#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশা বাসায় আসতেই দেখতে পায় তাদের বসার রুমে অনেক মানুষের আগমন। ঈশা একটু একটু অবাক হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সকলকে চোখ দিয়ে মেপে নিচ্ছে। এই মুখ গুলো ঈশার অচেনা। ঈশাকে দরজার দিকে দেখতে পায় ঈশার মা রেহেলা বেগম। রেহেলা বেগম ঈশাকে দেখা মাত্রই হাস্যজ্বল মুখে ঈশাকে বলে উঠলো
— ঈশা তুই কখন আসলি? ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? এদিকে আয়।
রেহেলা বেগমের মুখের হাসি জানান দিচ্ছে তার মনের আনন্দ। ঈশার কাছে গিয়ে ঈশার হাতটি পরম আবেশে স্পর্শ করেন উনি। অতঃপর সকলের উদ্দেশ্যে মৃদু কন্ঠে বলছে রেহেলা বেগম
— একটু অপেক্ষা করুন আপনার। আমি ঈশাকে রেডি করে নিয়ে আসছি।
ঈশা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব? এই লোক গুলোই বা এখানে কেনো? ঈশা তার মা এর সাথে রুমে এসেই কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রেহেলার দিকে। ঈশা বলছে
— মা এই সব কি হচ্ছে? এই লোক গুলো কারা?
রেহেলা বেগম মৃদু হেসে জবাব দিলো
— আরে তুই বুঝতে পারছিস না কিছু? ওনারা তোকে দেখতে এসেছে। তোর বাবার তো ছেলে বেশ পছন্দ হয়েছে। শুধু তোর বাবার না আমাদের সবারই খুব পছন্দ হয়েছে। রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি মা। এই বার ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হলে হয়।
রেহেলা বেগমের কথাটা ঈশা বুকে এসে গেথে যায়। এক মূহুর্তের জন্য থ হয়ে গেলো ঈশা। অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে কথাটা কেমন যেনো অসহ্য যন্ত্রণা দিচ্ছে মনে। বার বার নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে নিজের কাছে নিজেকে। না চাইতেও অয়নের কথাটা মনে পরে যেতেই নিজেকে সামলে নিলো ঈশা। ভাবনার অবকাশ ঘটিয়ে ঈশা তার মা এর উদ্দেশ্যে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো
— আচ্ছা। আমি তৈরি হয়ে আসছি।
কথাটা শেষ করতেই রেহেলা বেগম খুশিতে আত্মহারা হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশা নিজের রুমের মধ্যে থ মেরে বসে আছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে জল। কেনো এমনটা হচ্ছে তার? অয়নের কথা কি পরছে মনে? না কেনো পরবে? ওকে তো ভালোবাসা বারণ। নিচু মানসিকতার মানুষ একটা। ওকে আমি ভালোবাসতে পারি না। ওর জন্য আমার ঘৃণাটাই শ্রেয়। তবে কেনো আমি অন্য কারোর কথা ভাবতে পারি না? কেনো কারনে অকারণে তার কথা মনে পরে আমার? কেনো অয়ন! খুব কি বেশি ভূল হয়ে যেতো আমার মতো করে আমায় বুঝলে? খুব কি অপরাধ করে ফেলেছি আমি তুমিময় আসক্তিতে পরে? হ্যাঁ, হয়তো ভূল। তা না হলে একা একা নিজের চোখের জল ফেলতাম না। এমনিতেই চলে যাবো অয়নের থেকে। কিন্তু এতো তারাতাড়ি যে চলে যেতে হবে তা জানা ছিলো না।
* ঈশা আপন মনে কথা গুলো ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করে ঈশা নিজের চোখ মুছে নিজের মাথায় নিজে টোকা দিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো
— অয়ন আমাকে অপমান করেছিস না? এখন দেখ কেমন লাগে। ভালোবেসে আমার জন্য উপহার পাঠানো! দেখাচ্ছি। আমিও তোকে দেখিয়ে দিবো ঈশা কি কি করতে পারে। আমি তোমায় ভূল বুঝে অপমান করেছি! ক্ষমা করে দাও! তোমার কথা গুলো শুনে শুনে আমার অভ্যাশ হয়ে গেছে। নতুন কিছু বলো! মিস্টার অয়ন চৌধুরী উপহার পাঠানো লাগবে না আর। এখন থেকে আমি উপহার দিবো আপনাকে। অন্য কোনো ভালো মনের মানুষকে বিয়ে করে নিজেকে সুখী করতে পারে ঈশা। দেখিয়ে দিবো আমি। আর অয়নকে কষ্ট দেয়ার এর থেকে ভালো উপায় আমার জানা নেই।
কথাটা শেষ করেই ঈশা রেডি হয়ে নিচ্ছে। জেদ পূরণ করতে যাই সে করছে না কেনো। তার মন কিন্তু শান্ত হচ্ছে না। বড্ড ব্যাকূল হয়ে আছে ঈশার মন। রেডি হয়ে একদম নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে ঈশা চলে আসে পাত্র পক্ষের সামনে। ঈশাকে দেখে তারা বেশ খুশি হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈশার বাবা ছেলের উদ্দেশ্য বলল
— বাবা এই হলো আমার মেয়ে ঈশা। আর ঈশা এই হলো অসিফ চৌধুরীর ছেলে আবির।
ঈশা আবিরের দিকে দৃষ্টিপাত করলো না। ঈশাকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে সে খুব অসস্থিতে আছে। ঈশাকে তাদের সামনে বসানো হলো। আবির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। এতোটাও সুন্দরী কেউ হতে পারে? ভাবছে আবির। ঈশার বেশ লক্ষ্য করে মে আবির তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে আবিরের বাবা ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আচ্ছা মা বলো তো আবিরকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে?
