#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অয়ন সোফা থেকে উঠে দাড়াতেই তার রুমে চলে আসে ফারজানা। ফারজানা অয়নের রুমে আচমকা অয়নকে দেখতে পেয়ে একটু ঘাবড়ে যায়। অয়ন ও ফারজানাকে এখানে দেখে একটু অবাক হয়। ফারজানা অয়নকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা গলায় বলল
— তুই! কখনও এলি?
অয়ন সাধারণ ভঙ্গিমায় জবাবে বলল
— এই তো একটু আগেই এসেছি। কিন্তু কেনো?
— তুই কোথায় ছিলি বিকেল থেকে?
— অফিসে ছিলাম। কেনো কি হয়েছে?
— মিথ্যে বলছিস কেনো? তুই অফিসে ছিলি না। তুই নাইট ক্লাবে ছিলি। সেখান একটা বখাটে ছেলের সাথে তোর মার পিট হয়। আর সেই মার পিটের কারণে তোর হাতকেটে যায়। কিন্তু তুই এতোই ব্যস্ত ছিলি যে সেই আঘাতটা একটি বারের জন্য দেখিস নাই। রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে।
— তুই জানলি কি করে?
— আইডিয়া করে বললাম।
— হাহাহাহা হুম ঠিক বলেছিস।
— আর কিছু হয়েছে?
— না না আর কিছু না। কি হবে? আজব!
— ঠিক বলেছিস তো?
— আরে হুম একদম ঠিক বলেছি। কিছু হয়নি আর।
— মিথ্যে অভিনয়টা ভালোই করতে জানিস। ঈশা তোকে থাপ্পড় মেরেছে। সবার সামনে তোকে অপমান করেছে। হায়রে মানুষ যাকে অপমানের থেকে রক্ষা করতে গিয়েছিস। সে নিজেই তোকে অপমান উপহার দিয়েছে।
ফারজানার কথা গুলো অয়নকে আবারও মনে করিয়ে দিলো কিছুক্ষণ আগের কথা গুলো। অয়ন মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাথরে ন্যায়। ফারজানা অয়নের মুখে হাত রেখে মাথাটা উঁচু করে বলতে লাগলো
— আর কত অপমান সহ্য করবি তুই? আর কতটা সহ্য শক্তি আছে তোর মধ্যে?
— কি করবো? ও তো একটা পাগলি না বুঝেই আমায় ভূল বুঝে তাই বলে কি ওকে ছেড়ে দিবো? উহু এক ভূল আমি দুবার করি না। ওকে ছাড়া অসম্ভব। একটা সময় ঠিক বুঝবে।
* ফারজানা অয়নের কথাতে বেশ বিরক্ত হলো। চরম বিরক্তি নিয়ে ফারজানা হনহন করে চলে যায় অয়নের রুম থেকে। ফারজানা চলে যেতেই অয়ন ব্যল্কনিতে চলে আসে।
* ক্লাব থেকে অয়ন চলে যেতেই ঈশা চোখ মুছে ফেললো। আবিরের দিকে ঘৃণ্য দৃষ্টিপাত করলো সে। আবির ঈশার দিকে এগিয়ে এসে কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— এই সব প্লান করে এসেছো তাই না। অয়ন তোমার কি হয় আমি বুঝি না ভেবেছো? রাস্তার মেয়ের মতো যাকে পাস তার কাছেই…..
আবিরকে অবাক করে দিয়ে থামিয়ে দিলো ঈশা।
— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসসস। ব্লাডি রাসকেল। তোর মন মানসিকতা যে কোন লেভেলের তা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। ভেবেছিস কি আমি প্রপার রিসার্স না করেই তোর কথা মতো এখানে এসেছি? আমি এখানে এই জন্য এসেছি তার কারন আমি দেখতে চেয়েছি অয়ন আমাকে সত্যি ভালোবাসে কি না। জানিস আমি ওকে একটিবারের জন্যও বলি নাই কিছু। হৃদয়ের টান বলে কথা আছে। ছুটে চলে আসে আমার কাছে। ওপস ভূল করেছি আমি তোকে আরেকটু মার খেতে দেয়া উচিৎ ছিলো। তা হলে ২য়বার আর আমায় ছোট করে কিছু বলার সাহস পেতিস না।
— মানে?
