#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*হঠাৎ করে আবিরকে ভিশন অবাক করে দিলো কেউ একজন। আবিরের শার্টের কলার পিছন থেকে চেপে ধরে সোফা থেকে তুলে দাড় করিয়ে
— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসস!
সজোরে চড় বসিয়ে দিলো তার গালে। রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো অয়ন চৌধুরী
— তোর সাহস হয় কি করে ঈশাকে জোর করে ড্রিংক করানোর। ব্লাডি রাসকেল।
অয়নের থাপ্পড়ের শব্দে পুরো ক্লাবটা থমকে গেলো। সবাই অয়ন আর আবিরের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কেনো অয়ন আবিরের উপর হাত তুললো তা কারোই বোধগম্য নয়। অয়ন আবিরকে থাপ্পড় মারতেই আবির অয়নের দিকে রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে বলল
— ঈশার সাথে আমার বিয়ে হবে। আমি আমার স্ত্রীকে জোর করি বা যা ইচ্ছে তাই করি। তাতে তোর সমস্যা কি?
আবিরের কথা শুনে অয়নের মাথায় রক্ত উঠে যায়। অয়ন আবিরের কলার চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলছে
— যদি ঈশা তোর স্ত্রী ও হয়, তবুও তুই ওকে জোর করতে পারিস না।
— তাই নাকি? ঈশা কে হয় তোর? কোনো ঈশাকে জোর করতেই তোর কষ্ট হচ্ছে?
অয়ন আবিরের মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
— ও আমার কে? তা তোর মতো একটা রাস্তার ছেলেকে বলতে আমি বাধ্য না।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন আবির কে ধাক্কা মেরে কলারটা ছেড়ে দিলো। অয়ন আবির কে ধাক্কা দিতেই আবির তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে। অয়ন ঈশার দিকে ছুটে চলে আসে। ঈশা অবাক হয়ে ভাবছে অয়ন এখানে কি করে এলো? ঈশার কাছে এসে অয়ন বলছে
— তুমি ঠিক আছো তো? এখানে কেনো আসছো? আমাকে বলে আস্তে পারতে তো নাকি? দেখেছো কতো বড় একটা ভূল মানুষকে বিয়ে করতে চলে ছিলে! চলো আমার সাথে।
অয়নের কথা শেষ হতেই আবির ঈশার দিকে এগিয়ে এসে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— ঈশা এসব কি? তুমি ৩য় ব্যক্তির দ্বারা আমাকে অপমান করছো! আমাকে অপমান করার জন্য এই ছেলেটাকে ডেকে এনেছো? আমার সকল বন্ধুদের সামনে আমাকে এই ভাবে অপমান না করলেও পারতে তুমি।
ঈশা সোফা থেকে উঠে আবির কাছে চলে যায়। আবিরের কাছে এসে ঈশা আবিরের হাত ধরে অনুনয়ের কন্ঠে বলতে লাগলো
— বিশ্বাস করুন আমি অয়নকে এখনে ডাকিনি। আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না অয়নের দ্বারা আপনার কোনো প্রকার অপমান হোক। ও কেনো এসেছে? কি জন্য এসেছে আমি কিচ্ছু জানি না। বিশ্বাস করুন। অয়নের ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
ঈশার ছলছল দৃষ্টি অয়নকে অবাক করে দিলো। একি সেই ঈশা যার কাছে তার আত্নসম্মানের থেকে বড় আর কিছু নেই! একি সেই ঈশা যে একটু ভূল করার কারণে তাকে আঘাত করতে দুবার ভাবিনি! সত্যি অয়ন অবাক না হয়ে পারেনা। অয়ন ঈশার হাত ধরে হেঁচকা টেনে আবির সামনে থেকে তাকে সরিয়ে নিলো। অয়নের রক্ত বর্ণ ধারণ করে চোখ জোড়া প্রকাশ করছে ঈশার কাজে সে কতটা রাগ করেছে। অয়ন অতিরিক্ত রাগে ঈশা কে বলতে লাগলো
— এই সব কি বলছো তুমি? ওর সামনে কেনো নম্ন কন্ঠে কথা বলছো? ওর মতো একটা বেয়াদব ছেলের সামনে মাথা নত করতে তোমার সম্মানে বাঁধছে না? কেনো সহ্য করছো ওকে?
