#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
.
.
.
মাথাটা নিচু করেই মেঝের দিতে তাকিয়ে পরী বললো-
কি খালা বলেন?
-আবেশের পাশে পাশে একদম ঘুরঘুর করবিনা। দূরে থাকার চেষ্টা করবি ওর থেকে।
-কেনো?
-যা বলেছি তাই করবি। মনে থাকবে?
-হু।
-আর আবেশের বউ যেনো কিছু জানতে না পারে। কি বুঝাতে চাইছি বুঝেছিস?
-জ্বী।
-আয়ানকে বলে দিবো আমি, তোকে যেনো পড়ায় সে।
-জ্বী।
.
পরীকে যে আদুরেকে কিছু বলেনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অনেকটা হালকা লাগছে ফাতেমা বেগমের।
.
.
.
কালো রঙের জামদানি শাড়ি পরে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে আদুরে।
আবেশের ঘুম ভাঙাতে তার মোটেও ইচ্ছে করছেনা।
আবার বাবার বাড়িতে যাবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে। তাই একটু হাটাহাটির জন্য ঘরের বাইরে বের হয় সে। হাটতে হাটতেই পুকুরপাড় খুজে পায়।
পুকুরপাড়ের চারপাশ গাছগাছালিতে ভরা। মনোরোম এক পরিবেশ।
সিড়ির উপর বসে প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতে থাকলো আদুরে। ঠিক সে সময় মোরশেদা পেছন থেকে বলে উঠলেন-
নাক টাইন্না কি করো শুনি?
.
গাছে বসা দোয়েল পাখির দিকে তাকিয়ে আদুরে বললো-
সে আপনি বুঝবেন না।
-আমি তোমার বয়সে অনেক বড়। কেন বুঝমু মা?
.
মৃদু হেসে আদুরে বললো-
বয়সে বড় হলেই যে সব বুঝতে হবে তা কথা নেই।
-মাইয়া দেহি চড়ং চড়ং কথা জানো। ঢং ঢুং এ ও কাবিল। তাইতো আবেশ আমাগো পরীরে থুইয়া তোমারে বিয়া করবো বলছিলো এতোবড় একটা ঘটনা ঘইট্টা যাবার পরেও।
.
মোরশেদা কথা বলার সময় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ কানে বাজছিলো আদুরের। মোরশেদার কথা তার কান পর্যন্ত পৌছায়নি।
তাই সে মোরশেদার দিকে তাকিয়ে বললো-
কি বললেন? শুনতে পাইনি।
.
শুনতে পায়নি জেনে মোরশেদা যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।
মুখ ফুঁসকে যা বলেছে তা আদুরে শুনলে মহা কেরেঙ্কাল হয়ে যেতো। ভাগ্যিস সে শুনেনি।
মুখটা বাকিয়ে আদুরের উদ্দেশ্যে মোরশেদা বললেন-
বললাম নিজের রুমে যাও। তোমার শ্বাশুড়ি তাড়া দিতাছে। তোমরা কবে যাইবা?
-জ্বী যাচ্ছি।
.
.
.
-পরীকে পড়াতে তোর কোনো সমস্যা নেইতো?
.
মাথা ঝাকিয়ে আয়ান বুঝালো নেই।
তা দেখে ফাতেমা বেগম বললেন-
মাথা না ঝাকিয়ে মুখে বল?
-না নেই।
-তাহলে কাল থেকেই পরী তোর কাছে সন্ধ্যায় পড়তে আসবে।
-ঠিক আছে।
-তোরা কথা বল। আমি আসি।
.
ফাতেমা বেগম বেরিয়ে যেতেই পরীর উদ্দেশ্যে আয়ান বললো-
তোর আমার কাছেই কেনো পড়তে হচ্ছে? দুনিয়াতে স্যারের অভাব পড়ছে?
.
মুখটা মলিন করে পরী বললো-
না তবে টাকার অভাব পড়ছে। তোমার কাছেতো আমি বিনে পয়সায় পড়তে পারবো।
.
পরীর কথা শুনে মনটা ঘামলো আয়ানের। যদিও পরীকে পড়ানোর কোনো ইচ্ছে তার ছিলোনা কিন্তু তার কথা শুনে এক ধরনের মায়া কাজ করছে তার প্রতি।
টেবিল থেকে একটা খাতা ও কলম নিয়ে আয়ান বললো-
চেয়ারে বসে খাতায় ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত বানান করে লিখবি। দেখি কোনো ভুল হয় কিনা।
-কিন্তু খালা বললো কাল থেকে…
-চুপচাপ বস।
.
চেয়ার টেনে বসে পড়লো পরী।
আয়ান বিছানার উপরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলো।
পরী তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো পড়ানোর সময় আয়ান তার সাথে কেমন ব্যবহার করবে।
সে কি আবেশের মতো ঠান্ডা মেজাজে তাকে পড়াবে নাকি রেগেমেগে?
-কি হলো? লিখছিস না কেনো?
.
আয়ানের কথা শুনে টেবিলের উপর থেকে কলমটা নিয়ে পরী বললো-
শুরু করছি এখুনি।
.
.
.
অনেকক্ষণ যাবৎ আবেশকে ডেকে চলেছে আদুরে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙার নামই নেই।
খানিকটা বিরক্ত হয়েই আদুরে বললো-
তুমি ঘুমাও। আর যেতে হবেনা। আমি এখুনি শাড়ি বদলে নিচ্ছি।
.
বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলে আবেশের হাতের টানে তার বুকে এসে পড়লো আদুরে।
আবেশ তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
রাগ করছো কেনো? চোখটা লেগে এসেছিলো।
-আহ ছাড়োতো, সাজ গোজ নষ্ট হয়ে যাবে আমার।
-নষ্ট হবার মতো কিছুই করবোনা। সমস্যা নেই।
-আরে সমস্যা তো সেটাই। কিছুইতো করোনা তুমি।
.
কথাটি বলেই জ্বীভে কামড় বসালো আদুরে।
চোখ জোড়া খুলে আদুরেকে উল্টে তার চোখের উপর চোখ রেখে আবেশ বললো-
কি বললে? আমি কিছু করিনা এটা সমস্যা?
-না মানে…
.
আর কিছু বলতে না দিয়ে আদুরের রসালো ঠোঁট জোড়ায় ঠোঁট বসালো আবেশ।
কিছুক্ষণ আদুরের ঠোঁটের স্বাদ নেবার পর আবেশ তার উদ্দেশ্যে বললো-
করেছি কিছু?
-উহু এই কিছুনা। গভীর কিছু।
.
(চলবে)