বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-৩১

0
1260

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

৩১.
‘এক্ষুনি আমার সাথে দেখা করুন।’ সাপের ন্যায় ঠান্ডা গলায় বলল টিকলি।

ঘড়িতে তখন বাজে রাত এগারোটা। আদর রাউন্ডে ছিলো। টিকলির কথা শুনে ফিসফিস করে বলল,

‘টিকলি, আমি এখনো হসপিটালে।’

তখনি আকস্মিক এক কাজ করে বসলো টিকলি। ছাদ কাঁপিয়ে চিল্লিয়ে বলল,

‘চুলোয় যাক সব। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। দেখা করুন।’

আদর অবাক হলো। মাত্রই রণচণ্ডী অন্য আরেক টিকলিকে আবিষ্কার করলো। বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল। শান্তশিষ্ট টিকলিরও যে এমন একটা রূপ আছে তা আজ প্রথম দর্শন পেলো। সারাদিন মাত্রাতিরিক্ত ব্যাস্ত থাকায় আদরের মেজাজটাও বিগড়ে যাওয়ার পথে। ব্যস্ততার কবলে পরে আদর আজ টিকলিকে ফোন দিতে পারেনি। টিকলি অনেকবার ফোন করলেও ধরতে পারেনি। তাই বলেই কি এতো রাগ দেখাতে হবে? আদরের বিষয়টা বুঝবে না?

‘একটু বুঝার চেষ্টা করুন…’

আদরের কথা শেষ হওয়ার আগেই টিকলি আবারো চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না…কিচ্ছু না। এক্ষুনি দেখা করুন।’

আদর অসহায় সাথে একটু শক্ত গলায় বলল,

‘আপনার বুঝতে হবে টিকলি আই এম আ ডক্টর। এতো অবুঝপনা আপনাকে মানায় না। প্লিজ ট্রাই টু বি আন্ডারস্ট্যান্ড।’

টিকলি অবাক গলায় বলল,

‘অহংকার দেখাচ্ছেন, ডাক্তার? আপনার কাছে যদি আপনার ডাক্তারি পেশাটাই এতো বড় হয়ে থাকে তাহলে আমি কোথায়? না একটা ফোনকল, না একটা মেসেজ, নো নাথিং। দিজ ইজ কলড রিলেশন? যদি এটাকেই সম্পর্ক বলে তাহলে চাই না আমার এমন সম্পর্ক।’

টিকলির কথায় আদর হতবাক হয়ে গেলো। বুদ্ধিমান আদর উত্তর দেওয়ার মতো কিচ্ছু খুঁজে পেলো না। অকূলপাথারে পড়লো যেনো। টিকলি আবার বলল,

‘আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। আপনি কালকেও আমার সাথে কথা বলেননি। কি করছেন টা কি আপনি? পাঁচদিন হয়ে গেলো কোনো দেখা-সাক্ষাৎ কিচ্ছু নেই আমাদের। আপনার কাছে আমি ব্যতীত বাকি সব ইম্পোর্টেন্ড। তাহলে আমি কে? আমাকে এভাবে জীবনে রাখার মানে কি? বাদ দিয়ে দিন। তবুও এতো কষ্ট কেনো দিচ্ছেন? কথা বলছেন না কেনো ডাক্তার?’

টিকলি আবারো চিল্লিয়ে উঠলেই ওপাশ থেকে ফোন কাটা হলো। বারংবার হ্যালো বলেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে টিকলি ছাদের রেলিং ধরে বসে পরলো। ডুকরে কেদে উঠতেই আবারো ফোন লাগালো। অপাশ থেকে ফোন ব্যস্ত পাওয়া গেলো। ‘কেটে দিলো?’ বিরবির করে টিকলি আরো বার দুয়েক ফোন দেওয়ার পর ওপাশ থেকে ফোন ধরে আদর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘আমি এখন ব্যস্ত। সম্পর্ক টায় আমি প্রথম কনফেস করে বোধ হয় ভুল করে ফেলেছি।’

কথাটা বলেই খট করে ফোন কাটা হলে টিকলি স্তব্ধ হৃদয়ে বসে রইল। বুকের মাঝে উথলে উঠলো কান্নার দিল। এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারলেন উনি?