ঈশা অয়নের কথা শেষ হতেই অভিমানি কন্ঠে বলতে লাগলো
— একদম চুপ করুন মিস্টায় অয়ন চৌধুরী। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা চাই না কোনো বাহিরের লোক আমাদের মাঝে কথা বলুক।
ঈশার কথাটা অয়নের বুকে আঘাত করলেও অয়ন একটু সামলে নিলো নিজেকে। আবির ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— বাহ বাহ! নাটক জমে উঠেছে দেখছি।
— মানে? কিসের নাটক?
— এই যে অয়ন আর তোমার নাটক। এই ছেলে এতোটা সাহস পায় কি করে? যে আমাদের মাঝে ৩য় ব্যক্তি হয়ে চলে আসে।
— আমি আপনার কাছে ওর ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছি তো।
— ক্ষমা! ক্ষমা করবো না আমি। এখন আমি বুঝতে পারছি। আমি নিশ্চিত যে এই ছেলের সাথে তোমার পূর্বের কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তার জন্য এই ছেলে তোমার পিছু পিছু আসে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই দেহ কত জন কে দিতে ইচ্ছে হয় তোমার?
আবির কথাটা শেষ করার আগেই অয়ন হুট করে আবিরের কলার চেপে ধরে। দেয়ালের সাথে আবিরকে চেপে ধরে রাগে ফিসফিসিয়ে বলছে অয়ন
— কি বললি তুই? ঈশাকে তোর কি মনে হয়? ও রাস্তার মেয়ে? কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আজ তোকে শিখিয়ে দিবো।
* কথা শেষ করেই অয়ন আবির কে মারতে লাগলো। ঈশা প্রথমত আবিরের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। আরও অবাক হয় অয়নের ব্যবহার দেখে। ঈশা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এছাড়া করার মতো কিছুই হাতে নেই। আবির কে মার খেতে দেখে আবিরের কয়েক জন বন্ধু দৌড়ে চলে আসে অয়নকে আটকাতে। কিন্তু তারা সবাই ব্যর্থ হয়ে যায় অয়নের রাগের কাছে। কয়েক জন অয়নের শার্ট ধরে টানছে কিন্তু অয়ন তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। মাথায় রক্ত উঠে গেছে তার। আবিরের মুখ থেকে ও চেহারার বেশ কিছু জায়গা থেকে ব্লেডিং হচ্ছে। ক্লাবের কিছু ছেলে অয়নকে থামাতে এগিয়ে আসতেই ঈশা সবাইকে অবাক করে দিয়ে অয়নের হাত ধরে ফেলে। অয়ন মুখ ঘুরিয়ে ঈশার দিকে তাকালো। ঈশা বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এই সব কি হচ্ছে?
অয়ন আবিরকে ছেড়ে দিয়ে ঈশার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। ঈশার ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। চোখ জোড়া ছলছল। এর কারন কি? অয়নের বোধগম্য হচ্ছে না। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কি হচ্ছে মানে? এই ছেলে আমার সামনে তোমায় নিয়ে বাজে উক্তি করবে আর আমি নিরব থাকবো?
— হ্যাঁ, থাকবি নিরব। আমাকে নিয়ে যা বলার বলবে ও। ওর সেই অধিকার আছে।
— তাই না।
— ঠাসসসসসসসস, ঠাসসসসসসসসস, তুই কোন অধিকারে আমার স্বামীর গায়ে হাত তুলেছিস? বল। উত্তর দে আমায়। তুই কে আমার যে অধিকার দেখাতে এসেছিস? আমাকে কেউ বাজে কথা শোনালে তোর খারাপ লাগে কোনো?
