বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১৫

0
3101

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৫

“এসকে এই ব্যাগগুলোতে কি আছে?” ব্রেকফাস্ট করতে করতে জিজ্ঞেস করলো রুহান,

“রুহান, হোয়াট এসকে?এন্ড খাবার খাওয়ার সময় কথা বলা ব্যাড মেনার্স, বলেছিলাম না তোমাকে?”

” মাম্মা এসকে কে আংকেল বললে তার প্রেস্টিজে লাগে তাইতো এসকে বলেছি ”

” রুহান নো মোর ওয়ার্ডস ”

“ইটস ওকে! একটু কথাই তো বলেছে”

” আমার ছেলেকে আমি কি শিক্ষা দিবো তা আপনাকে বলবো না, আপনি কি না বললেই খুশি হবো ” রাগি চোখে তাকিয়ে বললো রুশি।

“দেখো ও আমারও… ” রুহানের দিকে তাকিয়ে বাকি কথাটা হজম করে নিলো, রুহানকে যতক্ষণ না ওর মাম্মা বুঝিয়ে বলবে ততক্ষণ ও বুঝবে না তাই রুশির বলাটাই বেটার যে রুহানের বাবা ও।

রুশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে মিস্টি একটা স্মাইল দিলো “আগে নিজের ছেলেকেতো বলো তুমি ওর বাবা তারপর ভালো বাবা হয়ে দেখিও চান্দু, খুব শখ না জোর করে বাবা হওয়ার ” কথাটা মনে মনে আওড়াতে আওড়াতেই কাটা চামচ দিয়ে জোরে পাস্তায় আঘাত করলো, সায়ান নিজেকে ওই পাস্তার সাথে কল্পনা করতে করতে একবার রুশির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার পাস্তার দিকে।
বেচারার গলা শুকিয়ে গেছে তাই গ্লাসের পানি একনিমিষে শেষ করে ফেললো।

সায়ান গলা ঝেড়ে বলে উঠলো ” আমি তোমাদের সাথে তোমাদের ফ্লাটে থাকতে যাচ্ছি ”
কথাটা শুনতেই রুশির খাবার গলায় আটকে গেলো, কাশতে কাশতে সায়ানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো, ও ভেবেছিল এখান থেকে বেরুতে পারলেই এই লোকের থেকে ছুটকারা পেয়ে যাবে কিন্তু এই গলায় আটকে যাওয়া খাবারের মতো হয়ে গেছে, যা গিলতে পারছে না ফেলতে পারছে।

“ইয়েয়য়য়, এসকে আমাদের সাথে যাচ্ছে,রুহান ইজ সো হ্যাপি ”
রুশি রুহানের সামনে না করতে গিয়েও করলো না, এই প্রথম কাউকে নিয়ে রুহান এত এক্সাইটেড আর এতটা মিশতে দেখলো কারো সাথে।কিন্তু তাই বলে এভাবে নিজেদের ফ্লাটে ছেলেমানুষ নিয়ে যাওয়া যাবে না, আশেপাশের মানুষ কি বলবে!

রুহান আগেই একজন বডিগার্ড এর সাথে বেরিয়ে গেছে, রুশি বেরুতে নিয়েই ওর হাত চেপে ধরলো সায়ান।

“আমি চাই তুমি রুহানকে বলো আমি ওর বাবা, তুমি বললে ও যতোটা ভালো ভাবে বুঝবে অন্যকেউ বললে ওতোটা বুঝবে না ”

“তো এতে আমি কি করতে পারি? আমিতো এমনি চাইনা আমার ছেলে জানুক ওর বাবা আছে। আপনার ইচ্ছা হলে আপনি বলতে পারেন, গো এন্ড টেল হিম ইউ আর হিজ কাওয়ার্ড ফাদার হু লেফট হিজ মম ”

“রুশি ইটস নট আ জোক ওকে??”

“ইটস মিস- আনাম ফর ইউ, আপনি আমার এতোটাও ক্লোজ না যে আমার নিকনেম বলবেন ”

“একটা মেয়ের জন্য তার হাজবেন্ড থেকে ক্লোজ কেউ হয়না ”

” আই ডোন্ট ইভেন রিকোগনাইজ ইউ এজ ফাদার অফ মাই সান লেট এলোন হাজবেন্ড ”

“মানবে মানবে একদিন নিজের ছেলের বাবাতো মানবেই সাথে হাজবেন্ড ও মানবে ”

” ইন ইউর ড্রিমস ”

” আমি ওই সপ্নই দেখি যা পূরণ করার ক্ষমতা আমার আছে ”

