#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
৩২.
সূর্য তখন আকাশের মাঝ বরাবর। দ্বিপ্রহরের কড়া উত্তাপ সাথে মনের কোলাহল। প্রসন্ন চোখ দুটি মাঝেমধ্যে চেয়ে দেখে আদরকে পরমুহূর্তেই মজার কোনো কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে অবিচ্ছেদ ঠোঁটে। তৃষ্ণায় ধুঁকছে গলা তবুও অন্যরকম প্রশান্তি শরীর জুড়ে। অল্প একটু চাওয়ার থেকে অধিক পাওয়ার সুখ অন্তরে। কালো রঙ মোড়ানো দেহ ভরপুর। শাড়িতে পা বেজে পড়ে প্রায় যেতে যেতেই রোদে ভিজে ক্লান্ত শরীরে প্রিয় মানুষটি ধরে ফেলার বারংবার অনুভূতির কাঁপন ধরানো। হাতের ভাঁজে হাত রেখে রিক্সা দিয়ে সারা ঢাকা শহর চষে বেড়ানো। প্রেম প্রেম ভাব ছড়িয়ে দেওয়া যে প্রেম করে নাই কবুও। এমনি কড়া উত্তাপের মধ্যাহ্নে টিকলি তৃষ্ণার্ত গলায় বলল,
‘পিপাসা পেয়েছে। খিদেও পেয়েছে। আপনি এমন কেনো ডাক্তার? এতো কিপ্টা! সেই ভোরে বেরিয়েছি অথচ এখনো খাওয়ার নাম নিলেন না।’
আদর স্মিত হেসে বলল,
‘এই যে এতো জায়গায় টাকা দিয়ে ঘুরালাম তবুও পেট ভরলো না? এখন এক্সট্রা টাকা খরচ করে আবার আলাদা খাওয়াতেও হবে?’
টিকলি অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘হোয়াট আ বিশাল কিপ্টা ইউ আর!’
আদর ঠোঁট প্রসারিত করে মাথা দুলিয়ে হেসে দিলো। টিকলি আদরের চুল ঠিক করে দিতেই টিকলির হাতের ভাঁজে হাত রাখলো আদর। পরমুহূর্তেই রিক্সার হুট উঠিয়ে দিয়ে বলল,
‘চলুন তবে, কিপ্টার আরেকটু কিপ্টামি দেখাই।’
টিকলি ফিসফিস করে বলল,
‘মানে? আর হুট উঠালেন কেনো ডাক্তার?’
‘রোদের তাপ দেখেন না? ভীষণ গরম! মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিলো।’
আদরও ফিসফিস করে টিকলির মতো করে বলল। ফিসফিস শব্দ বাধা পেয়ে বারংবার কানে এসে লাগতে থাকলো। বাতাসের দাপটে অস্ফুটে ফসফস ধ্বনি শুনা গেলো। শরীর শিহরিত হলো। সচেতন দৃষ্টিতে আদরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টিকলি বলল,
‘আপনার মতলব কি ডাক্তার? আর খিদে পেয়েছে বললাম না। কিপ্টামি বাদ দিয়ে কোনো রেসটুরেন্টের সামনে রিক্সা দাড় করান। ডাক্তার রা আসলেই কিপ্টা হয় টায়রা ঠিক বলে।’
আদর মাথা দুলিয়ে আবার হেসে বলল,
‘আপনাকে একটা রয়েল রেসটুরেন্টে নিয়ে যাই চলেন। আমার রয়েল রেসটুরেন্ট। আমার পকেটও বাঁচবে আপনার খাওয়াও হবে।’
,
দুপুরে খেতে বসেই জামিলুর রেজা প্রশ্ন ছুড়লেন টায়রার দিকে,
‘টিকলি কোথায় টায়রা?’
টায়রা কিছুক্ষণ তুতলিয়ে বলল, ‘পিকনিকে গেছে। কেনো মাকে বলেছিলাম তো।’
শায়লা আক্তার চোখ বড় বড় করে বললেন,
‘মিথ্যাবাদী। তুই কখন আমাকে বললি? দরজায় তো এ বেলা অবধি খিল দিয়ে বসেছিলি। ডাকলেও সাড়া দিসনি। সকালের খাবারটাও খাসনি। আর এখন শুনছি টিকলি পিকনিকে গেছে।’
ঢোক গিলে জোরপূর্বক হেসে টায়রা বলল, ‘ওহ বলেনি? ভুলে গিয়েছিলাম বোধহয়। ‘
জামিলুর রেজা চিন্তিত মুখে ভরাট গলায় বললেন,
‘পিকনিকে গেছে? কাদের সাথে? কখন গেছে?’
