#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২৯.
তখনও বহমান ছিলো আষাঢ় মাস। শ্রাবণী পরিবেশের আকাশটাতে উড়ে চলে যেতো রাশি রাশি মেঘের কুন্ডলী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার পথে। রুহুল হক নিজের বিলাশ বহুল বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ধীর পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বুক চিরে বেরিয়ে এলো আবারো দীর্ঘশ্বাস। এই এতো বড় বাড়ি অথচ কি ভীষণ ফাঁকা! বাবা হিসেবে এই বয়সে ছেলের কাধে ভর দেওয়ার নিয়ম ছিলো। ছেলে বউ নাতি নাতনি নিয়ে সুখে সংসার করার রীতি ছিলো। রঙিন জীবন্ত জীবন। অথচ তার বেলায় যেনো সব ফিকে সব উল্টো। ভাবনার ঘোরে থেকে নিজের ব্যক্তিগত ঘরে পা ফেলতেই স্ত্রী আকিদা হক বলে উঠলেন,
‘এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে আজ?’
রুহুল হক স্ত্রীর দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালেন। তাকাতেই দেখলেন, স্ত্রীর চোখ কুচকিত। সূক্ষ্ম কুটনি চোখে সে কথা বলছে। চাল-চলনে গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব। জর্জেট শাড়ির পাতলা আঁচল মাটি স্পর্শ করছে। ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক। মুখে সাজঁগোজের বহর। বরাবরই সে এরকম। গ্রাম থেকে বিয়ে করে নিয়ে আসা মেয়েটা শহরের চলন ফেরন বুঝতেই হয়ে গেলো অতিমাত্রায় আধুনিক। কিন্তু তবুও ছোটোলোকি ছোক-ছোক স্বভাব তার। মনের থলি বিষহিংসায় পূর্ণ । রুহুল হক টাই খুলতে খুলতে রুক্ষ স্বরে জবাব দিলেন,
‘কেনো তোমার সমস্যা হচ্ছে?’
‘প্রতিদিন তো আগে আসো না। আমি হাজারবার বলার পরও আসো না। আজকে এতো আগে আসার কারণ কি সেটাই জানতে চাইছি।’
‘বারবার এভাবে কথা বলছো কেনো? আগে এসে কি দোষ করে ফেললাম? আমার বাড়ি আমি যখন তখন আসবো। আমার ব্যাপারে একদম মাতব্বরি করবে না।’
রুহুল হক চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন। আকিদা হক গরম চোখে তাকিয়ে থাকতেই রুহুল হক আবার দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
‘চোখ ঘুরাও। কোন সাহসে এভাবে তাকাও আমার দিকে? আর সারাক্ষণ এসব কি সেজেগুজে বসে থাকো? এতো পাতলা শাড়ি পড়ো কেনো? বয়স হচ্ছে তো নাকি? এখন তো আর ষোলো বছরের কিশোরী নও। দিনে তো একবারও আল্লাহর নাম নিতে দেখি না। ঘরের কাজ কর্ম কিছু করলেও তো পারো? তবুও তো কাজের লোক রাখতে হয়না৷ তিনটা মানুষের জন্য বাড়িতে এতো কাজের লোক? এসব হিংসা-বিদ্বেষ মনোভাব বাদ দিয়ে স্বামীর টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করো না একটু!’
‘আমি এসব পারবো না৷ আমার স্কিন নষ্ট হয়ে যাবে।’
‘অথচ বাবার বাড়িতে ঠিকই পারতে। রোজ পারতে। তখন স্কিনের চিন্তা মাথায় থাকতো না বেদরাম মার খাওয়ার ভয়ে। ছোটলোক বিয়ে করলে এই এক সমস্যা। অতি বিলাশবহুলে তারা পাগল হয়ে যায়।’
রুহুল হক তাচ্ছিল্য গলায় কথা গুলো বলতেই আকিদা হক কাট কাট করে বললেন, ‘তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছো? আমি কি তোমার হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করেছি?’
‘বিয়ের কথা মুখে এনো না। তোমার শেয়ানা বাবা যে কি কান্না কাটি করে বিয়ে দিয়েছে তা নিশ্চয়ই মনে আছে?’
আকিদা হক দাঁত কটমটালেন। তবুও নিজেকে সংবরন করার চেষ্টা করলেন। এখন বেশি কথা বললে নিজের মান সম্মানই খোয়া যাবে। তার চেয়ে চুপ থেকে কথা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
‘তোমার ছেলে এসেছে।’
রুহুল হক বাথরুমে ঢুকছিলেন। কান পর্যন্ত কথাটা পৌছানো মাত্র পা জোড়া আটকে গেলো মেজের সাথে। নিষ্পাদন দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন, ‘কিহ?’