খানিক বাদেই পেছনে এসে পরম যত্নে টিকলির কাধে হাত রাখলেন জামিলুর রেজা। চমকে ভেজা চোখে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বাবাকে দেখতেই জামা ঝাড় দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো টিকলি। জামিলুর রেজা মেয়ের চোখ মুছে মেয়েকে ধরে দোলনায় বসালেন। টিকলি আত্মা ঢিপঢিপ করছে বাবা কিছু শুনে ফেলার ভয়ে। জামিলুর রেজা মেয়ের মাথা নিজের কাধে রাখলেন। এরপর খুব আদুরে স্বরে বললেন,

‘কাদছিলি মা?’

টিকলি দীর্ঘ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বাবাকে ঝাপটে ধরতেই অবাধ্য অবুঝ নয়ন বেয়ে নীর পরতে লাগলো বিরামহীন। জামিলুর রেজা হতাশ শ্বাস ফেলে হঠাৎই বললেন,

‘আমাকে মাফ করে দে মা।’

টিকলি অবাক চোখে তাকালো। বাবা আবার বললেন,

‘আমি ভুল করেছি। তুই এতো কষ্ট পাবি জানলে এসব করতাম না। আমি আর কখনো তোকে বিয়ের কথা বলবো না। বিয়ের প্রেসার দিবো না। তবুও কাদিস না মা।’

বাবার এ কথায় টিকলি বিস্ময় নিয়ে তাকালো। খানিক বাদে বুঝে আসলেই টিকলির বুক ফাটিয়ে কাদতে ইচ্ছে করলো। এক বিপদের উপর আরেক মুসিবত। একি হলো? উল্টো বুঝলো কেনো বাবা? টিকলি তো এখন বিয়ে করতে চায়। মুখ ফুটে তো এখন বলতেও পারবে না বাবা আমি একজনকে ভালোবাসি তার সাথে আমার বিয়ে দাও। এমনি ওদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ তারউপর বাবা উল্টো বুঝলো এরসাথে আদরের সাথে ঝগড়া ফ্রি। টিকলির চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করলো,

‘যখন বিয়ে করবো না বলেছি তখন বিয়ে বিয়ে করে লাফিয়েছো। এখন বিয়ে করতে চাই কিন্তু তার আগেই তোমরা বলে দিলে আমাকে আর বিয়ে নিয়ে প্রেসার দিবে না। এখন নিজের বিয়ের কথা কি নিজে মুখ ফুটে বলে বেহায়া পদবি লাভ করবো?’

_________________________________

ভোর সাড়ে পাঁচটা। সকালের প্রথম রোদ-আলোটা পর্দার ফাঁকফোঁকর গলিয়ে সাদা ঝকঝকে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। মিষ্টি সরু রশ্মির বিচরণ সারা ঘরময়। আবহাওয়া দেখে বোধ করা যায় আজ বৃষ্টি নাও হতে পারে। তবে আষাঢ় মাস, এখান বৃষ্টি নিয়ে কোনো গ্যারান্টি দেওয়া যায়না। ফজরের নামাজ পড়ে চোখ লেগে আসতে না আসতেই টিকলির ফোনটা বিকট আওয়াজে চেঁচিয়ে উঠলো। আধো চোখ খুলে ফোনের দিকে তাকাতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো ‘বাদর ডাক্তার’ নাম। টিকলি ফোন কেটে দিয়ে উল্টো করে রাখলো। একটুপর আবারো বাজা শুরু করলো। নিজের মতোই কেটে গেলো। আবারো বিকট শব্দে বাজতেই ঘুমুঘুমু অবস্থায় বিরক্তি নিয়ে টায়রা মাথার পাশ থেকে কুশন ছুড়ে মারলো ফোনের উপর। যারপরনাই গলায় বলল,

‘ফোন এক আছাড় মাইরে ভাইঙ্গে ফেলমু এখন। ধরস না কে? তোর আশিক ফোন দিতে দিতে মইরে গেলো তো।’

টিকলি ততক্ষণে উঠে বসেছে। টায়রার দিকে তাকিয়ে রাগীস্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘আশিক আবার কি? ভাষা ঠিক হবো না তোর? বেয়াদব।’

ফোনটা আবার বাজতে শুরু করলো। আরো দু তিনবার বেজে বেজে কেটে যাওয়ার পরও ধরা হলোনা। তবুও ফোনের কোনো ক্লান্তি নেই। আবারো বেজে উঠলো। টিকলি অসহায় টলমলে চোখে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ব্যস্ত গলায় কেউ বলল,

‘আধ ঘন্টার মধ্যে নিচে নামুন উইথ ব্ল্যাক শাড়ি।’

টিকলি অবাক হলো। অতিমাত্রায় রাগ নিয়ে বলল,

‘ফোন কেনো দিয়েছেন?’

