বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ৬

0
5988

#বৃস্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

নরম পায়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে আজরাহান এর ঘরে ঢোকে প্রহর।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।প্রহর শীতল শ্বাস ছাড়লো।আজরাহান বের হওয়ার আগেই ওকে এখান থেকে কেটে পড়তে হবে।সম্পূর্ন ঘরে চিরুনী তল্লাশি চলছে।কিন্তু প্রহর তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস খুজে পেলো না।অবশেষে তার মনে হলো বিছানার উপর থাকতে পারে।

কাল কুহেলিকা আজরাহান কে ইচ্ছে মতো ঝেড়েছে।প্রহর কে স্কুলে না নিয়ে যাওয়ার কারণে।আজরাহান অবশ্য কোনো প্রতিবাদ করেনি।কারণ সে তার দোষ মেনে নিয়েছে।সানোয়ার আহমেদ অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রহর কে স্কুলে দিয়ে এসেছে এবং প্রায় তিন ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে ওকে নিয়েই বাসায় ফিরে।ক্লান্ত,শ্রান্ত দেহে বাসায় ফিরতে হেলে পড়ে সানোয়ার আহমেদ।এতোটা ধকল এখন আর তার শরীর নিতে পারে না।
সেই সুবাদে আজরাহান এর শাস্তি স্বরুপ ওকে রাতের খাবার থেকে বঞ্চিত করা হয়।কুহেলিকা ছোট বেলা থেকেই এই ধরনের শাস্তি তার তিন সন্তানকে দিয়ে থাকেন।আসল কথা শাস্তি সবসময় আজরাহান এর প্রাপ্য।কারণ দুনিয়ার যত অকর্মা কাজ আজরাহান ই করে থাকে।

মানুষের মৌলিক অধিকার এর মধ্যে একটি হলো খাদ্য।দু বেলা পেট পুরে খাওয়ার জন্য মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে।পেটের দায়ে একজন নারী তার সত্বিত্ত পর্যন্ত বিকিয়ে দেয়।একজন শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করে শুধু এই পেটের দায়ে।পৃথিবীর হাজারো অরাজকতা সৃষ্টিও হয় এই পেটের ক্ষুধা কে নিবারণ করার জন্য।তাই কুহেলিকা বিনা পরিশ্রমে তার সন্তানদের সেই কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন।শাস্তির পাশাপাশি শিক্ষা অর্জনের এর থেকে বড় সুযোগ আর নেই।

আজরাহান কিন্তু না খেয়ে নেই।তার ডিঙি নৌকা মাঝ রাতে উঠে তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।বাড়ির সবাই এই বিষয়ে অবগত কিন্তু তা ওদের দুজনের আড়ালে।
বিছানায় হাতড়িয়ে খুজে চলছে প্রহর।ঠিক তার পিছনেই কারো উপস্থিতি পেয়ে ঘুড়ে দাড়ায় প্রহর।আর বলল—

“আপনি???

“হুম।আমি!!

প্রহর ইতস্তত বোধ করে।এই লোকটাকে কতবার বলেছে এইভাবে ওর সামনে আসতে না।কিন্তু কে শুনে কার কথা।আজরাহান এর নগ্ন বুকে না চাইতেও প্রহর এর অবাধ্য নজর ফিরে ফিরে তাকায়।আর ওই তিল!!!
যেনো এখনই ওর নিঃশ্বাস আটকে দেবে।

প্রহর তড়িৎ গতিতে চোখ ফেরায়।না,না,না এতো তাড়াতাড়ি সে মরতে চায় না।আবারও বিছানায় চোখ বুলাতে থাকে।আজরাহান ওর হাত প্রহর এর কাধে স্পর্শ করিয়ে বলল–

“কী খুজছিস তুই??

প্রহর এর গা শিউরে উঠে।প্রহর ধুম করে পিছন ফিরে।আজরাহান এর হাত নামিয়ে কড়া গলায় বলল–

“আপনাকে না বলেছি আমাকে ছোবেন না???

“কেনো!!
আমি স্পর্শ করলে কী গায়ে ফোস্কা পড়ে!!!