‘বান্ধবীদের সাথে। সকালে গেছে।’
‘এখনো ফিরলো না যে?’
‘একটা বান্ধবীর বাসায় পিকনিক করছে তো। ওদের সুন্দর বাগান বাড়ি আছে। সারাদিন ওখানেই থাকবে।’
‘তুমি যাওনি কেনো তাহলে?’
টায়রা ইতস্তত করে বলল, ‘ইয়ে মানে, আমার সকাল থেকে পেট খারাপ ছিলো। এর জন্যই তো সকাল থেকে দরজায় খিল দিয়ে বসেছিলাম।’
শেষের কথাটা খুব উৎফুল্লের সুরে বলল টায়রা।জামিলুর রেজা টায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
‘কি বলো? এখন ভালো আছো? খাবার-দাবার একটু মেইনটেইন করতে পারো না? ফাস্টফুড কমিয়ে খাও।’
‘আচ্ছা বাবা।’
‘এখন শরীর সুস্থ আছে তো? কয়বার বাথরুমে গিয়েছো? বেশি খারাপ শরীর?’
টায়রা বিরবির করলো, ‘খাওয়ার সময় এসব কি শুরু করলো আব্বু? বারবার এই কথা কেনো তুলতাছে? আল্লাহ জানে সত্যি সত্যি না আমার পেট খারাপ হয়ে যায়।’ চোখ মুখ কুচকে টায়রা উত্তর দিলো,
‘হুম। একদম সুস্থ আছি।’
‘তাহলে এখন যেহেতু সুস্থ আছো তাহলে তুমিও পিকনিকে চলে যাও। ঘুরে ফিরে বিকালেই এসে পরো দুই বোন মিলে।’
টায়রা অবাক হয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘অ্যা…???’
জামিলুর রেজা খাওয়া থামিয়ে অবাক গলায় বললেন,
‘হ্যাঁ, তুমি তো বললে তোমার কোনো এক বান্ধবীর বাসায় পিকনিক হচ্ছে তো যেহেতু সুস্থ আছো তাহলে বাসায় বসে থেকে শুধু শুধু ইঞ্জয় থেকে বঞ্চিত থাকবে কেনো? গো এন্ড ইঞ্জয় ইউর সেল্ফ।’
‘কিন্তু বাবা…’
শায়লা আক্তার টায়রাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ফুস করে বলে উঠলেন,
‘ঠিক ই তো বলেছে তোর বাবা। তোরা দু বোন তো দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারিস না। ওদিকে টিকলিরও বোধ হয় খারাপ লাগছে তোকে ছাড়া। এদিকে তোরও বরিং লাগবে সারাদিন ঘরে একা একা। তার চেয়ে দু বোন একসাথে থাকলে আমরাও একটু নিশ্চিন্ত থাকবো আর তোদেরও ভালো লাগবে। আর এসব পিকনিক টিকনিক তো এখনি করবি কিছুদিন পর যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন তো এসবের জন্য হা-হুতাশ করে মরে গেলোও আর পাবিনা।’
টায়রা আবারো কিছু বলতে গেলে জামিলুর রেজা থামিয়ে দিয়ে সন্দেহপ্রবন দৃষ্টিতে বললেন,
‘কি ব্যাপার বলো তো? তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো? এমনিতে দু বোন দুজনকে ছাড়া এক মিনিট থাকতে পারো না আর এখন জোর করে পাঠানো যাচ্ছে না। তোমার বান্ধবীর বাসা চিনো নিশ্চয়ই? না চিনলে টিকলিকে ফোন করে ঠিকানা নিয়ে নাও। আমি গিয়ে তোমাকে দিয়ে আসি।’
‘না। না। না বাবা আমি একাই যেতে পারবো। আমি…আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।’
,
খয়েরী রঙের গেটের সামনে রিক্সাটা থামতেই নেইম-প্লেট এ দেখা গেলো বাড়ির নাম ‘খান ভিলা’। টিকলি অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ভ্রু কুচকে পুরো তিন তলা বাড়ির এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যবেক্ষণ করে বলল,
‘এটা কার বাড়ি, ডাক্তার?’
রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে আদর ছোট করে জবাব দিলো,
‘আমার।’
চোখ কপালে তুলে টিকলি উচ্চস্বরে বলল,
‘কি??’
গেট দিয়ে প্রবেশ করতে করতে আদর জবাব দিলো,
‘হুম। আসুন।’
গেটের ভেতর প্রবেশ করেও টিকলিকে আসতে না দেখে আদর আবার পেছন ফিরলো।
‘কি হলো আসুন।’
ভীতি গলায় টিকল বলল, ‘আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন ডাক্তার? আপনার বাড়িতে যাবো মানে? আপনার বাড়িতে গেলেই তো আপনার বাবা-মা আমাকে চিনে ফেলবে।’
‘কিভাবে চিনবে?’
‘আপনি পাগল হয়ে গেলেন নাকি? আমাদের বিয়ের কথাবার্তা যখন চলছিলো তখন দু পক্ষের ছবি দেওয়া নেওয়া হয়েছিলো না? আমরাই না মূর্খের মতো কেউ কারোর ছবি দেখিনি।’
‘আরে কিচ্ছু হবে না আসুন।’
টিকলির হাত ধরে জোরে টেনে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো।
দরজা খুলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়লো বসার ঘর। বসার ঘরে দেখা গেলো, এক বাটি ভর্তি পপকর্ন হাতে টিভি দেখছে আর্দ্র তার পাশেই বসে আছে নিভা। আদর চমকে তাকালো। টিকলি বিস্ময়, অবাকতার সাথে ভয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন দশা। চোখগুলো হয়ে উঠেছে রসোগোল্লার ন্যায় বড় বড়। এদিকে আর্দ্ররও হাত থেকে পপকর্নের বাটি পরে যাওয়ার জোগাড়। মুখটাকে কিঞ্চিৎ হা করে সে সম্মুখে চেয়ে রইল। নিভা টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে মাথা ঘুরিয়ে টিকলিকে দেখেই থতমত খেয়ে গেলো। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল চোখ বড় বড় করে।
ঘরে চারটি মানুষ একেক জনকে দেখে চাররকম চমকিত নয়নে তাকিয়ে আছে। চমকিত হৃদয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হিসাব মেলানোর চেষ্টা করলে বারংবার গড়মিল বেধে যাচ্ছে। এদিকে টিকলি দুরুদুরু ভীতু মন সাথে অবাক প্রসন্ন চোখে তাকিয়েই দেখলো সামনের সুদূর ভবিষ্যত। যে ভবিষ্যতে বাধন ছিড়ে যাচ্ছে ওর আর আদরের। টিকলির আত্মা লাফিয়ে উঠলো। আদর স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে নিভার উদ্দেশ্যে বলল,
‘তুমি??’
নিভাও একই সুরে প্রশ্ন করলো, ‘তুই?’
সাথে আর্দ্রও বলল, ‘টিকলি?’
এদের মাঝে থতমত খেয়ে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে রইল টিকলি। এসব কি হচ্ছে? টিকলি ফিসফিস করে বলল,
‘নিভা এখানে কেনো ডাক্তার?’
আদর ফিসফিস করে জবাব দিলো, ‘নিভা আমার খালাতো বোন।’
‘আপনার বাবা-মা?’
‘টেনশন করবেন না বাড়িতে বাবা-মা নেই।’
টিকলি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে তাকালো। নিভা চিতকার করে বলল,
‘এই তোরা ফিসফিস করস কেন? কাহিনী কি?’
আদর তিনগুন অবাক গলায় বলল, ‘নিভা? আমাকে তুই বললা?’
‘তোমাকে বলি নাই ভাইয়া। টিকলিকে বলছি।’
‘তুমি উনাকে চিনো কীভাবে?’
‘আমার বেস্টফ্রেন্ড আর আমি চিনবো না?’
আদর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে টিকলির দিকে তাকালো। টিকলি মাথা নাড়ালো। আর্দ্র বাহবা দিয়ে বলল, ‘বাহ! ভাইয়া ইউ আর ভেরি ফাস্ট। তো, কেমন আছো টিকলি?’
