#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz
.
.
.
থরথর করে পা কাঁপছে পরীর মায়ের কথা শুনে। তার মা কিভাবে জানতে পেরেছে সে ও বাড়ি গিয়েছে!
-কি ভেবেছিস? আমাকে না বললে আমি জানতে পারবো না? কেনো গিয়েছিস তুই ওখানে?
.
মাথাটা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো পরী।
বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন নাসরিন আক্তার।
পায়চারী করতে লাগলেন পুরো রুম জুড়ে। অপেক্ষা করতে লাগলেন পরীর উত্তরের জন্য।
কিন্তু পরী তার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে নীরবভাবে।
তাকে এভাবে নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নাসরিন আক্তার তার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে পরীর মুখটা উপরে তুলে ডান গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।
মায়ের এমন কান্ডে হতবাক হয়ে গেলো পরী। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো সে-
কি এমন করেছি? যার কারণে আমাকে মারবা তুমি? বলো কি করেছি?
-দোষ করে মুখেমুখে তর্ক করা হচ্ছে? তোকে বলেছিলাম? বলছিলাম না ওই বাড়িতে না যেতে? কেনো গিয়েছিস?
-আবেশ ভাইয়ার বউকে দেখতে।
-ওরে আমার আবেশ ভাইয়া! কি করেছে তোর ওই আবেশ ভাইয়া তোর সাথে মনে নেই? তার বউকে তোর দেখতে যেতে হচ্ছে?
-জানো মা? আদুরে আপু দেখতে যেমন মিষ্টি তেমন খুব ভালোও।
-তোরে তারা ভুল বাল বুঝায় দিছে তাইনা?
-না মা। আমাকে আয়ান ভাইয়া কাল থেকে পড়াবে বলেছে।
-চুপ! একদম চুপ। আমি আজই যাবো ওই বাড়িতে। কি চায় তারা জেনে আসবো।
এতোকিছু করেও শান্তি হচ্ছেনা তাদের।
.
.
.
দুপুরের খাবার শেষ করে সোফায় বসলো আবেশ। তার ঠিক সামনের সোফায় বসেছেন আশরাফুল হক।
তানিয়া হক একটা ট্রেতে কয়েকরকমের ফল ও মিষ্টি এনে টেবিলের উপরে রেখে আবেশের উদ্দেশ্যে বললেন-
নাও বাবা? খেয়ে নাও কিছু।
.
লাজুক মুখে আবেশ বললো-
মাত্রই ভাত খেলাম মা। এতো কিছু খাওয়া যায়!
-এসব হালকা খাবার। একটু খেতে হয় ভাতের পর। খাও?
.
শ্বাশুড়ির কথা রাখার জন্য আবেশ একটা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে কামড় বসাতেই আশরাফুল হক হালকা কেশে বলে উঠলেন-
অনেকেই পারে তোমার মতো অতিরিক্ত খাবার খেতে। আমি বাপু পারিনা ওতো খাবার খেতে। বিশেষ করে ভাতের পর একদমই পারিনা।
.
স্বামীর কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন তানিয়া হক।
আবেশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন-
তুমি খাওতো বাবা। সবকিছু থেকেই খাবে।
.
শ্বশুর যে তাকে খোটা মেরেছে এটা বুঝতে বাকি রইলো না আবেশের। কিন্তু এই খোটা মারার বা তাকে এতো অপছন্দ করার কারণই টা কি?
আদুরে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করেছে বলেই কি তার এতো রাগ? তবে যেভাবেই হোক, বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। এখনো এসব রাগ দেখানোর কোনো মানে আছে বলে আবেশ মনে করেনা।
শ্বশুড়ের দিকে তাকাতেই আবেশ দেখলো, তিনি তাকিয়ে আছেন আবেশের দিকে ডেবডেবে চোখে।
আবেশ তার উদ্দেশ্যে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত দিলো টেবিলে থাকা রসমালাই এর বাটির দিকে।
বাটি হাতে নিয়ে সে বলে উঠলো-
ভাতের আগে হোক পরে হোক রসমালাই আমি অনায়াসে খেতে পারবো।
.
আবেশের দিকে আশরাফুল হক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বললো-
আমিতো খেতে পারি বাবা। আপনি পারেন না। তাই বলছিলাম এভাবে কষ্ট করে বসে থেকে আমাকে সঙ্গ দিতে হবেনা। আমি সব খাবার খেয়েই উঠবো। আপনি নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নিন।
.
দাঁড়িয়ে পড়লেন আশরাফুল হক আবেশের কথা শুনে।
বিরক্তিভরা কণ্ঠ নিয়েই তিনি বললেন-
সেই ভালো।
.
এতোক্ষণ আবেশের কথা শুনে মুচকি হাসছিলেন তানিয়া হক।
আবেশ তার দিকে তাকিয়ে বললেন-
মা আপনি বসুন না?
-না বাবা কাজ আছে। আমিও আসছি। তুমি খেয়ে নাও। সব খাবে কিন্তু।
.
.
“আজ যদি আমার জায়গায় আয়ান থাকতো শ্বশুর মশাইকে এভাবেই জব্দ করতো। যাক, কিছুতো শেখা হলো আয়ান থেকে।”
নিজের মনে কথাগুলো বলে হেসে চলেছে আবেশ।
.
