#বিষাক্তময়_আসক্তি (The Villain 😈)
#Sumaiya_Akter_Mim
#পর্ব_৩৪…………🌼
“একটা অন্ধকার রাজ্যে ছিলো, অন্ধকার রাজ্যের একজন বাদশাহ ছিলেন,যার কিনা প্রিয় জিনিস বলতে কিছুই ছিলো না। তাঁর জিবনে প্রিয় বলতে একটা জিনিস ছিলো তাঁর নিজের গড়া সেই অন্ধকার রাজ্যে।।সে এতোটাই নির্দয় আর নিষ্ঠুর ছিলো যে তাঁর মনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু ছিল না।ভালোবাসা তাঁর কাছে সবচেয়ে অসহ্যকর একটা জিনিস ছিলো।। তাঁর মনে একদম দয়া মায়া ছিলো না ছিলো শুধু হিংস্রতা।। তাঁর কাছে ভুলের ক্ষমা নেই ভুল মানে কঠিন শাস্তি ।। তাঁর অনুমতি ছাড়া একটা পাখি স্থান নাড়ানোর অনুমতি ছিলো না।। নিজের রাজ্যে এবং অন্য রাজ্যে ও সে রাজত্ব করতো।। কিন্তু একদিন তাঁর এই অন্ধকার রাজ্যে তাঁর অনুমতি ছাড়া এক ফালি আলো প্রবেশ করে ফেলে।।।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকালো। ইরফান আবার বলতে শুরু করল,
সেই এক ফালি আলো ছিলো রাজার মনের শেহজাদি যাকে প্রথম দেখায় সেই অন্ধকার রাজ্যের রাজার প্রথম ভিন্ন ধরনের কিছু অনুভব হয় হার্ট বিট খুব জোরে জোরে বিট করছে সে ফিল করে।।সে প্রথম রাজা তাঁর নিজের হার্টবিট শুনতে পায় এতো জোরে বিট করছিলো।।।রাজা তাঁর শেহজাদিকে দেখে একটি বিয়ে বাড়ীতে যেখানে রাজার বড় ভাইয়ের বিয়ে ছিলো।।।সারা দিনের ক্লান্তি তাঁর উপরে এমন বিয়ে মানুষের ভিড় একদমই পছন্দ না রাজার সে মানুষ ভালোবাসে না তাই তাদের ভির ও না।।তাই সেই রাজা প্রচন্ড রকম রেগে ছিলো ।সে না চাইলে কেউ তাকে বিয়েতে নিয়ে আসতে পারতো না কিন্তু কেনো জানি রাজার হাজার রাগ আর অসহ্যের মাঝে ও তাঁকে তাঁর নিয়তির কাছে টেনে আনিয়েছে।।যদি সে না আসতো তাঁর জিবনে কখনো ভালোবাসাই আসতো না।সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতো ভালোবাসা ছাড়া বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ইরফান।। ইরফানের কথা শুনে আয়ানার বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো মনে হলো ইরফানের মুখের শেষ কথাটি তাকে খুব পিরা দিচ্ছে।।।ইরফান আয়ানাকে আরেকটু জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ইরফান আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু,,,
“হলুদ লেহেঙ্গার সাথে হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি পায়ে নূপুর লম্বা চুলগুলো দুল খাচছিলো তাঁর কোমর জুরে, বড় বড় চোখ দুটো যখন রাজার দিকে তাকিয়ে ছিল তখন ঠিক এখানে লেগেছে বুকের বাম পাশে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে।। গোলোমোলো গাল দুটো তাঁর একদম মিষ্টির মতো যা দেখে ইচ্ছে করছিলো টুপ করে খেয়ে ফেলি বলে মুচকি হাসে ইরফান । একদম পরী রাজ্যের ছোট্ট পরী যে কিনা অল্প সময়ের মাঝে রাজা কে প্রথম ভালোবাসা কী ফিল করিয়েছে।।যাকে দেখে মনে হয়েছে সে শুধু আমার শুধু আমার আর কারোর না। তাঁর উপরে শুধু মাত্র রাজার অধিকার আর কারোর না।।।।