টিকলি মাথা নাড়িয়ে অনেক কষ্টে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বলল, ‘ভালো। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?’
‘আহ দিলে বড় ব্যথা লাগে গো। ভাবী হবা। আপনি ডেকো না প্লিজ। ভাইয়া ডাকো তাতেই বুক খানখান হয়ে যায়।’
টিকলি লজ্জায় রাঙা হলো। আদর শুকনো কাশি দিয়ে উপরে যেতে যেতে বলল, ‘ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
টিকলি গিয়ে নিভার পাশে বসতেই দেখলো নিভা তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এখনি গিলে খাবে। টিকলি কিছুই হয়নি এমন গলায় বলল,
‘হোয়াট? গরুর মতোন তাকায় আছোস কেন?’
‘তুই যে আমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করতাছোস এটা আমারে বলছিলি?’
‘এটা যে তোর ভাই তুই আমারে বলছিলি?’
নিভা গালে হাত দিয়ে বসে বলল, ‘কেমনে মামা? আমার এই ভাইরে তুই পটাইলি কেমনে?’
টিকলি ভাব ধরা গলায় বলল, ‘তোমার ভাই ই আমারে পটায়ছে বুঝছো?’
‘বিশ্বাসযোগ্য না।’
‘না করলি বিশ্বাস। যাই হোক, আন্টি আংকেল কই গেছে?’
‘খালামনি, খালু, আমার আব্বু আম্মু সবাই মিলে নানুবাড়ি গেছে। নানার কি জানি জমি সংক্রান্ত ঝামেলা হইছে। বুঝোস না মামা না থাকলে যা হয়। আর তাই আমি এইখানে।’
‘কখন আসছোস?’
‘দু-তিন ঘন্টা তো হলোই।’
‘ওহ।’
টিকলিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে নিভা বলল,
‘বাব্বাহ! শাড়িও পড়ছোস আবার? জীবনেও তো শাড়ি পড়তে দেখলাম না।’
‘আজকেই ফার্স্ট পড়ছি। ছয়বার উষ্ঠাও খাওয়া হইছে।’
টিকলি নিভার কথোপকথনের মাঝেই ফোনটা বাজখাঁই শব্দে মেতে উঠলো। কালো রঙের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে টায়রার নাম্বার দেখেই ভ্রু কুচকালো। কল রিসিভ করে উদ্ধিগ্ন গলায় বলল,
‘কি রে কিছু হয়েছে? কোনো সমস্যা? আব্বু আম্মুকে সবকিছু ঠিক মতো বুঝায় বলছিলি?’
আর্দ্র টিভি দেখায় মগ্ন ছিলো এতোক্ষন। টিকলির কথার ধরন দেখেই বুঝে ফেলেছে মিস. চাপাবাজ ফোন দিয়েছে। কান খাড়া করে আর্দ্র শুনতে লাগলো। এর মাঝেই নিভা হাত বাড়িয়ে ফোনের লাউডস্পিকার অন করে দিলো। ওপাশ থেকে টায়রা তখন বলল,
‘রাখ তোর বালের ঢং। আমার মেজাজ হাই লেভেলে গরম আছে।’
আর্দ্রর গলায় পপকর্ন আটকে কাশি উঠে গেলো। টিকলি লাউডস্পিকার অফ করতেই নিভা আবার অন করে দিলো। টিকলি মিনমিন করে বলল, ‘কি হয়েছে?’
টায়রা কাদো কাদো গলায় বলল,
‘সকাল থেকে খাই নাই। দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম। কাউকে জানাই নাই তুই বাসায় নাই। কিন্তু দুপুর একটা বাজতেই পেটে ইঁদূর দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। কোনোমতে আধঘন্টা নিজেকে কন্ট্রোল করার পর ঘর থেকে বের হয়ে দেখি বাবা খাবার নিয়ে টেবিলে বসে আছে। আমি যেতেই তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি বললাম তুই পিকনিকে গেছিস সারাদিন থাকবি। সবকিছু বলা শেষ হতেই বাবা বলল তাহলে তুমিও যাও। টিকলি হয়তো বোর ফিল করছে আর তোমারও নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে বান্ধবীরা সবাই মজা করবে আর তুমি এখানে বসে থাকবে?’
‘কেনো? তুই বলস নাই তোর পেট খারাপ?’
