#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪
আবরন কার এক সাইডে পার্ক করে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে নামতে বলে নিজেও নামলো কার থেকে । তারপর কারের ডিকি থেকে একটা গিটার বের করতেই আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের চোখ উজ্জল হয়ে গেল । ওদের এমন দৃষ্টি আবরন আড় চোখে খেয়াল করে বলল ,
– ফলো মি !
আবরনের কথা মতো ওরাও খুশিতে আত্মহারা হয়ে এক প্রকার ছুটেই ওর পেছন পেছন গেল ।
আবরন ঝর্নার সামনের জায়গাটা তে গিয়ে বসলো । রাতেরবেলা কৃত্রিম আলো তে ঝর্নার পানি গুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে । আবরনকে বসতে দেখে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান ও ওর সাথে গিয়ে বসলো ।
ফাহিম খুশি হয়ে বলল ,
– আবরন , শুরু কর ।
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– গান কি আমি গাইবো নাকি ?
– তাহলে আর কে গাইবে তুই ছাড়া ? ( আয়মান )
– গান গাইবে ফাহিম !! ( আবরন )
ফাহিম চোখ গোল গোল করে বলল ,
– লাইক সিরিয়াসলি ?
আবরন ওর দিকে গিটার বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ইয়াহ , I’m serious ….
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে গিটার হাতে নিয়ে বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে একটা ৫০০ টাকা দামের হাসি দিল , এমন হাসি যে ওর উপর এবং নিচ উভয় পাটির দাঁত দেখা যাচ্ছে । তারপর গান ধরলো ,
……………………………………………
জিব্রান মাত্রই পূর্ণতা আর প্রেনাকে নিয়ে পার্কে পৌঁছালো । ওদের কে বলল ,
– চল , আগে ভিতরে গিয়ে একটা ভালো বসার প্লেস খুঁজি , তারপর তোদের বসিয়ে আমি ফুচকার অর্ডার দিই ।
এই বলে ওদের নিয়ে পার্কের ভিতরে ঢুকল । ভিতরে প্রবেশ করে কিছুটা এগোতেই শোনা গেল কেউ গান গাইছে ,
Sonu Meri Darling
Janu Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re
Sachha Mera Pyar Hai
Jaan Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re
এই গানটা শুনে পূর্ণতা আর প্রেনা হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না , এমনকি জিব্রান ও হাসতে শুরু করেছে ।গানটা কে গাইছে রহস্য উদঘাটন করতে আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখল ঝর্নার ধারে চারজন ছেলে বসে আছে । জায়গাটাতে আলো তুলনামূলক কম হওয়াতে পূর্ণতা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল । ভালো করে তাকাতেই ওদের চিনতে কোনো সমস্যা হলো না । এমনকি মাঝখানে আবরন ও আছে । ওদেরকে অপর পাশের বেঞ্চিতে বসিয়ে জিব্রান গেল ফুচকা আনতে ।
ফাহিম এর গান শুনে সবাই হুহা করে হাসছিল , আবরন ও হাসি থামিয়ে নেই , হঠাৎ হাসির মাঝেই দেখল প্রেনা আর পূর্ণতা ওদের সামনেই কয়েক হাত দূরে থাকা বেঞ্চটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , সাথে একটা ছেলেও আছে । আবরন খেয়াল করলো ওরা তিনজনই হাসছে আর একটু পর পর ওদের দিকেই দেখছে । ওদেরকে বসিয়ে রেখে ছেলেটা কোথায় যেন গেল । আবরন ফাহিম কে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– তোর এই গান শুনে শুধু আমরা না আশে পাশে থাকা সব লোকজনই হাসছে ।
কথাটা আবরন হেসে হেসে কিছুটা জোরেই বলল যেন কথাটা পূর্ণতা প্রেনার কান অবধি পৌছায় ।
পূর্ণতা আবরনকে হাসতে হাসতে কথা গুলো বলতে শুনে প্রেনাকে বলল ,
– বাব্বা , উনি তো রাগ দেখানোর পাশাপাশি হাসতেও জানেন দেখছি ।
প্রেনা হেসে বলল ,
– কেন ! ভাইয়া কি মানুষ না ? আর তখন তো ভাইয়া নিজেই বলল যে সে ভালো তে ভালো আবার খারাপে প্রচুর খারাপ ।
পূর্ণতা প্রেনার কথা শুনছে আর আড় চোখে ওদের কাহিনী ও দেখছে ।
আবরনের কথা শুনে ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– সবাই যেন হাসে এই জন্যই তো এই গানটা গাইলাম ।
আয়মান বলল ,
– তোর গান শুনে কানের নাড়ি ভুরি একদম পচে গেছে ।
তাসিন বলল , তুই তো তা ও ঐ পাশে বসেছিস , আমি তো একদম ওর সাথে , আমি আদৌ কানে শুনবো কিনা সন্দেহ !!
