#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#৫ম_পর্ব
– আপনারা বাবা-মা, তাই আপনার কাছ থেকে কিছুই লুকাবো না। বাবুর হার্টে কিছু কমপ্লিকেশনস আছে। আমার যতদূর ধারণা বাবুর প্রিম্যাচ্যুরিটি আর ম্যালনিউট্রিশনের কারণে হার্টের প্রবলেমটা হয়েছে। আমি কিছু টেস্ট করিয়েছি, কাল রিপোর্ট আসবে তাহলে আরোও ক্লিয়ার হতে পারবো।
– ওর যখন বার্থ হয়েছিলো কিছু কমপ্লিকেশনস ছিলো কিন্তু ডক্টর তো বলেছিলো এভ্রিথিং ইজ অলরাইট। তাহলে? (রাইসা)
– আসলে এসব প্রবলেমগুলো তখন হয়তো ধরা পরে নি, ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। আর বাবু বার্থ টাইমে সিরিয়াস ম্যালনিউট্রিশনে ভুগেছে। প্রিম্যাচ্যুরিটির জন্য এই প্রবলেমগুলো আরো সিরিয়াস রুপ নিয়েছে।
– এখন এটার চিকিৎসা কি ডক্টর? ( আবরার)
– দেখুন বেবি অনেক ছোট, সাত মাস বয়সে বাইপাস করা পসিবল নয়। তবে, কালকের রিপোর্টস আসলে আমি মেডিসিন দিতে পারি। আর ওর বয়স ছয়-সাত হলে বিদেশে নিয়ে হার্টের একটা ছোট অপারেশন করলে হবে, ইফ ন্যাসেসারি। ডোন্ট ওয়ারি, আল্লাহ এতো মাসুম বাচ্চার কিছুই হতে দিবেন না ইনশাআল্লাহ। তবে হ্যা, বাবুকে কোনো রকম মেন্টাল স্ট্রেস দেওয়া যাবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে।
– জ্বী (আবরার)
ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে রাইসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আব্রাহাম তার একমাত্র বাঁচার আশা, এতো টুকু বাচ্চার শরীরের এই অবস্থা শুনে কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না সে। আবরার আজ একজন হতভাগ্য বাবা, আজ তার ভুলের জন্য তার ছেলে এতোটা কষ্ট পাচ্ছে। সব কিছুর জন্য একমাত্র সেই দায়ী। এতোটুকু বাচ্চার নাকি হার্ট ডিজিজ, না জানি কত কষ্ট তাকে বয়ে বেরাতে হচ্ছে। রাইসার অবস্থা দেখে ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে সে। কেবিনের বাহির থেকে উঁকি মারলে আব্রাহামের মাসুম চেহারাটা দেখতে পারে আবরার। সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। না চাইতে আজ আব্রাহাম কাঁদছে, হ্যা আজ সে কাঁদছে। আজ তার চেয়ে দুর্ভাগা কেউ নাই।
সকাল ৮টা,
রাইসা কেবিনে আব্রাহামের পাশেই চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে। আবরার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, সারারাত শুধু এক চিন্তা যে রিপোর্ট কি আসবে! আব্রাহামকে নিয়ে তার যে অনেক স্বপ্ন ছিলো। আব্রাহামের বাবা হবার যোগ্যতা হয়তো তার আসলেই নেই। কিন্তু এভাবে রাইসা আর আব্রাহামকে একা রাখতে পারবে না সে, যেভাবেই হোক তাদের দুজনকে তার সাথে নিয়ে যাবে। দরকার হলে সিকদার ভিলা ছাড়তেও সে রাজি।
সূর্যের এক ফালি রোদ মুখে পড়তেই, ঘুম ভেঙে যায় রাইসার। চোখ খুলতেই দেখতে পায় আব্রাহামকে আদর করছে আবরার। এ দৃশ্যটি এতোদিন শুধু কল্পনাই করেছে, তবে আজ তা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। চুপটি করে ছেলেটা বাবার আদর খাচ্ছে। ভোরের দিকে ছেলেটার জ্বর কমেছে। এখন স্যালাইন খুলে দিয়েছে। আচ্ছা, আব্রাহামের তো অধিকার বাবার ভালোবাসা পাওয়া। নিজের রাগ, জিদের জন্য কি আব্রাহামকে তার বাবার কাছ থেকে দূরে করে দিচ্ছে। ডক্টর বলেছেন কোনো মেন্টাল প্রেসার ওকে দেওয়া যাবে না। আব্রাহামের ভবিষ্যতের কথা ভেবেও আবরারকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত রাইসার।
