বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-৯

0
3260

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ৯

হুগলি নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত কলকাতা শহর যাকে আনন্দনগরী বলা হয়ে থাকে, এই কলকাতা নামকরণের পেছনে একটি মজার মত হচ্ছে ‘খাল’ ও ‘কাটা’ এই দুইয়ের বিকৃতির ফলে নাকি এর উৎপত্তি। নাটক, রঙ্গ মঞ্চ আর থিয়েটারে রমরমা এই কলিকাতা শহর যাকে অনেকে ক্যালকাটা বলেও চিনে। অনেক কবির সাহিত্যচর্চা এই শহরকে কেন্দ্র করেই হয়েছিলো যার মধ্যে বাংলার কবি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ ও রয়েছে। সমরেশ মজুমদারের ‘কলকাতা’ রচনায় কলকাতায় নানাধরনের মানুষের বাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, এটিকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। ভারত সম্রাজ্ঞী ‘রাণি ভিক্টোরিয়া’ এর স্মৃতিসৌধ হিসেবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল রয়েছে এই শহরে।এই হল থেকে ১৫ মিনিট দূরত্বে রুশিদের ফ্লাট।

রাত ১০ টার কাছাকাছি সময়, রুশি কাজ শেষে ফ্লাটে ফিরছে। আজ 5 দিন হল কলকাতা ফিরেছে, আবারো আগের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। সেই রেডিওতে কাজের পাশাপাশি তিনদিন ধরে একটি ফাইভ স্টার হোটেলের পারটাইম জব করছে ও।
সুজির বাবার বন্ধুর হোটেল এটি, তাই কাজ পেতে বেগ পেতে হয়নি, বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা৩০মিনিট পর্যন্ত শিফট ওর, যেহেতু রুহান বাসায় তাই ওভারটাইম করেনা ও। বাংলাদেশে যাওয়ার কারণে বেশ কিছুটা ঋণের নিচে আছে ও তাই এই জব বেছে নেয়া যা সেফ।

কিন্তু তিনদিন ধরে বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে ও, সবসময় সিক্সথ সেন্স বলে ওকে কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কেউ ওর পিছু নিচ্ছে কিন্তু পিছনে ফিরতেই যেন সব ঠিকঠাক। এই যে অফিসে, বাসে, বাড়ির পাশে এমনকি রেস্টুরেন্টে থাকাকালীনও এমন হয় ওর সাথে, প্রথমে মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিলেও তিনদিন ধরে মনের ভুল কি করে হতে পারে? কোন ভুতটুত পেছনে লাগলো নাতো? আজকে কেমন জানি একটু ভয় লাগছে তাই ব্যাগটি শক্ত করে ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো নিজ ছায়া ব্যতীত অন্য একটা ছায়া তার পিছু নিচ্ছে, সে স্থির হতেই ছায়াটিও স্থির হয়ে গেলো। এটা দেখেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।

ভুতদেরতো ছায়া থাকে না তারমানে আস্ত জলজ্যান্ত মানুষ পিছু নিয়েছে, ভয় আড়ষ্ট হয়ে দ্রুত হাটা শুরু করলো কারণ এত রাতে ছিনতাইকারী ছাড়া আর কে পিছু নিবে! সামনে কয়ফুট লম্বা গলি দেখেই গলির মাথায় দাঁড়িয়ে পড়লো, সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না।এবার ও স্থির হলেও ছায়াটি স্থির হলো না বরং ক্রমশ তার নিকটে আসতে লাগলো,রুশি ভয়ে আটশাট হয়ে গেছে, ছায়া যত নিকটবর্তী হচ্ছে হৃদস্পন্দন যেন তত দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে। খুব নিকটবর্তী হতেই ও ব্যাগ খামছে ধরে খিচে দাঁড়াল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ছায়ার মালিক কাছে না এসে পাশ কাটিয়ে গলিতে চলে গেল।ভয়ে লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল, গলিতে ঢুকতে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলো রুশি, না যা ভাবছিল তা নয় কেউ ওর পিছু নিচ্ছিল না।
কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে অন্ধকার সেই গলির ভেতর দিয়া হাটা শুরু করলো, শেষমাথার কাছাকাছি আসতেই হেচকা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এমন ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব রুশি, মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও যে ধাক্কা দিবে সেই শক্তিটাও মনে হচ্ছে নেই, ও নিশ্চুপ হয়ে ব্যাক্তিটির লাভ-ডাভের আওয়াজ শুনছে। লোকটি হঠাত তার হাত কিছুটা আলগা করলো, হাত দিয়ে মাথা উচু করে রুশির অধরযুগল নিজ আয়ত্তে নিয়ে নিলো, রুশির কয়েকসেকেন্ড লাগলো বুঝতে যে কি হচ্ছে, বুঝতে পেরেই লোকটিকে ধাক্কা দিতে লাগলো কিন্তু লোকটি যেন এই পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো, লোকটি ওর হাত দুটো ধরে পেছনে নিয়ে আকড়ে ধরলো আর সচেতন ভাবে অধর সুধা পান করতে লাগলো।

রুশি চেয়েও একফোঁটা নড়তে পারেনি, ওর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, এতক্ষণ ছুটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে ও শান্ত হয়ে গায়ের ভার লোকটির গায়ে ছেড়ে দেয়। ও শান্ত হতেই লোকটি ঠোট ছেড়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজ করে বলে
“যতই পালিয়ে বেড়াও না কেন তোমার গন্তব্য কিন্তু আমি তাই যেই রাস্তায় তুমি চলো না কেন আমাতেই তোমার সমাপ্তি হবে, সো বি রেডি ফর বিং মাইন ”

