে তাই আজ বউ ভাতের অনুষ্টানে পরী যেতে পারেনি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সে আবেশের বউকে দেখে আসবে। নিশ্চয় অনেক সুন্দরী সে!
.
.
.
ঘড়িতে সময় সকাল ৭টা।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভাঙলো আদুরের।
চোখ জোড়া খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো আবেশের বুকের উপরে।
তার যতটুকু মনে আছে কাল রাতে সে ছাদে ছিলো। তাহলে এখানে কিভাবে আসলো? নিশ্চয় আবেশ তাকে নিয়ে এসেছে।
মাথাটা সামান্য উঠিয়ে আবেশের বুকে আলতো করে ঠোঁটের ছোয়া লাগালো আদুরে।
তারপর ধীরেধীরে সে উঠে গেলো বিছানা ছেড়ে।
আবেশের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো-
আচ্ছা, বিয়ের আগে কি এইরকম শান্তির ঘুম হয়েছে আমার কখনো?
.
.
.
ফযরের নামাজের পর থেকেই আয়ানের মোবাইল নাম্বারে ডায়াল করে ফোন বন্ধ পাচ্ছে লামিয়া। ২বছর সম্পর্কের এই প্রথম আয়ানের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে সে। আয়ানের মেসেজ দেখে প্রথমে বিষয়টা পাত্তা না দিলেও এখন একধরনের খারাপ লাগা কাজ করছে তার মাঝে। আয়ান কি সত্যিই এতো অভিমান করতে পারে? জানা ছিলোনা তার। ফোনটা বন্ধ রেখেছে আয়ান। কিভাবে তার রাগটা ভাঙানো যায়?
.
.
.
সকাল ১০টা হয়ে গেলো।
গুটিগুটি পায়ে পরী এগুচ্ছে আবেশের বাড়ির দিকে। তার মা জানলে কখনো তাকে যেতে দিতোনা। কাজে গিয়েছে বলেই সুযোগটা পেলো সে।
আজ যদি আবেশের পাশে তার বউকে দেখে খারাপ লাগা কাজ করে মনের মাঝে, তাহলেই বোঝা যাবে সে আবেশকে ভালোবাসে।
যদিও বুঝে কিছু করার নেই এখন। তবুও ভালোবাসা বলতে কাকে বোঝায় তা যে খুব জানতে ইচ্ছে করছে পরীর!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here