বৃষ্টি তোমাকে দিলাম পর্ব-৬

0
775

#বৃষ্টি_তোমাকে_দিলাম
পর্ব-৬

“ধারা…তুমি কি একটু বাইরে আসবে? দেখে যাও কত সুন্দর চাঁদের আলো!”

আমি বের হলাম। চাঁদের আলোয় পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে। বিস্তীর্ণ সবুজ অদ্ভূত ফ্যাকাসে রঙের হয়ে আছে আর আমার সামনে ভীষণ সুন্দর দেখতে একটা ছেলে যার গায়ের রঙও জোছনার মতোই ফ্যাকাসে সাদা। আমার হাত ধরে সে নিয়ে যেতে থাকল সামনে। অনেকদূর যাওয়ার পর একটা বাড়ি চোখে পড়ল। পাশে পুকুর। পরিষ্কার টলটলে পানি। সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল পানিতে। তারপর নিজেও ঝাপিয়ে পড়ল। আমাকে টেনে নিতে থাকল পানির অতলে…আস্তে আস্তে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। ডুবছি…ডুবছি…আবার একটা হ্যাচকা টান!

লাফিয়ে উঠলাম৷ ঘেমে একাকার হয়েছি। জানালা খোলা! আশ্চর্য! সত্যি চাঁদের আলো ঢুকছে ঘরে। ভয়ে গা কাঁপছে। কেন ছেলেটা আমাকে গল্পটা শোনালো! ভয়ে দাঁতকপাটি না লেগে যায়!

নড়াচড়া করতেও ভয় হচ্ছে। রাত বোধহয় অনেক বাকি। চুপচাপ পড়ে রইলাম বিছানায়। খুটখাট শব্দ হলেও চমকে দোয়া পড়ছি, ঘুম কেন আসছে না তাও বুঝতে পারছি না।

অবশেষে কখন যেন ঘুমিয়েছি। শেষরাতে আবার দুঃস্বপ্ন। এবার কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি ঘিরে ঘরছে আমায়।

ভোরে উঠে নামাজ পড়ে তবে ভয় কমল। কী বিভীষিকার রাতটা গেল!

সকালে ঝকঝকে রোদ উঠল। উজ্জ্বল দিন দেখে এতদিনের ভেজা মনও চঞ্চল হয়ে উঠল।

মা জিজ্ঞেস করলেন, “রাতে ঘুমাসনি কেন?”

“তোমাকে কে বলল?”

“তোর চোখের ডার্ক সার্কেল। তোর তো আবার মোমের শরীর। একটু গড়বড় হলেই বোঝা যায়।”

“এমনি। ঘুম আসেনি।”

“কুম্ভকর্ণের ঘুম আসেনি? এটা কেমন কথা?”

“মা তুমি একটু বেশিই পুতুপুতু মনে করো আমাকে। আমি এখন বড় হয়েছি।”

“হুম এজন্য ভয়ে কাঁপতে থাকিস দিন দুপুরে।”

“মা!”

“আচ্ছা আজ আমার সাথে ঘুমাবি। ভয় লাগবে না।”

আমি অনেক চিন্তা করেও বুঝলাম না মা কী করে ভয় আর ঘুমানোর ব্যাপারটা ধরে ফেলল!

বাবাও অফিসে যাওয়ার আগে খেতে বসে বললেন, “তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”

আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, “একটা ভূত সারারাত ডিসটার্ব করেছে।”

বাবা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “ভূতটা কি এই বাড়িতেই থাকে?”

“না। পাশের বাড়িতে।”

বাবা একটু মন খারাপ করে বললেন, “আমার একটা ভূত পোষার খুব শখ রে! আবার এলে ধরে রাখিস।”

আমি হতাশ দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি খেয়েদেয়ে উঠে যাওয়ার আগে বললেন, “কৃষ্ণচূড়া গাছটাতে ভূত পুষলে কেমন হয়?”

তারপর হো হো করে হেসে ফেললেন। হাসি দেখে আমার মন খারাপ ভাবটা কেটে গেল।

নাস্তা খেয়ে চা নিয়ে বসেছি, বর্ষণের ফোন। ধরতেই বলল, “ভয় পেয়েছিলে কাল?”