আকিদা হোক উত্তর দিলেন না। বিরবির করে শুধু বললেন, ‘দরদ!’
রুহুল হক আর বাথরুমে ঢুকলেন না। ব্যস্ত পায়ে ঘর থেকে বের হতে নিলেই পেছন থেকে আকিদা হক হাত টেনে ধরলেন।
‘আকিদা আমার হাত ছাড়ো।’ রুহুল হক তড়িঘড়ি করে অসহায় গলায় বললেন।
আকিদা হক ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কখনো আমার মেয়ের জন্য কিংবা আমার জন্য এতো অস্থির হয়েছো? যেই শুনলে ছেলে এসেছে ওমনি দরদ উথলায় পড়ে?’
রুহুল হক আর পারলেন না। ধাক্কা দিয়ে আকিদা হক কে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। আকিদা হক মরতে মরতে বাঁচলেন। সাপের মতো ফুসফুস শব্দ করে উঠে চললেন স্বামীর পিছুপিছু।
রাহুল তখন রুমকিকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। আট বছরের রুমকি মাথা দুলিয়ে বলল, ‘উমম..ভাইয়া মজা।’
রাহুল হেসে রুমকিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ধীর কণ্ঠে বলে,
‘তুই এতো ভালো কেনো রুমকি? তোর জন্য বারবার এই আস্তানায় আসতে হয় আমার। এতো ভাইয়া পাগল কেনো রে তুই?’
রাহুলের চোখ ভিজে উঠলেই রুমকি ওর ছোট ছোট দু’হাত দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে বলল,
‘তুমি কি বোনপাগল না? আমার তোমাকে অনেক ভালোলাগে ভাইয়া। তোমার আমাকে ভালো লাগে না?’
ঠোঁট উল্টে দিলো রুমকি। রাহুল হেসে রুমকিকে আবার জড়িয়ে ধরতেই কারোর গম্ভীর কিন্তু উচ্ছ্বসিত গলা টের পাওয়া গেলো,
‘কখন এসেছো?’
রাহুল আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রুমকি কে খাইয়ে দিতে দিতেই উত্তর দিলো,
‘ঘণ্টা খানিক।’
তখনি আকিদা হক পেছনে এসে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় বললেন, ‘ও এসেছে তুমি জানতে তাই না? তাই আজ এতো তাড়াতাড়ি এসেছো?’
‘আর একটা কথা বললে মুখ টেনে ছিড়ে ফেলবো।’
রুহুল হক বললেন ফিসফিস করে। আকিদা হক ক্রুর চোখে তাকিয়ে রইলেন। রাহুল মুচকি হেসে বলল,
‘আপনার স্বামী জানতেন না আমি আসবো। রুমকি অসুস্থ। আমাকে ফোন করেছিলো কারো মোবাইল দিয়ে। কান্নাকাটি করছিলো তাই আসা।’
আকিদা হক গর্জন করে বললেন, ‘কার ফোন দিয়ে ফোন করেছো?’
ভাইয়া আর বাবা পাশে থাকলে রুমকি একটুও ভয় পায় না। তেমনি আজও ভাইয়াকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ভীতিহীন গলায় বলল,
‘রহিমা নানুর ফোন থেকে।’
রহিমা টেবিলের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আকিদা হক টেবিলে থাবা বসিয়ে বললেন, ‘খালা তুমি ওকে ফোন দিয়েছো কেনো? কাজের লোক কাজের লোকের মতো থাকতে পারোনা?’
রহিমা ভয়ে তটস্থ হয়ে দাড়ালেন। রাহুল চোখ তুলে আকিদা হক কে দেখতেই আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মহিলার দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগে। ছিঃ কি পোশাক পরে সারা বাড়ি ঘুরছে। এতোগুলা কাজের লোক বাড়িতে। রুহুল হক এবার রেগে বললেন,
‘থাপড়ে গাল লাল করে ফেলবো ছোটলোকের বাচ্চা। রহিমা খালাকে কাজের লোক বলস কোন সাহসে? তোর এক যুগ আগে থেকে রহিমা খালা এই বাসায় আছেন।’
আকিদা হক চুপসে গেলেন। তবুও দমলেন না। স্বামীর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে নিজের রাগ জানান দিলেন। এতোগুলা মানুষের সামনে অপমান করার জন্য সাজা দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়ে গেলো। রুমকির খাওয়া শেষ। ওর ঠোঁট মুছে দিতে দিতে রাহুল বলল,
‘শরীরে অনেক জ্বর ছিলো। ফোন দিয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলো না। তাই এসেছিলাম নয়তো আসতাম না।’
আকিদা হক গর্জে বললেন, ‘তুমি আর কথা বলো না। এতো দরদ দেখাতে হবে না। এতোই যদি দরদ থাকতো তাহলে আমার মেয়ে যখন সিড়ি থেকে পরে গেলো তখন আসোনি কেনো?’