প্রহর চোখ খিচে নেয়।এই লোকটা আস্ত একটা শয়তান।

“সরেন এখান থেকে।”

“কী খুজিস তুই??

প্রহর হালকা নরম হয়ে বলল—

“আমার কানের দুল।ওইটা বোধহয় কাল আপনার ঘরে কোথাও পড়ে গেছে।কিন্তু পাচ্ছিনা।”

“পাবিও না।”

“কেনো??

“কারন ওইটা আমার কাছে।”

“তাহলে দিন।”

আজরাহান মাথা দুলিয়ে বলল—-

“উহু।”

প্রহর ভ্রু কুচকে বলল—

“কেনো??

“যখনই আমার তোকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করবে আমি ওইটাকে ছুয়ে দেখবো।তোকে ছুইয়ে দিলে তো আবার তোর গায়ে ফোস্কা পড়বে।”

প্রহর কপট রাগ দেখিয়ে বলল—

“সরেন এখান থেকে।”

আজরাহান কে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেতে গেলেই আজরাহান ওকে হাত ধরে টেনে ধরে।প্রহর কিঞ্চিৎ ব্যথায় ঝামটা মেরে উঠে।
আজরাহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল–

“ওরে আমার ননীর পুতুল।একটু খানি ছুতেই আৎকে উঠে।
কথায় আছে–“সর্ব অঙ্গে ব্যথা,ঔষধ দিবো কোথা।একটু ছুলেই কেঁপে উঠিস কেনো তুই!!
তোকে যে বিয়ে করবে ওই বেচারার জীবনটাই বরবাদ।ছোয়ার আগে তুই শেষ।”

প্রহর উত্তেজিত কন্ঠে বলল–

“তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”

ব্যঙ্গাত্মকভাবে ঠোঁট বাকিয়ে আবার বলল–

“এসেছেন,কবীর সিং!!!

“কার সাথে তুলনা করিস আমার!!
তোকে আমি কতবার চুমু খেয়েছি রে???

“চুপ করেন।যতসব নোংরা কথাবার্তা।”

“আমি নোংরা !!!

“তা নয়তো কী!!

আজরাহান ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল–

“তাহলে আমাকে বরবাদ হতে দে।”

প্রহর চোখ গোল গোল করে আজরাহান কে দেখে।স্টবেরি কে এখন সুবিধার মন হচ্ছে না।প্রহর বের হতে গেলে আজরাহান আবারো ওর হাত ধরে ফেলে।এইবার প্রহর বেশ জোরেই চিৎকার দেয়।চোখ ছলছল করে উঠে।আজরাহান হতবুদ্ধি হয়ে বলল—

“কী হয়েছে তোর??

প্রহর কাধো কাধো হয়ে হাত মেলে ধরে বলল—

“দেখেন না এমাদ স্যার কী করেছে!!

আজরাহান দেখে প্রহর এর হাতে একটা দাগ বসে আছে।একদম কালচে হয়ে আছে।আজরাহান ওকে নিয়ে কাউচে বসায়।শান্তভাবে বলল–

“কী করে হলো এইসব??
পড়া শিখিস নি তুই??

“শিখেছি তো।একটু ভুল হয়েছে তাই এমাদ স্যার বেত দিয়ে কী বারি টা অামার হাতে দিলো।কী ব্যথা!!!”

“ঠিকই তো আছে।পড়া না পাড়লে তো মারবেই।”

“আরে উনি তো শোধ তুলেছে আমার উপর।”

আজরাহান কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকায়।উদগ্রীব হয়ে বলল–

“কী করেছিস তুই??

প্রহর ওর জামার থ্রি কোয়ার্টার হাতা টা টেনে একটু উপড়ে তুলে বলল–

“দেখেন কী করেছে।সেদিন আমার পাশে দাড়িয়ে শুধু শুধু আমার এখানে কী জোরে চেপে ধরলো!!

আজরাহান এর চোখ দিয়ে ধোয়া নিঃসরণ হতে থাকে।গা ঝিম ঝিম করছে।রাগ চেপে বলল–

“তারপর??

