#বেলীফুল
পর্ব-৮
সন্ধ্যার আকাশটা কেমন অদ্ভূত নীল দেখাচ্ছে! বিকেলে এক পশলা বৃষ্টির পর এখন প্রকৃতি স্নিগ্ধ সুন্দর লাগছে। ছাদটা এখনো ভেজা। ভেজা শ্যাওলা ধরা ইটের রেলিং এ ভর দিয়ে অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে ইলা জিজ্ঞেস করল, “উত্তরে কী বললি?”
তুলন মুখ টিপে হেসে বলল, “টাই বাঁধতে পারি। কোথায় শিখেছি শুনবেন?”
লোকটা আগ্রহ করে বলল, “বলুন।”
বললাম, “বয়ফ্রেন্ড শিখিয়ে দিয়েছিল। ও বলত প্রতিদিন টাই বেঁধে দিতে হবে কিন্তু..”
সে তো পুরাই অবাক! “বয়ফ্রেন্ড ছিল আপনার?” প্রায় চেঁচিয়ে বলল। আমি কোনোমতে চুপ করিয়ে বললাম, “জি৷ কিন্তু এখন আর রিলেশন নেই, ব্রেকআপ হয়ে গেছে। আমি একটু বাচাল টাইপ তো, তাই থাকতে চায়নি। তাছাড়া এত কিপটে ছেলে জীবনে দেখিনি। একবার খেতে গিয়ে মাত্র আট হাজার টাকা বিল এসেছে দেখে সে কি হম্বিতম্বি! তো বাপু গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছ এটুকু টাকা নিয়ে আসোনি?” ওই লোক তারপর পুরাই আবুল হয়ে গেল। যাওয়ার আগে মাকে ফিসফিস করে কী যেন বলছিল।”
ইলা চোখ গোল গোল করে তুলনের দিকে চেয়ে বলল, “যদি তোর বাসায় বলে দেয়?”
“না, কথা দিয়েছে বলবে না। বিনিময়ে আমি ওকে ভালো দেখে মেয়ে খুঁজে দেব।”
“গুড ডিল। ভালো মেয়ে পাবি কোথায়?”
“কাউকে না পেলে তুই তো আছিস!”
ইলা জোরে একটা চিমটি দিল তুলনের বাহুতে। তুলন ছিটকে সরে গেল। বলল, “তোর হনুমানের সাথে তো কিছু হবে না। অন্য কাউকে এমনিতেও খুঁজতে হবে।”
“তুই ব্যস্ত ছিলি, কিছুই জানিস না।”
“কী হয়েছে রে?”
“আমাদের মনে হয় হচ্ছে কিছু…”
“সিরিয়াসলি? কী হচ্ছে?”
ইলা সবটা খুলে বলল। তুলন জিজ্ঞেস করল, “দুপুরে তরকারি দিয়ে এসেছিলি?”
“হ্যাঁ। তখন সে মাত্র খেতে বসেছে। তরকারির বাটি রেখে বললাম, “আমাকে একটু খাইয়ে দিন তো!”
“তারপর?”
“যা চেহারা করেছিল না! আমি হাসতে হাসতে শেষ।”
“খাইয়ে দিয়েছে কি না সেটা বল!”
“আরে না। প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে, তারপর চোখ গরম করে তাকিয়ে ছিল। আমি ফিরে এসেছি।”
তুলনও হাসিতে যোগ দিল। সূর্য পুরোপুরি অস্ত গেছে। এখনো আকাশে ম্লান আলো। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়াতে মিষ্টি একটা ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।
“কী ফুলের ঘ্রাণ রে এটা?” জিজ্ঞেস করল তুলন।
“বেলীফুল।”
“আজকের দিনটা সুন্দর তাই না?”
“হুম।”
“এই…মনেই তো নাই, তোর মোবাইল দে, সাজিদকে একটা মেসেজ দিব।”
ইলা মোবাইল বের করে দিল। সেদিনের পর আর কথা এগোয়নি। তুলন লিখল, “আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
সাজিদ অনলাইনে নেই বলে উত্তর এলো না। ইলা জিজ্ঞেস করল, “কী কথা বলবি রে?”
তুলন ঠোঁট উল্টে বলল, “জানি না। যা মনে আসবে লিখে দেব। এমন কথায় রিপ্লাই তাড়াতাড়ি আসে।”
“তুই পারিস ও!”
নিচ থেকে বাচ্চা একটা মেয়ে দৌড়ে এলো। “ফুপ্পি আসো তাড়াতাড়ি, দাদী রাগ করছে..”
তুলন উঠে ছুটল নিচে। তার এতক্ষণ ছাদে থাকার অনুমতি নেই।
ইলা আরও কিছুক্ষণ বসে রইল। আকাশে একটা একটা করে তারা ফোটা দেখল। আঁধার পুরোপুরি নেমে আসার হঠাৎ তার কী ভীষণ একা লাগতে লাগল! মনে হলো পৃথিবীতে তার কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। দু’ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল আপনাতেই।
★★★
রাত আটটা বাজে। ইলা ছাদ থেকে নেমে কী মনে করে খুব সুন্দর করে সেজেছে। শাড়ি পরে চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। গতকাল শাড়ি পরেছিল বলে কানন তার দিকে একটি অন্যভাবে তাকিয়েছে সেটা খেয়াল করেছে ইলা। সে কয়েকটা সেলফি তুলে ফেলল। কাননের মেসেঞ্জারে সে বহুকষ্টে অ্যাড হয়েছে। মাঝে মধ্যে ইলা মেসেজ দিলেও কানন উত্তর দেয় না। সে ছবিগুলো সিলেক্ট করে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিল।
মিনিট কয়েক পর উত্তর এলো, “কে আপনি?”
ইলার বুক ধড়াস করে উঠল। সে ছবি কাননকে পাঠায়নি! তার মেসেঞ্জার দিয়ে তুলনের একাউন্ট লগইন করা ছিল। বেখেয়ালে সে ছবিগুলো সাজিদকে পাঠিয়ে দিয়েছে। কী লজ্জার কথা! এখন কী হবে?
সে কিছুক্ষণ স্থাণুর মতো বসে রইল। তারপর গুছিয়ে লিখল, “আই অ্যাম সো সরি! একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। ছবিগুলো আমার নয়, আমার এক বন্ধুর।”
লিখে ছবিগুলো রিমুভ করে দিল। ওপাশ থেকে উত্তরের অপেক্ষা না করে তুলনের একাউন্ট থেকে বের হয়ে একেবারে নেট কানেকশন অফ করে দিল। তুলনকে সে কী বলবে? তুলন যদি ভুল বোঝে! এত বেখেয়ালি সে কেমন করে হলো?
সাজিদ ওদিকে লিখেছিল, “আপনি এত রহস্য করছেন কেন? কে আপনি?”
উত্তর না পেল না৷ ছবিগুলোও মুছে গেছে। সাজিদ কী মনে করে একটা স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিল ছবিগুলোর। গ্যালারিতে ঢুকে সেগুলো বেশ কিছুক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে দেখল। এই মেয়েটা তার ওপর এত ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে কেন? তাকে পছন্দ করে? করতেই পারে! কিন্তু বড় রহস্য করছে। রহস্যময়ীকে সাজিদের ভালোই লেগে গেল। স্ক্রিনশট থেকে কেটে শুধু ছবিটা সেভ করে রাখল সে।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু