#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ৩
যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড স্ট্যাট বলা হয় ক্যালিফোর্নিয়াকে, সেই রাজ্যের বৃহত্তম শহর হচ্ছে সপ্নের শহর লস এঞ্জেলস যাকে অনেকে সিটি অব এঞ্জেলস হিসেবে চিনে। সেই শহর হলিউডের প্রাণভোমরা হিসেবেও পরিচিত। সেখানে নাইট ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “এলিভেট লঞ্জ ”
রাত-১.৩০
লস এঞ্জেলসের এলিভেট লঞ্জ নাইট ক্লাবে বসে রেড ওয়াইন ড্রিংক করছে সায়ান। বিজনেস ডিল ক্যান্সেল হওয়ার পর থেকে এখানে এসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে সে।তার বন্ধু এরেন তাকে বাধা দিয়েও থামাতে পারছে না
” হে এসকে, হোয়াই আর ড্রিংকিং ঠু মাচ টুডে? ”
” বিকজ আই এম মিসিং হার ভেরি মাচ, হোয়াই জাস্ট শি লেফট মি, হোয়াই?”
” লুক ডুড, সো মেনি বিউটিফুল লেডিস আর এরাউন্ড ইউ এন্ড ইউ আর মিসিং দেট দেম গার্ল!”
লস এঞ্জেলসের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় “ইউভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ” থেকে পড়াশুনা করেছে সে, সবাই তার নাম সায়ান জামিল খান উচ্চারণ করতে পারতো না তাই এসকে হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলো। কত মেয়ে তার দিওয়ানা ছিলো তখন,প্রতিদিন নিজের ডেস্কে লাভ লেটারের মেলা বসতো। দেখতে ফর্সা, হাইট ৬’১” আর কিলার স্মাইল অনেককে ঘায়েল করতো, আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে বাদামি চোখ দুটি। দেখলে কেউ বলবেই না সে বাংলাদেশি, কেমন একটা বিদেশী বিদেশী ভাব।
আর সে কিনা চার বছর ধরে একটা মেয়েকে পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছে? খুজে বেড়াচ্ছে তার এক রাতের বউকে, সেদিন রাগের মাথায় মেয়েটির সাথে ওমন আচরণ করা উচিৎ হয়নি, সেদিন রাগের মাথা মেয়েটিকে নিজের করে নিলেও এখন বুঝতে পারছে যে ওই পরিস্থিতিতে সবাই এমন রিয়াক্টি করতো। তবে তার ও দোষ ছিলো না। ওইখানের মহিলাটি তাদের জানালা দিয়ে দেখছিল বলেই হুট করে জড়িয়ে ধরেছিল সে কিন্তু ওইটুকুন মেয়ে তাকে চড় মেরেছিল, কি সাহসী তার বউ। মুচকি হেসে গ্লাসে চুমুক দিলো সে।
সেদিন রাতে যখন মেয়েটি যখন ফুফিয়ে কাঁদছিলো তখন তারও বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছিলো, বড্ড অসহায় লাগছিল নিজেকে। রাগের মাথায় কত বড় ভুলটাই করেছিলো। সকালে মেয়েটির অজান্তেই নিজের কনিষ্ঠা আংগুলের আংটিটি খুলে অনামিকাতে পরিয়ে দিয়েছিল, কারণ দিদানকে বলতে শুনেছে যে প্রথমরাতে মেয়েরা স্বামী থেকে উপহার আশা করে। আচ্ছা তার বউ উঠে যখন আংটিটি দেখেছিলো তখন সে কি আশ্চর্য হয়েছিলো? খুশিতে তার চোখ থেকে দু ফোটা নোনাজল কি বেরিয়েছিল। খুব ইচ্ছে ছিলো তার ঘুমন্ত মুখটি দেখার কিন্তু তার আগেইতো চলে যেতে হলো।
ফোন বের করে কোথাও একটা ফোন করলো সায়ান,
“এনি নিউজ অফ হার?”
