#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
৪২.
কড়কড়ে রোদের উষ্ণতা পিঠে মেখে আদর ঘুমাচ্ছিলো। প্রচন্ড গরমে গায়ের টি শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলা হয়েছে বিছানার আরেক কোণায়। হঠাৎ উন্মুক্ত পিঠে কারোর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে আদরের পাতলা ঘুম ছুটে পালালো। মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই বিছানার পাশে মাকে বসে থাকতে দেখা গেলো। তার চোখ অবাকের সাগরে নিমজ্জিত। হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবে যাচ্ছে তার কিয়ং উপলব্ধি সম্পন্ন মস্তিষ্ক। মনোয়ারা খান বিস্ময়তার সাথেই প্রশ্ন করলেন,
‘কখন এলি বাবা?’
আদর ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জবাব দিলো, ‘রাতে।’
মনোয়ারা খান জোরপূর্বক হেসে বললেন, ‘হসপিটালে যাবি না?’
‘না। আজ ছুটি।’
মনোয়ারা খানের কপাল কুচকে গেলো। তিনি আর একটি প্রশ্নও করলেন না। চোখের সামনেই যেনো দেখতে পেলেন কিছু সময় পরের প্রলয়। নাম না জানা বিপদের গন্ধ পেলো মাতৃহৃদয়।
,
আজিম খান নাকের ডগায় চশমা ঝুলিয়ে সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। হাতে কড়া লিকারের এক কাপ চা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সামনে তাকাতেই তিনি বড় পুত্রকে আবিষ্কার করলেন। বড় পুত্রের ঠিক পেছন পেছন ভেজা বেড়ালের ন্যায় গুটিগুটি পায়ে হেটে আসছে তার ছোট পুত্র। আদর টেবিলের দিকে পা বাড়ালেই আজিম খান গম্ভীর সুরে বললেন,
‘দাড়াও।’
আদর দাঁড়িয়ে পরলো। আর্দ্র পা টিপে টিপে চলে যেতে নিলেই আজিম খান উচ্চকন্ঠে বললেন, ‘আমি দাঁড়াতে বলেছি। কথা কানে যায়নি?’
আর্দ্র তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। চায়ে আরেকবার চুমুক দিয়ে পত্রিকা ভাঁজ করলেন আজিম খান। ছেলেদের দিকে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আদরের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘কোথায় গিয়েছিলে? আজকাল কোথাও যাওয়ার আগে বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করো না নাকি?’
আদর উত্তর দেওয়ার আগেই আর্দ্র ফট করে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া তো হসপিটালে ছিলো। চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি।’
আজিম খান তেজস্বী দৃষ্টিতে আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ‘তুমিও গিয়েছিলে? হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে তোমারও বুঝি চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি ছিলো?’
আর্দ্র মাথা নিচু করে ফেলল। আদরের দিকে লুকিয়ে তাকাতেই আদর চোখ বন্ধ করে আশ্বস্ত করলো। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটু ঢাকা থেকে বাইরে গিয়েছিলাম।’
‘সেটা নিশ্চয়ই বলে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো?’
আদর নির্বিকার কন্ঠে বলল, ‘আমি ওখানে পৌঁছে মাকে ফোন করে বলেছিলাম।’
আজিম খান আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে বললেন, ‘তুই কেনো গিয়েছিলি?’
আর্দ্র মিনমিন করে বলল, ‘ভাইয়া গিয়েছিলো তাই।’
‘ভাইয়া যা করবে তাই করতে হবে? বাবা-মা কে বলার প্রয়োজন নেই?’
আর্দ্র মনোয়ারা খানের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। মনোয়ারা খান এসে ঝাড়ি দিয়ে বললেন, ‘ওর সাথে এমন করছো কেনো? বেচারা বাচ্চাটা আমার! আয় বাবা খেতে বস। ইশশ..একদিনে আমার দুই ছেলের মুখ শুকিয়ে গেছে।’
আজিম খান চোখ পাঁকিয়ে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বললেন, ‘এই অসভ্য মহিলার জন্যই আজ আমার মান-সম্মান সব জলে যাচ্ছে। এতো আদিখ্যেতা কিসের হ্যা? ছেলে কি তোমার একারই আছে?’
মনোয়ারা খান কোনো উচ্চবাচ্য না করে আর্দ্রকে নিয়ে টেবিলে বসালেন। আদর ভ্রু কুচকে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মান-সম্মান জলে যাচ্ছে?’
আজিম খান দাঁত কড়মড় করলেন। মনোয়ারা খান আদরকে জোর করে ধরে নিয়ে টেবিলে বসাতেই আদর আকস্মিক বলে বসলো, ‘বাবা আমি বিয়ে করতে চাই।’
আজিম খান আশ্চর্য হয়ে পরলেন যে এমন না। তবে মনোয়ারা খান আশ্চর্যের থেকেও আশ্চর্য হয়ে গেলেন। জামিলুর রেজা কল দেওয়ার পরেও তার মনে কিঞ্চিৎ আশা ছিলো যে ছেলে তার এমন কাজ করতে পারেনা। কিন্তু ছেলের এহেন ধারার কথা তো সব ভাবনা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আজিম খান ঠোঁট বাকিয়ে স্মিত হাসলেন। উপহাসের সুরে বললেন,
‘এতোদিন জোর করে বিয়ের পীড়িতে বসাতে পারলাম না আর আজ নিজে থেকে এসে নির্লজ্জের মতো বলছো, ‘বাবা আমি বিয়ে করবো’ ?’
আদর রুটির ছিড়ে মাংসের ঝোলে ভিজিয়ে খেতে খেতে উত্তর দিলো, ‘আগে মনের মানুষ পাইনি। এখন পেয়েছি।’
আজিম খান ছেলের বেহায়াপনা দেখে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলেন। বসার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে নিভা। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে একদম তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। এতো চিৎকার চেচাঁমেচির আওয়াজ শুনে সাথে আদর আর্দ্রকে এই সময় দেখে রীতিমতো তার আত্মা লাফিয়ে উঠলো। মনে পরে গেলো ঘুমের ঘোরে মুখ ফসকে বলে দেওয়া কথাটা। ‘ওদের তো দুইদিন থাকার কথা ছিলো’ কথাটা বিরবির করতেই শোনা গেলো আজিম খানের ঘোমট কন্ঠস্বর। লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে তিনিও জানতে চাইলেন,
‘কে সেই মনের মানুষ?’
আদর খানিক থামলো। কিছুক্ষণ পর আস্তে ধীরে রুটি ছিড়তে ছিড়তে জবাব দিলো,
‘জামিলুর রেজার মেয়ে টিকলি রেজা।’
চোখের পলকে উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে সাজানো সকল পরিকল্পনা। আদরের বলে দেওয়া কথাটা বসার ঘরে ব্লাস্ট হওয়ার মতো কানে লেগে গেলো সবার। আর্দ্র খাওয়া থামিয়ে ভাইয়ের দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিললো। মনোয়ারা বেগমের অক্ষিকোটর থেকে বলের ন্যায় কালো মনিওয়ালা চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম। বসার ঘরের দরজার সামনে থাকা নিভা চোখ মুখ কুচকে আরেকটা ব্লাস্ট হওয়ার অপেক্ষা করছে। মিনিট দুয়েক থমথমে নিরব পরিবেশ অতিক্রম করার পরই দ্বিতীয় ব্লাস্ট ঘটে গেলো। আজিম খান সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ভীষণ রকম রাগের শরনার্থী হয়ে কাপঁতে কাপঁতে বললেন,
‘কক্ষনো না। ওই মেয়েকে আমি কক্ষনো এই বাড়ির বউ হিসেবে মানবো না।’
আদরও খাওয়া ছেড়ে উঠে পরলো। বাবার দিকে তাকিয়ে অকপটে বলল, ‘কেনো মানবে না? দোষ কি? পনেরো দিনের প্রেগন্যান্ট এটাই দোষ? পনেরো দিন কেনো রেডিমেড বাচ্চাও যদি থাকে তবুও আমি টিকলিকেই বিয়ে করবো। নচেৎ আর কাউকেই নয়।’
আজিম খান তাজ্জব বনে গেলেন। চমকে যাওয়া চোখ দুটো নিয়ে ছেলের পানে তাকিয়ে থাকার কালেই ছেলে তার আরো একটি চমকপ্রদ কথা বলল,
‘এই যুগে এসে এখনো কীভাবে অশিক্ষিতদের মতো আচরণ করতে পারো তোমরা? পনেরো দিনের কেউ প্রেগন্যান্ট হয়?’
নিদারুণ অবাকতায় ঘেরা চোখদুটো নিয়ে আজিম খান বলে উঠলেন,
‘মেয়েটার যদি কোনো দোষ নাও থাকে তবুও মেয়েটাকে এই বাড়ির বউ করে আনবো না। ওরকম অভদ্র বাপের বেটিকে এই বাড়ির বউ করার চিন্তা আমি জীবনেও করি না। তাতে যদি তুমি সারাজীবন বিয়ে না করো তাতে আমার কোনো আপসোস নেই। আমার ছোট ছেলে আছে। এক ছেলেকে বিয়ে না করালে আমার দুঃখ হবে না।’
আদর কাধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, তাহলে তোমার ছোট ছেলেকেই বিয়ে করাও। আমি করলাম না বিয়ে তো কি হবে? আমার দিন চলবে না নাকি?’
প্রচন্ড রাগ নিয়ে আদর চলে গেলো। বাপ-ভাইয়ের কথা শুনে গলায় খাবার আটকে গেলো আর্দ্রের। হেচকি তুলে সে আদরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
‘লে হালুয়া হয়ে যাচ্ছে আমার বাল্যবিয়া। আবার আমাকে নিয়ে কেনো টানাটানি? সবসময় মাঝখান থেকে আমি ফাসাদে পড়ি। ধুর ভাল্লাগে না!’
আর্দ্র কাদো কাদো মুখ করে খাবার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। মনোয়ারা খান স্তব্ধ হয়ে রোবটের ন্যায় শুধু সবকিছু অবলোকন করে গেলেন। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না।
_____________________________
খাওয়ার পাট চুকিয়েই নিভা ছাদে ছুটলো। বুকে হাজারো বাসনা। শেষবেলায় দেখে যাওয়ার অসীম প্রয়াস। ছাদে যাওয়ার আগেই পাড় করতে হয় ব্যাচেলর বাসার দরজা। নিভা সেখানেই থমকে দাড়ালো। একবার ভাবলো, ছাদে গিয়ে লাভ কি এসময় তো রাহুল ছাদে থাকে না। আরেকবার ভাবলো, দরজায় নক করি। পরক্ষণেই ভেতর থেকে মনটা ছি ছি করে বলল,
‘ব্যাচেলর বাসায় নক করবি? ছি ছি! নিভা তোর এতো অধঃপতন?’
নিভার মন খারাপ হয়ে গেলো। ঘোমট মুখে চলে আসতে নিলেই একটা কাজ করে বসলো সে। দরজায় হালকা টোকা দিয়ে দৌড়ে উপরের সিড়িতে উঠে গেলো। খানিক বাদে দরজা খোলার শব্দ হলো। নিভা উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলো, পেট অবধি গেঞ্জি উঠিয়ে পড়নের লুঙ্গি গিট্টু দিচ্ছে নয়ন। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিভা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। কাউকে না দেখে বিরক্ত হয়ে একটা গালি দিয়ে নয়ন বলল,
‘কোন শালায় দরজায় এম্নে নক কইরে যায় গা?’