ফাহিম বলল ,
– এহহহ , নিজেরা তো গানের গ ও জানিস না , আমি যে গাইলাম এত সুন্দর একটা গান , তাতেও তোদের ভালো লাগছে না ।
ওদের কথা গুলো শুনে পূর্ণতা আর জোড়ে না হেসে পারল না । ওর হাসির শব্দ শুনে আয়মান , ফাহিম , তাসিন , আবরন সবাই ওর দিকে তাকালো ।
প্রেনা বিষয়টা লক্ষ্য করতেই পূর্ণতার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আস্তে করে কানে কানে বলল ,
– পূর্ণ !! কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ !! ওরা সবাই তোর হাসি শুনে তোকেই দেখছে । নিজে তো মাইর খাবি সাথে আমাকেও খাওয়াবি মনে হচ্ছে ।
প্রেনার কথা শুনে পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই ঢোক গিলে তারপর তাকিয়ে দেখল আসলেই ওরা সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে ।
আবরন পূর্ণতার রিয়েকশন দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনের দিকে তাকাতেই দেখল ওরাও পূর্ণতার কাহিনী দেখছে । তাই ও কিছুটা রাগ হয়ে আস্তে করে বলল ,
– ঐদিকে তাকানো বাদ দিয়ে তোরাও এখন হাসি দে , নাহলে ওই মিস ‘কান্নাপরী ‘ আবার ও ভয়ে কাদতে শুরু করে দিবে । আবরনের কথা মতো ওরা সব একসাথে হুহা করে হেসে উঠলো ।
ওদের এভাবে হাসতে দেখে পূর্ণতা আর প্রেনা ও খুশি হয়ে গেল এই ভেবে যে ,
– যাক , ওরাও আমাদের মতোই মজা করছে ।
এরই মধ্যে জিব্রান ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে পূর্ণতা এবং প্রেনার দিকে এগিয়ে এলো ।
জিব্রান জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তখন আবরন ওকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এক্সকিউজ মি ব্রো !
জিব্রান বলল ,
– আমি ??
আবরনের হঠাৎ এভাবে জিব্রানকে ডাক দেওয়া পূর্ণতা আর প্রেনার মনে আশংকার ঝড় তুললো ।
আবরন বলল ,
– হ্যা , আপনি । আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে চাইলে আমাদের সাথে জয়েন হতে পারেন ।
আবরন চোখ দিয়ে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে ইশারা করতেই ওরাও জিব্রানকে বলল ,
– ভাইয়া , আসেন ।
জিব্রান পূর্ণতা আর প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ওদের কি ভালো মনে হচ্ছে ??
পূর্ণতা উত্তর দেওয়ার আগেই আবরন উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ভাইয়া , আপনি পূর্ণতার কোনো রিলেটিভ !
ওর মুখে নিজের বোনের নাম শুনে ভ্রু কুচকে বলল ,
– আমি ওর আপন বড় ভাইয়া , আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ! আর আমার বোনকে কি করে চিনেন ?
আবরন হেসে বিনয়ের সাথে বলল ,
– আমি আপনার বোনের ভার্সিটির ভিপি শাহরিদ আহনাফ আবরন । আপনি আমাকে আবরন বলেই ডাকতে পারেন , আর ভাইয়া আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবো , তাই প্লিজ তুমি করেই বলবেন ।
জিব্রান বলল ,
– ও তাই নাকি ? তাহলে তো দেখা হয়ে ভালোই হলো । ঠিক আছে , চলো বসি একসাথে ।
আবরন খুশি হয়ে ওর পাশেই জিব্রানকে জায়গা করে দিল ।
প্রেনা আর পূর্ণতার কলিজা আরেকটু হলে লাফ দিয়ে ভেতর থেকে বেরই হয়ে যাচ্ছিল । তারপর ওদের কথোপকথন শুনে ওরা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো ।
জিব্রান বলল ,
– তোমরা তো ছোট ভাই তাহলে !! আমি একা একা খাচ্ছি , বিষয়টা ভালো দেখায় না । বলো কে কি খাবে ??