আদর ক্লান্ত গলা ঠেলে দিয়ে বলল, ‘প্লিজ টিকলি নামুন। আমি ভীষণ ক্লান্ত। সারারাত ঘুমাইনি।’

আদরের অসহায় গলা শুনে টিকলি থেমে গেলো। চোখের পাতা জোড়া ছলছল করে উঠলো। চোখ বন্ধ করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে রুদ্ধশ্বাসে বলল,

‘শাড়ি পড়তে পারবো না। আমি শাড়ি পড়তে জানিনা।’

ওপাশ থেকে আর শোনা হলোনা। ফোন কেটে দিলো। টিকলি হতাশ নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে বারান্দার সামনে থেকে রাস্তায় উঁকি দিলো। কিছুক্ষণ উঁকি ঝুঁকি দেওয়ার পরই কালো পাঞ্জাবিতে শ্যামলা রাগী মুখশ্রীতে দাড়িয়ে থাকা দেখা গেলো আদরকে। টিকলি নিষ্চ্ছল পায়ে হেটে টায়রার সামনে এসে টায়রাকে টেনে তুললো। টায়রা বিরক্তি নিয়ে উঠে বলল,

‘তোদের সমস্যা কি একটু বলবি? সবাই প্ল্যান করছোস যে আমাকে আজকে ঘুমাতে দিবিনা? একটু আগে তোর জামাই ফোন করে করে কানের বারোটা বাজালো সাথে ঘুমেরও। এখন আবার তুই শুরু করলি?’

আলমারি থেকে কালো রঙের একটা জামদানি বের করে টায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গুরুগম্ভীর মুখে টিকলি বলল,

‘তাড়াতাড়ি পড়ায় দে। দশ মিনিট সময়।’

শাড়িটা হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে বিস্ফোরিত চোখে দেখতে লাগলো টায়রা। এরপর খুব আহত গলায় বলল,

‘শেষমেষ কি তোদের পাবনায় এডমিট করতে হবো? এন্ড দ্যা ক্যাপশন ইজ, প্রেমে পাগল।’

টিকলি ভ্রু কুচকে তাকালো। টায়রা খানিক উচ্চস্বরে বলল,

‘এতো সকালে কালো শাড়ি পইড়ে কই যাবি?’

‘শোক পালন করতে। এখন তাড়াতাড়ি পড়ায় দে।’

‘আজকে কি? কোনো দিবস? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিন কি? নাকি গনহত্যার দিন নাকি একুশে মার্চ?’

‘তুই কি পড়াবি?’

‘পড়াইতাছি। কিন্তু বুঝলাম তোরা মানসিক প্রতিবন্ধী তাই এই ভোর বেলা শাড়ি টাড়ি পড়ে ঘুরতে যাইতাছোস কিন্তু আব্বু আম্মু জিগাইলে কি কমু?’

‘বলবি বান্ধবীরা মিলে আজকে প্ল্যান করছিলাম কালো শাড়ি পরে পিকনিক করতে যামু।’

‘কিন্তু আমি গেলাম না কে?’

‘তোর পেট খারাপ।’

‘আস্তাগফিরুল্লাহ! এখন যদি সত্যি সত্যি পেট খারাপ হয়ে আমার বাথরুমে দৌড়াইতে হয় তাইলে দেখিস তোরে কি করি?’

,

কড়া রোদ উঠে গিয়েছে। আকাশে সাদা আলোর ঝলকানি। তবুও বিরক্তহীন ক্লান্ত দেহে আদর গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কালো পাঞ্জাবির সাথে হাতে পড়া কালো ঘড়িটা এক ঝলক দেখতেই আবিষ্কার করলো ঘড়িতে ছটা বিশ বাজে। প্রায় এক ঘন্টা যাবত আদর এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শ্রান্ত নিরব নিধ্র চোখ দুটো নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাতেই দূরে আবিষ্কার করলো নির্জন রাস্তা পেরিয়ে কালো শাড়ির কুচি ধরে ব্যস্ত পায়ে হেটে আসছেন মহারানী। মহারানীর মাথায় বড় করে ঘোমটা দেওয়া। যার দু’পাশে দু’আঙ্গুল দিয়ে রাজকীয় ভাবে ধরে হেটে আসছেন তিনি। আদর তাকিয়ে থাকলো অন্তকাল পরিশ্রান্তের ন্যায় চোখের পলক না ফেলে। আস্তে আস্তে মহারানী কাছে চলে আসলো। আদরের অবচেতন হাত মহারানীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিলো। টিকলি ভ্রু কুচকে বলল,

‘গাড়ি কার?’