ঈশা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। কি বলবে তা তার জানা নাই। এমনিতে লোকটা দেখতে অতটাও খারাপ না। কিন্তু আমি কেনো মুখে কোনো উত্তর দিতে পারছি না? ঈশা মাথা নিচু করে ভাবছে এই সব কথা। ঈশা নিরবতা সবাইকে একটু চিহ্নিত করলো। আবিরের বাবা ঈশাকে নির্ভয় দিয়ে বলল
— মা বলো তুমি। সমস্যা নেই কোনো। বলো পছন্দ হয়েছে কি হয় নি?
ঈশা নিশ্চুপ থেকে মাথাটা হ্যাঁ সূচক নাড়লো। ঈশার উত্তরটা সবার বেশ পছন্দ হয়েছে। আর সবাই এই উত্তরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে। ঈশা বাবা হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠলো
— যাক মেয়েও রাজি আর ছেলে তো আরও আগে থেকেই রাজি। আর কোনো সমস্যা নেই।
আবিরের বাবা বললো
— হ্যাঁ, আর কি সমস্যা থাকতে পারে? আর কোনো সমস্যা নেই এখন ভালো একটা মুহূর্ত দেখে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেই হয়।
— জ্বি ভাই একদম ঠিক বলেছেন। ওদেরকে পাশা পাশি মানাবেও ভালো।
— জ্বি তা আর বলতে
ঈশা ও আবিরের পরিবার কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। এই এতো লোক জনের মধ্যে শুধু মাত্র ঈশা আর আবির নিশ্চুপ হয়ে আছে। ঈশা মাথা নিচু করে ভাবছে জেদের বসে কি আমি কোনো ভূল সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি? আর তার বিপরীত দিকের লোকটা ভাবছে আচ্ছা ঈশা দেখতে এতো সুন্দরী কেনো? ওর চোখে কি মায়া। ওর দিকে তাকিয়ে চোখের তৃষ্ণা মিটাই আমি।
কথা বলা শেষ করে তারা আবির আর ঈশার বিয়েটা আগামী মাসে ঠিক করলো। অতঃপর সবাই চলে যায়। ঈশাও নিজের রুমে এসে চেঞ্জ করে নিলো। বিছানায় বসে এক ধ্যণে অয়নের কথা ভাবছে সে। যদি অয়ন আমাকে ভালোবাসতো তবে আজ গল্পটা একটু ভিন্ন হতো।
* অয়ন বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আজ সারা দিন কাজ করে ভিশন ক্লান্ত লাগছে তার। বিছানায় পিঠ ছোঁয়াতেই ফোনটা বেজে উঠলো অয়নের। অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পেলো ফারজানার কল এসেছে। অয়ন কলটা পিক না করে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো। ফারজানা আরো দু একবার কল করে কিন্তু অয়নের কোনো রিসপন্স পেলো না। বাধ্য হয়ে কল করা অফ করলো ফারজানা। অয়ন কিছু সময় শুয়ে থেকে উঠে পরলো বিছানা থেকে। ফ্রেশ হয়ে রাতে্য খাবার খাওয়ার জন্য চলে আসে সে। খাবার টেবিলে বসতেই অয়ন কে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলতে লাগলো
— কি অবস্থা অফিসের? কাজ কেমন করছিস তুই?
অয়ন খাবার খাচ্ছে আর বলছে
— হুম ভালোই বাবা।
— হুম। তো ফিচারে কি করবি?
— বিজনেস করবো আর কি?
— আমি বলতে চাই বিয়ে করার কি কোনো ইচ্ছে আছে তোর?
— বিয়ে করার ইচ্ছে কেনো থাকবেনা? অবশ্যই আছে। কিন্তু একটু সময় দাও আমায় আমি জানাচ্ছি তোমাদের।
— সময় আর দেয়া যাবে না। কাল বিকেলে আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
অয়নের ভিশন হাসি পেয়ে যায় তার বাবার কথা শুনে। মানে মেয়ে দেখতে যাবে আগে থেকে আমাকে জানানোর প্রয়োজন হলো কেনো? এখন তো আমি সাবধান হয়ে যাবঝ আমি। অয়ন হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আচ্ছা জোর করে নিয়ে যাবে আমায় ঠিক আছে?
অয়নের এমন কথা শুনে ও তার মুখের হাসি দেখে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
* অফিসে যাবার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে অয়ন। নিজের গাড়ি সার্ভিসের জন্য পাঠানো হয়েছে। উফফফফ দুপুরে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অফিসে আসবে কিন্তু সকলে তো মিটিং আছে। অনেক কিছু ভেবে বেরিয়ে যায় সে। এখন তো মনে হচ্ছে বাসায় থাকলেই ভালো হতো। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ করে অয়নের চোখ জোড়া থমকে দাঁড়ায়। এ কি দেখছে সে? এক মূহুর্তের জন্য একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় অয়ন। কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে অয়ন………………………….
#চলবে……………………………