“আমিও কী ছেড়ে দিয়েছি না কী!!
একদম তার পায়ের উপর একটা জোরে পাড়া দিয়ে দিয়েছি।বেশ ব্যথা পেয়েছে।আর তার শোধ তুলতেই আমাকে মারলো।”

আজরাহান ফোস করে এক দম ছাড়লো।শক্ত কন্ঠে বলল—

“আর কোথায় হাত দিয়েছে তোর??

“আর কোথাও না।
আর দিলে কী আমি ছেড়ে দিবো নাকি।একদম ওর চুল গুলো ছিড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিবো।শয়তান টাকলু,খচ্চর ব্যাটা।”

অন্য সময় হলে হয়তো প্রহর কথায় আজরাহান হাসতো।কিন্তু এখন !!
এখন ওর ইচ্ছে ওই শালাকে ধরে জ্বলন্ত তেলে ভেজে উঠায়।প্রহর শান্ত কন্ঠে আবার বলল—

“জানেন,,,
স্যার সব মেয়েদের সাথে এমন করে।সেদিন আমাদের ক্লাসের ইপ্সি কে সাবাশি দেওয়ার নাম করে ওর পিঠে এমন জোরে চাপড় দের যে ওর পিঠে হুক,,,,

প্রহর কথা শেষ করার আগেই আজরাহান ওকে থামিয়ে দেয়।আর ক্রোশভরা কন্ঠে বলল—

“আজকের পর যদি কেউ তোর গায়ে হাত দেয় সবার আগে আমাকে বলবি।আর এমাদ স্যার কে আমি দেখছি।”

“আচ্ছা।”

প্রহর চুপ করে বসে ব্যালকনির বাইরে তাকিয়ে আছে।আজরাহান ঘোরের মতো চেয়ে আছে প্রহর এর দিকে।মুখ টা ওর কাছে নিয়ে একটা উষ্ণ ফু দেয় প্রহর এর কানের কাছে।হকচকিয়ে উঠে দাড়ায় প্রহর।ঠোঁট কামড়ে বলল—

“এমন করেন কেনো???

“ক্যান,ফোস্কা পড়ে।”

“আপনি আসলেই একটা শয়তান।এই জন্যই ছোট মা আপনাকে আজাইরা রাহান বলে।কোনো কাজ তো নেই সারাদিন ফালতু কাজ করা।”

আজরাহান প্রহর কে উল্টিয়ে ওর পিঠ ঠেকায় নিজের বুকের সাথে।প্রহর এর হাত থেকে হাত সরিয়ে দু হাত দিয়ে ওর পেটের উপর রেখে আরেকটু চেপে ধরৈ নিজের সাথে।নিজের চিবুক রাখে প্রহর এর ঘাড়ে।আজরাহান এর শীতল শরীরের স্পর্শে ধীরে ধীরে প্রহর এর শরীরের উষ্ণতা ঢলতে থাকে।প্রহর তার পিঠের স্পর্শেই আজরাহান হৃদযন্ত্রের কম্পন অনুভব করতে পারছে।রঙধনুর সাত রঙ ছুইয়ে যাচ্ছে ওকে।প্রজাপতির রঙিন ডানায় যেনো ওর বিচরণ।আজরাহান ধীরে ধীরে ওর অধরযুগল বেপরোয়াভাবে ছোয়াতে থাকে প্রহর এর ঘাড়ে,গলায়,পিঠে।অনুরনন শুরু হয় প্রহর এর সারা শরীরে থেমে থেমে ।নাহ,তার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সে তার রাহান ভাইয়া কে থামাতে পারছেনা।মনে হচ্ছে যেনো চোরাবালি তে সে আস্তে আস্তে প্রলীন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে তার কুন্ঠাবোধ নেই।পরম আবেশে সে শুধু অনুভব করছে।যেনো কোনো বলয় ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।আজরাহান ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল—

“বিয়ে করবি আমাকে ডিঙি নৌকা??
অনেক ভালোবাসবো তোকে।”

বিয়ের কথা শুনতেই প্রহর এর মাথা তড়ক করে উঠে।নিজেকে তড়িৎ গতিতে ছাড়িয়ে নেয় আজরাহান এর শীতল বন্ধন থেকে।জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আক্রোশ ভরা কন্ঠে বলল—

“নাহ।আমি কখনই আপনাকে বিয়ে করবো না।কখনই না।”

