#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলো রিহান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন ল্যাপটপটা অফ করে দিয়ে রিহানের দিকে কর্ণপাত করলো। রিহান অয়নের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
— স্যার, আপনি ঈশাকে কেনো ডিসমিস করে দিয়েছেন? ও তো ভালোই কাজ করতো।
অয়ন ভ্রূ কুঁচকে বলল
— আমার অফিস। কাকে রাখবো আর কাকে রাখবো না তার কৈফিয়ত কি আপনার মতো একটা বেয়াদব কে দিতে হবে?
অয়নের মুখে বেয়াদব কথাটা শুনে রিহানের হুস ফিরলো। রিহান মাথাটা নিচু করে বলল
— সরি স্যার, আসলে আমি……
— যাস্ট শাট আপ। স্টুপিডের মতো আচরন করা আপনাকে মানায় না। ঈশার জন্য এতো দরদ কোথা থেকে উৎপন্ন হয়? লাস্ট অরনিং করলাম আপনাকে। অফিসের কোনো মেয়ের দিকে যদি আপনার দৃষ্টি পরে। তবে আপনার জন্য সেটা মোটেও সুখকর হবে না। নাউ ইউ গেট লস্ট। এই মুখটা আমাকে ১ সপ্তাহের জন্য দেখাবেন না।
— জ্বি স্যার।
কথাটা বলতেই রিহান অয়নের কেবিন পরিত্যাগ করলো। অয়ন নিজের চেয়ারে ধির গতিতে বসে পরলো। ইগো সেটিসফাই হয়েছে এই বার।
— অসহ্য একটা লোক। ওর জন্যই ঈশাকে অফিসটা ছাড়তে হলো।
আনমনে বলল কথাটা। সত্যি এই রিহানের কারনেই ঐ চিরকুট টা লিখতে হয়েছে আমায়। কি করি বলুন? ঐ ঈশাকে সব সময় বুঝিয়ে পারি না যে অন্য কারো সাথে বিশেষ করে কোনো ছেলের সাথে তাকে আমি সহ্য করতে পারি না। এমনিতেই সহ্য করতে পারি না তার উপর ঈশার গায়ে পরে কথা বলে ওর সাথে। এই দৃশ্য দেখার পর কি ঠিক থাকা যায়? অসহ্য। এখন ঈশা অফিস থেকে গেছে ভালোই হয়েছে। ওর এই সব রং ঢং আর দেখতে পাবো না। আর আমার মন খারাপ ও হবে না।
* অয়ন ল্যাপটপ থেকে ঈশার সব গুলো ছবি ডিলিট করে দিলো। ফটো গুলো ডিলিট করে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অয়ন। উফফফফ এখন থেকে এই মেয়ের ভূত মাথা থেকে নামাতে হবে আমায়। কাজে মন দিতে হবে। অয়ন অফিসের কাজ করতে লাগলো। অফিস শেষ করতেই অয়ন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। আড্ডা বলতে তেমন কিছু না নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা আর কি।
* রাতের দিকে ঈশার বাবা ঈশার রুমে আসে। উনি ঈশার রুমে আসতেই দেখতে পেলো ঈশা ওর মা এর ছবি বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। বাবা ঈশার পাশে এসে বসলো। আলতো করে হাত রাখলো ঈশার কপালে। বাবার স্নেহের স্পর্শ পেতেই ঈশা চোখ মেলে তাকালো। ঈশার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার বাবা। ঈশা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— বাবা তুমি ঘুমাওনি এখনও! তোমাকে না ডক্টর বারন করেছে রাত জাগতে?