— মানে হলো অয়নকেও আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু একটা কারন যাস্ট একটা কারনের জন্য আমি ওর কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছি না। যদি কারন টা মিথ্যে প্রমান হয়। তবে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। আর তোর সাথে এই সব নাটক এই জন্য করছি যাতে করে অয়ন কষ্ট পায়। জানিস সোনাকে যতটা পোড়াবি তত খাঁটি হবে। কাকে কি বলছি? তোর মতো মাথা মোটা এই সব বুঝবে না। ফার্দার আমার সামনে ভূল করেও আসার সাহস করিস না। অয়ন তো কিছুই না। ওর থেকেও হাজার গুন বেশি ডেন্জার আমি। গট ইট
* ঈশা হনহন করে ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো। আবির ও তার সব বন্ধরা থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। ঈশা কি করে গেলো তা কারোর বোধ্যগম হলো না। ঈশা যাবার কয়েক মিনিট পর আবিরকে উদ্দেশ্য করে তার বন্ধু বললো
— এসব কি হলো? প্লান মতো তো কিছুই হলো না। আর তুই বরং একটা মেয়ের হাত মার খেয়ে বসে পরলি।
আবির গালে হাত রেখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
— প্লান মতো হয়নি তো কি হয়েছে? এরম থেকেও মারাত্মক প্লান বানিয়ে ফেলেছি। আজকের ব্যবহারের ফলাফল কি হতে পারে ঈশাকে তা হারে হারে টের পাওয়াবো আমি।
* ঈশা রিক্সায় বসে ফোনটা বের করে একটা নাম্বারে ডায়েল করলো। দুয়েক বার রিং হতেই কলটা পিক করা হলো। ঈশা ঝাঁজালো কন্ঠে বলতে লাগলো
— ডকুমেন্টটা কি আমি আদু পাবো?
ওপার থেকে মৃদু কন্ঠে কেউ বলতে লাগলো
— হ্যাঁ। আসলে আজ আমাদের বেবিটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। তাই ওকে নিয়ে ডক্টরের কাছে এসেছি। এই জন্য আমি আস্তে পারিনি। সরি কাল দেখা করবো।
— যাস্ট শাট আপ ওকে। কাল কাল করে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছো তুমি। দিনের পর দিন লোকটাকে আঘাত করতে করতে আমি ক্লান্ত। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকু এইবার হারাতে বসেছি। যদি সত্যিই সত্যি কাল আমার সাথে দেখা না করো তো তার পরিণাম তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না। রাখছি আমি।
কথাটা শেষ করতেই কলটা কেটে দিলো ঈশা। এতোটা বিরক্তি লাগছে যা বলে বোঝানোর মতো নয়। ঈশা আপন মনে বলতে লাগলো
— তুই এমন কেনো? ক্লাবে সবার সামনে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে পারতিস তো আমাকে ভালোবাসিস। জোড় করে ওখান থেকে নিয়ে আসতে পারতিস তো! তা না করে আমার কসম শুনে চুপ করে চলে এলি। কেনো মুখটা তো বন্ধ করা যেতো। তুই তো সব পারিস। কেনো এমনটা এলোমেলো হলো সব কিছু। তোকে অপমান করে আমি নিজে কষ্ট পাই। কেনো তুই এমন করলি? বার বার ইচ্ছে করে সব কিছু মিথ্যে ভেবে তোর বুকে মাথা রেখে বাকিটা পথ চলতে। কিন্তু পারছি না আমি। নিজের মনকে বোঝাতে।
* সকালে ঈশা অফিসে এসে নিজের ডেক্সে বসে কম্পিউটার অপেন করে কাজ করতে লাগলো। শুধু কাজ না। অপেক্ষা করছে অয়নের আসার। ঈশা বার বার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে অয়ন এলো কিনা! কাজে মন বসাতে ব্যর্থ হচ্ছে বারণবার। অপেক্ষার একেকটি প্রহর বড্ড যন্ত্রণাময়। ঈশা আর অপেক্ষা করতে পারলো না। ঈশা দেখতে পেলো অয়নের সেক্রেটারি মিস্টার গোমস কেবিনের দিকে যাচ্ছে। ঈশা ডেক্স থেকে উঠে কেবিনের সামনের গিয়ে মিস্টার গোমস কে উদ্দেশ্য করে বলল
— মিস্টার গোমস অয়ন স্যার কি আজ আসবে না অফিসে?
