#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন দেখতে পেলো অফিসের সামনে থেকে শুরু হয়ে একদম ভিতর পর্যন্ত বেলুন লাগানো আছে। সব থেকে অবাক করার বিষয় হলো সব কয়টি বেলুনের মধ্যে লিখা আছে সরি। অয়ন একটু পরখ করে নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। কেবিনে আসতে আসতে অয়ন দেখতে পায় পুরো অফিসে একি বেলুন। অয়ন নিজের কেবিনে বসতেই দেখতে পেলো টেবিলের উপর একটা চিরকুট রাখা আছে। অয়ন চিরকুট টা না পড়েই ফেলে দিলো। অয়ন ভাবছে অফিসে এমন বেলুন কে লাগিয়েছে? অয়ন চিরকুটটা ফেলে দিতেই দরজার পাশ থেকে মৃদু কন্ঠ ভেসে আলো। ঈশা অয়নকে নরম কন্ঠে বলতে লাগলো
— না পড়েই ফেলে দিচ্ছেন?
কথাটা অয়নের কানে ভেসে আসতেই অয়ন দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন শব্দ করে হেসে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কাগজের টুকরো পড়ে কি হবে? আবর্জনা আমি বরাবর এড়িয়ে চলি। সেটা কোনো কাগজের টুকরোই হোক বা কোনো নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ। এই সব আমার কাছে আবর্জনা মাত্র।
ঈশা অয়নের রাগ ও অভিমান বুঝতে পেরে অয়নের দিকে একটু এগিয়ে আসে। অয়ন ও নিজের টেবিলের উপর হেল দিয়ে বসে। ঈশা অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে একদম নরম কন্ঠ নিয়ে বলে
— স্যার আমি এম রিয়েলি সরি। আপনি আমাকে যা ইচ্ছে হয় বলুন, শাস্তি দিন। তবুও আমার উপর রেগে থাকবেন না। আমি কাল যা যা করেছি তা আমার ভূল ছিলো। প্লিজ স্যার ক্ষমা করে দিন।
ঈশার কথা শেষ হতেই অয়ন তাচ্ছিল্য কর হেসে উঠলো। ঈশা অয়নের এমন হাসির কারন কিছুটা আঁচ করতে পারছে। অয়ন তাকে অপমান করবে। তবে তা নিয়ে ঈশার মনের মধ্যে কোনো আক্ষেপ নেই। করুক অপমান। তবুও মানুষটার মনটা হালকা হোক। ঈশাকে উদ্দেশ্য করে অয়ন ভিশন তাচ্ছিল্যতার সঙ্গে বলল
— দরদ দেখাতে এসেছেন? ওহপপপস সরি সরি দরদ না। আপনি তো এখন নিজে থেকে আমার কাছে এসেছেন। নিশ্চয়ই কোনো নতুন নাটক দেখাতে। আচ্ছা এই যে সরির বন্যা সৃষ্টি করেছেন এসব কাকে দেখাতে করেছেন? রিহান দেখলে তো বেচারা হার্ট অ্যাটাক করবে। এই সব নাটক আপনি অন্য কোথাও গিয়ে করুন কাজে আসবে। আমার সামনে নাটক করে কোনো লাভ নেই।
— ক্ষমা করে দিন না আমায়। ভূল করেছি তো।
— কোনটা ভূল? কি ভূল? কিসের ভূল? আমাকে থাপ্পর মারাটা ভূল ছিলো? সবার সামনে আমাকে নর্দমার কীট এর সাথে তুলনা করা ভূল ছিলো? কপাল আমার। আরে আমি কাল আপনাকে ধর্ষণের জন্য গিয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য খারাপ। আমি খারাপ। আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজে ভালো থাকবেন। আর সত্যি আমি বুঝতে পারছি না আপনি কিসের জন্য আমাকে সরি বলছেন? আমার জানা মতে আপনি কোনো ভূল বা অপরাধ করেননি। আপনার জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে এমনটাই করতো। সরি আপনাকে জরিয়ে ধরে আমি ভূল করেছি। আমার ভূল হয়েছে আপনাকে জরিয়ে ধরাটা। সত্যি বলতে বিকৃত মানসিকতার মানুষ তো আমি। কন্ট্রল হয় না।
অয়ন কথা গুলো ভিশন চিৎকার করে বলল। ঈশা মাথা নিচু করে আছে। কিছু বলার সাহস নেই তার। কি বা বলবে? বলার মতো বাকি কিছুই নাই। ঈশা একটু নিশ্চুপ হয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি সবটা পরে জানতে পেরেছি। ফারজানা আমাকে সব বলেছে। আমি সবটা জানতে পেরে আপনার রাগ ভাঙাতে এমন করেছি। নাটক করতে নয়।
অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঈশার দিকে একটু ঝুঁকে বলতে লাগলো
— হয়েছে রাগ ভাঙ্গানো? এখন আস্তে পারেন। ধন্যবাদ।
— যাবো না আমি। আগে বলুন আমাকে ক্ষমা করেছেন কি না? তারপর যাবো
— তাই না। বুঝেছি আপনি কি করলে যাবেন।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন ঈশার হাত চেপে ধরে। ঈশা ভিশন অপ্রস্তুত ও অবাক হয়ে যায়। অয়ন ঈশার হাত ধরে টানতে টানতে দরজার দিকে নিয়ে গিয়ে হেঁচকা টান দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয় ঈশাকে।
— ফার্দার আমার কেবিনে আসার আগে দশ হাজার বার চিন্তা করবেন। গেইট লস্ট।
ঈশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের চেয়ারে এসে বসলো। আপন মনে বলছে অয়ন
— অয়ন চৌধুরীর মনে সবার জায়গা হয় না। নিজে না চাইতেও ভূল করে আপনাকে নিজের করতে চেয়েছি কিন্তু আপনি বরাবর আমাকে আঘাত করে এসেছেন। নিজেকে আপনার কাছে ছোট করেছি। আপনার থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চেয়েছি। ভূলে থাকতে চেয়েছি আপনাকে। কিন্তু তবুও কেনো জানি আপনার ক্ষতি হবে। আপনার বিপদ হতে পারে। এইটা ভেবে পাগলের মতো ছুটে যাই আমি। নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করি যাতে আপনি সেভ থাকুন। ভালো থাকুন। কিন্তু তারপরও আমার জন্য আপনার অপমানটাই থাকে। কত বোকা আমি। যার মনে অন্য কারোর বসবাস তাকে কি নিজের করে পাওয়া যায়? আবার আসছে নাটক করতে।
— ঈশা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কি হয়েছে তোর?
নূর এর কথায় ঈশার হুস ফিরে। চোখের জলটা মুছে ফেলে ঈশা। নূরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দেয় ঈশা
— না, তেমন কিছু না।
— অয়ন স্যার কি কিছু বলেছে তোকে?
ঈশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে নূর একটু অপেক্ষা করে আবারও বলতে লাগলো
— আরে স্যার তো ভিশন স্টিক তাই হয়তো রাগা রাখি করেছে তোর সাথে। একটু মন দিয়ে কাজ কর। ভূল করিস না। তবেই অয়ন স্যার কিছু বলতে পারবে না তোকে।
— হুম
* কাজে ভূল করার জন্য অয়ন তো আমাকে কখনোই কিছু বলে না। আর কাজের জন্য রাগ দেখালে আমি কখনও কষ্ট পেতাম না। আমি তো ভূল করেছি। অনেক বড় ভূল করে ফেলেছি। তাই কষ্ট পাচ্ছি।
ঈশা নিজের ডেক্সে বসে কাজ করতে লাগলো। অয়নের জন্য মনটা খারাপ তার।অয়ন এর আঘাতটা হয়তো একটু বেশিই হয়ে গেছে।
* অয়ন অফিস শেষ করে বাড়িতে যাবে। অফিস থেকে বের হতেই অয়ন দেখতে পেলো রিহান ঈশা ও আরো একটা মেয়ে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। অয়ন ওদের দিকে না তাকিয়ে নিজের গাড়িতে বসলো। গাড়ি স্টার্ট করতেই অয়নের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় ঈশা। অয়ন ব্যক গিয়ার দিতেই ঈশা চিৎকার করে বলতে লাগলো
— পিছনে যাওয়া যাবে না। যেতে হলে আমার উপর দিয়ে চলে যান।
অয়ন পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তো গাড়িতো ঘোরানো যাবে না। ঈশার কান্ড দেখে অয়নের বেশ রাগ উঠলো। এই মেয়ে আসলে চায় টা কি? অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ি থেকে নেমে আসলো। ঈশা একটা আঙ্গুল মুখে দিয়ে মাথা নাড়ছে আর হাসছে অয়নের দিকে তাকিয়ে। অয়নের তো রাগ এবার চরম পর্যায়ে। অয়ন ঈশাকে গম্ভীর কন্ঠে বলল
— এসবের মানে কি?
