বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-২৫শেষাংশ

0
3769

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২৪(শেষ)
#শেষাংশ

কিছুক্ষণ পুর্বে ~~

“কে ফোন করেছে বউমনি? তোমাকে এত টেন্স দেখাচ্ছে কেন?”

“সাহিল ফোন করেছে সামু, ইনান আর সায়ান নাকি ফাইটিং করছে, ওদের সামলাতে পারছেনা তাই আমাকে যেতে বলেছে ”

“হঠাৎ ভাই আর ও মারামারি কেন করবে? সিরিয়াস কিছু হয়নি তো?”

“ওইখানে অনেক আওয়াজ হচ্ছিলো, সাহিল স্পষ্ট করে কিছু বলেনি শুধু বলেছে তাড়াতাড়ি যেতে ”

“ভাবি আমিও যাবো তোমার সাথে, চলো”

“আমরা চলে গেলে রুহান এর কাছে কে থাকবে?ওকে একা ফেলে যাওয়া তো সম্ভব না ”

তখনি রুহানের বড় আব্বু বলে উঠলো

“তোমরা দুজন যাও বউমা, আমি আছি এখানে তোমরা টেনশন করোনা ”

“জি দাদাজি, নিজের আর ওর খেয়াল রাখবেন আর কিছু হলে জানাবেন আমাকে ”

“তুমি নিশ্চিন্তে যাও বউমা”

রুশি তাড়াতাড়ি সামুকে নিয়ে বের হলো, ও এটাই ভেবে পাচ্ছেনা এত ভালো বন্ধুদের মধ্যে হঠাৎ কি হলো? যে ওরা এত এগ্রেসিভ হয়ে গেলো আর মারামারি পর্যন্ত করছে। বাচ্চা নাকি সায়ান! মানুষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার চেষ্টা করে আর উনি সোজা এক্সটিম হয়ে গেলেন। আর পারিনা বাবা, মনে হচ্ছে দুটো বাচ্চা পালছি।

সায়ান আর ইনান সামনে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখলো টিভিতে একজনকে দেখা যাচ্ছে কোন এক গাড়ির ভিতরে, মাথায় ক্যাপ পড়া জায়গাটা কিছুটা অন্ধকার তাই চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।

“হোয়াটস আপ গাইজ?এভ্রিথিং ইজ ফাইন বিটউইন ইউ?ওহ লুকস লাইক এভ্রিথিং ইজ ফাইন”

“হু আর ইউ?হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ফ্রম আস?” সায়ান চেঁচিয়ে বললো

“হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট, ওয়েট! “বলেই কিছু একটা করলো তারপর বললো “কেমন আছো দাদুভাই?”

সায়ান থমকে গেলো কয়েকসেকেন্ডের জন্য তারপর ইনানের দিকে তাকালো ও ভুল শুনেছে কিনা!ইনানও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্ক্রিনে থাকা মানুষটিকে দেখে যেন চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে আর গলা হঠাৎ করে চেঞ্জ!

“কি বিশ্বাস হচ্ছে না?আমারো বিশ্বাস হয়নি কিন্তু দেখো এই চেহারা একদম অবিকল তোমার দাদার মত তাইনা! হাহাহা উপসস ওয়েট ” বলেই গলার পাশ থেকে কিছু একটা খুলে বললো
“এবার চিনতে পারছো আমায় ” গলায় স্বর পরিবর্তন হওয়াতে সায়ানের বুঝতে দুই সেকেন্ড ও লাগলো না,হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বললো

“লরেন লিউস?”

তখনি রুশি আর সামু তাড়াহুড়া করে ভেতরে ঢুকলো,সামু আর কিউরিসিটি ধরে রাখতে না পেরে বললো “তোমরা নাকি মারামারি করছিলে?কি নিয়ে করছিলে মারামারি?”

“আরে বউমা আর আমার সুন্দরি নাতনিও দেখছি আছে এখানে, একটা কথা বলি তোমাদের এই দাদাজি সাজতে গিয়ে আমার হাতের দুটো পাখি হাতছাড়া হয়ে গেছে যাদের কাছে থেকেও কিছু করতে পারিনি, নাহয় ধরা খেয়ে যেতাম তো ”

রুশি আর সামু যেন কিছুই বুঝতে পারছেনা, যদি চোখের ভুল না হয় তাহলে সামনে দাদাজি বসে আছে কিন্তু কন্ঠ! তা একদমি মিলছেনা, কে এই লোক?

“মুখ সামলে কথা বল নাহয় তোকে পুতে রেখে দিবো তোকে ” চিল্লিয়ে বললো ইনান

“কন্ট্রোল ইয়াং ম্যান কন্ট্রোল! এইটুকু শুনেই এই অবস্থা সামনের গুলো শুনলে কি করবে হাহাহা,”

“দাদাজি কোথায়? কি করেছিস তার সাথে?”

“তোমাদের অনেক প্রশ্ন তাইনা আমি কে? আর এই চেহারা! সায়ান তোর দাদাজি তো নেই পাঁচ বছর আগেই ভুমম, কিন্তু আমি মারিনি তাকে এই তোর চাচাকে দেখছিস সে মেরেছে। মনে আছে তোর দাদা পাঁচবছর আগে ডেনমার্কে গিয়েছিলো?সেখানে তার এক্সিডেন্ট হয় আর অপারেশন করা লাগে? কিন্তু তারতো অপারেশন হয়নি হয়েছে আমার! তোর দাদাতো সেইদিনই মারা গেছে আর আমাকে বাচানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমি তখন পুলিশের হাত থেকে বাচতে হসপিটালে রোগি সেজে ছিলাম আর তখনি তোর দাদার লাশ আসে আর আমি জানতে পারি আমার সবচেয়ে বড় শত্রুকে শেষ করার এর থেকে ভালো উপায় নেই তাই ওইদিন অপারেশন করে পার্মানেন্টলি লরেন লিউস থেকে সায়ান জামিল খানের দাদা হয়ে গেলাম আর তার সাথে পার্মানেন্টলি থাকা শুরু করলাম ”

“তারমানে তুই বলেছিস যে তুই আমার বউকে চিনিস, কলকাতায় তুই আমাকে মারতে লোক পাঠিয়েছিস, আমার উপর হওয়া সকল এটাক তুই করেছিস আর রুহানকে ড্রাগস তুই দিয়েছিস তাও সে দুইদিন যে দুইদিন ইনান ছিলো যাতে সন্দেহ ইনানের দিকে থাকে আর তুই বেচে যাস?”

“ইয়াহ, সব আমি করেছি তার থেকে বড় কথাকি জানিস ওইযে ইনানের কাছে ছবিগুলো আমি পাঠিয়েছি,তোর বউ কলকাতায় কখন কি করেছে সব আমি জানতাম আর তোর বাচ্চাকে শুধু ড্রাগস দেইনি হিপনোটাইজ ও করেছি তাইতো আমার রুম ছাড়া অন্য কোন রুমে যেতেই চাইতো না ”

“কেন করেছিস এসব?”

“সিম্পল তোকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য। তুই আমার বিরুদ্ধে প্রুফ পুলিশকে দিয়ে আমার লাইফ হেল করেছিস, আমি তোর লাইফে এসে তোর লাইফ হেল করেছি ”

“বাবাই, মাম্মার কাছে যাবো, আমার হাত খুলে দাও কষ্ট হচ্ছে, বাবাই… ”

“শুনতে পাচ্ছিস তোর ছেলের আওয়াজ দাড়া দেখাই কোথায় আছে “বলেই কিছু দূরে থাকা গাড়িটির দিকে কেমেরা ঘুরালো,তারপর একটা রিমোট হাতে নিয়ে বললো “এই যে এটা টিপ দিলেই গাড়িটা বুমমম
হাহাহা ”

“দেখ তোর যা চাই তা আমি তোকে আমি দিবো, দরকার হয় আমাকে মেরে ফেল তবুও ওকে ছেড়ে দে ”

“কিন্তু আমার যা দরকার তাতো আমি পেয়ে গিয়েছি তাই তোর জীবন দিয়ে কি করবো বরং তুই সারাজীবন আফসোস কর ওকে…”বলেই রিমোটে ক্লিক করলো আর বিকট শব্দে সামনের গাড়িটি ব্লাস্ট হয়ে গেলো

“রুহান… সায়ান আমার ছেলেকে কি করেছে ও। আমার রুহান কি তাহলে আর মাম্মা বলে ডাকবে না আমায়? আমার রুহানকে এনে দাও তুমি, সব তোমার জন্য হয়েছে না তুমি আমার লাইফে আসতে না আমার ছেলের কিছু হতো, আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না কখনো না “বলে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো

সায়ান যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেইটাই হয়েছে, ওর ছেলেকে ও নিজের অতীত থেকে বাঁচাতে পারেনি, ওর লাইফের একটি অতীত ওর বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছু নষ্ট করে দিলো, রুহান আর কোনদিন ওকে বাবাই বলে ডাকবে না, ওর মিষ্টি হাসি আর কোনদিন দেখা হবে না ওর। এই মুহুর্তে নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর, এই দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যর্থ বাবা ও। ও ক্ষমা ডিসার্ভ করেনা, এটারই যোগ্য ও।

🌸🌸🌸

আট মাস ১১দিন পর

হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে সায়ান, রুশি অপারেশন থিয়েটারে। সেদিন রুশি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল তারপর ও জানতে পারে রুশি মা হতে চলেছে,কি রিয়াক্ট করা উচিৎ ছিলো ওর জানা ছিলো। রুশি হয়তো বেচে আছে শুধুমাত্র ওর সন্তান আসবে জেনে, কিন্তু অতিরিক্ত স্ট্রেসে ছিলো তাই ডেটের পুর্বেই বাচ্চা সিজার করতে হচ্ছে।

“মিস্টার খান আপনার মেয়ে হয়েছে, কনগ্রাজুলেশন”

সায়ান স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে, যদি রুহান থাকতো তাহলে ওর দুটি সসন্তান হতো।

“আমার স্ত্রী? ও কেমন আছে ”

“উনি ভালো আছেন কিছুক্ষনের মধ্যেই ওয়ার্ডে শিফট করা হবে ”

সায়ান বাচ্চাটিকে কোলে নিলো,ওর অজান্তেই চোখের পানি ঝরছে।

“ভাইয়া দেখি বাবুকে দেখি?” সামুর কোলে বাবুকে দিয়ে করিডোরে থাকা বেঞ্চে বসলো।সামু আর ইনানের বিয়ে হয়েছে পাচ মাস হলো। ওরা খবর শুনেই ছুটে এসেছে

“আগে কি করবি? “কাধে হাত রেখে বললো ইনান

“জানিনা তবে লরেন লিউসকে ছাড়বো না আমি, ওকে হাজারবার মারলেও আমার শান্তি হবে না ” হাত মুঠো করে

কিছুক্ষণ পর~~

সায়ান কেবিনে রুশির পাশে বসে আছে আর রুশি বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে

“যদি একটা কথা বলি রাখবেন?”

এই আটমাসে এই প্রথম ওর সাথে কথা বললো রুশি, সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই বললো

“হুম”

“আপনি লরেন লিউসের কিছু করতে যাবেন না ”

“কেন? ওকে তো আমি জ্যান্ত পুতে রেখে দিবো” চোয়াল শক্ত করে

“আপনার জন্য আমি আমার এক সন্তানকে হারিয়েছি, ওকে হারাতে চাইনা, আমার উপর দয়া করুন। প্লিজ আপনার জীবনের সাথে আমার সন্তানের জীবন জড়িত তাই আমাকে কথা দিন আপনি কিছুই করবেন না, আমাকে আর আমার সন্তানকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে চলুন যেখানে আপনার অতীত আমাদের ছুতে পারবে না “ঢুকরে কেদে উঠে,সায়ান রুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো

“হুম চলে যাবো দূরে কোথাও আমরা যেখানে কেউ খুজে পাবেনা আমাদের ”

কিছু কিছু গল্পের সমাপ্তিতে নতুন গল্পের সুচনা হয়, হয়তো নতুন রুপে নতুন কাউকে নিয়ে।

~~সমাপ্ত~~

(আজকে গল্পটা শেষ হয়ে গেলো, খারাপ লাগছে যে কাল থেকে আর দিতে হবে না। এই গল্পে আমি অনেক সাড়া পেয়েছি তাই এতদিন ধরে যারা আমার সাথে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ,আমার সকল পাঠকদের মনের গহিন থেকে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমি কোন পাকাপোক্ত লেখিকা নই, শখের বসে লিখা বলতে পারেন ফেভারিট পাস টাইম। তাই যাদের মতো হয়নি তাদের মন থেকে স্যরি বলছি।
আমি সায়ান আর রুশিকে অনেক মিস করবো, আপনারা করবেন??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here