‘আমি শালায়।’
নিভা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল। নয়নের চক্ষু চড়কগাছ। নিভা বলতে ধরলো ‘ভাইয়া..’ তার আগেই মুখের সামনে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলো সে। কিছুক্ষণ শূন্যে আহাম্মক এর মতো চেয়ে থাকলো নিভা। প্রচন্ড বিস্ময়ে বাকি দুটো সিড়ি পার করে দরজার সামনে গিয়ে আবারো আস্তে করে টোকা দিলো। খানিক বাদে নয়ন এসে দরজা খুলে হিহি করে একটা হাসি দিলো। পড়নে তার এখন লুঙ্গির বদলে প্যান্ট এসেছে। নিভা পিটপিট করে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে দিলো। নয়ন খুব ভাব মেরে ভ্রু নাচিঁয়ে বলল,
‘কি ম্যাডাম? পিপড়ার বাড়িতে যে হাত্তির পারা।’
নিভা ছোট ছোট চোখ করে চেয়ে নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, ‘ইনডিরেক্টলি হাতি ডাকছেন আমায়?’
নয়ন কানের লতি ধরে তওবা পড়ে বলল,
‘নাউজুবিল্লাহ! কিসব ছি মার্কা কথা বলেন? আরে হাত্তি তো আমি আপনি তো পিপড়া।’
‘আপনি আমাকে পিপড়া বললেন নয়ন ভাই?’ নিভা চোখ বড় বড় করে বলল।
নয়নের মুখভঙ্গি পাল্টে গেলো। প্রচন্ড রকম আহত দৃষ্টি নিয়ে বলল, ‘আমি কোনদিকে যাই?’
‘কোনোদিকে যেতে হবে না। একটু রাহুলকে ডেকে দেন তো নয়ন ভাই।’
নয়ন চোখ কপালে তুলে টেনে টেনে বলল, ‘রাহুল…রাহুল আর আমি নয়ন ভাই…..।’
নিভা থতমত খেলো। তোতলানোর স্বরে বলল, ‘ওই…ওই একই কথা। আরে ডেকে দেন না ভাই।’
‘ভাই ডাকবেন না প্লিজ। কচি কচি মাইয়াগুলা ভাই ডাকলে কলিজায় লাগে।’
নিভা চোখ পাঁকিয়ে তাকিয়ে বলল, ‘আপনি কি ডেকে দিবেন?’
নয়ন দরজা ধরে হেলে দাড়ালো, ‘থাকলে তো ডেকে দিবো।’
‘মানে? কোথায় গিয়েছে?’
‘ছাদে।’
নিভা বোকা বনে গেলো। ভ্রু কুচকে মিনিট কয়েক তাকিয়েই দৌড় লাগালো ছাদের দিকে। ইশশ…এতো কথা না বাড়িয়ে আগে ছাদে দেখলেই হয়ে যেতো।
,
তখন সকাল দশটা। রৌদ্রময় দিনের সাথে সুমধুর ঠাণ্ডা বাতাস। ছাদের পাটাতন হয়ে আছে ভয়াবহ গরম। ছাদঘরের টিনে ঢাকা চালে ঝিলিক দিয়ে উঠছে তীব্র রোদ। এতো রোদের ঝলকানিতে তাকিয়ে থাকা দায়। আকাশ পরিষ্কার। নীল গা জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে টুকরো টুকরো সাদা মেঘনাদ। রাহুল পেছন থেকে গলা পরিষ্কারের শব্দ শুনতে পেলো। সাথে সাথে হাতের সিগারেট টা নিভিয়ে ফেলে দিলো দূরে কোথাও। পুরোটা দেখে নিভার বুক চিরে বেরিয়ে এলো তীব্র হতাশ নিঃশ্বাস সাথে বেরুলো তীব্র জ্বালা। অবাধ্য নির্লজ্জ মনটা বারংবার বলে উঠলো,
‘এই অসহায় মানুষটা ভালোবাসে কাউকে। এই দুঃখী চোখগুলো কারোর জন্য বছরের পর বছর স্বপ্ন বুনেছে। এই নিঃসহায় মানুষটা অনেকগুলো বছর পার করে দিয়েছে কারোর পথ চেয়ে।’
নিভার চোখদুটো টলমল করে উঠলো। কেনো যে এই কথাগুলো ভাবলেই তার চোখ জ্বলে, প্রাণ পুড়ে, হৃদয় জ্বলসে বুঝতে পারে না! মানুষ যা চায় প্রকৃতি তা দেয় না বরং যেই জিনিসটার একজন দাবিদার থাকেই সেই জিনিসটার অন্য আরেকজনেরও দাবি থাকতে হবে। এক মানুষকে নিয়ে কেনো এতো কাড়াকাড়ি? ভাবতে ভাবতেই নিভার হঠাৎ মনে হলো,
‘কেনো আমাকে নিয়ে কারোর দাবি নেই? অথচ টিকলিকে নিয়ে মরণজনিত অশৌচ দাবিদার দুজন ব্যক্তির।’
ভাবনার ভাটা পরলো তুড়ি বাজিয়ে রাহুলের কথায়, ‘ও হ্যালো মিস? কোথায় হারিয়ে গেছেন?’
নিভা সম্ভিত ফিরে অস্বাভাবিক ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘কোত্থাও না। আপনি এ সময় এখানে?’
রাহুল রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ভাবলাম আপনি চলে যাবেন তাই দেখা করে যাই।’
নিভা অদ্ভুত চোখে তাকালো। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল, ‘আমার জন্য ছাদে এসেছেন?’
‘জি। আপনি কাল বললেন না? আপনি সকালে চলে যাবেন। তাই এসে দাঁড়িয়ে আছি।’
‘কতক্ষণ থেকে?’
‘সাড়ে আট টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’
নিভা অবাক হলো। হঠাৎই সমস্ত গ্লানি হিংসে কষ্ট দূর হয়ে গেলো। মূর্ছা গেলো এতোক্ষণের ভাবনীয় সমস্ত কষ্টকর বাণী। কেবল মনেতে বয়ে গেলো অপার্থিব মেঘের সুর। যেই সুর বাজে না কবু কোথাও। বাজে শুধু সেথা, যেথায় শুধু নিভার অন্তরের অন্তঃস্থল।
‘কখন চলে যাবেন? একা যাবেন?’
‘এইতো আর কিছুক্ষণ পরই। আর্দ্র ভাইয়া রেখে আসবে।’
এরপর চুপ থাকা হলো। কিছুক্ষণ মুহুর্ত পার হলো শীতল হাওয়ায় উত্তাপ রোদে। রাহুল আচম্বিতে বলল,
‘আমার কথা বলার বন্ধু-সঙ্গীটা চলে যাচ্ছে। আমি আবার একা হয়ে যাবো। থেকে যান না? আমার সময় কাটবে না।’
এই মৃদু আর্তনাদ জনিত কথাগুলোয় নিভার গাল বেয়ে টুপ করে পানি পরে গেলো তপ্ত ছাদে। ‘কেউ তাকে বন্ধু ভেবে হলেও কাছে চায়। কথা বলতে হলেও সারাক্ষণ চায়।’ ভেবেই মন প্রমোদন হৃষ্টতায় তুষ্ট হলো। পুলকিত স্ফুর্তিতে চোখ দুটো তৃপ্ত হলো। সহসা মলিনরুপে পরম যত্নে হেসে উঠলো শুকনো ঠোঁটদুটো। ছাদের একপাশের রৌদ্রস্নাত হাসনাহেনা গাছটা তখনও ঝরাচ্ছিল ফুল। বাতাসে ছড়াচ্ছিলো মিষ্টি সুগন্ধ!
চলবে❤️