— হুম।
ঈশা উঠে বসলো। তার বাবা চোখের জল মুছে ফেলল। ঈশাকে উদ্দেশ্য করে মায়াবী কন্ঠে বলল
— রাতে খেয়েছিস মা? অনেক অত্যাচার, অপমান সহ্য করতে হয় আমার জন্য। মা আর কত করবি আমার জন্য? নিজের কথা একটিবার ভেবে দেখেছিস? সামনে তোর একটা সুন্দর জীবন আছে। তুই নিজের মতো করে ভালো থাকার জন্য এখান থেকে অনেক দূরে চলে যা মা।
বাবার কথা শুনতেই ঈশার বুকের মধ্যে মুচড়ে উঠলো। মা চলে যাবার পর বাবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে ছিলো সে। আজ বাবাও তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে! বরাবরই মেয়েরা বাবার প্রতি দুর্বল থাকে। নিজের থেকেও কয়েক গুণ বেশি তারা বাবাকে ভালোবাসে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ঈশা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল আটকাতে পারলো না। ঈশা বলছে
— বাবা সেই মা চলে যাবার পর থেকে কতই না অপমান, অবহেলা সহ্য করেছি আমি। হাজার বার মনে হয়েছে আমি মানুষ না। তবুও কখনও কিছু বলতে পারিনি। কারন আমি তোমার কাছে থাকতে চেয়েছি। প্লিজ বাবা তোমায় ছেড়ে চলে যেতে বলো না আমায়।
ঈশার কান্না তার বাবাকে আবারও উপলব্ধি করালো তার প্রতি তার মেয়ের ভালোবাসা। উনি ঈশার চোখ মুছিয়ে দিয়ে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলো। ঈশা খাবার খাচ্ছে এমন সময় হুট করে তার রুমে আগমন ঘটলো তার মা রেহেলা বেগমের। রেহেলা বেগম ঈশাকে খাইয়ে দেয়া দেখতে পেতেই রাগে হুংকার দিয়ে উঠলো। রেহেলা বেগম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— ঢং দেখে আর বাঁচি না। এতো বড় হয়েও ন্যাকামি কমে নাই তোর। আর তোমাকেও বলি জীবনেও তো আমার ছেলেমেয়ের জন্য এতো দরদ দেখাওনি। এই মেয়েটার জন্য আর কত দরদ দেখাবে? জানো তোমার গুনের পাহাড় মেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এই যে খাবার মুখে তুলে দিচ্ছো তা আর কাল থেকে জুটবে না।
রেহেলা বেগমের কথা শুনে ঈশার বাবা চরম বিরক্তি নিয়ে বলল
— উফফফফ রেহেলা থামবে তুমি? ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে? আমার পেনশনের টাকা দিয়ে চলবে। সমস্যা কোথায়? তারপরেও যদি আমার মেয়ের কষ্ট হয় তা হলে আমি আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিবো। তবুও আমার মেয়েকে আর কথা শুনিও না তুমি। দয়া করো একটু।
ঈশার বাবার কথা শুনে রেহেলা বেগম ভিশন ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সম্পত্তির কথা শুনে ওনার রাগ আরো বেড়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে বলল রেহেলা
— হ্যাঁ, নিজের সবটা দিয়ে দাও ঈশাকে। তোমার তো আর কোনো ছেলে মেয়ে নেই। তাই না!
রেহেলা বেগম ও তার বাবার ঝগড়া দেখে ঈশা কাঁপা গলায় বলল
— মা দয়া করে আমার জন্য তোমারা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি করো না। আমি তো বলেছি কাল চাকরি খুঁজতে যাবো। প্লিজ এমন করো না তোমরা প্লিজ।
ঈশার অনুরোধ করার পর ঈশার বাবা বসা থেকে উঠে যায়। ঈশার সৎমা ও কিছু সময় কথা শুনানোর পর চলে যায়। ঈশা নিজের সব কিছুর জন্য নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কিছু করলো না।
* সকাল সকাল অয়ন অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছি। এমনিতেই রাতে অনেকটা সময় আড্ডা দিয়েছে অয়ন। তারপর বাসায় এসে ভালো করে ঘুমাতে পারেনি সে। কি করে ঘুম আসবে বলুন? মনটা যে বড্ড ব্যাকূল ছিলো তার। কেনো এতো ব্যাকূলতা? কার জন্য এমন অনুভুতি? সত্যি জানে না অয়ন। মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে অয়নের দেখতে পেলো আয়নায় তার মুখটা। অতটা ও অসুন্দর নয়। তবে কেনো ঈশা তার প্রতি দুর্বল হয় না? কেনো সব সময় ঈশা তাকে এড়িয়ে চলতে চায়? ঐ রিহানের থেকেও কি অসুন্দর সে? ঈশার কথা ভাবতেই অয়নের হাস্যজ্বল চেহারাটায় কালো মেঘ হয়ে গেলো। অয়ন নিজেকে নিজে বলতে লাগলো
— কি প্রয়োজন ছিলো ঈশার কথা মনে করার? সেই তো মন খারাপ হলোই।
অয়ন ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলো। আজ ইফতির অফিসে যাবে সে। ওখান থেকে সোজা নিজের অফিস। আসলে বন্ধুত্বের টানে যেতে হবে। না গেলে অনেক কথা হবে পরে। অয়ন ইফতির অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করে সোজা চলে যায় কেবিনে। কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পেলো ইফতি ও ফারজানা বসে আছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে ফারজানা দৌড়ে চলে আসে অয়নের কাছে। ফারজানার হাসি মুখটা দেখে অয়ন একটু খোঁচা মেরে বলল
— মানুষ বরকে দেখলেও এতো খুশি হয় না যতটা না কাজিনকে দেখে তুই হয়েছিস। বলি বাড়িতে কি জানাবো আমাদের এই ব্যাপারটা?