আবরন বলতে যাবে তার আগেই তাসিন বলল ,
– ভাইয়া , ফুচকাই খাবো ।
ফাহিম বলল ,
– আমি ও খাবো ।
আয়মান বলল ,
– আমি ফুচকা খাই না । বেশি করে ঝাল দিয়ে চটপটি খাবো ।
ওদের এমন ছোঁছামি দেখে আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– এই গুলো কি ঘাস খেয়ে বড় হয়েছে এতদিন ? মাথায় ঘিলু নেই একটু ও !! মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিল ।
জিব্রান আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,
– কি হলো তুমি চুপ করে রইলে কেন ? বলো কি খাবে ?
আবরন বলল ,
– না ভাইয়া , আমি কিছু খাবো না । আম্মু পই পই করে বলে দিয়েছে স্ট্রিট ফুড খেতে না যদিও আমার খুব পছন্দ । কিন্তু বুঝেনই তো মায়ের আদেশ বলে কথা !!
কিন্তু …….
জিব্রান বলল ,
– কিন্তু কি ?
– কিন্তু আপনি যদি আমাকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ান আমি অবশ্যই যাবো ।
জিব্রান হেসে বলল ,
– তাহলে সে কথাই রইল ।
আবরনের কথা শুনে আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের নিজেদের চুল টেনে নিজেদেরই ছিড়ে ফেলতে মন চাইছিল সেই মূহুর্তে । এই ভেবে যে , ” ব্যাটা একা বাসায় নেমন্তন্ন নিয়ে নিল , আর আমাদের স্ট্রিট ফুড খেতে হবে । ”
তারপর জিব্রান ফাহিম কে টাকা দিয়ে বলল ,
– যাও , গিয়ে নিয়ে এসো ।
ফাহিম চলে যেতেই জিব্রান পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– কি রে , কেমন খেতে ??
পূর্ণতা বেশি করে টক দিয়ে একটা আস্ত ফুচকা মুখে পুরে খেতে খেতে বলল ,
– ইয়ামিইইইই !!
আবরনের বুঝতে বাকি রইল না ওদের ভাই বোনের সম্পর্ক কতটা মধুর ! ও দুষ্টুমি করে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– আস্তে খাও ! কেউ তো তোমার ভাগেরটা খেয়ে ফেলবে না , এভাবে খেলে তো গলায় আটকাবে !
পূর্ণতা সবেই একটা ফুচকা মুখে নিয়েছিল ঠিক তখন আবরনের এমন কথা শুনে আর ফুচকা গিলতে পারলো না । কাশি দিতে দিতে পানি চাইলো প্রেনার কাছে । প্রেনা ঝটপট পানি এগিয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল ।
আবরন বলল ,
– দেখেছো , বলতে না বলতেই গলায় বাঁধলো !!
জিব্রান হেসে বলল ,
– ফুচকা পেলে ওর আর দুনিয়ার খবর থাকে না ।
ফাহিম ফুচকা আর চটপটি নিয়ে আসতেই আয়মান বলল ,
– আবরন , এখন তুই না করবি না । প্লিজ একটা গান ধর , আমরা খেতে খেতে এনজয় করি ।
আবরন গিটার টা হাতে নিয়ে সুর তুলে গান গাইতে শুরু করলো ,
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye
Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu
Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye
Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu
Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye
Kuch toh hai tujhse raabta
Kuch toh hai tujhse raabta
Kaise hum jaane hume kya pata
Kuch toh hai tujhse raabta
Tu humsafar hai, phir kya fikar hai
Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye
Meharbaani jaate jaate mujh pe kar gaya
Guzarta sa lamha ek daaman bhar gaya
Tere nazara mila, roshan sitaara mila
Takdeer ki kashtiyon ko, kinara mila
Sadiyon se tarse hai jaisi zindagi ke liye
Teri sauhbat mein duaayein hain ussi ke liye
Tere milna hai uss rab ka ishaara
Maanu mujhko banaya tere hi jaise kisi ke liye
Kuch toh hai tujhse raabta
Kuch toh hai tujhse raabta
Kaise hum jaane hume kya pata
Kuch toh hai tujhse raabta
Tu humsafar hai, phir kya fikar hai
Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye
……………………………………………..
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আজকের পর্ব কার কতটুকু ভালো লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু ! আর Arijit singh এর “Raabta” সং টা অবশ্যই একবার কানে হেডফোন দিয়ে শোনার চেষ্টা করবেন আর মনের ছবিতে আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে গানটা গাইছে সেটা ফিল করবেন । আশা করি , সবার খুব ভালো লাগবে । ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️