আমি কথা না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “তুমি মানুষটা মোটেও ভালো নও!”

সে দুঃখিত গলায় বলল, “অনেক ভয় পেয়েছ?”

“সেটা আর জিজ্ঞেস করতে হবে না।”

“সরি!”

“একটা সরি বললে ভয় কেটে যাবে? কতগুলো স্বপ্ন দেখেছি জানো?”

“এই রাগ করো কেন? আগেই বলেছিলে রাগ করবে না!”

“কখন বললাম?”

“প্রমিজ করলে যে।”

“ওটা তো…”

“ওটাই, ভয় পাঠিয়েছি তোমার কাছে।”

“যাহ! ফাজিল কোথাকার!”

সে হেসে বলল, “তার মানে গল্পটা ভয়ের।”

“পরিবেশের কারনে ভয় লেগেছে।”

“আরো গুছিয়ে লিখব এটা। পোড়োবাড়ির ভূত, মেয়েটার সাথে কী হয়েছিল সেটা, ভূতের সাথে মেয়েটার প্রেমকাহিনী…”

“হায় হায়! ভূতের সাথে প্রেম?”

“হতে খারাপ কী? তুমিও ট্রাই করো। তোমাদের কৃষ্ণচূড়া গাছে একটা ভূত থাকে। লাল রঙের কোট পরে রাতে গাছের ডালে বসে থাকে।”

“আবার ভয় দেখাচ্ছে…”

“তুমি ভয় পাও কেন?”

“আমি আর কথাই বলব না তেমার সাথে।”

কেটে দিলাম ফোন। এমনিতে ভোলাভালা সেজে থাকে, অথচ পেটে গিজগিজে শয়তানি বুদ্ধি!

একটু পর রাশিকের মেসেজ এলো। “স্যরি!”

ব্লক খুলেছে তাহলে! একবার ভাবলাম ঝগড়া করি। কিন্তু অত ঝগড়াঝাঁটি ভালো লাগে না। ভূতের কাহিনীতে এমনিতেই বিরক্ত লাগছে। আর ক্যাচাল বাড়াতে মন চাইল না। যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে উত্তর দিলাম, “কেমন আছেন?”

সে লিখল, “ভালো। খুব রাগ করেছিলেন?”

“করার কথা নয়?”

“আমি আসলে ওভাররিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম, যেটা করার অধিকার আমার নেই।”

“একদম!”

সে চুপ মেরে রইল কিছুক্ষণ। হয়তো ভেবেছিল বলব, কেন অধিকার থাকবে না? অবশ্যই আছে!
অসহ্য সব ছেলেগুলো! এদের মাথায় বড় বড় সমস্যা।

রাশিক বোধহয় ভেবেচিন্তে লিখল, “হুম। তো আপনি কেমন আছেন?”

“ভয়ে আছি।”

“কিসের ভয়?”

“ভূতের।”

“দেখেছেন?”

“স্বপ্ন দেখেছি।”

“স্বপ্ন! বলেন কি! সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘স্বপ্ন’ বইটা পড়েছেন? ওটা পড়লে অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

“না।”

“পড়ে দেখবেন।”

“আচ্ছা।”

“আপনি কি ব্যস্ত?”

আমি একেবারেই ব্যস্ত নই, কিন্তু লোকটাকে কেন অসহনীয় লাগছে বুঝতে পারছি না। মিথ্যে করে লিখলাম, “বাসাভর্তি মেহমান। কাজের ফাঁকে কথা বলছি।”

“ওহ তাহলে কাজ করুন। রাতে নাহয় কথা হবে।”

“আচ্ছা।”

বিকেলের দিকে আমার কাছে একটা পার্সেল এলো। বলা ভালো কেউ অগোচরে এসে জানালার পাশে রেখে গেছে। খুলে দেখি বক্সের ভেতর নীল রঙের একটা ডায়েরি। ডায়েরির প্রতি পাতায় একবার করে লেখা, “I am sorry Dhara!”

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here