#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১৪
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
শ্রান্ত,পরিশ্রান্ত দেহে বাসায় ফিরে আজরাহান।কারো সাথে কোনোরকম উচ্চবাক্য না করে নিজের ঘরে চলে যায়।বাড়ির কেউ আর তার সাথে সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলার সাহস করেনি।নির্দিষ্ট সময়ে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিজের ঘরে চলে যায় আজরাহান।
ঘড়ির কাটা এগারো ছুই ছুই।বাসার সবাই প্রায় নিদ্রাচ্ছন্ন।টিক টক শব্দ করে ধেয়ে চলছে সময়।উত্তরের জানালা দিয়ে হুর হুর করে পর্দা উড়িয়ে ভেতরে ঢুকছে শীতল পবন।
পায়ে স্লিপার,পড়নে একটা ব্ল্যাক ট্রাউজার আর গায়ে সেন্টু গেঞ্জি জড়িয়ে ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারী করছে আজরাহান।বিকেলে করা তার প্রহর এর প্রতি এগ্রেসিভনেস তাকে ভাবাচ্ছে।দরজা খুলে শান্ত পায়ে নিচে আসে আজরাহান।সিড়ি বেয়ে উঠতেই ডানদিকে আজরাহান এর ঘর।ওর ঘরের পাশেই ছোট্ট একটা গেস্ট রুম।তার পাশেই লম্বা চওড়া করিডোর।করিডোর অভিমুখী দুটো পাশাপাশি ঘর।যার একটা সামান এর অন্যটা সানায়ার।
সিড়ির বামপাশে রান্না ঘরের পাশেই প্রহর এর ঘর।আজরাহান নরম পায়ে রান্না ঘরের চৌকাঠ পেরোয়।ট্যাপ ছেড়ে কিছু একটা ধুয়ে চলছে প্রহর।আজরাহান কে দেখে প্রহর কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।শান্ত কন্ঠে আজরাহান বলল—
“তোর কাজ শেষ??
“উহু।”
“তাহলে কাজ শেষ করে আমার ঘরে আয়।”
“আপনি যান আমি আসছি।”
আজরাহান ঘুরে রান্না ঘরের দরজায় আসতেই প্রহর নম্র সুরে ডেকে বলল–
“রাহান ভাইয়া!!
“কিছু বলবি??
“কফি খাবেন??
আজরাহান অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল–
“নিয়ে আয়।”
প্রায় পনেরো মিনিট পর প্রহর কফি নিয়ে আজরাহান এর ঘরে আসে।আজরাহান স্বাভাবিক ভাবে বলল–
“ওটা টেবিলের উপর রাখ।”
“খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
“তুই রাখ।বস এখানে।”
আজরাহান প্রহর এর হাত ধরে বিছানার পাশে কাউচে বসায়।প্রহর এর দিকে মুখ করে ওর পাশেই বসে।
আজরাহান ক্ষীন কন্ঠে বলল—
“এখনো রেগে আছিস আমার উপর??
প্রহর সোজা বলল–
“নাহ।”
“সরি রে।
আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।”
“ইটস ওকে।”
“বস এখানে আমি আসছি।”
আজরাহান উঠে গিয়ে ওর কাবার্ড থেকে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আসে।প্রহর এর সামনে গিয়ে ওর হাতে দেয়।প্রহর উৎসুক দৃষ্টিতে উঠে দাড়ায়।আর বলল–
“কী এইটা??
“খুলে দেখ।”
প্রহর শপিং ব্যাগ টা বিছানার উপর রেখে তার ভিতরের জিনিস গুলো এক এক করে বের করে।একটা বাসন্তি রঙের গাউন সাথে চুড়ি,দুল ইত্যাদি।প্রহর আজরাহান এর দিকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল—
“এইসব কেনো??
“কাল হলুদে তুই এইটাই পড়বি।”
“এইটা পড়বো কেনো!!কাল তো সবাই শাড়ি পড়বে।আর ছেলেরা পাঞ্জাবী।”
আজরাহান ভারী কন্ঠে বলল–
“তুই শাড়ি পড়বি না।তুই আমার দেওয়া ড্রেসটাই পড়বি।”
“কেনো??
