#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz
.
.
.
ললিতা আহসানের মুখে লামিয়ার ভালোবাসার কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললেন মুজিবুর আহসান।
ললিতা আহসানের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশ্ন ছুড়লেন-
ছেলেটি এখনো পড়াশোনা করছে তবে?
-হু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছুদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। তা পর বের হয়ে যাবে। তারপর এখানে এসে ভাইয়ের সাথে ফ্যাক্টরির কাজে হাত লাগাবে।
-বাড়ির নাম শুনেও ভালো লাগলো। সবতো ঠিকঠাকই আছে। তুমি কি বলো?
.
হালকা হেসে ললিতা আহসান বললেন-
আমার ঠিক লেগেছে বলেইতো তোমাকে বললাম।
-লামিয়াকে বলো ছেলের বাড়ি থেকে যেনো প্রস্তাব পাঠায়। এখন অন্তত এনগেজমেন্ট হলেও করে রাখে। কি বলো তুমি?
-ভালো বলেছো। বলব।
.
মুজিবুর আহসান ব্যাপারটা এতোটা সহজভাবে নিবেন ভাবতে পারেননি ললিতা আহসান। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো তিনি লামিয়ার উপরে চটে যাবেন কিন্তু না! হলো তার উল্টো। তাই তিনি মুজিবুর আহসানের কাছে চেপে যান আয়ানের ফোন বন্ধের কথা।
মান অভিমানের খেলা শেষ হলেই নাহয় আয়ানকে জানাবে লামিয়া এসব।
.
.
.
-জানো আবেশ? আমার বাচ্চা অনেক পছন্দের?
.
আদুরের কথা শুনল বলে মনে হল না আবেশ। দমকা বাতাস দিচ্ছে। বাতাসের শীতল ছোয়া শরীরে অনুভব করছে আবেশ। কথা শুনবার যেনো তার কোনো ইচ্ছে নেই।
আদুরে আবারো বললো-
বাচ্চা আমার অনেক পছন্দের।
-কেনো?
.
মাঝেমাঝে আবেশের কান্ডকারখানা দেখে আদুরের গা জ্বালা করে। এখনো তাই করছে।
আদুরে কঠিন গলায় বললো-
কেনো আবার কি! তোমার ভালো লাগেনা? বাচ্চা কার ভালো লাগেনা?
.
রাস্তার লোকজনদের সচকিত করে হেসে উঠলো আবেশ। আজ তাকে খুব ফূর্তির মুডে দেখা যাচ্ছে!
আদুরে সরু চোখে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ আবেশের দিকে।
পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে বললো-
সেই তোমার ভালো লাগুক না লাগুক বিয়ের প্রথম বছরেই আমরা বাচ্চা নিবো, ঠিক আছে?
আবেশ কেমন যেনো ইতস্তত করে বলল-
হু।
.
.
বিয়ের কিছুদিন আগের কথা ভাবছে বারান্দায় বসে আদুরে। তখনও তার মনে হয়নি আসলেই আবেশের বাচ্চার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আগ্রহ নেই? নাকি ব্যাপারটা অন্য কিছু?
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১টা।
আদুরে এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাসায় আসার পর থেকে দুজনের মাঝে কোনো কথা হয়নি। না চেষ্টা করেছে আবেশ কথা বলতে আদুরের সাথে না চেষ্টা করেছে আদুরে তার সাথে কথা বলতে!
যদিও আবেশের উচিত আদুরের সাথে কথা বলা, তার রাগ ভাঙানো কিন্তু তার মোটেও এখন ইচ্ছে করছেনা এসব করতে। একটা কড়া ঘুমের প্রয়োজন তার খুব বেশি। তাই শরীরটা এলিয়ে দিলো সে বিছানার উপর।
.
.
আবেশ রাগ ভাঙাতে আসবে? কেনো এমন ব্যবহার করেছে তা কি বোঝাতে আসবে?
.
ভাবতেই ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস বুক চিরে বেরিয়ে আসলো আদুরের। এমনটা যে আবেশ করবেনা তা সে ভালোভাবেই জানে। ৬টা বছর প্রেম করেছে, কোনোদিন এমন হয়নি। অবশ্য যে তাদের খুব বেশি ঝগড়া বা ঝামেলা হয়েছে এমনও না।
বৃথা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করে লাভ নেই ভেবে আদুরে এগিয়ে আসলো রুমের দিকে।
বিছানায় শরীরটা মেলে দিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে আবেশের পাশে শুয়ে পড়লো আদুরে।
পিনপতন নিরবতা কাজ করছে দুজনের মাঝে। বাইরের ঝিঝি পোকার ডাক কান পর্যন্ত আসছে দুজনের। কারোই কারো সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই। কিন্তু আদুরের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানারকমের প্রশ্ন। আদৌ কি তার ঘুম হবে এই রাতে!
.
.
.
রাত ২টা পার হলো।
আদুরের কানে ভেসে আসছে কারো কথা বলার শব্দ।
.
-আয়না? না না এটা হতে পারেনা। আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা আয়না। না না।
.
না না বলেই চেঁচিয়ে বসে পড়লো বিছানার উপরে আবেশ।
আদুরে তার চিৎকার শুনে উঠেই পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলো। সে দেখতে পেলো কুলকুল করে ঘামছে আবেশ৷ পুরো শরীর তার কাপছে থরথর করে।
ভয় পেয়ে গেলো আদুরে।
আবেশের কাধে হাত রাখতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বললো আবেশ-
আদুরে। তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাবা? প্লিজ যেওনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
.
আবেশের অস্থিরতার কারণ আদুরের বোধগম্য না হলেও তার যে এখন সঙ্গ দরকার তা বুঝতে পারছে আদুরে। তাই সেও আবেশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো-
পাগল নাকি! আমি কেনো যাবো তোমাকে ছেড়ে? ৬বছর আছি। তুমি যে ম্যান্দামার্কা তা আমি প্রেমের শুরুতেই বুঝেছি। যাইনি তো তাইনা? এখন কেনো যাবো? পাগল একটা।
.
আদুরের কথা শুনে স্বস্থির একটা নিঃশ্বাস ফেললো আবেশ।
আদুরের কানে কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো-
আজ তোমার বুকে মাথা রেখে আমি শুবো।
.
.
.
বাবা মেনে নিয়েছে! কেনো যেনো বিশ্বাসই হতে চাইছেনা কথাটি লামিয়ার। এতো সহজে তার বাবা সম্পর্কটা মেনে নেবার কারণ কি হতে পারে!
উফ… এসব ভাবতে ভাবতে আর আয়ানের চিন্তায় ঘুম হচ্ছেনা লামিয়ার। আগে রাগ হলেই ফোনটা বন্ধ করে দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে পড়তো। আজ কেনো তার উল্টো হচ্ছে! অন্যজনকে কষ্ট দিলে বুঝি নিজেকেও পেতে হয়?
কেমন আছে আয়ানটা?
ভাবতে লাগলো লামিয়া।
.
.
.
আমাদের সাথে এসব করে ভালো থাকা হচ্ছে তাদের? আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ফূর্তিতে আছে তারা? কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
আপনমনে এসব ভেবে সারারুমে পায়চারী করতে লাগলেন পরীর মা নাসরিন আক্তার।
হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। পরীর রূপের ছলে আয়ানকে বশ করলে কেমন হয়? না হোক আবেশের, আয়ানের তো হতেই পারে পরী।
এই ঘটনার পরে আবেশের পরিবারও এই বিষয়ে নিশ্চয় না করবেন না। এমন একটা পরিবার হাত ছাড়া কিছুতেই করা যায়না।
.
(চলবে)