“চেলেঞ্জ করেছেন? ”

” নাহ শুধু জানিয়ে দিচ্ছি, নিজের মনকে সামলে রেখো নাহয় কখন আমার প্রেমে পড়ে যাবে বুঝতে পারবে না ”

“হাহ, আমার মন আমার অনুমতি ছাড়া তার দরজা খুলবে না কখনোই ”

“দেখা যাবে ”

সায়ান লাগেজ বের গাড়ির দিকে এগোচ্ছে, রুশি হঠাত সামনে দাঁড়িয়ে বললো

” আপনি সত্যি সত্যি আমাদের সাথে থাকতে যাচ্ছেন? ”

” তো কি মিথ্যে মিথ্যে যাবো? “ভ্রু কুচকে বললো।

“আমাদের ফ্লাটে মাত্র দুটো রুম, আপনার থাকার জায়গা নেই,একটাতে আমি রুহান থাকি, আরেকটাতে সুজি ”

” তো তুমি আর সুজি একটাতে থেক আর আমি আর রুহান একটাতে থাকবো ”

” আমি রুহানকে ছাড়া ঘুমাতে পারিনা ”

” তাহলে ইউ আর অলসো ওয়েলকাম ইন দ্যাট রুম ”
বলেই রুশিকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে গাড়ির দিকে চলে গেলো

” মানে কি আমি এই লোকের সাথে ঘুমাবো! ইম্পসিবল”

গাড়িতে রুহান জেদ ধরে সামনের সিটে বসেছে তাই অগত্যা সায়ান রুশি একসাথে বসেছে। রুশি চুপচাপ বসে ছিলো তখন গানের গুনগুন আওয়াজ শুনলো,
কানখাড়া করে শুনার চেষ্টা করলো

“মনের দরজা খুলোনা ~~
ভালোবাসি বলোনা
তুমি দূরে দূরে আর থেকোনা ~~

রুশি রাগি চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে কানে হেডফোন গুজে দিলো। সায়ান মুচকি হাসছে ওর কান্ড দেখে

🌸🌸🌸

“বস সায়ান জামিল খান এখন কলকাতায়, দুই সপ্তাহ ধরে সেখানেই আছে কিন্তু ঠিক কি করছে সে এখনো বুঝতে পারছিনা ”

“আচ্ছা ভালোভাবে খোজ লাগাও, আর ওই মেয়েটির খোজ পেয়েছো? ”

” না বস এখনো পায়নি তবে পেয়ে যাবো মনে হচ্ছে আর সায়ান জামিল খানও এখনো পায়নি মনে হচ্ছে ”

” তাড়াতাড়ি খোজ লাগাও ওর আগে আমার জানতে হবে ওই মেয়ে কোথায় আছে ”

তখনি ফোন বেজে উঠে লোকটির, ওইপাশ থেকে একটি তিক্ষ্ম মেয়েলি আওয়াজ ভেসে উঠলো

” হাউ আর ইউ জান? ”

” আম ফাইন, মিসিং ইউ অলরেডি ”

” অহহ আই মিসড ইউ ঠু, তোমার কি অবস্থা এখন? ”

” আগের থেকে বেটার বেবি, কবে আসছো তুমি?”

” মেইবি নেক্সট মান্থ ”

” অকেহ, কাম সুন বাই”

ফোনটা রেখে মুচকি হাসি দিলো লোকটি, এই মেয়ের মধ্যে কিছু একটা আছে যা বাকি মেয়েদের মধ্যে খুজে পায়নি। নাহয় এত মেয়ের সাথে মিলামেশা তার তবে কাউকে নিজের স্ত্রী বানানোর ইচ্ছে জাগে নি তার। বেড পার্টনার অনেকেই হয়েছে তবে এই মেয়েই প্রথম যাকে দেখে মনে হলো এই পবিত্র চেহারার হাসিই দেখাই তার জন্য অনেক তাইতো আজ পর্যন্ত হাত পর্যন্ত ছুয়ে দেখেনি তার। পৃথিবীতে এমন কিছু মেয়ে আছে যারা শুধু ওয়াইফ মেটারিয়াল হয় আর তার মধ্যে ও একজন।

সায়ান নিজের জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখছিলো তখনি রুহান এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে আর বললো
“বাবাই ”
এই ছোট্ট শব্দটি যেন ওর ছুঁয়ে গিয়েছে, রুহানকে কোলে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ও। বাবা হওয়ার সুখ ঠিক কতটুকু তা একজন বাবার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।

#চলবে

( জানিনা কি লিখেছি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here