“শাড়ি সামলানোর যোগ্যতা এখনো হয়নি তোর।”
প্রহর হালকা হেসে বলল–
“শাড়ি সামলানোর যোগ্যতা নেই আর সেই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেলেন।”
আজরাহান এক টান দিয়ে প্রহর কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।পিঠে ছড়ানো চুল গুলো বাম হাত দিয়ে এক পাশে নিয়ে নেয়।প্রহর নিরুত্তাপ।মিশে আছে আজরাহান এর বুকে।নাকের ডগা গেথে রেখেছে আজরাহান বুকের মাঝখানে।টেনে নিচ্ছে নিঃশ্বাস।এক অদ্ভুত সুগন্ধ।
আজরাহান ওর ডান হাত দিয়ে প্রহর এর জামার গলাটা ওর কাঁধ থেকে টেনে একটু নিচে নামিয়ে নেয়।নিজের জাম রঙের ঠোঁট দুটো ছুইয়ে দেয় সেখানে।প্রহর এর দেহপিঞ্জর থেকে গোলাপের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে আজরাহান নসিকাগ্রন্থিতে।সম্মোহিত আজরাহান তার অধর নিয়ে আসে প্রহর ঠিক কানের নিচে।ফিসফিসিয়ে বলল—
তোমার জন্য কাঁপছে কেন মন,
কাঁদছে কেন শূন্য চোখের কোণ?
তোমার জন্য বুকের গহীন জুড়ে,
আমার সময় নিঃশব্দ,নির্জন।
—-সাদাত হোসাইন
প্রহর পাখির বাচ্চার মতো নিজেকে ঘুজে দেয় আজরাহান এর বিশাল বক্ষদেশে।আজরাহান তার দু বাহুতে আরো আড়ষ্ট করে নেয় প্রহর কে নিজের সাথে।যেনো দুজনের হৃদকম্পন এক সরল রেখায় চলছে।
,
,
,
সকাল হতেই বেশ ভীড় ভাট্টা আজরাহানদের বাড়িতে।আজ থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু।আজ হলুদ সন্ধ্যা।এর একদিন বাদে বিয়ে তারপর দুই দিন গ্যাপ দিয়ে বৌভাত।অনেকদিন পর এই বাড়িতে এতো বড় একটা আয়োজন হচ্ছে।তাই বাড়ির কেউই চায় না এই আনন্দঘন মুহুর্তও অতি স্বল্প সময়ে শেষ হয়ে যাক।তাই সপ্তাহজুড়ে চলবে বিভিন্ন প্রোগ্রাম।
হলুদের জন্য যে স্টেজ সাজানোর কথা তা প্রথমে ছাদে করার কথা ছিলো।কিন্তু আজরাহান বাড়ন করায় তা বাড়ির বাগানের পাশেই বিশাল খোলা যায়গায় করা হয়েছে।বিয়ে বাড়িতে অনেক গেস্ট আসবে।তার সাথে অনেক ছোট বাচ্চারাও থাকে।কখন কী হয়ে যায়।তাই এই ব্যবস্থা।শশব্যস্ত হয়ে সব কাজ সারছে আজরাহান।খাবার এর দায়িত্ব নিয়েছে সানোয়ার আহমেদ।আর তার সহকারী তার অর্ধাঙ্গীনি।ডেকোরেশন এর কাজ আজরাহান আর আশফিক এর।মেয়েলী যত বিষয় আছে তার দায়িত্ব সানায়ার।ভোরের সূর্য চোখ মেলতেই আজরাহান এর ছোট চাচা আর চাচি চলে আসে ওদের বাড়িতে।রমরমা পুরো বাড়ি মানুষে।কাছে পিঠের আত্নীয় স্বজনরাও চলে এসেছে।
কিন্তু সবকিছুর মধ্যে নার্ভাস হয়ে আছে সামান।ত্রিশ বছরের বলিষ্ট,সুদর্শন যুবক সে।যে কোন মানুষের সাথে তার ব্যবহার অমায়িক।কিন্তু মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে সে বড় কাঁচা ঠিক আজরাহান এর বিপরীত।তার মনে আশঙ্কা একজন নতুন মানুষ আসবে।সে তাকে তার মতো করে মেনে নিতে পারবে কী না!!
তার পরিবারের সাথে মানিয়ে চলতে পারবে কি না!!
আর সবচেয়ে ভয়ের বিষয় একটা মেয়ে তার সবকিছু ছেড়ে এক অন্য জগতে কী করে নিজেকে সামলে নিবে।নতুন মানুষগুলোকে কীভাবে নিজের জীবনে জায়গা দিবে!!