রাইসাকে ভাবতে দেখে আবরার জিজ্ঞেস করে,
– কি ভাবছিস? আব্রাহামকে নিয়ে ভাবিস না, আমি আছি তো। কিচ্ছু হতে দিবো না আমার বাচ্চার।
– তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
– হুম বল, শুনছি
– এতোদিন আমরা দুজন অনেক স্বার্থপরতা দেখিয়েছি, এবার কি আমাদের বাচ্চার জন্য সব কিছু ভুলে নতুন করে সব শুরু করতে পারি? আব্রাহামের একটা কমপ্লিট ফ্যামিলি দরকার। যা আমি একা ওকে কখনোই দিতে পারবো না। আর তুই যদি ওকে শুধু আপন করে নিতে চাস, সেটাতেও রাজি। আমি শুধু ওর হ্যাপিনেস চাই।
– তুই জানিস তুই কি বলছিস?
– আমাদের সম্পর্কে আছেই তো এই একটা সুতো, ওর যদি কিছু হয়ে যায় আমাদের কিছুই থাকবে না। ওর জন্য নাহয় আবার একটু চেষ্টা করি।
– আমি তোকে ভালোবাসি রাইসা, আমাদের সম্পর্কে ওই একমাত্র সুতো নয়। আমি জানি হয়তো আমি তোর জন্য পারফেক্ট নই। কিন্তু আমি আমাকে বদলে নিবো দেখিস। আমি তোদের কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। প্লিজ আমাদের বাপ-ছেলেকে একা করে দিস না। আমার যেমন ওকে দরকার, তেমন তোকেও দরকার। আমি তোদের দুজনকেই যে চাই।
– কিন্তু দাদী
– আমি এসবের পরোয়া এখন আর করি না, কি হবে বল? যদি সিকদার টাইটেল না থাকে। টাকা পয়সা কি সব? তুই একবার বল সব ছেড়ে দিবো। আমি একটা পরিবার চাই, একটা নিজস্ব পরিবার। যেখানে কোনো ছলচাতুরী নেই। প্লিজ রাইসা
– এবার যদি কিছু করেছিস তো দেখবি আমি কি করি?
– তুই বললে জীবন টুকু দিয়ে দিবো, তবে তোকে কষ্ট দিবো না, আই প্রমিস।
রাইসার চোখ চিকচিক করছে, সব অভিমান,রাগ অশ্রু রুপে পড়ছে। আব্রাহামকে শুইয়ে রাইসার কাছে হাটু গেড়ে বসে আবরার। দুটো হাত দিয়ে তার গাল দুইটি ধরে বলে,
– অনেক কাঁদিয়েছি, আর কাঁদাবো না। এই মুক্তকণার দাম যে অনেক। এতো ক্ষতি করা যায়?
রাইসা আর না পেরে আবরারের বুকে মুখ লুকায়, এটা যে তার সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা। আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েছে। আবরারও পরম যত্নে তার ভালোবাসাকে আগলিয়ে ধরেছে।
অপরদিকে,
প্রাপ্তির মনটা খচখচ করছে, কেনো জানে মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে। কিন্তু পেছনে কেউ নেই। বারবার পেছনে ফিরলে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না সে। তবে সেই অচেনা লোকটি তার পিছু নিয়েছে। অফিস যাবার জন্য রিক্সা খুজে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো রিক্সা না পাওয়ায় হেটে মোড়ে যেতে হচ্ছে তাকে। রাস্তায় হাঁটার সময় বারবার মনে হচ্ছে কেউ তার পিছু নিয়েছে। এবার মনে হচ্ছে মানুষটি তার খুব কাছে চলে এসেছে। দেরি না করে পিছনে ফিরলেই দেখতে পায়…..
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি