ভালোবাসার_রঙ’১’ #Jerin_akter_nipa

0
656

#ভালোবাসার_রঙ’১’
#Jerin_akter_nipa

একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে পেছন থেকে ইহফাজের হাত ধরে, চোখ বন্ধ করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল।
-চোর! চোর! আমার ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছিল। চোর! কে কোথায় আছেন? চোর! এই চোর আমার ব্যাগ… চোর!”
মেয়েটা তার হাত ধরে চোর চোর বলে চেঁচাচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না ইহফাজ। কান থেকে ফোন নামিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল সে।
রায়া এখনও শক্ত করে ইহফাজের হাত ধরে রেখেছে। গলায় যত জোর আছে সবটুকু দিয়ে চেঁচাচ্ছে।
-ব্যাটা চোর! আমার ব্যাগ নিয়ে পালাবি তাই না? এতো সোজা? রায়ার ব্যাগ নিয়ে পালানো এতো সোজা! দাঁড়া আজ তোকে পুলিশে দেব।”
ইহফাজ এখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে মেয়েটার কথা শুনে এতটুকু বুঝতে পেরেছে, মেয়েটা তাকে চোর ভাবছে। চোখ মুখ খিঁচিয়ে ইহফাজ বলল,
-পাগল নাকি? কে চোর? কিসের চোর? কাকে চোর বলছেন আপনি? ”
চোখ ছোট করে কপাল কুঁচকে রায়া বলল,
-চোরের মায়ের বড় গলা,না! নিজে আমার ব্যাগ চুরি করে এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে! কে চোর? কিসের চোর? কাকে চোর বলছি?” শেষের তিনটে কথা ব্যঙ্গ করে ইহফাজের গলা নকল করে বলল রায়া। ইহফাজ তার ডান হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগটার দিকে তাকাল। বলল,
-এক্সকিউজ মি! আপনি কী বলতে চাইছেন? এটা আপনার ব্যাগ? হাও ফানি! মাথা খারাপ মেয়েগুলোকে একা একা রাস্তায় বের হতে দেয় কে?”

কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় ফিরে যাওয়া যাক….
_____________
রায়া রিকশা থেকে নেমে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট পার্সটা বের করে ভাড়া দিবে এমন সময় একটা ছেলে এসে ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিল। এক সেকেন্ড রায়া কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। যখন বুঝলো তখন সে-ও ছেলেটার পেছন দৌড়াতে লাগলো। রিকশাওয়ালা পেছন থেকে ডাকতে ডাকতে বলল,
-আপা… ও আপা,আমার ভাড়া। আপা আমার ত্রিশ টাকা। আপা টাকাটা তো দিয়ে যান। আপা…
রায়া দৌড়াতে দৌড়াতে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
-আরেহ ভাই! আমার ব্যাগটাই তো ওই ছিনতাইকারী নিয়ে গেছে। ওই ব্যাগে আমার তিন হাজার চারশো বিশ টাকা। তিনটা কিটক্যাট। পাঁচটা চুইংগাম। একটা নেইলপলিশ। একটা লিপস্টিক। আর আমার ফোনটাও ছিল। আমার সব গেছে। আর আপনি আপনার ত্রিশ টাকা ভাড়া নিয়ে পড়ে আছেন!”
রায়া দৌড়াতে লাগলো। যে করেই হোক চোরটাকে ধরতেই হবে। জুতা খুলে হাতে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো রায়া।
-ওই চোরের বাচ্চা, ওই দাঁড়া। শালা চোর কোথাকার দাঁড়া বলছি।”
_____________
ইহফাজ বড় বোনের সাথে শপিংমলে এসেছে। পুরো দুই ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে আপু একটা মাত্র শাড়ি আর হিজাব কিনেছে। ইহফাজ টিয়াকে কোলে নিয়ে আগে আগে বেরিয়ে এলো। টিয়া তার বড় বোনের মেয়ে। দুই বছরের ভাগ্নীর সাথে ইহফাজ কথা বলছে।
-দেখলে তো মামা! তোমার আম্মু তিন ঘন্টা ঘুরে একটা শাড়ি কিনলো।”
বড় আপু পেছন থেকে বলল,
-তিন ঘন্টা না। বড়জোর এক ঘন্টা হবে। ”
-এক ঘন্টা না আপু। ঘড়ি ধরে পুরো তিন ঘন্টা ঘুরিয়েছ তুমি। ”
-ওই একদিনই তো ঘুরেছিস একটু। ”
-আমি আর কখনও তোমার সাথে শপিংয়ে আসব না। মেয়ে মানুষকে আমার চেনা হয়ে গেছে। এরা হাজারটা শাড়ি দেখে একটা শাড়ি নিবে। দামাদামির কথা তো না বললেই ভালো।”
-হুম বৌয়ের সাথে তো ঠিকই নেচে নেচে আসবি।”
-জীবনেও না। আমার বৌকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দিব। যাও দুই মেয়ে মিলে মনের সুখে কেনাকাটা করো।”
ইহফাজ হাসতে হাসতে রাস্তায় এসে দাঁড়াল।
-চলো এবার বাসায় যাই।”
-এই রে! টিয়ার জন্য কিছু নেওয়া হয়নি।”
-এখন আবার টিয়ার জন্য নেওয়া বাকি?”
-হুম। তুই এখানে দাঁড়া আমি দুই মিনিটে আসছি।”
-তুমি আসবে তাও দুই মিনিটে! ”
-আরে তুই দাঁড়া না একটু। দে তোর কষ্ট হলে টিয়াকে আমার কাছে দে।”
-টিয়াকে নিতে হবে না। তুমি… ”
ইহফাজকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বড় আপু জোর করেই টিয়াকে ইহফাজের কোল থেকে নিয়ে গেল।
-নে তুই আমার ব্যাগটা নিয়ে দাঁড়া।” ইহফাজকে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে আপু আবার চলে গেল। ইহফাজ আর কি করবে? কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে আপুর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর বিরক্ত লাগছিল। এমন সময়ই দুলাভাই কল করে। সে ফোন কানে নিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছিল।
-কী শালা! তোমার বোন কই?”
-আর বলবেন না দুলাভাই! আপনার বউকে আমার কাছে গছিয়ে আপনি তো মহা আনন্দে আছেন। এ দিকে আপনার বৌ আমার জান নিয়ে নিচ্ছে। একশোটা শাড়ি দেখে একটা নিয়েছে মাত্র। এখন বেরিয়ে এসে মনে হলো টিয়ার জন্য কিছু নেওয়া হয়নি। আবার গেছে ভেতরে। আমি বেচারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।”
ইহফাজের কথা শুনে দুলাভাই হাসলেন। বললেন,
-একদিন একটু প্যারা সহ্য হচ্ছে না? আর আমি যে পাঁচ বছর ধরে সহ্য করছি।’
-সহ্য করার জন্যই তো আগেভাগে আপনার গলায় ঝুলিয়েছি। ভালোবেসে ছিলেন,এখন মজা বুঝেন।”
-বুঝছি রে ভাই, বুঝছি। প্রেমের মজা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।”
কথা বলার মাঝেই পেছন থেকে রায়া এসে তাকে চোর বলে অপবাদ দিতে লাগলো।
_______________
দুর্ভাগ্য বশত ইহফাজের বোনের ব্যাগ আর রায়ার ব্যাগ একই রকম। আর ইহফাজের গায়েও আকাশী রঙের শার্ট। সব মিলিয়ে রায়া ওই চোরের সাথে ইহফাজকে গুলিয়ে ফেলে।
-আপনার হাতে এটা তো আমারই ব্যাগ। একটু আগে আপনি এটা নিয়ে দৌঁড়ে পালালেন। ”
এবার সত্যি সত্যি রাগ উঠে যাচ্ছে ইহফাজের। মেয়েটা যা তা বলছে। দেখতে সুন্দর হলেও এই মেয়ের মাথা খারাপ। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার এমনও হতে পারে সব সুন্দর মেয়েদের মাথায় ঘিলু বলতে কিচ্ছু থাকে না। ওদের ব্রেইন হাঁটুতে থাকে। আর মাথায় ব্রেইনের নামে গোবর থাকে।
-এই যে ম্যাডাম। আপনি পাগলের প্রলাপ বকছেন। তখন থেকে আমাকে চোর বলে অপবাদ দিচ্ছেন। আমি কিন্তু আপনার পাগলামি আর সহ্য করব না। আরেকবার আমাকে চোর বললে…
ইহফাজের কথায় রায়া তেত উঠে বলল,
-কী করবেন আপনি? একশো বার আপনাকে চোর বলব। হাজার বার চোর বলব। লাখ বার বলব। চোরকে চোর বলল। তাতে গায়ে এত খোঁচা লাগে ক্যান?”
কথা শেষ করার আগেই ঠাস করে শব্দ হলো। রায়া গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
-আপনি আমাকে মারলেন?”
দাঁতে দাঁত চেপে ইহফাজ বলল,
-মারব না? লোক ভর্তি রাস্তায় আপনি আমাকে চোর বলবেন। আর কিছু না করেও আমি তা চুপ করে শুনব?”
-তাই বলে মারবেন? একটুও মায়া দয়া নেই মনে?”
এতক্ষণে আপু চলে এসেছে। ইহফাজের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে টিয়াকে কোলে দিয়ে বলল,
-কী হয়েছে রে? আর এই মেয়েটা কে? ও গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ”
বিরক্ত মুখে ইহফাজ আপুকে বলল,
-পাগল মেয়ে আপু। মাথা খারাপ। ”
আপু সত্যি সত্যি ভেবে আফসোস করে বলল,
-ইশ, এত সুন্দর মেয়েটা পাগল! এই মেয়েটার মাথা খারাপ না হলে তোর বিয়ের কথা বলতাম।”
ইহফাজ কটমটিয়ে বলল,
-আপু।”
রায়া গাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
-আমি পাগল না।”
আপু অবাক হয়ে বলল,
-সত্যি তুমি পাগল না?”
আপু রায়ার পায়ের দিকে তাকাল। খালি পা। জুতা হাতে ধরা। হাঁপাচ্ছে মেয়েটা। সুন্দর মুখটা লাল হয়ে গেছে।
-আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাব এমন সময় একটা ছেলে আমার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিল। আমিও তার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এলাম। এখানে এসে আপনার ভাইয়ের হাতে আমার ব্যাগ দেখে উনাকে…
কথা শেষ করতে পারল না রায়া। তার আগেই আপু হাসতে লাগলো।
-ভাবলে ও চোর। তোমার ব্যাগ নিয়ে আমার ভাই পালিয়েছে? হা হা হা… আরে ও চোর না। এটা আমার ব্যাগ। আমার মনে হয়, তোমার ব্যাগ আর আমার ব্যাগ একই রকম। তাই তুমি… হা হা।
আপু হাসছেন। ইহফাজ মেয়েটার বোকামি দেখে রাগে ফাটছে। গাধা মেয়ে একটা। তার ছিড়া।
-কিন্তু আপু উনার শার্টটা তো…
ইহফাজ ধমকে উঠে বলল,
-শার্টে আবার কী সমস্যা হয়েছে হ্যাঁ? ”
-শার্টটাও সেইম।”
-শার্ট সেইম। ব্যাগ সেইম। তাই বলে আমি চোর হয়ে গেছি?”
আপু ওদের কাণ্ড দেখে এখনও হেসে যাচ্ছে। রায়া কিছু বুঝতে পারছে না। দোষ তো তার না। সব দোষ ওই চোরের। ওই চোরটার জন্যই তাকে আজ থাপ্পড় খেতে হলো। এদিকে ওই রিকশাওয়ালা আবার রায়ার পেছন পেছন এখানে এসে হাজির হয়েছে।
– আপা, আমার টাকা।”
চোখ কপালে তুলে রায়া বলল,
-আশ্চর্য! আপনি ত্রিশটা টাকার জন্য এমন করছেন কেন? মনে হচ্ছে ত্রিশ টাকা না আপনার ত্রিশ হাজার টাকা খেয়ে আমি পালিয়ে যাচ্ছি। দেখলেন তো আমার ব্যাগের সাথে সাথে টাকা পয়সা ফোন সব চুরি হয়ে গেছে। এখন কোথায় থেকে আমি আপনার টাকা দিব?”
ইহফাজ বলল,
-উনার উপর চেঁচিয়ে লাভ কি। উনি রিকশা চালিয়ে খান। এটাই উনার রোজি রোজগার। একটা টাকাও উনার কাছে অনেক। ”
আপু বলল,
-এই ইফু টাকাটা তুই দিয়ে দে।”
-আমি! আমি টাকা দিব কেন? ”
-কিপ্টামি করিস না তো। ত্রিশটা টাকাই তো। দিয়ে দে না লোকটাকে। ”
ইহফাজ মানিব্যাগ বের করে টাকা দিয়ে দিল। রাগ লাগছে তার। আপু আবার মেয়েটার সাথে রসের আলাপ জুড়ে দিয়েছে।
-তোমার বাসা কোথায়? কোথায় যাবে তুমি? তোমার কাছে তো টাকাও নেই। কিভাবে বাসায় পৌঁছাবে?”
-আমার মামার বাসা সামনেই আপু। আমি চলে যেতে পাব। ”
-তোমার বাবা মা কোথায় থাকে?”
-বাবা মা আজ শহরে আসবেন। এখানে নতুন বাসা নিয়েছি আমরা। ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি। তাই বাবা মা সহ শহরে চলে এসেছি।”
-ভালো করেছ। আমাদের বাসাও সামনেই। সময় পেলে যেও একদিন। ”
-আচ্ছা। ”
অধৈর্য হয়ে ইহফাজ বলল,
-আপু এখন চল তো।”
-দাঁড়া না একটু… আপুর আর একটা কথাও না শুনে ইহফাজ আপুর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। রায়া দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। ইহফাজ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মনে মনে বলল,
-পাগল ছাগল। ”
রায়া ভেংচি দিয়ে বলল,
-গোমড়ামুখো বান্দর।
পায়ে জুতো পরে নিল রায়া। তারপর উল্টো পথে হাঁটা ধরলো।

চলবে…

প্রথম পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন। আপনাদের রেসপন্স পেলে দ্বিতীয় পর্ব শীঘ্রই দিব।🌚

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here