নন্দিতার সাথে সামান এর বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে।মেয়েটার হাসিতে এক অদ্ভুত মায়া।যতবারই ও ওই হাসি দেখে ততবারই ওর কাছে নন্দিতাকে নতুন মনে হয়।নিজেকে ঘর বন্দি করে এইসবই ভাবছে সামান।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।মারশিয়াদ,শিহরণ,নির্ধা,ইনশিরাহ ওরা সবাই বিকেলেই এসে পৌছেছে।যতই মনোমালিন্য থাকুক চার বন্ধুর এক জীবন এক প্রান।ওদের মধ্যে শিহরণ সবচেয়ে বড়।সামান এর কাছাকাছি তার বয়স।এরপর আশফিক আর মারশিয়াদ।আজরাহান সবচেয়ে ছোট আর সবচেয়ে ধুরন্ধর।ওকে দমানো কঠিন।আর এইজন্যই চার বন্ধুর চোখের মনি সে।যেমন হাসাতে পারে ঠিক তেমন কাঁদাতে।
আজরাহান এর ঘরেই তৈরি হচ্ছে ওরা সবাই।সবুজ রঙের পাঞ্জাবি দেখে চোখ মুখ খিচে মারশিয়াদ।বলল—
” এইটা কোনো কালার হলো??
আশফিক ভ্রু কুচকে বলল–
“পেয়েছিস তো এটাই বেশি।”
“বেশি মানে!!
এইটা একটা রঙ হলো??
সবার আগেই পাঞ্জাবী পড়ে নিশ্চল হয়ে বসে আছে শিহরণ।ওর এইসবে মাথাব্যথা নেই।বিয়ে করে এক বাচ্চার বাবা।এখন আর কে দেখবে তাকে!!
দরজা খুলে ঢুকেই খিলখিলিয়ে হাসে প্রহর।ওর পিছনেই আসে সানায়া।আজরাহান চোখ কুচকে বলল–
“তোরা এখানে কেনো এসেছিস??
ছেলেদের এখানে তোদের কী??
প্রহর ঠোঁট উল্টে তা চেপে ধরে হাসি বন্ধ করলো।আর বলল–
” ওই যে জান ভাইয়া বলল রঙের কথা।এইটা তো সানায়া আপু পছন্দ করেছে।ছেলেরা সবুজ পাঞ্জাবী আর মেয়েরা লাল শাড়ি।”
মারশিয়াদ হালকা হেসে সানায়ার দিকে তাকিয়ে বলল–
“তুমি কী রঙ চুজ করার সময় গাভীর চোখ দিয়ে দেখেছিলে না কী???
সানায়া মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলল–
” এইটা কী ধরনের কথা জান!!
সবুজ কী খারাপ রঙ!!জানেন যারা কোনোদিনও হাতে মেহেদি পড়ে না তারাও বিয়ের সময় এই হলুদের দিনে প্রিয় মানুষটার নামে নিজের হাত মেহেদির রঙে রাঙায়।আর মেহেদির উপরের অংশ গাঢ় সবুজ যা তার ভিতরের রক্তিম লাল কে তার মধ্যে ধারন করে।ঠিক একজন প্রেমোমোহ যেমন তার প্রেয়সী কে তার বুকের ভিতর পৃথিবীর সকল পাপ পঙ্কিলতা থেকে আগলে রাখে।”
মারশিয়াদ এক লম্বা শ্বাস ফেলে বলল—
“ঠিক বলেছো।
যেমন সবুজের বুকে লাল সে তো উড়বেই চিরকাল।
নিজেকে এখন জাতীয় পতাকা মনে হচ্ছে আমার কাছে।আরেকটা কাজ করতে পারতে পাঞ্জাবীর মাঝখানে একটা বাংলাদেশের পতাকা বসিয়ে দিলে চমৎকার হতো।”
মারশিয়াদ এর কথা শেষ হতেই ওরা চার বন্ধু হাসতে হাসতে লুটুপুটি।মারশিয়াদ গড়িয়ে আশফিক এর গায়ে উপরেই পড়ে যায়।