তাই সেই ছোট পরীকে নিজের করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।। তাঁর ভেতরে অজানা ভয় সৃষ্টি হয় যার মনে ভয় ছিলো না তাঁর মনেও ভয়ের সৃষ্টি হয় শুধু মাত্র তাঁর পরীকে হারানোর ভয়।। হুম সে হিংস্র রাজা ও ভয় পায় তাঁর পরীকে হারানোর ভয় তাইতো তাঁর হিংস্রতা ও বেড়ে যায় ।।। কিন্তু সে চায়নি তাঁর পরী তাঁর হিংস্র রুপের সাথে পরিচয় হোক তাকে ভয় পাওক কিন্তু বিধাতা তা চায়নি তাইতো পরী রাজার হিংস্র রুপের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে আর তাঁকে ভয় ও পায়।।।রাজা কখনো তাঁর পরীকে কেউ চোখ তুলে তাকাওক তাঁর পরীকে কেউ বাজে নজরে দেখবে তা সে কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারে না, তাঁর পিচ্চি পরীকে সবসময় খারাপ নজর থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁকে হিংস্র হতে হয়েছে আর সে তাঁর পরীর জন্য সবসময় এমন হিংস্র থাকবে সে তাঁর নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবন্ধ শেষ কথাটা ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে জোরে বলে।।
“সেদিন যখন রাজা তাঁর ছোট পরীকে দেখতে ব্যস্ত তখন তাঁর চোখ যায় তাঁর পরীকে বাজে ভাবে স্পর্শ করতে চাওয়া এক ওয়েটারের ওপর যা দেখে ধপ করে জ্বলে ওঠে রাজার ভেতরকার হিংস্রতা।যে কিনা তাঁর ছোট পরী তাঁর ভালোবাসার উপর কারোর তাকানোর পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি আর যারা তাকাবে তাদের মৃত্যু কঠিন থেকে কঠিনতর যন্ত্রনাদয়ক তা নির্ধারিত করে রেখেছে সেখানে সেই পশুটা তাকে ছুঁয়ে দিতে চেয়েছিলো তাকে বাজে নজরে দেখছিলো তাকে কি করে রাজা ছেড়ে দেয় তুমি বলো আয়ানার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে।আয়ানা অবাক হয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
ছোয়ে দিতে চেয়েছিলো!!
ইরফান আয়ানাকে আবার আগের মতো করে বসিয়ে আস্তে করে বললো, হুম ছুঁয়ে দিতে চেয়েছিলো।।
“অবুঝ ছোট পরী যখন রাজার চোখ থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য বারবার তাঁর দি-য়ের (তুতুল)পেছনে লুকাতে ব্যস্ত তখন রাজা তাঁর সেই কর্মকান্ড দেখতে ব্যস্ত।। কিন্তু হঠাৎ একটা ওয়েটার এসে পরীর ড্রেসে ইচ্ছাকৃত ড্রিংস ফেলে দেয়,পরী সেটা না বুঝলে ও তাঁর প্রতি আসক্ত রাজা সব বুঝতে পেরেছে।বারবার যখন ড্রিংস পরিষ্কার করার কথা বলে টার্চ করতে চাচ্ছিলো রাজার রাগ হিংস্রতা ও বাড়তে লাগলো।।ওয়েটার বারবার আড়চোখে রাজার জানের দিকে তাকাচ্ছিলো !ওয়েটারের এই লালাসায় ভরা চোখ দুটো যেনো রাজার রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।।ওয়েটার মনে মনে চেয়েছিলো যখন প্রিন্সেস ওয়াশরুমে একা যাবে তখন তাঁর ক্ষতি করবে কিন্তু রাজা তো এটা কখনো হতে দিবে না তাইতো সে তাঁর কলিজার দিকে বাড়ন্ত হাত একবারের জন্য উপড়ে ফেলেছে।।।।
আয়ানা ঢোক গিলে ইরফানের দিকে তাকালো তারপর বললো,,
—-তারপর কী হলো?
ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
—-তারপর আর কী শেহজাদি রাজাকে মাডার করতে দেখে ফেলেছিলো আর তখন থেকে শেহজাদির মনে রাজার জন্য ভয় সৃষ্টি হয়।।রাজা থেকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু পালাতে পারে না ঠিক রাজার কাছে ধরা পরে যায়। রাজা শেহজাদিকে জোর করে বিয়ে করার হুমকি দেয়,সব ঠিক ছিলো তখন অবার শেহজাদির চাঁচা জানের পুত্র শেহজাদিকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কিন্তু ভয়ে কাউকে বলতে পারে না। তাঁর বাজে নজর ছিল শেহজাদির উপর খুব ছোট থেকে সে শেহজাদিকে নিয়ে রাজা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু রাজা তাঁর আগে তাকেও দুনিয়া ছাড়া করে।।যে যে তাঁর ভালোবাসাকে অসম্মান করতে চাবে খারাপ নজর দিবে সবাইকে মরতে হবে আর তা হবে খুব নিকৃষ্ট। রাজা তাঁর শেহজাদির জন্য সব করতে পারে কিন্তু তাঁর দিকে কেউ তাকাবে তাকে খারাপ নজরে দেখবে তাঁর ক্ষতি করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবে আঘাত করবে তাদের জন্য রাজার নিজস্ব আইন অনুযায়ী কঠিন মৃত্য দন্ড দেওয়া হবে আর সেইটা হবে খুব নিকৃষ্ট দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইরফান।।।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা ইরফানের দিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো তারপর বললো,
—-রাজাটা খুব ভয়ংকর ঢোক গিলে।।
—-তোমার জন্য আয়ানার নাকে হাল্কা কামড় দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।।।।এবার তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো।
—-হুম আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে বললো।।
—-গুড গার্ল বলে আয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।আয়ানাকে বিছানার উপর বসিয়ে আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে আয়ানাকে বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আর আয়ানা মনে করার চেষ্টা করছে সাফিয়ার বিয়ের দিন এর সব ঘটনা ।
তাঁর মনে আছে ওয়েটারটা তাঁর গাঁয়ে জুস ফেলেছিলো।।তাকে স্যরি বলছিলো তারপর তাকে আড়চোখে বারবার দেখছিলো খুব অদ্ভুত লাগলে ও তাঁর ছোট মাথায় তখন সে এসব বুঝতে পারে নি।।আয়ানার ওই দিনের কথা মনে পরতে এখনো তাঁর শরীরের লোম গুলো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়।। আজকে পরিবেশ অন্যরকম থাকতো তাঁর সাথে ওইদিন অন্য কিছু ও হতে পারতে ভাবতে আয়ানার গলা শুকিয়ে আসে।।আয়ানা মিনমিন করে বলতে লাগলো,,,,,,
“আজকে একটুর জন্য বেঁচে গেছি এরোগেন্ট ম্যান কে আমি প্রশ্ন করেছি কি ভাবে ঢোক গিলে গালে হাত দিয়ে বললো। আরেকটু হলে ঠিক আমাকে মেরে দিতো খবিশ ভিলেন একটা বলে মুখ কুঁচকে নিলো।। কিন্তু মনে মনে ওই ওয়েটার আর জিসানকে মারার কথা ভাবলে এখনো তাঁর শরীর কেঁপে উঠে।।।
“ইরফান আয়ানা রাতের খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে নিলাম বেলীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো এর মাঝে আয়ানা ইরফান কে কোনো প্রশ্ন করেনি।।ইরফান আয়ানা গাড়িতে বসতে গার্ড গাড়ি চালানো শুরু করে।। ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে সে গাড়ির জানালা খোলার জন্য টানাটানি করছে তা দেখে ইরফান আয়ানার হাত টান দিয়ে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে।।আয়ানা ভয় পেয়ে ভিতু চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইরফান তাঁর দিকে তাকিয়ে তাঁর জনপ্রিয় বাঁকা হাসি দিয়ে রেখেছে যা দেখে ছোট খাটো ক্রাশ খায় আয়ানা মাথা নিচু করে বসে থাকে। ইরফান আয়ানাকে জড়িয়ে তাঁর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,,,
—-বাহিরে ঠান্ডা আয়ু জান। তুমি জানালা কেনো খুলছো। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে।।
—-একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিলো আমতা আমতা করে বলল।।
—-হুম জান বলো আমি শুনছি।।।আয়ানার থুতনিতে আঙ্গুল দিয়ে চেপে।।।
—–না মানে বলছিলাম আমরা বাংলাদেশে কবে যাবো।।।।
—-কেনো ভ্রু কুঁচকে?