‘তখন তো আমাকে ফোন করা হয়নি। কাজেই, আমি জানতাম না। এনিওয়ে আমি চলে যাচ্ছি। অশান্তি করবেন না।’
রুমকি কাদো কাদো খুব আদুরে কন্ঠে বলল,
‘ভাইয়া তুমি যেও না প্লিজ।’
রাহুল হাটু মুড়ে রুমকির সামনে বসে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তুই যদি আমার নিজের বোন হতিস আমি কক্ষনো তোকে এখানে রাখতাম না। আপসোস.. খুব করে চাওয়া জিনিসগুলো বোধহয় কখনো নিজের হয়না রে। ইশশ…যদি আমি পারতাম তোকে আমার কাছে নিয়ে যেতে।’
কি নিরব আর্তনাদ! গোপন আর্তচিৎকারে ছেয়ে গেলো সারা শরীর। রাহুল উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেই রুহুল হক বললেন,
‘দুপুরের খাবারটা অন্তত খেয়ে যাও।’
আকিদা হক বিরবির করে করলেন, ‘ আদিক্ষেতা।’
রাহুল স্পষ্ট শুনতে পেলো। পেছনে ঘুরে মেকি হাসি দিয়ে বলল,
‘বলেছেন এই অনেক। ভালো থাকবেন আপনার স্ত্রীকে নিয়ে। আর পারলে মাঝে মাঝে রুমকিকে একটু আমার কাছে পাঠাবেন।’
নাক ছিটকে আকিদা হক বললেন, ‘তোমার ওই ব্যাচেলর বাসায় আমার মেয়েকে পাঠাবো?’
মুচকি হেসে রাহুল বলল, ‘ওখানে সবাই ভালো। ব্যাচেলর বাসা মনেই হয়না। তবে তা নাহলে একটু ফুফির বাসায় পাঠাবেন ও যখন ফুফির বাসায় যাবে তখন আমি এসে দেখে যাবো।’
রাহুল চলে গেলো। রুহুল হক অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই খেয়াল করলেন ছেলে তার শার্টের হাতায় চোখ মুছে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। অনেকদিন বাদে খুব করে কাদতে ইচ্ছে করলো। বুকের মাঝে কষ্টের পাহাড় ধসে পরলো চোখ বেয়ে।
______________________________
দেড় ঘন্টা অতিবাহিত করে আদর টিকলি এসে পৌছালো সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে। খুব যত্নে টিকলির মাথায় একটা গোলাপের ক্রাউন পড়িয়ে দিলো আদর। মোমের পুতুলের মতো দেখতে মিষ্টি মেয়েটার চোখ মুখ জুড়ে উল্লাস। ভালোবাসার মানুষটার হাত ধরে গোলাপ বাগানেই পার্মানেন্ট থাকার প্রয়াস।
‘এই ডাক্তার, আমরা এখানকার মালী হয়ে যাই চলেন। আপনি আমি সারাদিন এই ফুলের মাঝে মাঝে ভ্রমর হয়ে ঘুর ঘুর করবো। এসব ডাক্তারি ফাক্তারি করে কি হবে?’
আদর টিকলির কথায় হেসে দিয়ে এই প্রথম টিকলির গাল টিপে দিলো। টিকলি বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘আমার গাল টিপলে রাগ হয়। ‘
আদর আরেকবার টিপে দিলো। টিকলি দু হাত সরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আচ্ছা ডাক্তার? আমরা কি ডেট করছি? ফার্স্ট ডেট?’
‘নাহ। আমরা জীবনের অগ্রভাগ ভালোবাসাময় সময় অতিবাহিত করছি।’
‘আমি কি বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি?’ টিকলি ভ্রু কুচকে বলল।
‘আমি কি বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি?’ আদরও ভ্রু কুচকে বলল।
টিকলি মিষ্টি করে হেসে দিতেই গালের গর্ত গাঢ় হলো। আদর বলল,
‘ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসার মুহুর্ত উপভোগ করছি। কি নিদারুন তৃপ্তিময় প্রশান্তি তাই না টিকলি!’