অবশ্য এতে সানায়ার বিন্দু মাত্র আক্ষেপ নেই।সেও সবুজের মাঝে লাল এর মতো মারশিয়াদ এর বুকের মাঝেই থাকতে চায়।গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মারশিয়াদ এর দিকে।ফর্সা জীম করা শরীরে একদম ফিট হয়ে আছে পাঞ্জাবী।গাঢ় রঙে ওর গায়ের ফর্সা ভাব টা যেনো দ্বিগুন বেড়েছে।সবার আড়ালেই মারশিয়াদ এর হাস্যোজ্জ্বল চেহারার অক্ষিযুগল খানিক সময়ের ব্যবধানে সানায়ার লাল দেহবরণ এর উপর পড়ে।মেয়েটা কে সাক্ষাত অপ্সরার মতো লাগছে।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক এর নিচেও ওর ওই কালো তিল যেকোন কাউকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট।সামনের কিছু চুল একপাশে রেখে বাকি চুলে ফ্রেন্স বেনি করে তাতে বেলি ফুল ঘুজেছে।
“নয়নে নয়ন রাখিয়া খুজিয়া মরি তাহারে
সে তো আমার চোখের কিনারায় বসত করে শত জনম ধরে।।”
–তানভি
প্রহর কে দেখে আরেক ধাক্কা খায় মারশিয়াদ।আজরাহান তার ডিঙি নৌকা কে সবচেয়ে আলাদা করেই উপস্থাপন করেছে।সবুজ লাল এর ভীড়ে সে এক কাচা হলুদ।যেনো এখনই মেখে নিবে সারা অঙ্গে।
নন্দিতার বাড়ি থেকে তত্ত্ব নিয়ে এসেছে।নুরাইসা আর নাবীন খান আর তাদের আত্মীয়স্বজন।নবনীতা আসেনি।মেয়েকে এই শেষ সময়ে একা ছাড়তে ইচ্ছে করে নি তার।আজরাহান কে দেখেই ভ্রু ক্রুটি করে নুরাইসা।মুখে ভ্যাঙচি কেটে বিরক্তিকর অভিব্যক্তি করে যা তার কপালে ভাজে স্পষ্ট।আজরাহান ওকে দেখেই মেকি হাসে।আর পাশে দাড়ানো আশফিক কে বলল–
“সময় এসে গেছে।মারমেইড কে তার উচিত শিক্ষা দেওয়ার।”
“দেখ আজরাহান আমার মনে হয় এইসব না করাই ভালো।যদি বড় মা জানতে পারে তাহলে রক্ষা নেই।”
“আরে দুর!!
মা জানবে কী করে।তুই লাউড স্পিকারে গান ছেড়ে দরজার বাইরেই দাড়িয়ে থাকবি।ও সেদিন আমাকে রেপিষ্ট বলেছিলো তাই না।ওকে যদি আমি না কাঁদিয়েছি তাহলে আমার নামও আজরাহান কারীম নয়।”
আজরাহান এর চোখ নিবদ্ধ নুরাইসার দিকে।
সবকিছু সুন্দরভাবে মিটে যায়।কনেপক্ষের বাড়ি থেকে আসা লোকজন সামান কে হলুদ লাগিয়ে চলে যায়।অনেক রাত হয়েগেছে তাই।নুরাইসা কে কুহেলিকা থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলো কিন্তু নন্দিতার কথা মনে পড়তেই তার মন ব্যথায় ভরে উঠল।বিয়ের পর তো আর কখনো তাকে কাছে পাবে না।যতই সে তার বাবার বাড়ি আসুক বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই মেয়েদের আসল ঠিকানা।তারাই সবচেয়ে আপন।তাই নুরাইসা এই কয়েকটাদিন বোনের কাছ থেকে একদম দুরে থাকতে চায় না।
,
,
অনুষ্ঠান শেষ।চার বন্ধু ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।বেশ আওয়াজ করেই পা চালিয়ে সেখানে আসে প্রহর।ঠিক আজরাহান এর পিছনেই দাড়ায়।শান্ত কন্ঠে বলল—
“রাহান ভাইয়া,আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
“বল।”
“এখানে না।”
আজরাহান বিরক্তিকর কন্ঠে বলল–
“বললে বল না বললে যা এখান থেকে।”
প্রহর দাতেঁ দাঁত চেপে হালকা উচ্চ বাক্যে বলল–
“আপনি ওই মেয়েটার পেটে হাত দিলেন কেনো??