—-আম্মি আব্বি কে মিস্ করছি ঠোঁট উল্টিয়ে।।
—-কিছুদিন পর যাবো আর তাড়াতাড়ি আবার ফিরে আসবো।।
—-জ্বি আচ্ছা।
—-এবার ঘুমিয়ে পরো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আয়ানা ইরফানের কথা শুনে চুপটি করে ইরফানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে।। ইরফান আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে কিছুক্ষণ এর মাঝে আয়ানা ঘুমিয়ে পরে ইরফান আয়ানাকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে আয়ানার মাথাটার সাথে নিজর মাথা ঠেকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,,
—-তুমি শুধু আমাকে মিস্ করবে আর কাউকে না। আমি তোমাকে অন্য কারোর সাথে ভাগ করতে পারবো না তোমার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার শুধু আমার খুব শীঘ্রই এমন হবে তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসবে আমাকে চোখে হাড়াবে তোমার সব কিছু ঘিরে শুধু আমি থাকবো শুধু মাত্র আমি।।
আয়ানার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল ইরফান।। ভালোবাসা এই কোন রোগে সে আক্রান্ত হলো যে তাকে দিনকে দিন #বিষাক্তময়_আসক্তিতে ভ
ডুবিয়ে দিচ্ছে।।।আয়ানা নামক নেশা তাঁর সম্পূর্ণ টা জুরে গ্ৰাস করছে।। একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে প্রতিনিয়ত ঝটপট করছে।।।।
“রাত দুইটা আট মিনিটে ইরফান আর আয়ানা নিলাম বেলীতে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছায়।।ইরফান আয়ানাকে কুলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলো মিসেস আসফিয়া খান সোফায় মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে আছে।। ইরফান আসফিয়ার দিকে তাকিয়ে আয়ানাকে নিয়ে উপরে চলে যায়।আয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে তাঁর শরীরে ব্ল্যানক্টে জড়িয়ে দিয়ে নিচে চলে আসে।
“খটখট আওয়াজে মিসেস আসফিয়া চোখ খুলে তাকান। তাকিয়ে দেখেন ইরফান দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সামনে। ইরফান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর মুখে হাসি ফুটে উঠে।। ইরফান আসফিয়া কে উঠতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,,
—-আপনি এখানে কী করছেন আম্মিজান এতো রাত অব্দি।।গম্ভীর গলায় ।।।
—-তোমাদের অপেক্ষা করছি ইরফান । আয়ানা কোথায় হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করে।।।
—-ঘুমাচ্ছে আপনি ও ঘুমিয়ে পরোন বলে ইরফান চলে যেতে নিলে আসফিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলল
—-ডিনার করবে না আমি খাবার খরম করছি বলে যেতে নিলে ইরফানের গম্ভীর গলায় থেমে যায় তিনি।
—-ডিনার করা হয়ে গেছে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না বলে উপরে চলে যায়।।
ইরফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনি নিজের রুমে চলে যায়।।।।
।
।
।
।
#To_be_continued……🌼