— কোন সবের?
— এই যে আমার পথ আটকে রেখেছে কেনো? কি চাই আপনার?
— আমার তো তেমন কোনো চাওয়া নেই। শুধু আপনার থেকে একটু ক্ষমা চাই। করে দিন না ক্ষমা। আমিও দায় মুক্ত হয়ে যাই। জানেন আপনার এই রাগি ফেইসটা একটুও সহ্য হয় না আমার। আপনার সাথে রাগ যায় না।
অয়ন মৃদু হেসে বলল
— মানুষের কত রূপ তাই না। এই মুখে অপমান করতে পারে আবার এই মুখে ন্যাকামি।
— শুনুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী আমি কিন্তু কিছু বলছি না বলে এটা ভেবে নিবেন না যে আমার রাগ নেই। মাথা গরম হয়ে গেলে খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম।
— তাই না।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন ঈশার কোমর শক্ত করে ধরে হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঈশা পুরো থ হয়ে গেলো অয়নের ব্যবহারে। রাগের কারনে চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে অয়নের। অয়নের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে ঈশার মুখের উপর। ঈশার ভিশন অদ্ভুত লাগছে সবকিছু। অয়ন ঈশার ঠোঁটে দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে হুট করেই ঈশাকে এক সাইডে নিয়ে যায়। দেয়ালের সাথে ঈশার হাত চেপে ধরে কাঁপা গলায় বলছে অয়ন
— কি ভেবেছেন আপনাকে আবার জরিয়ে ধরবো! গালে চুমু খেতে খেতে বলবো ঠিক আছে! ক্ষমা করে দিয়ে আপনার ভালোবাসতে শুরু করবো! জীবনেও না। আপনার মতো মেয়েকে অয়ন চৌধুরী যাস্ট ঘৃণা করতে পারে। ভালোবাসা বা দয়া কোনোটাই আপনার জন্য আমার আসে না। লাস্ট অর্নিং আমার কাছে আসার ভূলেও চেষ্টা করবেন না। ব্লাডি মাইন্ডেড ওমেন।
কথাটা শেষ করে অয়ন ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের গাড়িতে বসে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঈশা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে অয়নের চলে যাওয়ার দিকে। কি হয়ে গেলো তা ঈশা কিছুই বুঝতে পারলো না। ঈশার ঘোর কাটে নূর এর কথায়। নূর এসে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— এই ঈশা। কি হয়েছে?
ঈশা একটু নড়ে উঠে আমতো আমতো করে বলল
— কই! কিছু না তো। কি হয়েছে?
— উফফফফ, গড! এই মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আচ্ছা শোন আমি আর রিহান চলে যাচ্ছি। তুই কি আমাদের সাথে যাবি?
— হ্যাঁ। কিন্তু অয়ন স্যার কোথায় গেলো? উনি কি চলে গেছে?
— ওরে আল্লাহ। না সোনা উনি এখনও তোমার অপেক্ষায় বসে আছেন। কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? উনিতো সেই কখন চলে গেছে।
— আরে ঐ লোকটা সত্যি একটা খারাপ লোক। আমাকে না বলেই চলে গেছে। চল আমিও যাবো তোদের সাথে।
* অয়ন বাসার সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ভিতর চলে আসে। বাড়িতে আসতেই অয়ন বেশ চমকে যায়। অয়ন বাসায় আসতেই দেখতে পেলো……………………………….
#চলবে…………………………..
( গল্প পড়ে চলে গেলে হবে না তো। রিসপন্স করতে হবে বেশি বেশি 🥰 )