ঈশা থাপ্পড় দিতেই অয়ন মাথাটা নিচু করে ফেললো। এই থাপ্পড়টা অয়নের দেহকে মোটেও আঘাত করেনি। এই থাপ্পড়টা অয়নের হৃদয়কে আঘাত করেছে। নিশ্চুপ অয়নের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ অয়নের বুকের মধ্য থেকে হৃদয়টা বের করে নিয়েছে। অয়নকে নিশ্চুপ দেখে ঈশা আবারও বলতে লাগলো
— বেরিয়ে যা এখান থেকে। তুই না আসলে আবির আমার চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করার সুযোগ পেতো না। এই সব কিছুর জন্য তুই নিজে দায়ী। আর কখনও নিজের মুখটা নিয়ে আমার সামনে আসবি না। যদি আমাকে আর কখনও নিজের মুখ দেখাস তো ঐ দিন আমার মরা মুখ দেখবি তুই। বেরিয়ে যা এখান থেকে। আর কখনও আসবি না।
* অয়ন মাথাটা নিচু করে ঈশার কথা গুলো নিরবে শুনছে। আসলে কি বলা উচিত তা জানা নাই অয়নের। বাকরুদ্ধ অয়ন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আজ একটু নতুন করে চিনতে পারলো ঈশাকে। নতুন এক ঈশা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। না অয়ন মানুষ চিনতে আবারও ভূল করেছে। মাটিতে পরে আছে আবির। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত। ঈশা অয়নকে চলে যেতে বলেই বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন মাথাটা নিচু করে অনেক চেষ্টা করছে এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাবার। কিন্তু না কিছুতেই অয়ন নড়তে পারছে না। পা জোড়া অবশ হয়ে আসছে। বিন্দুমাত্র শক্তি নেই তার। না এভাবে হবে না। আমাকে পারতে হবে। অয়ন মাথাটা আলতো করে তুলতেই দেখতে পায় ক্লাবের সকলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখের জল আড়াল করা দায় হয়ে পরেছে আজ। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় ক্লাব থেকে। ঈশা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল।
* গাড়িতে বসে অয়ন সকলের চোখের আড়ালে নিজের চোখের জল ফেলছে। এতোটা কষ্ট এর আগে কখনও হয়নি তার। ঈশা এতোটা বদলে গেছে। ভাবতেই বুকের বাম পাশটা কেঁপে উঠে। একটি বারের জন্য চিন্তা করলো না যে কেনো আমি ওর অপমান সহ্য করতে পারি না। আমার সামনে ওকে নিয়ে কেউ বাজে মন্তব্য করবে আর আমি নিশ্চুপ থাকবো? এটা কি আদু সম্ভব? ভালোবাসার মানুষকে কেউ ছোট করে কথা বললে নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা আমার নেই। হ্যাঁ, এটাই আমার ব্যর্থতা। তবে আজ ঈশা আমাকে সত্যি বুঝিয়ে দিয়েছে ভালোবাসা কতটা অপরাধ। আরে আয়ি তো ওর চোখের আড়ালে ওর পিছন পিছন এসেছি। যাতে করে ওর কোনো বিপদ না হয়। একটি বার বুঝলো না পাগলিটা। কেড়ে নিলো ওর সামনে আসার সব অধিকার। সত্যি তো আমার সেই অধিকার কখনও ছিলোই না। যার পিছনে আমি ছুটেছি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অয়ন। বাসায় এসে নিজের রুমে বসে বসে ঈশার কথা ভাবছে সে। না এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ভূলতে হবে ঈশার করা পরম যত্নে করা আঘাতের কথা। অয়ন সোফা থেকে উঠে দাড়াতেই তার……………………
#চলবে………………………