আদরের ঘোর কাটলো। বিপন্ন গলায় বলল,

‘অবশ্যই আমার।’

টিকলি আর উত্তর দিলো না। গাড়িতে না উঠেই বলল,

‘কি বলতে চান বলুন?’

‘কি বলতে চাই মানে? গাড়িতে উঠুন।’ আদর রাগী গলায় বলে।

‘কেনো উঠবো?’ চট করে মাথার আচঁল ফেলে দিয়ে চোখ কুচকে টিকলি বলল।

‘দেখুন টিকলি আমি প্রচন্ড টায়ার্ড। হসপিটাল থেকে ভোরে বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে পাঞ্জাবিটা পরে ওমনি বের হয়েছি। জেদ ধরবেন না প্লিজ।’

টিকলি জ্বলজ্বল চোখে চেয়ে নির্বাকে গাড়িয়ে উঠে বসলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদর গাড়িতে উঠে বসতেই টিকলি বলল,

‘এসেছেন কেনো? কাল রাতে যখন আসতে বললাম তখন তো আসেন নি।’

‘আমি ব্যস্ত ছিলাম টিকলি। আপনার বুঝতে হবে। আমার সমস্যাটা আপনি না বুঝলে আর কে বুঝবে?’

‘আমার বেলায় কেনো আপনার এতো সমস্যা, ডাক্তার?’

‘আপনি এতো অবুঝের মতো কথা বলছেন কেনো টিকলি?’

‘ঠিক আমি অবুঝ। তো, এই অবুঝের সাথে তো থাকা যায়না। আপনি বরং এক কাজ করুন। খুব বুঝমান কাউকে খুঁজে নিন।’

এই বলেই টিকলি দরজা খুলে নামতে ধরলো আদর তাড়াতাড়ি হাত চেপে ধরে টিকলিকে টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘সমস্যা কি হ্যাঁ? আপনার জন্য এই ভোরবেলা আমি না ঘুমিয়ে ছুটে এসেছি। আর আপনি তেজ দেখিয়েই যাচ্ছেন। ব্যস্ততা থাকলে কি আমার দোষ? ব্যস্ত থাকতে কি আমার খুব ভালো লাগে? আর অন্যকাউকে খুঁজে নিবো মানে কি? কালকেও এ কথা বলেছেন। এ কথা শুনেই তো আমি ফোন কেটে দিয়েছি। জানেন সারারাত একটা কাজেও আমার মন বসেনি। শুধু নিজের দিকটা ভাবেন। আমার উপর যে কতটা প্রেসার যায় তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই আপনার।’

আদর হাত ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিয়ে নিজের সিটে বসে চোখ বন্ধ করলো। নিজের হাত ধরে টিকলি বসে থাকলো। খুব আড়ালে কাজল রাঙা চোখ দুটো থেকে কয়েক ফোটা পানি পরে গেলো। চুড়ি গেথে ফর্সা হাত লাল হয়েও যাওয়া হলো। নিঃশব্দে থেকেই হঠাৎ ডুকরে কেদে উঠলো টিকলি। আদর চোখ খুলে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। এই মেয়েটার হয়েছে টা কি? আদর মেয়েটার মনের হাব-ভাব কিছুতেই ধরতেই পারছে না। এই একটু আগে তেজ দেখালো এখন আবার কান্না! কি মুশকিল! আদর ক্লান্ত গলায় বলল,

‘আপনি নাকি কাদেন না টিকলি তবে এখন কেনো কাদছেন? একটু বকাও কি সহ্য করা যায় না?’