চার বন্ধুর হাসি মুখ মুহুর্তেই বিবর্ন হয়ে যায়।প্রহর এর কথা কর্ণকুহর হতেই আজরাহান দম আটকে বাকিদের মুখে চোখ বুলায়।
মুখে অদ্ভুত আওয়াজ করে বসা থেকে উঠে প্রহর এর হাত ধরে ওকে টেনে সিড়ি ঘরের পেছনের দিকে নিয়ে যায়।দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কঠিন কন্ঠে বলল–
” এইসব কী বলিস তুই!!কোথায় কী বলতে হয় জানিস না!!
“আপনিই বললেন বলতে।আর ওই মেয়ের পেটে কেনো হাত দিলেন??
লজ্জা করেনা আপনার??
“এই তুই দেখেছিস!!
ওই মেয়ে পড়ে যেতো তাই আমি ওকে ধরেছি।”
“ওও।পড়ে যেতো তাই ধরেছেন।আমাকে শাড়ি পড়তে দেন নি আর ওই মেয়েকে বাচানোর নাম করে ওর শাড়ির ভিতর দিয়ে পেটে হাত,,,,
আজরাহান প্রহর কে ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে প্রহরকে নিজের অধর বন্ধনে আবদ্ধ করে।আজ প্রথম আজরাহান এই উদ্ভট কান্ড করে বসে।প্রহর এর শরীর হীম হয়ে আসে।যেনো সে কোনো বরফখন্ড আর আজরাহান এর অধরের উষ্ণতায় গলে যাচ্ছে।আজরাহান প্রহর এর সমস্ত মুখমন্ডতল ওর দু হাতের আজলায় নিয়ে নেয়।যতক্ষন আজরাহান প্রহর এর অধরসুধায় মত্ত প্রহর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর চোখে।এই চোখ আজ ভয়ংকর !!আর এই চোখ আগেও দেখেছে।প্রহর এর নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে।মিনিট দুয়েক পরে আজরাহান প্রহর এর অধর ছেড়ে ওর কপালে নিজের কপাল ঠেকায়।ভয়ে,বিস্ময়ে শ্বাস নিতে ভুলে গেছে প্রহর।আজরাহান কয়েকদফা বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে ।হাপাতে হাপাতে বলল–
“এখান থেকে সোজা ঘরে যাবি।নাহলে ঠ্যাং ভেঙে ফেলবো তোর।
আজরাহান থেকে ছাড়া পেয়ে খিস্তি মেরে দৌড় লাগায় প্রহর।নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার আগের জায়গায় এসে বসে আজরাহান।আশফিক দাঁত কেলিয়ে বলল—
“কী রে তোর ডিঙি নৌকা কে পাড়ে ভেড়ালি??
আজরাহান উদ্দীপ্ত চোখে তাকায়।আর বলল–
“তোকে এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না।”
মারশিয়াদ হালকা হেসে বলল–
“কিন্তু যাই ই বলিস শি ইজ কিউট!!
আজরাহান বাকা চোখে তাকায় মারশিয়াদ এর দিকে।
,
,
,
নিজের ঘরে দৌড়ে এস দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে প্রহর।পা দুটো বিছানার উপর উঠিয়ে তার উপুর চিবুক রেখে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে।আরেকটু হলে তো ওর নিঃশ্বাস ই বন্ধ হয়ে যেতো।দাঁত কিড়মিড় করে বলল–
“আমাকে চুমু খাওয়া।দেখাচ্ছি মজা।”
মধ্যরাত প্রায়।বাড়ির বয়স্ক মানুষরা ঘুমিয়ে পড়েছে।নির্ধা ওর বাচ্চা কে নিয়ে সানায়ার রুমে শুয়ে পড়েছে।এমনিতেই বড্ড ক্লান্ত।তার উপর বাচ্চা।ড্রয়িং রুমে বসে আছে বাকিরা।প্রহর ড্রেস চেঞ্জ করে সেখানে আসে।হাসি হাসি মুখে বলল–
“জান ভাইয়া বলেন তো পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম পাখি কোনটি??
“সুইফট বার্ড।”
“আর সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক পাখির নাম কী??
“অ্যালব্রাটস।”
“বাহ!!
আপনি তো অনেক কিছু জানেন।”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো রেড চিলি??
“আমি আপনাদের জন্য একটা কম্পিটিশন এর আয়োজন করেছি।”
“কম্পিটিশন!!