তারপর ওকে ছেড়ে দেয় লোকটি, ছেড়ে দিতেই এদিক ওদিক না তাকিয়ে রুশি ছুটে গেলো ফ্লাটের রাস্তায়। গলির শেষমাথায় আসতেই সোডিয়াম লাইটের আলোয় মুখখানি স্পষ্ট হয়ে উঠলো লোকটির, আংগুল দিয়ে ঠোটের কোনা ঘষতে ঘষতে মুচকি হেসে বললো

“আজ তো ছেড়ে দিলাম কিন্তু দ্বিতীয় বার কিন্তু ছাড়বো না বউসোনা, তোমাকে আমার হতেই হবে শুধু আমার আর আমাদের মাঝে যে আসবে তাকে আমি শেষ করে দিবো, মাত্র আর কয়েকঘন্টা তারপর…”

🌸🌸🌸

রুশি ঘরে এসেই রুহানকে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো, ব্যাগটা খাটের কোনায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য,ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোট ঘষতে লাগলো, এতক্ষণ যাবত সাবান দিয়ে ঘষার পরও যেন শান্তি লাগছেনা, মনে হচ্ছে ঠোট কেটে ফেলি। লজ্জায় মাথা, নাক, কান সব কাটা যাচ্ছে, একটা ছেলে ওকে কিস করে চলে আর ওকে শায়েস্তা না করে ও পালিয়ে চলে এসেছে ভাবতেই রাগ উঠছে
” এত ভিতু কবে থেকে হলি রে তুই রুশি, একটা লোক ছিনতাই করার পরিবর্তে তোর কিস করে চলে গেলো আর তুই হাবার মত দাঁড়িয়ে ছিলি! যেই ছাড়লো ওমনি পালিয়ে এলি, তোর ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দেয়া উচিৎ ছিলো।বেয়াদব, অসভ্য ছেলে একা মেয়ে পেয়ে আমার সর্বনাশ করে দিলো, যদি আবার সামনে পাই একদম ঠোট কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো খচ্চর কোথাকার ”

চিরুনি শক্ত করে খামচে ধরে রাগি ফেস নিয়ে বললো যেন পেলে এখনি কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে, রুশির এহেন কাজ দেখে শব্দ করে হেসে দিলো সায়ান। ওকি জানে স্বয়ং ওর স্বামী ওকে কিস করেছে! জানলে কি লজ্জা পেতো ও নাকি এমন রাগই দেখাতো? ভেবে পায়না ও

” চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড ওয়াইফি, কাল তোমাকে লুকিয়ে নয় সামনে দেখা দিবো, দেখি কি করে কাটো আমার ঠোট, হাহা আবার বলে এমন ভিতু হলো কবে থেকে! ভিতু তো আগে থেকেই ছিলো নতুন করে হবে কি? তোমার দুষ্টু মিষ্টি চেহারা খুব কাছ থেকে চাই আমি, এই দূরত্ব যে আর প্রাণে সয়না, খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে তোমায় আর সেই দিন খুব দূরে নয়”

দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো সায়ান, এয়ারপোর্টে ও খুব হেল্পলেস হয়ে বসে ছিলো ও তখনি সায়ান এসে বললো “বস আপনার জন্য কলকাতায় যাওয়ার ইমার্জেন্সি ভিসা লাগয়েছি,কয়েকঘন্টায় হাতে পেয়ে যাবেন, আর ওইখানে লোক লাগিয়ে দিয়েছি আপনি পৌঁছানোর আগেই ম্যাডামের খবর পেয়ে যাবেন, আর ওইখানে হোটেল বুক করাও হয়ে গেছে, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন ম্যাডামকে শিগ্রই পেয়ে যাবেন ”

সায়ানের তখন খুব ইচ্ছে করেছিলো সাহিলকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু জড়তার কারণে হয়ে উঠিনি। থ্যাংকস বলে প্যাকিং করতে চলে যায় ও বাসায়। কলকাতায় আসার পর রুশিকে এই কয়দিন ধরে ফলো করছে ছায়ার মতো। ওর প্রত্যকটা গতিবিধি লক্ষ্য করছে একমিনিটের জন্য ও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না তাই রুশিদের পুরো ফ্লাটে ইলেক্ট্রিসিটি চেক করার নামে সিসিটিভি ফুটেজ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন বাসায় এসেও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। চারবছরের নয়ন তৃষ্ণা যেন মিটাচ্ছে ও, উজ্জলশ্যাম বর্নের মুখ, খাড়া নাক, টানা টানা চোখ আর গোলাপি ঠোট সবমিলিয়ে সৃষ্টিকর্তা যেন খুব নিপুণ ভাবে বানিয়েছে তাকে। সবচেয়ে আকর্ষনীয় হচ্ছে ঠোটের উপরে বামপাশের তিলটা যেন এই অপরুপ সৌন্দর্যে কারো নজর না লাগে তাই এই নজরটিকা। আর সুন্দর নারিটিই তার বউ শুধু তার, যার দিকে হয়তো ও হাজার বছর তাকিয়ে থাকতে পারবে। মন আচমকাই যেন গেয়ে উঠলো

” পড়েনা চোখের পলক
কি তোমার রুপের ঝলক
দোহাই লাগে মুখটি তোমার
একটু আচলে ঢাকো
আমি জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো
বাচাতে পারবে নাকো ”

#চলবে
(জানিনা কি লিখছি তাড়াহুড়ায়, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here