টিকলি ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে অন্যদিকে ফিরে তাকালো। আদরকে মন দিয়ে দেওয়ার পর থেকেই তার সব নিয়ম উলোটপালোট হয়েছে। এখন অকারণেই সে বড্ড কাদে। তবে খুব গোপনে। সবার অগ্রচরে।

আদর হাত বাড়িয়ে টিকলির মাথাটা নিজের বুকের একপাশে রাখলো। টিকলির কান্নার বেগ বাড়লো। মানুষটার এই প্রথম এতো কাছের ছোঁয়া পেয়ে আবেগে অতিমাত্রায় আপ্লুত হয়ে গেলো। বোধ হলো, একটু বেশি করে ফেলেছে সে। বারকয়েক টিকলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে টিকলিকে শান্ত করতেই খুব নরম সুরে আদর বলল,

‘এবার বলুন তো, এতো হামকি-ধামকির কারন কি? কাল রাতে এতো জোরে চিতকারই বা করা হচ্ছিলো কেনো?’

টিকলি নাক টেনে টেনে বলল, ‘কাল রাতে আমাদের এক দূরের ফ্রেন্ড সুইসাইড করেছে।’

আদর ভ্রু কুচকে বলল, ‘তার সাথে এসবের সংযোগ কি?’

‘ও সুইসাইড করেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের জন্য। ওর বয়ফ্রেন্ডও একজন ডাক্তার। প্রথম কিছুদিন খুব ভালোভাবে রিলেশন টা চললেও একসময় ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে এড়িয়ে যেতে শুরু করলো। দেখা করতো না, ফোন দিতো না, ফোন রিসিভও করতো না। পরে জানা গেলো হসপিটালের কোনো এক নার্স এর সাথে ডাক্তারের প্রেম চলছে। খুব ভালোবেসেছিলো ছেলেটাকে। শোকে সুইসাইড করলো।’

আদর অবাক গলায় বলল, ‘মানে সিরিয়াসলি? তার মানে এরজন্যই আপনি কাল অজস্র বার আমাকে ফোন দিয়েছেন। ফোনে আমাকে না পেয়ে ভেবেছেন আমিও কোনো নার্স নিয়ে বিজি। এজন্যই এতো রাগারাগি?’

টিকলি কোনো উত্তর না দিয়ে আদরের বুক থেকে সরে এলো। মাথা নিচু করে বলল,

‘এখন আমি কি করবো?’

‘ওহ মাই গড। ভেবেছিলাম ম্যাচিউর মেয়ের প্রেমে পরেছি। বিন্দাস লাইফ। কোনো প্যারা নাই। কিন্তু আপনি তো দেখি…’

আদরের কথা শেষ হওয়ার আগেই গাল ফুলিয়ে টিকলি বলল, ‘তো যান, ম্যাচিউর মেয়ে খুঁজে নেন আমার কাছে কি?’

টিকলি আবারো নেমে যেতে ধরলেই আদর হাত চেপে ধরে রাগী গলায় বলল,

‘আপনি কি নতুন কাউকে পেয়েছেন? সত্যি করে বলুন? বারবার অন্যকাউকে খুঁজে নিতে বলছেন কেনো? আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে প্রচন্ড। ‘

টিকলি চোখ মুখ বিকৃত করে হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলল, ‘উফফ…ডাক্তার ব্যথা পাচ্ছি তো। একটু আগেও এখানেই ধরেছিলেন। চুড়ি গেথে গেছে।’

আদর হাত ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর ভারিক্কি মুখে বসে রইল। আড়চোখে তাকিয়ে টিকলি বলল,

‘কোথায় যাবো আমরা?’

গম্ভীর মুখেই উত্তর দিলো আদর, ‘যেখানে যেতে চাইবেন। সারাদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি। তবে রাতে ব্যস্ত থাকবো তখন আবার এইসব উল্টাপাল্টা ভেবে বসবেন না।’

‘সত্যি? চলুন তবে। আজ মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়াল দিবো আকাশে। তবে গাড়ি না নিয়ে রিক্সা নিলে ভালো হতো।’

‘এখানে রিক্সা নিলে কেউ দেখে চিনে ফেলার চান্স থাকতে পারে। পরে আপনার সমস্যা হবে যেহেতু এলাকা আপনার। সামনে কোথাও থেকে রিক্সা নিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে দিবোনি।’

‘ইশশ…এত্তো ভালো কেনো আপনি ডাক্তার?’

আদর হেসে দিয়ে বলল,

‘হুম। কাল রাতে এক মুহুর্তের জন্য এ কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম আমি।’

চলবে❤️

আজকেও বড় হয়নাই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here