“হুম।
বলছি।”
প্রহর এর কথার রেশ ধরে আশফিক বলল–
“আগে বল যে জিতবে তাকে কী দেওয়া হবে??
“যা চাইবে তাই।অর্থ্যাৎ যে জিতবে সে যা চাইবে তাই দেওয়া হবে।”
আশফিক আজরাহান কে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বলল–
” এই সুযোগ।এইটা জিতে তুই সবার সামনে প্রহর কে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবি।ও না করতে পারবে না।”
আজরাহান নম্র সুরে থমথমে গলায় বলল–
“যদি মারশিয়াদ জিতে যায়!!
“দাড়া আমি ওকে বলে আসছি।”
মারশিয়াদ ওদের দুইজন থেকে একটু আলাদাই বসা।আশফিক উঠতে গেলে ওকে ধমক মেরে বসায় প্রহর আর বলল–
“নো চিটিং।সবাই যার যার জায়গায় বসে থাকেন।
ইনশিরাহ আর সানায়া আপু তোমরা এদের উপর নজর রাখো আমি আসছি।”
প্রহর রান্না ঘরে গিয়ে ক্ষনকাল বাদে ফিরে আসে।হাতে শরবতের গ্লাস।লাল রঙ।আনার এর শরবত।ওদের চারজন এর হাতে দিয়ে বলে চুমুক দিয়ে নয় বরং ঢকঢক করে গিলে যে আগে খেতে পারে সে উইনার।আজরাহান মৃদু হেসে মনে মনে ভাবলো এ আর এমন কি।কিন্তু মারশিয়াদ অদ্ভুতভাবে চোখ পিট পিট করছে।কাউন্টিং শেষ হতেই সবাই খাওয়া শুরু করে।ওরা তিনজন চেয়েছিলো যেনো আজরাহান ই জিতে যায়।কিন্তু ওদের সেই আশা ভরসাকে ধূলিসাৎ করে অর্ধেক শরবত কয়েক ঢোক গলা দিয়ে নেমে পেটে যেতেই মুখে থাকা বাকি অংশ ফুসসসস করে বাইরে ফেলে আজরাহান।মুখ চেপে দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।প্রহর ঠোঁট বাকিয়ে হেসে মনে মনে বলল”” আব আয়েগা মাজা।”
ট্যাপ ছেড়ে অনবরত পানি কোচ করে নিয়ে মুখে ডলে যাচ্ছে আজরাহান।চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করছে।ঠোঁটের দুই পাল্লা ফাঁক করে নিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছে পুরো গলা আর পেট জ্বলে যাচ্ছে।মারশিয়াদ দুই হাত পকেটে ঘুজে ওর পাশে এসে কিচেন রেক এর সাথে হেলান দিয়ে হালকা হেসে বলল–
“নে
একটু আগে অমৃত খেয়েছিস এখন ঝাল খা।”
আজরাহান রাগী কন্ঠে বলল–
“ফাজলামো করছিস?ঝাল এ জ্বলে যাচ্ছে আমার পুরো ঠোঁট।”
মারশিয়াদ হালকা ঘাড়টাকে বামদিকে হেলিয়ে বলল–
“সেটাতে তোর রেড চিলি কে কিস করার আগে ভাবা উচিত ছিলো।
জানিস তো ছোট মরিচে ঝাল বেশি।
আসি আমি।শিরা এখানে থাকবেনা।ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমার সাথে।”
আজরাহান বিস্ফোরিত চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।গর গর করে প্রহর এর ঘরে গিয়ে ওকে ধরেই এলোপাথাড়ি কয়েক ডজন চুমু খেয়ে নেয় ওর চোখে মুখে।প্রহর ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলল–
“পাগল হয়ে গেছেন!! এমন করছেন কেনো??
আজরাহান প্রদৃপ্ত কন্ঠে বলল–
“তুই মারশিয়াদ কে কেনো বলেছিস এইসব??
“আরে দুর ছাড়েন তো।আমি কেনো জান ভাইয়া কে বলতে যাবো!!
যত্তসব।”
আজরাহান এর মনে শঙ্কা চেপে যায়।তাহলে মারশিয়াদ কী করে জানলো এইসব??
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
আজকের পর্বে কমেন্টস কম আসলে পরের পার্ট তিনদিনের আগে আর না😒😒😒)