মিস্টার গোমস সাধারণ ভঙ্গিমায় জবাব দিলো
— না। স্যার আজ আসবেন না।
মিস্টার গোমস এর উত্তর শুনে ঈশার মন খারাপ হয়ে যায়। ঈশা মিস্টার গোমসকে আবারও প্রশ্ন করে বসলো
— আচ্ছা উনি কেনো আসবেন না? শরীর ঠিক আছে তো?
— তা তো বলতে পারবো ন ম্যাম। তবে স্যার এর ব্যক্তিগত ব্যাপার সম্পর্কে তিনি কাউকে কিছু বলেন না।
— হুম, জানি সেটা। আচ্ছা কবে আসবেন তা কি জানেন?
— জ্বি না ম্যাম। স্যার ডিসটার্ব মাইন্ডে আছে। এতো প্রশ্ন করলে উনি রাগ করবেন। তাই জ্বিগাসা করি নাই।
— ওহহহ। আচ্ছা ধন্যবাদ।
ঈশা মন খারাপ করে নিজের ডেক্সে এসে বসে পরলো। ডেক্সে বসে ভাবছে ঈশা। হয়তো তার অপমানের জন্য অয়ন আসেনি। অয়নকে না দেখলে তো তার মনের তৃষ্ণা মিটিবে না। কি করা যায়? আনমনে ভাবছে ঈশা। না অয়নের বাসায় যেতে হবে। তা না হলে এই ছেলে আসবে না। অনেক রাগি, বদমেজাজি, অভিমানি, ঘাড় ত্যারা লোক একটা। যা চায় তাই পেতে হবে। অভিমান করলে তো হয়েছে। কারো কথাই শোনে না সে।
কথা গুলো ভাবতেই ঈশার ফোনে একটা ম্যাসেজ চলে আসে। ঈশা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কাল রাতে তার সাথে কথা বলেছে। সেই ম্যাসেজ করেছে। ম্যাসেজটা আসতেই গলার হাস্যজ্বল চেহারাটা কালো হয়ে যায়। ম্যাসেজে একটা এড্রেস ছিলো। আর লিখা ছিলো বিকেল ৪টায়। ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আল্লাহ যেনো সব ঠিক করে দেয়ার এটাই তার শেষ আশা।
* বিকেল ৪টার দিকে ঈশা অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যায় ম্যাসেজের দেয়া এড্রেস অনুযায়ী। অনেক আগে থেকেই একটা লোক তার জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশা সেই লোকটিকে দূর থেকে দেখেই চিনতে পেরে যায়। এর আগেও তাদের দেখা হয়েছে। ঈশাকে দেখতে পেয়ে সেই মানুষটি ঈশার দিকে এগিয়ে আসে। ঈশা তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে ফেললো
— এনেছো ঐ সব?
— হ্যাঁ।
— আমি কি করে তোমার কথা বিশ্বাস করবো? এই সব তো মিথ্যে ও হতে পারে?
— হুম। আমার কাছে কল রেকর্ড ও আছে। তাও একদম নতুন। কিছু দিন আগেই কথা হয়েছে। সেটা চলবে?
— উহু এর থেকেও বেশি কিছু প্রয়োজন আমার। তবেই বিশ্বাস করবো আমি।
— আচ্ছা তুমি তো একজন নারী। একজন নারীর কাছে তার সম্মানের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে? এখন বলো তো একজন নারীর নিজের সবচেয়ে দামী জিনিস তার সম্মান নিয়ে কি মিথ্যা বলতে পারে? বিশ্বাস করো আমি নিজের জন্য কিছু চাই না। শুধু আমার………
— জানি আমি। আর বলতে হবে না। এই বার দাও আমি দেখতে চাই।
— হুম।
* এতোক্ষণ ঈশা যার সাথে কথা বলেছে সে হলো রিদ্রিতা। রিদ্রিতা ঈশার হাতে একটা ফাইল দিলো। ঈশা ফাইলটা খুলতেই……………………
#চলবে……………………..