‘বলছি তো। এটাও বলছি পেট খারাপ ভালো হয়ে গেছে।’
এ পর্যায়ে আর্দ্র নিভা ফিক করে হেসে দিলো। টিকলি নিভার দিকে কটমট করে তাকিয়ে ফোনের লাউডস্পিকার অফ করে দিয়ে বিরবির করে বলল, ‘মাথামোটা।’
তখনি টায়রা চেঁচিয়ে বলল, ‘ওই তুই আমারে কি বললি? আর হাসলো কেরা? নিশ্চয়ই তোর জামাই? একবার হাতের কাছে পাই। ওই শালার লাইগে আজকে আমার এই দূর্দশা। এ্যাহ..রাত পোহাতে না পোহাতেই বউয়ের রাগ ভাঙাতে চলে আসছে সাথে আমার কপালে শনি লিখে নিয়ে আসছে।’
টিকলি কড়া কণ্ঠে বলল,
‘থাপ্পড় লাগাবো একটা।’
‘হ তুমি তো লাগাবাই। এখন আমি কি করবো সেটা বলো। এই ভর দুপুরে কই যাবো?’
টিকলিও অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘আমি তো জানি না। কি করবি এখন?’
টায়রা কেদে দিবে এমন গলায় বলল, ‘আল্লাহ আমার মরণ নেয় না কেন? এতো বেকুব বোন আল্লাহ আমার কপালেই জুটায়ছিলো। সলিউশন বের করার বদলে উলটে আমাকে জিজ্ঞেস করে।’
সিড়ি দিয়ে নামছিলো আদর। বাড়িটা তিনতলা হলেও এই বাড়িতে দুটো সিড়ি। একতলা দুতলা মিলে ড্রইংরুমের মাঝখান দিয়ে সিড়ি। আর গেট থেকে তিনতলা পর্যন্ত আরেকটা সিড়ি। আদর সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করলো,
‘কি হয়েছে টিকলি?’
টিকলি ফোন হাতে নিয়ে সংক্ষিপ্ত করে যতটুকু বলা যায় বলল। এরপর ফোন কানে নিয়ে টায়রাকে বলল,
‘এক কাজ কর পার্কে চলে যা।’
টায়রা ফুসে বলল, ‘আমার ছোট হইলে ঠাডায়ে একটা চর মারতাম। ভর দুপুরে পার্কে যায়ে রোদ্রের মধ্যে মুড়ি খামু?’
‘ওহ তাও তো কথা। তাইলে রেসটুরেন্টে যা। আর তা নাহলে ওয়েট কর আমি আসতাছি।’
আদর ভরাট কণ্ঠে বলল, ‘কোথাও যেতে হবে না। আপনি টায়রাকে এখানে আসতে বলুন। আর্দ্র গিয়ে নিয়ে আসবে। চিন্তা করবেন না। বাবা-মা রাত ছাড়া আসবে না।’
টিকলি মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘আমি চলে যাই না ডাক্তার?’
‘না। বিকেলে আমি দিয়ে আসবো।’
টিকলি মিনমিন করে বলল,
‘টায়রা তুই এ বাড়িতে আয়।’
‘কোন বাড়ি?’
‘উনার বাড়ি।’
‘কেনো?’
‘কারন আমি এখন ওখানেই।’
‘ওহ। কিন্তু আমি যাবো না।’
‘কেনো?’
‘কারন ওই ভাদ্র আছে।’
‘কিচ্ছু হবে না লক্ষী বোন আয়। কিছু হলে আমি আজ ভাইয়াকে বকা দিয়ে দিবো।’
টায়রা ভ্রু কুচকে বলল, ‘সত্যি?’
‘হুম। আয় নিভাও আছে।’
‘আচ্ছা।’
ফোন রাখতে গেলেই টায়রার মনে পরলো বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছে ও। যেদিন আর্দ্র এক্সিডেন্ট করলো সেদিন আর্দ্রকে ড্রপ করেছিলো। কিন্তু এখন খেয়াল নেই।
‘আমি তো বাড়ি চিনি না।’
টিকলি বলল, ‘আর্দ্র ভাইয়া গিয়ে নিয়ে আসবে।’
আর্দ্র বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে এক বাক্যে চিল্লিয়ে বলল, ‘না। কোনোদিন না।’
চলবে❤️
কাল গল্প নাও দিতে পারি।