মুগ্ধকণ্ঠে টিকলি বলল, ‘হুম।’
টিকলির মাথায় গোলাপের ক্রাউন। গোলাপের মতোই স্নিগ্ধ তার মুখ। লাল পাপড়ির মতো ঠোঁট। সবুজ পাতার দুটি চোখ। গায়ে লাল গাউন। টিকলির চোখে আজও চশমা। আদর তা দেখে করুণ গলায় বলল,
‘চশমা টা খুলুন না। চশমার আড়ালে আমি আপনার চোখ দুটো পড়তে পারিনা।’
টিকলি অবাক চোখে তাকিয়ে দুষ্টুমি করে বলল,
‘পড়া লাগবে না। যতো পড়বেন ততো গভীরে চলে যাবেন। এতো গভীরে যাওয়া ভালো না ডাক্তার। তারচেয়ে আজ থাক, অন্য একদিন নাহয়।’
আদর হালকা হাসলো। ঠোঁটের কোণে গর্ত হলো। ভাঁজ পরলো। টিকলি নয়নাভিরাম মঞ্জুলী চোখে তাকিয়ে রইল পলক না ফেলে। টিকলির ওই গালের একটু নিচে ঠোঁট বরাবর ফর্সা দুটো গর্ত আদরের চোখে সুচারুভাবে লাগলো। লাল জামার সাথে লাল নোসপিন টিকলির উজ্জ্বলতা এবং কান্তিমান লাবন্যতা জানান দিলো। হঠাৎ মনে হলো, মাথার লাল ফুলের ক্রাউন টার সাথে কিছু একটা অসমাপ্ত। অনেক দিন আগে মনের অবচেতনে পোষা কথা আদর আজ বিহ্বল, বিমুগ্ধ, বিবশ গলায় হুট করে বলে ফেলল,
”আপনি কি জানেন আপনার ওই কপালের দু’পাশ থেকে শুরু হওয়া দু’ গাছি চুলের ভাঁজে টিকলি পরলে কতো সুন্দর লাগবে! বলতে নেই, তবে আমি কল্পনা করি তখন আমার আপনাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করবে।”
টিকলির মুখ রাঙা হলো। লজ্জায় মুখ লুকালো অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে। ঠোঁট টিপে হেসে ফিসফিস করে বলল,
‘লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার।’
‘উহু একটুও না। আমি সত্যি কথা বলতে পছন্দ করি।’
আদর আবার বলল ফিসফিস করে ,
‘আদর করা বলতে কিন্তু শুধু ঘনিষ্ঠতাই বুঝায় না টিকলি। এই যে একটু আগে আমি আপনার তুলতুলে গাল দুটো টিপে দিলাম এটাও কিন্তু আদর। আদরের ভয়ংকর আদর। বুঝলেন মিস. টিকটিকি?’
টিকলি চোখ বন্ধ করলো। শরীরে শিহরণ জাগলো। কম্পন টের পাওয়া গেলো। দুজন দুজকে ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসার বাক্য বিনিময় হলো! দুজন দুজনকে স্পর্শ না করেও দৈবাৎক্রমে এতোটা ভালোবাসার উদয় হলো! দুজন খুব করে মনে মনে বলল, কখনো যেনো অস্ত না যায় এই ভালোবাসা। কারোর নজর না পড়ুক। টিকলি বন্ধ চোখে স্তব্ধ কানেই শুনছিলো। আদর বলছিলো,
“বন্ধ চোখের পাতায় লিখে রাখবেন আমার নাম
মনের গহীনে রেখে দিলাম আমার চিঠির খাম।”
টিকলি উপভোগ করলো। খুব করে উপভোগ করে ছলছল নয়নে তাকালো খানিক বাদে। ধীর নেশাক্ত গলায় বলল,
‘চিঠি কোথায়, ডাক্তার?’
‘এই যে, আমার বুক পকেটে।’
‘কোথায়? দেখি?’
‘খুঁজে পাবেন নাতো। খুব লুকিয়ে চুরিয়ে রাখি। শুধু আমার হয়েই থাকে। আমাকেই ধরা দেয়। একমাত্র আমি অনুভব করি। আর কারোর সামনে নিজ অস্তিত্বে বিরাজ করেনা।’
‘এটা কেমন হলো ডাক্তার? চিঠিটা আমার জন্য না? বুক পকেট কি আমার জন্য না?’ টিকলি ঠোঁট উল্টে প্রশ্ন করলো।
‘আপনার জন্যই তো। এরজন্যই তো লুকিয়ে রাখি। কাউকে দেখানো সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি আপনাকেও। খুব আত্মগোপনে থাকে সে। একটু উনিশ-বিশ হলেই রেগে বোম।’
‘সাংঘাতিক তো! আমার সম্পদ অথচ আমাকেই দেখাতে চাচ্ছে না?’
চলবে❤️
বড় হইছে না আজকে?