প্রহর চলে যায়।আজরাহান ওর কথার মানে বুঝতে পারলেও ওর আক্রোশের কারণ সম্পর্কে সে অবগত নয়।আজরাহান স্মিত হেসে ঠোঁট কামড়ে বলল—

“বিয়ে তো তোকে আমাকেই করতে হবে ডিঙি নৌকা।তোর ভালোবাসার সায়রের একমাত্র জলদেব আমি আর তুই আমার জলদেবী।”

“আমায় দিও একটুখানি ছুঁয়ে
আমায় দিও একটুখানি মন
এই জনমের জন্মমৃত্যু জানে,
তুমি মানে আমার সমর্পণ।”

——– সাদাত হোসাইন
,
,
,
ক্লান্ত শরীর যেনো চলছেই না।সারারাত জেগে একটা নিউজ কভার করেছে ইনশিরাহ।লিফ্ট ছেড়ে ফ্ল্যাটের সামনে আসতেই যেনো শরীর একদম ঝেকে বসেছে।মনে হচ্ছে এখনই পড়ে যাবে।কোনো মতে কী হোলে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে পা রাখে ইনশিরাহ।ঢুকতেই চোখ যায় বসার রুমে।কেউ একজন বসে আছে।পিছন থেকে দেখেই কোনো বলিষ্ঠ পুরুষ মনে হচ্ছে।ইনশিরাহ কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।ধীর পায়ে তার সামনে গিয়ে বসে।চোখ দুটো লালচে হয়ে আছে।মুখে বিষন্নতার ছাপ।চুলগুলোও আলুথালো হয়ে আছে।ফর্সা চেহারার কেমন যেনো বিবর্ন।সারারাত ঘুম হয়নি বোধহয়।ইনশিরাহ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল–

“সারারাত এখানেই ছিলে???

মুখে কিছু বলল না মারশিয়াদ।চোখের পলক ফেলে সম্মতি জানালো।ইনশিরাহ হতাশ কন্ঠে বলল—

“কল করলে না কেনো??

মারশিয়াদ কয়েকটা নিঃশ্বাস টেনে নিলো।শান্ত ভঙিতে চোখ তুলে তাকায় ইনশিরাহ এর দিকে।স্বাভাবিক গলায় বলল—

“ভেবেছিলাম ফিরবে।অপেক্ষা করছিলাম।কখন ঘুম জড়িয়ে এসেছে বুঝতে পারিনি।”

“কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না সারারাত এক বিন্দুসমও ঘুমিয়েছে।”

“তাহলে চিন্তা হয় তোমার আমার জন্য!!
শুনে খুশি হলাম।আমাকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারো।
কোথায় ছিলে সারারাত??

“অফিসে।”

“সারারাত বাসার বাইরে থাকা কী ঠিক।”

“তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
কিছু খাওনি নিশ্চয়ই??

“খেয়ে আসিনি।ভেবেছিলাম তোমাকে ফ্ল্যাটে পাবো।”

“ফ্রিজে খাবার ছিলো।গরম করে খেয়ে নিতে।”

“এতোটা অধিকার হয়তো তুমি আমাকে দাও নি।”

“ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি দেখছি কী করা যায়।”

মারশিয়াদ কমন ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে আবারও কাউচে এসে বসে।ইনশিরাহ নিজের রুমে যায়।কোনো মতো মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে নেয়।কিচেন এ গিয়ে চটজলদি খেয়ে উদরপূর্তি করার মতো পাস্তা ছিলো।তাই বানিয়ে এনে মারশিয়াদ এর সামনে দেয়।নিজেও নেয়।কাজের চাপে রাতে সেও ঠিক করে খেতে পারে নি।মারশিয়াদ নিজের খাওয়ায় মন দেয়।সেই কাল রাত এগারো টায় এসেছে।না খেয়ে সারারাত বসে ছিলো।তাই তার এখন পূর্ন দৃষ্টি ইনশিরাহ এর হাতের সেই পাস্তায়।খাওয়ার ফাকেই ইনশিরাহ বলল—

“কেনো এসেছো???

“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।”

ইনশিরাহ মুচকি হাসলো।ভাবলেশহীন ভাবে তাকায় মারশিয়াদ এর দিকে।লোকটাকে বারবার মানা করার পরও কেনো আসে বুঝে না।

“আমাকে কে কী চিরিয়াখানার ময়ূর মনে হয়।”

মারশিয়াদ কাটা চামচ দিয়ে পাস্তার দুইপিস একসাথে করে মুখে পুরে দেয়।নির্লিপ্তভাবে বসে খেয়ে যাচ্ছে।ইনশিরাহ প্রগঢ় দৃষ্টিতে দেখছে।সারারাত খাইনি বলে কেমন দূর্বল দেখাচ্ছে।
মারশিয়াদ খাওয়া শেষ করে কাউচে হেলান দিয়ে বসে।আর বলল—

“তুমি কী আর ফিরবে না??

“আমি তোমাকে আগেই সব ক্লিয়ার করে বলেছি।”

“কেনো তুমি অন্যের শাস্তি আমাকে দিচ্ছো?
আমি তাদের মতো নই।”

ইনশিরাহ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।আর বলল—

“আবু জাহেল এর ঘরে খলিফার জন্ম!!!ব্যাপারটা কেমন অড না!!!

“কেনো মৃত মানুষকে নিয়ে এইসব বলছো!!!

“তারা তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।আর আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে গেছে।”

“আমি তোমার দিকে সবসময় আমার হাত বাড়িয়ে রেখেছি,শিরা।”

ইনশিরাহ কঠিন কন্ঠে বলল—

“কল মি ইনশিরাহ।”

“ইউ নো,আই কান্ট।”

বিদ্যুৎ বেগে উঠে দাড়ায় ইনশিরাহ।রাগী কন্ঠে বলল–

“ইউ মে গো।আই সে গো।”

মারশিয়াদ শীতল কন্ঠে বলল–

“রিল্যাক্স শিরা।ইউ কান্ট ডু দিস।”

“আই ক্যান মি.জান।আই ক্যান।
আমি আর কোনো কিছুর জন্য তোমাদের উপর নির্ভর নই।”

মারশিয়াদ উঠে দাড়ায়।আর বলল—

“জানি।কিন্তু রক্তের সম্পর্ককে তুমি অস্বীকার করতে পারো না।”

“কিসের রক্তের সম্পর্ক!!!!
সব শেষ।রক্তের সম্পর্কে মরিচা ধরেছে এখন শুধু নিঃশেষ হওয়া বাকি।”

“আমি তা হতে দিবো না।তোমাকে ফিরতে হবে।”

“কখনো না।কোনোদিন না।তোমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে আমি ঘৃনা করি।চলে যাও এখান থেকে, জান।চলে যাও।জাস্ট গেট আউট।”

“আই এম ওয়েটিং ফর ইউ।আমার দরজা সবসময় তোমার জন্য খোলা।এভরিটাইম।”

মারশিয়াদ কে একরকম জোর করে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয় ইনশিরাহ।দরজার সাথেই ঘেষে নিচে বসে পড়ে।অক্ষিপল্লব বেয়ে শ্রাবনধারা বইতে থাকে।ঝরঝর করে ঝড়তে থাকে শীতল অশ্রুজল।বুক কাপিয়ে কেঁদে উঠে ইনশিরাহ।

“কেনো বারবার আমার সামনে এসে পুরোনো ক্ষত কে তাজা করে দাও!!!আমি তো আমার সব অধিকার ছেড়ে দিয়েছি।বাচতে দাও আমাকে নিজের মতো।প্লিজ লিভ মি এলোন।”

মারশিয়াদ নিজের গাড়ির কাছে এসে দাড়ায়।গাড়ির দরজা খুলে ক্ষনকাল দাড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ইনশিরাহ এর ফ্ল্যাটের ব্যালকনি তে তাকায়।নাহ।আসে নি সে।মারশিয়াদ স্মিত হাসে।রক্তের জৌলুস বলেও একটা কথা আছে।আফটার অল তার শরীরেও একই রক্ত বইছে।

মারশিয়াদ এর মোবাইল এর রিংটোন বেজে উঠে।আশফিক ইজ কলিং।

“বল।”

আশফিক কিছু একটা বলে।

“ওকে।আমি আসছি।”

,
,
,
রেষ্টুরেন্টে বসে আছে আজরাহান।মনের দহনের অনল সেখানেই চেপে রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে সামনে বসা লোকটাকে বলল–

“কেমন আছেন এমাদ স্যার??

অর্ধবয়সী এমাদ তার দাঁত কেলিয়ে বললেন—

“ভালো।
তুমি কেমন আছো???

আজরাহান এর মনে হচ্ছে এখনই একটা ঘুষি মেরে ওর সামনের বত্রিশ পাটি ফেলে দেয়।মুখে মেকি হাসি দিয়ে বলল–

“ভালো।
আপনার মেয়েরা কেমন আছে।তাদের বয়স যেনো কতো???

এমাদ আওয়াজ করে হি হি করে হেসে বললেন—

“এইতো বড় জনের দশ বছর আর ছোট জনের দুই বছর।কেনো বলোতো??

এমাদ ওর হাত টা টেবিলে থাকা বার্গার এ দিতেই আজরাহান চাওমিন এ রাখা কাটা চামচ টা গুট করে ওর হাতের উল্টোপিঠে ঢুকিয়ে দেয়।আত্ন চিৎকার দিয়ে উঠে এমাদ।আজরাহান দাঁতে দাঁত চেপে কাটা চামচ আরেকবার মোচড় মারে।এমাদ এর গগন ভারী করা চিৎকারে রেষ্টুরেন্টের বাকী কাস্টমার রা ঘাবড়ে উঠে।ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।টেবিলে রাখা সকল খাবারে রক্তের ছড়াছড়ি।আজরাহান ঠুস করে টেনে বের করে চামচ।বের করতেই আরেক দফা আর্তনাদ করে উঠে এমাদ।আজরাহান ক্ষীপ্র গতিতে গিয়ে ওর শার্ট খামচে বলল—

“এরপর যদি আর কখনো কোনো মেয়ের গায়ে হাত দিস তো নিজের মেয়েকে আদর করার জন্য তোর হাত থাকবে না।শুধুমাত্র তোর নিষ্পাপ দুটো বাচ্চার জন্য তোকে আমি ছেড়ে দিলাম।কাল ই রেজিগনেশন লেটার দিয়ে কলেজ ছাড়বি।নাহলে আমি তোর কী অবস্থা করবো ভাবতেও পারবি না।”

এমাদ এর সকল কথা দলা পাকিয়ে গেছে ওর গলায়।শব্দের পরিবর্তে গোঙানির আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।থর থর করে কেপে চলছে সে।আশফিক জোর জবরদস্তি করে ওকে থামায়।এমাদ ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।পুরো ব্যাপারে মৌনতা পালন করে মারশিয়াদ।নিরুত্তেজ মারশিয়াদ মোবাইলে ফিয়ার ফায়ার খেলছে।আর একটু পর পর চিলতে হাসি তার অধর কোনে।আজরাহান শান্ত হয়ে নিজের জায়গায় বসে।দপদপ করছে ওর বুক।

হাত দুটো টেবিলের উপর রেখে শীতল দৃষ্টিপাত করে মারশিয়াদ আজরাহান এর দিকে।রাগে চোখ মুখ ফুলে উঠেছে।চোখে জমেছে জলপুকুর।

“ক্লাম ডাউন আজরাহান।এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।”

আজরাহান উত্তেজিত হয়ে বলল–

“হাইপার হওয়ার কিছু নেই মানে!!
ওর সাহস কী করে হয় এইসব করার!!
বাবা মায়ের পরেই শিক্ষকের স্থান।আর এইসব রাস্তার কুকুর গুলো তার অবমাননা করে।নিজের মেয়ের সাথে যদি কেউ এমন করে তখন কেমন হবে!!!!

“সবার চিন্তাধারা এক নয়।এখন যদি ও আরো খারাপ কিছু করে বসে??

আজরাহান এর অক্ষিযুগল দিয়ে অগ্নিকণা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।কঠিন কন্ঠে বলল—

“তাহলে আমি ওর সাথে কী করবো তোরা ভালো করেই জানিস।”

মারশিয়াদ হালকা হাসে আর বলল–

“এইসব তোকে রেড চিলি বলেছে তাই না!!
মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার জন্য রেগে আছিস নাকি রেড চিলির গায়ে!!!”

আজরাহান কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঞ্চি করে।চোখের কোন ক্ষীন করে বলল–

“কী বলতে চাস তুই??

“কিছু না।আসি আমি।রাতে দেখা হবে।”

আজরাহান বিরক্তিভাব নিয়ে বলল–

“হবে না।কাজ আছে আমার।”

“ওইটা প্যান্ডিং কর।শিহরণ ইনভাইট করেছে।আজ ওর ছেলের বার্থ ডে।”

“তোকে বলেছে তুই যাবি।আমাদের তো বলে নি।”

এর মধ্যেই আজরাহান আর আশফিক এর মোবাইল এর ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে।শিহরণ ম্যাসেজ করেছে।

“চলি আমি।”

“ওকে।”

আশফিক বিস্মিত কন্ঠে বলল–

“মারশিয়াদ কী করে জানে তোকে এইসব প্রহর বলেছে????

আজরাহান ভরা দৃষ্টি রাখে আশফিক এর চোখে।
,
,
,
আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে আজরাহান।ব্লু জিন্স এ সাথে এ্যাশ কালারের শার্ট।প্রহর ধীম পায়ে এসে দাড়ায়।হাসি হাসি মুখে বলল—

“রণ ভাইয়ার বাসায় যাচ্ছেন??

“হুম।তোকে কে বলল??

“জান ভাইয়া।”

মারশিয়াদ এর কথা শুনতেই চোখ বাকিয়ে আজরাহান বলল—

“তুই আবারো ওর সাথে কথা বলেছিস!!!

“উহু।সানায়া আপু বলেছে।”

আজরাহান এর রেডি হওয়া শেষ।প্রহর অধীর আগ্রহ নিয়ে ওকে দেখছে।
আজরাহান বলল–

“যাবি আমার সাথে??

“নিবেন আমাকে??

“পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আয়।”

“আচ্ছা।”

প্রায় পনেরো বিশ মিনিট পরে প্রহর আসে।লাল ফুল স্লীভসের গাউন পড়েছে।চুলের এক সাইডে সিথী করে আরেকপাশের চুল কে হালকা উল্টিয়ে ক্লিপ মেরেছে।ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক।আজরাহান ওকে দেখেই ভ্রু নাচিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল—

“ঠোঁটে এইসব কী মেখেছিস!!!আর কখনো দিবি না।”

“কেনো??

“এইগুলো তে ক্যামিকেল থাকে।ঠোঁট কালো হয়ে যাবে তোর।”

আজরাহান একটা রুমাল নিয়ে তা দিয়ে আলতো হাতে প্রহর এর লিপস্টিক মুছে দেয়।আর তখন আজরাহান এর চোখ যায় ওর বুকে।কাঠ কাঠ গলায় বলল—

” ওড়না কই তোর??

“এইটার সাথে তো ওড়না নেই।আর গাউনের সাথে কেউ ওড়না পড়ে নাকি!!

আজরাহান ছো মেরে ওর হাত ধরে টেনে সানায়ার ঘরে নিয়ে আসে।আর বলল—

“তোর কাছে রেড কালারের কারচিপ হবে???

সানায়া ভাবলেশহীন ভাবে প্রহর এর দিকে তাকায়।একদম যেনো বারবি ডল।

“হুম।”

“দে।”

সানায়া ওর আলমিরা থেকে একটা লাল ওড়না বের করে দেয়।আজরাহান তা নিয়ে প্রহর এর গায়ে জড়িয়ে দেয়।আর বলল—

“আর কোনোদিন যদি ওড়না ছাড়া কারো সামনে গিয়েছিস তাহলে ঠ্যাং ভেঙে ফেলবো তোর আমি।”

সানায়া ঠোঁট চিপে হাসতে থাকে।আর প্রহর ভ্যাবলাকান্তর মতো আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে থাকে।লোকটা আসলেই পাগল!!

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
কমেন্টস করতে কষ্ট হয়😒😒😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here