অপর পাশ থেকে কিছু একটা বললো তাতেই রেগে দাঁড়িয়ে ফোনটা আছাড় মারলো
“ইউজলেস সবকটা ইউজলেস ”
সায়ানের এইরকম হুটহাট রাগের সাথে বেশ পরিচিত এরেন, ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে চিনে সায়ানকে কিন্তু কখনো কোন মেয়ের জন্য ডেস্পারেট হতে দেখে নি ওকে, তাও আবার তার জন্য যাকে সে দেখেইনি।
” লেটস গো এস”
” আই এম নট ড্রাংক এরেন, আই কেন গো বাই মাইসেল্ফ ”
কোর্টটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সায়ান, আজকাল রেড ওইয়ান এর নেশাও ধরে না তাকে কারণ সেতো ডুবে আছে তার শ্রেয়সীর নেশায় যা মদের নেশাকেও হার মানায়। সে ভালো করে দেখেনি মেয়েটিকে তবে তার ছোয়া পুরো অংগ জুড়ে ছড়িয়ে আছে, তার বিশ্বাস মেয়েটি তার সামনে আসলে ঠিক চিনতে পারবে তাকে কারণ আবছা আলোয় দেখা চেহারা এখনো ভুলেনি সে। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ফ্লাটে ভিতর চলে গেলো, এই ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকার সুবাদে এখানে নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে তার, এই শহরটি তার সেকেন্ড হোম প্রায়শই বিজনেস এর সুবাদে এখানে আসা হয়। কোর্টটা সোফায় ফেলে বিছানায় গিয়ে জুতাসহ শুয়ে পড়লো, আজকে সে থাকলে কি এত রাতে ফিরার জন্য খুব করে বকতো? জানা নেই এই প্রশ্নের জবাব তাকে পেলে পাওয়া যাবে, পালিয়ে বেড়াবে কোথায়? পাখি যতই উড়ে বেড়াক দিনশেষে তাকে নিড়েই ফিরতে হয়, তার পাখিটাকেও যে ফিরতে হবে তার কাছে শুধু মাত্র তার কাছে।
🌸🌸🌸
ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন গভীর রাত হলেও কলকাতা শহরে এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো বলে। বাস জার্নিতে প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীরটি যেন আর চলতে চায়না রুশির। তবুও যে চলতে হবে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে গলির শেষ মাথায় চাইল্ড কেয়ার যেখানে তার প্রাণভোমরা রয়েছে। রুহান তার একমাত্র ছেলে, গত মাসে তার তিন বছর শেষ হয়ে চারে পা দিলো, তবে চার বছরের বাচ্চার তুলনায় সে একটু বেশিই মেচিউরড। চোখে চশমা পরে আর এতটুকু বয়সে কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। না চোখে কোন সমস্যা নেই কিন্তু জনাবের স্পষ্ট কথা চশমা পড়তে ভালো লাগে তাই চশমা কিনে দিতে হবে। ব্যস তার কথা ফেলার সাধ্য কি আর আছে!
চাইল্ড কেয়ারে ঢুকতে ছোট দুটি হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুশিকে
“মাম্মা, রুহান মিসড ইউ সো মাচ”
” আই মিসড ইউ ঠু বেবি, আচ্ছা আজকে কি কি শিখলে?”
“অনেক কিছু, আচ্ছা মাম্মা জানো কালকে কুশান এর বাবা তাকে নিতে আসছে তাহলে আমার বাবাই আমাকে নিতে আসে না কেন? তুমি সবসময় আসো কেন? আর বাবাই বাসায় ও কেন আসেনা? ”
এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই, কি করে তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে আর ফিরে আসেনি। ছোট্ট শিশুটার মনে বাবার প্রতি ঘৃণা জন্মাক সেটা সে চায়না। বড় হলে এমনিই বুঝতে পারবে সব।
*মাকে চুপ থাককে দেখে রুহান বুঝতে পারলো যে তার মা তার প্রশ্নে কষ্ট পেয়েছে তাই সে আর কোন দিন এই প্রশ্ন করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করলো
“মাম্মা, রুহান আইস্ক্রিম খেতে চায়”
” ওকে বেবি, চলো মাম্মা আইস্ক্রিম কিনে দিবে”
“মাম্মাকে বাবাই সম্পর্কে বলা যাবে না আর, বাবাই খুব পচা রুহানকে একটুও মিস করে না, রুহান হেটস বাবাই(মনে মনে)”
আইস্ক্রিম এর দোকানের পাশের দোকানের রিমোট কন্ট্রোল গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে রুহান।প্রতিদিন এই গাড়িটির দিকে তাকায় সে আর কিনার প্রবল বাসনা জাগে তার কিন্তু সে মাম্মাকে বলবে না কারণ মাম্মার কাছে ওতো টাকা নেই আর সে না কিনে দিতে পারলে কষ্ট পাবে। কিন্তু তবুও গাড়িটা কিনার লোভ সামলাতে পারেনা সে। একদিন সে টাকা জমিয়ে গাড়িটি কিনবে বলে প্রতিদিনের মতো আজোও নিজেকে আশ্বাস দিল।
দুই অচেনা শহরে দুইজন মানুষ, কেউ কাউকে খুজে বেড়াচ্ছে আর কেউ বা মনের অজান্তেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার থেকে। কি হবে এই লুকোচুরি খেলার শেষ?
#চলবে💔
(ছোট করে দেয়ার জন্য স্যরি, আর যারা বলছেন কিছু বুঝতে পারছেন না তাদের বলছি একটু ধৈর্য সহকারে পড়ুন হয়তো বুঝতে পারবেন, এখনিতো শেষ না। আর যারা শেয়ার দেন তারা একটু আমাকে মেনশন দিয়েন প্লিজ)