.
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তাহাফ। তার পাশে এসে আদুরে দাড়াতেই নড়েচড়ে উঠলো সে।
ফিক করে হেসে দিলো আদুরে।
ভ্রুজোড়া কুচকে তাহাফ বললো-
বাচ্চার মতো হাসছো কেনো?
-তুই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলি কেনো?
-তুমিতো দেখতে ভুতের মতোই।
-আচ্ছা তাই?
-হু তাই।
-তা তুই এই রুমে কেনো এখনো? আমিতো ভেবেছি আমি যাবার পরেই আমার রুমটা হাপিস করে ফেলবি তুই।
.
আচমকা আদুরেকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাঁদতে থাকলো তাহাফ।
আদুরে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-
কি হলো?
-আপু আমি তোমার সাথে আর ঝগড়া করবোনা। তোমার রুম আমার আর লাগবেনা। প্লিজ তুমি চলে এসো। ফাঁকা লাগে তোমাকে ছাড়া। খুব কষ্ট পাই আমার।
.
তাহাফের কথা শুনে কি বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছেনা আদুরে।
শুধু সেও তাহাফকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকলো।
.
.
.
অনেক কিছু বলবে বলে ঠিক করে আসলেও ফাতেমা বেগমের সামনে আসার পর মুখ দিয়ে কথাই বেরুচ্ছেনা পরীর মা নাসরিন আক্তারের।
ফাতেমা বেগমই তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন-
কিছু বলবা?
.
গলার স্বর শান্ত করে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে নাসরীন আক্তার বললেন-
জ্বী শুনলাম পরীকে আয়ান বাবা পড়াবে। আমি বলছিলাম কি দরকার?
-দরকার আছে। ওর দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। আবেশ যখন পারছেনা আয়ান পড়াবে।
-মাফ করবেন। ছোট মুখে বড় কথা বলছি। ঘটনা একটা ঘটে যাবার পর আমি চাইছিনা আমার মেয়ে এখানে আর আসুক।
-আমি শখ করে ওকে ডাকিনি। ও নিজেই এসেছে।
-মেরে পাঠায় দিতেন?
-কি বলছো এসব!
-ভুল কি বললাম! এখানে আসলে মেরে পাঠায় দিবেন। দরকার নাই ওর এখানে আসার। কেনো আর নতুন করে আপনাকে বলতে হচ্ছেনা ভাবী।
.
নিজের রাগকে সংযত করে ফাতেমা বেগম বললেন-
সে তোমার ইচ্ছে। কিন্তু আমার ঘরের দরজা পরীর জন্য সবসময় খোলা আছে।
তুমি আসতে পারো এখন।
.
এতোটুকু বলে শান্তি পাচ্ছেনা মনে নাসরীন আক্তার। কিন্তু বেশি কিছু বলার অধিকার তার নেই। তাই চুপচাপ বেরিয়ে যেতে থাকলেন এই বাড়ি ছেড়ে।
.
.
.
-আমার বাড়িতেও তুমি কান্না করোনি এখন কি হয়েছে শুনি?
.
শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেশের প্রশ্নে আদুরে জবাব দিলো-
জানো? তাহাফ আমাকে কতো মিস করে? ও বলেছে আমাকে না যেতে। কিভাবে কান্না করেছো জানো ও?
-না। কিভাবে?
-বাচ্চার মতো জড়িয়ে ধরেছিলো আমাকে। আর বলেছে….
.
আর কোনো কথা না বলে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো আদুরে।
আবেশ বুঝে উঠতে পারছেনা তার কি করা উচিত বা কি করলে ভালো হবে এই সময়টায়! এতোবছর প্রেম করেও ভালোবাসার মানুষটা কাঁদলে কিভাবে তার চোখের পানি আটকানো যায় শিখতে পারলোনা সে! ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো বুকচিরে আবেশের।
ফোন বেজে উঠলো আদুরের। তাকিয়ে দেখলো তার কলেজের বান্ধবীর ফোন।
চোখ দুটো মুছে নিয়ে হালকা কেশে গলাটা ঠিক করে নিলো আদুরে। ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে বান্ধবীর উদ্দেশ্যে বললো-
হ্যালো?
.
যাক সঠিক সময়েই বান্ধবী ফোনটা দিয়েছে। নাহয় এই মেয়ে কেঁদে ছোট খাটো একটা সুইমিংপুল বানিয়ে ফেলতো এখানে। কথাটি ভাবতেই আদুরে দৌড়ে এসে আবেশের উদ্দেশ্যে বললো-
আবেশ আবেশ!
-কি হলো?
-আমার বন্ধবী বিণার মেয়ের নাম রেখেছে। এই উপলক্ষে একটা অনুষ্টান করছে তারা। আমাদের যেতে বললো। যাবো কেমন?
-ওয়াও! গ্রেট। হুম যাওয়া যায়। তা কি নাম রাখলো?
-আয়না।
.
আয়না! নামটা শুনেই ধুক করে উঠলো আবেশের বুকটা। এতোদিন পর নামটা এভাবে শুনবে ভাবতে পারেনি সে।
.
(চলবে)