অয়নের কথা শুনে ভেংচি কাটে ফারজানা। ফারজানা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
— ঢং যত। তোর মতো একটা জোকারকে বিয়ে আমি করবো! হাউ হট পসিবল? জানিস আমাকে দেখার জন্য কত ছেলে আমার বাসার সামনে ঘুর ঘুর করে? আসছে কথা বলতে!
— হুম সেটা আমি জানি। আর এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার তাই না। বাসি খাবারে মাছি একটু বেশিই ভনভন করে। সিম্পল।
— অয়নের বাচ্চা আজ তোকে…….
ফারজানা অয়নের কাজিন হয়। সব সময় এদের ঝগড়া অটল থাকে। ইফতি অয়নকে চিৎকার করে বলে
— উফফফফ, থামবি তোরা? এমনিতেই লেট হয়ে যাচ্ছে তো। ইন্টারভিউ কখন শুরু করবো?
অয়ন ইন্টারভিউর কথা শুনে একটু অবাক হলো। অয়ন বিরক্তি নিয়ে বলল
— এই আগে বলিস নাই কেনো? আমার এই সব ইন্টারভিউ একদম পছন্দ না। বোরিং লাগে সব।
— এই জন্যই বলি নাই। এখন বস তো।
অয়ন ইফতির কথা মতো বসে পরলো। দুজন ইন্টারভিউ দেয়ার পর অয়ন ইফতিকে বলল
— উফফফফ এদের কে কেনো দেখেছিস? একটা প্রশ্নের ও জবাব দিতে পারে না। আমার বিরক্ত লাগছে কিন্তু।
— এই একটু অপেক্ষা কর নেক্সটা ভালো হবে।
— হুম
অয়ন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দরজার দিকে তাকালো। অয়ন দরজার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। একি দেখছে সে? ঈশা এখানে কি করে? অয়ন চোখ জোড়া শান্ত করে মনে মনে বলল
— আমার অফিস থেকে বেরিয়ে এখানে চাকরি করবে হুম। ছেলেদের সাথে রং ঢং করবে আর আমি চুপচাপ দেখবো? কিভাবে সোনা? দাঁড়াও চাকরিগিরি ছুট্টাচ্ছি আমি।
* ঈশা অয়নকে দেখে ভিশন অবাক হয়ে যায়। এই অসভ্য লোকটা এখানে কেনো? তবে কি আমি ভূল করে অয়নের অন্য কোনো অফিসে চলে এসেছি? যদিও আমার জানা মতে অয়নের একটাই অফিস। ইন্টারভিউ দিবো কি দিবো না? চলে যাবো? চলে গেলে চাকরি কি করে হবে? জবের যে বড্ড প্রয়োজন আমার। আনমনে কথা গুলো ভাবছে ঈশা। ঈশাকে থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ট্রল করে অয়ন বলল
— ম্যাডাম হেঁটে হেঁটে আসুন এই দিকে। একটু ভালো করে হাঁটবেন কেমন আমরা তো ফ্যাশন শো দেখতে এসেছি। হাত পা নাড়াচাড়া দিয়ে, উফফফফ! তারাতাড়ি করুন তর সইছে না আমার।
অয়নের কথার বিপরীতে ঈশা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অয়নের দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকায় ফারজানা ও ইফতি। ঈশা এগিয়ে এসে চেয়ারে বসতেই অয়ন কাশি দিয়ে গলাটা ক্লিয়ার করে নিলো অতঃপর যা প্রশ্ন করলো তা শুনে ঈশা নয় ফারজানা ইফতি সবাই চমকে গেলো। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল……………….
#চলবে…………………….
( গঠনমূলক মন্তব্য করুন। নাইস, নেক্সট না লিখলেও চলবে। ধন্যবাদ)